শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

মানসিক দাসত্ব !

একজন নারীর সফল ক্যারিয়ার আসলে কি হওয়া উচিত এটা নিয়ে পুর্বের পোস্টে ব্যাপক আলোচনা হল। শুধু যে আলোচনাই হল তা নয়, আমাকে পারসোনালি অনেকের কাছ থেকে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্নের এন্সার দিতে হল। যেহেতু আমি মেডিকেলে পড়ছি সুতরাং আমি প্রফেশনালি মানবতাকে সার্ভ করব এই প্ল্যান নিয়েই পড়ছি। তাহলে কি আমার পূর্বের পোস্ট অনুযায়ী সফল ক্যারিয়ারিস্টিক নারী হিসেবে আমি নিজেকে দেখতে পাব?

আমি কখনও নারীর উচ্চশিক্ষার বিরুদ্ধে না, নারীর বাইরে জবের বিরুদ্ধে না। কারণ কেবল নারী মুক্তি নয় আমাদের সকল মানসিক দাসত্বের মুক্তির জন্য শিক্ষা প্রয়োজন। কুরআন শুরু হয়েছে "পড়" শব্দ দিয়ে। সেখানে নারী শিক্ষা নিয়ে আমি স্পেসিফিক্যালি কিছু বলতে চাইনা। কথা হচ্ছে নারীর সফল ক্যারিয়ার নিয়ে।

যদি নারীরা মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্ত না হয় তাহলে অনেক হাই ডিগ্রি, অনেক বড় জব করেও তারা মুক্ত হতে পারবেনা, স্বাধীন হতে পারবেনা। যদি সন্তান পালন, সংসার করাকে নারীত্বের অবমাননা মনে করে নারীরা তাহলে পুরুষের পাশাপাশি বাইরে জবও তাদের ক্যারিয়ারে এক্সট্রা কিছুই যোগ করবেনা। বরং কেবল সুপার উইমেন হবার চেষ্টা তাদের মানসিক ও শারীরিক বার্ডেন বাড়াবে।

একটু চিন্তা করে দেখেন, নারীরা এখন হাইয়ার ডিগ্রি নিচ্ছে, বাইরে জব করছে কিন্তু সন্তান জন্মদান ও লালন পালনের প্রাইমারি কাজ নারীরা কখনও ওভারলুক করতে পারবেনা। কারণ নারীরা যদি হাজার আন্দোলনও করে তাহলে পুরুষরা তাদের এই প্রাইমারি কাজ শেয়ার করতে পারবেনা।

বেগম রোকেয়া নারীদের মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে বহু আগেই লিখে গিয়েছেন ঠিক এভাবে,

"এই অলংকারের জন্য ললনাকূলের কত আগ্রহ! যেন জীবনের সুখ সমৃদ্ধি উহারই উপর নির্ভর করে! তাই দরিদ্রা! কামিনীগন স্বর্ণরৌপ্যের হাতকড়ি না পাইয়া কাচের চুড়ি পরিয়া দাসী-জীন সার্থক করে। যে (বিধবা) চুড়ি পরিতে অধিকারিনী নহে তাহার মত হতভাগিনী যেন এ জগতে নাই! অভ্যাসের কি অপার মহিমা! দাসত্বে অভ্যাস হইয়াছে বলিয়া দাসত্বসূচক গহনাও ভাল লাগে। অহিফেন তিক্ত হইলেও আফিংচির অতি প্রিয় সামগ্রী। মাদক দ্রব্যে যতই সর্বনাশ হউক না কেন, মাতাল তাহা ছাড়িতে চাহেনা।সেইরূপ আমরা অঙ্গে দাসত্বের নিদর্শন ধারণ করিয়াও আপনাকে গৌরবান্বিতা মনে করি-গর্ব্বে স্ফীতা হই! "

এখন আসি, বর্তমান এই উচ্চশিক্ষা এবং বাইরে জব আসলেই নারীকে মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছে কিনা! পূর্বে আয়ের সোর্স কেবল পুরুষরা ছিল তাই তাদের পরিবারে ও সমাজে আলাদা একটা মর্যাদা ছিল। যেহেতু নারীদের আয়ের সোর্স ছিলনা তাই তারা নিগৃহিত ছিল ঘরে। কিন্তু এখন? নারীদের উচ্চশিক্ষা আছে, উপার্জন করছে। তারা এখনও নিগৃহিত হচ্ছে ঘরে এবং ঘরের বাইরে। কিভাবে??
আমি যখন দেখি ইউনিভার্সিটি তে পড়া মেয়েরা যারা পড়াশুনা করছে কেবল জবের উদ্দেশ্যে তারা অবসর সময়ে শপিং করতে খুব ভালবাসে, হিন্দি সিরিয়ালে কে কি ড্রেস পড়ল, কে কি গহনা পড়ল, কি কিভাবে সাজল সেটা নকল করতে ভালবাসে। কর্পোরেট দুনিয়ায় নিজেদের পণ্য করতেও দ্বিধা বোধ করেনা। শেভিং ক্রিম থেকে শুরু করে এমন কোন প্রোডাক্ট নেই যেখানে নারীদের পণ্য করা হচ্ছেনা। টিভিতে বিজ্ঞাপনে এই আধুনিক যুগেও যখন নারীদের দেখানো হয় টিপিক্যাল সেই সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা দিয়ে, যেখানে একজন নারী পাশের মহিলার সুন্দর গহনা,শাড়ি দেখে নিজের হাজবেন্ডের সাথে ঝগড়া বাধায়, যেখানে একজন নারী সাবানের মডেল হয় কোমল ত্বকের অধিকারী হবার জন্য যা হাজবেন্ডের মন যুগাবে সেখানে আমি কিভাবে বলব নারীর তথাকথিত উচ্চশিক্ষা ও বাইরে জব তাদের মুক্তি দিয়েছে, তাদের সত্যিকার মর্যাদা দিয়েছে, তাদের কে সফল ক্যারিয়ারিস্টিক নারী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে?

আমি কেবল নারীকে তার ভ্রান্ত চিন্তা-বিশ্বাস থেকে উঠে আসতে বলেছি। বলেছি পুরুষের মত অনুকরণে নয়, পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নয় বরং নারীর মুক্তি আসবে নারীর স্বাতন্ত্রে। নারী তার নারী সত্তা দিয়ে নিজেকে পূর্ণরূপে বিকশিত করতে পারবে। সন্তান ধারণ করা নারীত্বের সবচেয়ে সাফল্যময় দিক, সন্তানকে পালন করা তার ক্যারিয়ারের একটা মূল্যবান সাইড। যারা বাইরে জব করেনা তারা যেন মনে না করে তাদের উচ্চশিক্ষা সব বিফলে গেল, কারণ এখন সন্তান কে ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য তৈরি করা উচ্চশিক্ষা ছাড়া সম্ভব না। নারীকে ভাবতে হবে, শিক্ষা কেবল আয়ের উৎস নয় বরং নিজেকে মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্তির অনন্য উপায়।

আহমাদ মুসাফফা, নাজমুসসাকিব নির্ঝর,সত্য কন্ঠ ও শিহান মির্জার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলে ধরছি......

আহমাদ মুসাফফা ভাইয়া প্রশ্ন করেছেনঃ


মেয়েদের চাকুরী না করতে বলা হলে কিছু ethical প্রশ্ন আসতে পারে । যেমনঃ
১.আমার ক্লাসের মেয়েরা আমার মতই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করছে । এখন তাদেরকে যদি চাকুরী না করতে বলা হয় তাহলে সেটা কি অবিচার হবে না?
২ সন্তান পালন করাই যদি আসল কাজ হয়ে থাকে তাহলে এত কষ্ট করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নামিদামি ভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হওয়াতে স্বার্থকতা কোথায়?
৩ মেয়েরা মেধায় কম যায়না । যেমন আমাদের ক্লাসে ফার্স্ট সেকেন্ড দুইজনই মেয়ে । ক্লাসের অন্য মেয়েরাও খুব ভাল । তারা কি ছেলেদের মত কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেনা?

জবাবঃ
# নাজমুসসাকিব নির্ঝর ভাইয়া জবাব দিয়েছেন এইভাবে,


"পুরা ব্যাপারটার শুরু কোথায়? ব্যাপারটার শুরু হয়েছে একটা ডিপলি রুটেড আন্ডারভ্যালুয়েশন থেকে। যেসমাজের পুরুষ এবং নারী উভয়েই ঘরের সেই ছেলের বউ কে খুব দাম দেয় যে বড় চাকরী করে। আর যে বউটা বাসায় থেকে ঠিক মত ছেলে মেয়ে গুলোকে "মানুষ" করে তাকে অবহেলা করে। অথচ তারা জানেনা যে দ্বিতীয় কাজটা লিটারেলি এবং মেটাফরিকালি কি প্রচন্ড রকমের প্রয়োজনিয় কাজ। দ্বিতীয় কাজটা হচ্ছে একটা কন্ট্রিবিউশন টু এন্টায়ার সিভিলাইজেশন।
একজন যথার্থ সুশিক্ষিত মায়ের অভাবই একটা বাচ্চাকে অমানুষ বানাইতে যথেষ্ঠ। এবং আমরা আজকের যে পশ্চিমকে দেখছি এই পশ্চিমের তরুনদের অনেকেই এসেছে এইরকম ক্যারিয়ারিস্ট মা’র কাছ থেকে। তাদের বেড়ে ওঠার উপর এর একটা সাংঘাতিক প্রভা...ব আছে। তুই চিন্তা কর, একদম ছোট বেলায় যদি মা বাসায় না থাকত তাইলে আমরা কী করতাম? ৫০ বছর আগের পশ্চিম এর ক্ষেত্রে হয়ত এরকম মা’র কাছ থেকে আসা সন্তানের সংখ্যা ৩০% বা আরো কম ছিল। সেসময় অপরাধপ্রবনতাও আরো কম ছিল। হয়ত এই কোরিলেশনটা টু মাচ সিম্পলিস্টিক হয়ে গেল। কিন্তু পশ্চিম স্বীকার করুক আর নাই করুক নিঃসন্দেহে এটা সবচাইতে ইম্পর্টেন্ট ফ্যাকটর গুলোর একটা।

মির্যা গালিব ভাইয়ের ফেমিনিসম বিষয়ক একটা সাম্প্রতিক বক্তব্যের কথা বারবার মনে পড়তেছে, তিনি বলেছিলেন মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া ফেমিনিসম এর প্রতিরোধ সম্ভব না। মুখে খুব ইসলাম ইসলাম করা আর বাসায় যেয়ে বউকে বলা যে "আরে তোরে খাওয়াই আমি তুই কথা শুনবিনা কেন"? এইটাই ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট এর মোমেন্টাম হিসাবে যথেষ্ট। তিনি আরো বলেছিলেন, যদি মা'র কন্ট্রিবিউশন টা যথাযথ স্বীকৃতি পাইত তাইলে খুব কম মেয়ে (লেখিকার ভাষায় সুপার উইমেন) পাওয়া যাইত যারা এই রোদ্রের মধ্যে নিজের ইচ্ছায় বাসে ঝুলে অফিসে যাইতে চাইত।"



শিহান মির্জা জবাব দিয়েছে এইভাবে,


"প্রশ্নগুলো/আপত্তিগুলো apparently খুব শক্তিশালী। কিন্তু, এগুলো scrutinize করলে এগুলোকে refute করা সম্ভব।
১) বর্তমান দুনিয়াতে পড়াশোনা করার পিছনে যে মাইন্ডসেট কাজ করে তা হচ্ছে ভালো একটা জব পাওয়া, ভালো জীবিকার ব্যবস্থা করা এবং পারলে খ্যাতি অর্জন করা। এখন কথা হচ্ছে, এই কারণগুলো আসলেই জ্ঞানার্জনের পিছনে যে মূল Ethical Reason (i.e. To serve Humanity [from secular perspective] or to serve Islam [From an Islamic perspective])থাকার কথা সেগুলোর খিলাফ কিনা তা ভাবার সময় আসছে। কম্পিউটার সাইন্সের জ্ঞান শুধু জবেই কাজে লাগতে পারে, এর বাইরে কাজে লাগতে পারে না সেটা মনে হয় ঠিক না। উম্মাহকে সার্ভ করার জন্য এর অর্ধেক জনগোষ্ঠীর অর্জিত জ্ঞানকে কিভাবে তাদেরকে তাদের মূল কর্তব্য থেকে না সরিয়ে ব্যবহার করা যায় সেটা ভাবতে হবে।

২) সন্তান লালনপালন করার জন্য সুশিক্ষিত মায়ের প্রয়োজনীয়তা অনেক অনেক বেশী। একটা সন্তানের কাছে ৫ম শ্রেণী পাশ করা মায়ের চাইতে মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী নেয়া মায়ের প্রভাব অনেক বেশী থাকবে। সন্তানের সাথে Understanding এর ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় শ্রেণীর মায়েদের সফলতা অনেক বেশী থাকবে। তাছাড়া সন্তানকে সুশিক্ষিত করে গড়ে যে প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সেটাও দ্বিতীয় শ্রেণীর মায়েরা বেশী বোঝার কথা কেননা তারা নিজেরাও শিক্ষিত। সুতরাং উচ্চশিক্ষা অর্জন শুধুমাত্র নিজের স্বার্থোন্নতির জন্য নয়। বরং, উচ্চশিক্ষা অর্জন মুসলিম নারীদের তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করার Potential অনেক বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা যায়।

৩) এর জবাব ১ এবং ২ নং পয়েন্টে পাবেন।"


রেইন স্পট জবাব দিয়েছে এইভাবে,


"আসলে কি জানেন, আমাদের মেয়েদের মধ্যে একটি বিশ্বাস জন্মে গিয়েছে যে পড়ালেখা যখন শিখেছি তখন অবশ্যই জব করতে হবে। আমি নিজে মেয়ে হয়ে কিন্তু মেয়ে...দের বাইরে জবের বিরুদ্ধে কথা বলিনা। যেটা বলি সেটা হল উচ্চশিক্ষা কখনও বাইরে জবের জন্য না বরং জীবনে প্রয়োগের জন্য। এখন একটি মেয়ের সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ফিল্ড হল তার সংসার & সন্তান। কারণ এই সন্তান ধারণের ব্যাপার আল্লাহ পুরুষকে দেননি, তারমানে অবশ্যই মেয়েদের এইদিকে এক্সট্রা কন্সার্ন দিতে হবে। কখনও যদি এরকম হয় আমার বাইরে জব আমার সংসার ও সন্তানের জন্য কনফ্লিকশান হচ্ছে তাহলে অবশ্যই সংসার ও সন্তানকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমি নিজে মেডিকেলে পড়ছি, আমাকে বাইরে জব করতে হবে, কিন্তু অবশ্যই আমি আমার সংসার ও সন্তানের সাইডটা প্রাধান্য দিব আগে। কারণ আমার শিক্ষা যে কেবল বাইরে জব করেই প্রয়োগ করতে হবে এমন নয়, আমার সন্তান,পরিবার,আত্বীয়স্বজন,প্রতিবেশি এদের মধ্যেও প্রয়োগ শিক্ষা প্রয়োগ করা যায়। এখন সন্তান পালন করাকে যতটা সহজ কাজ বলে নারীরা মনে করছে ব্যাপারটা ততটা সহজ না। আগে হয়ত মায়েদের উচ্চশিক্ষা না হলেও চলত কিন্তু এখন এই সন্তানের জন্যই উচ্চশিক্ষার দরকার আছে। চাইল্ড সাইকোলজি বুঝে ফিউচার জেনারেশানকে লিড দিতে হলে ঘরে একটি মেয়েকে কতটা ডাইনামিক হতে হবে এটা বুঝলে মেয়েরা এখন আর বাইরে জব নিয়ে মাতামাতি করতনা। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সেটা নিরঝর ভাইয়া উল্লেখ করেছে, মেয়েদের এই বাইরে বের হবার আন্দোলনের ইন্ধন যুগিয়েছে পুরুষরা। কারণ তারা যদি মেয়দের ঘরে সংসার ও সন্তান পালনের জন্য আন্ডারএস্টিমেইট না করত তাহলে নারী আন্দোলনের এই তথাকথিত কনসেপ্ট আসতনা। যাইহোক আমি আশাবাদী এই পুরুষরা যদি এখন নারীদের উপযুক্ত সম্মান ও অধিকার ঘরেই দেয় তাহলে উচ্চশিক্ষিত নারীরাই আমাদের ভবিষ্যত জেনারেশান কে লিড দিবে।"


আহমাদ মুসাফফা ভাইয়ার প্রশ্নঃ
যদি এটাই মনে হয় উচ্চশিক্ষা জবের জন্য না তাহলে একটা ethical প্রশ্নও উঠে আসতে পারেঃ
মেয়েরা কি তাহলে পাবলিক ভার্সিটি, মেডিকেল কলেজে আসন নষ্ট করছেনা? অন্যছেলেদের কথা নাই বা বললাম হাজার হাজার A+ গ্রেডধারী ছেলেও উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য ভর্তি হতে পারছেনা । জবই যদি মেয়েরা না করল তাহলে এইসব ছেলেদেরই বা কেন বঞ্চিত করল?

রেইন স্পটের জবাবঃ
"অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু আমি এটা বলিনি যে উচ্চশিক্ষা করেও সব মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে। আমি বলেছি উচ্চশিক্ষা মানেই জব না। আর সন্তান পালনের জন্য তারা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবে ব্যাপারটা তাও না। আমি যেটা ফিল করি সেটা হল ...প্রতিটি বাচ্চার জন্য একটা টাইম পিরিয়ড থাকে যখন মায়ের সংস্পর্শে থাকাটা অনেক জরুরি। এরপর সেই টাইম পিরিয়ড কমে যায়, তখন বাইরে জবের সাথে সন্তান পালন খুব একটা বৈপিরত্য হয়না। এসব আসলে সিচুয়েশান বুঝে এনালাইসিস করার মত প্রশ্ন। আপনি যদি কোন কেইস আমাকে বলেন তাহলে সেভাবে চিন্তা করে এন্সার দেয়া যাবে। তবে অবশ্যই যে ব্যাপারটা সর্বদা প্রাধান্য সেটা হল সন্তান প্রতিপালন। কারণ একটি পুরুষের যেমন ফিনান্সিয়াল রেসপন্সিবিলিটি সবার উপরে তেমনি একটি মেয়ের সন্তান প্রতিপালন সবার উপরে। এন্সার ক্লিয়ার না হলে, প্লিজ আমাকে একটি কেইস বর্ণনা করে প্রশ্ন করেন, তাহলে হয়ত সেভাবে এন্সার দেয়া ইজি হবে।"

আহমাদ মুসাফফা ভাইয়ার প্রশ্নঃ
মানুষের মনমস্তিষ্ক এমন এক জিনিস যে চর্চায় না থাকলে সে আসতে আসতে সে সব ভুলতে শুরু করে । সেটা মেডিকেল বলেন আর কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-ই বলেন । বিয়ের পর একটি মেয়ে যদি ৫-১০বছর তার সাবজেক্টে চর্চা না করে তাহলে সে আগে যা শিখেছিল তার বেশিরভাগই ভুলে ...যাবে । তারমানে সে এত কষ্ট করে যা শিখলো তা "লস্ট প্রজেক্ট" ভিন্ন কিছু হবে না বলে আমার বিশ্বাস ।
এখন আমার চতুর্থ প্রশ্নের দিকে খেয়াল করুন । এখন দেখতে পাবেন ঐ মেয়ে সম্ভাবনাময় একটি ছেলেকে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/ইকোনোমিস্ট হতে দেয়নি । না সে নিজে হতে পারল না অন্যকে হতে দিল ।
.........

সত্য কন্ঠের জবাবঃ
আমার মনে হয় রেইন আসলে বুঝাতে চেয়েছে জব করাটা মেয়েদের ফার্স্ট টার্গেট হওয়া উচিৎ না,কিন্তু কেউ করতে চাইলে ও তাকে বাধাও দিচ্ছেনা।যেমন আমি......আমার ডিটারমাইন্ড ইচ্ছে আমি জব করবোনা।সেই ধরণের কোন টার্গেটই নাই আমার।কয়েকটা কারণ আছে এর।প্রথমত আল্লা...হ আমাকে অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত দিয়েছেন।আল্লাহ আমাকে যা থেকে মুক্ত দিয়েছেন তা আমি আমার উপর চাপিয়ে নিব নিজের উপর এতোখানি জুলুম কিংবা বোকামি আমি করবনা(বাধ্য হলে ভিন্ন কথা)।আমি বাইরে বের হয়ে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে বাসের ভীরে ধাক্কাধাক্কি করে ৯টা-পাচঁটা অফিস করে আমি আমার সম্মান বাড়াতে চাইনা(বাসের ভীরে ধাক্কাধাক্কি না করতে হলেও বাইরের পরিবেশ একটা মেয়ের জন্য কতোখানি প্রতিকুল সেটা মেয়ে মাত্রই জানে)।আমার সম্মান আল্লাহ এমনিতেই অনেক বেশী দিয়ে রেখেছেন।আমি কন্যা,আমি স্ত্রী,আমি মা।এ সম্মানের তুলনা কোন কিছুর সাথেই হয়না।আমাকে কেন সম্মানের জন্য কর্ম ক্ষেত্র খুজেঁ নিতে হবে???আমার কর্ম ক্ষেত্রতো আল্লাহই ঠিক করে দিয়েছেন গৃহকে।আমার সম্মান আমার গৃহে।তবে হ্যাঁ,কেউ যদি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একটা ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাকে আমি নিষেধও করিনা।আমার ছোট বোন স্বপ্ন দেখে একটা সফল ক্যারিয়ারের।আমি তাকে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে বলি।কিন্তু নিজের জন্য গৃহ ছেড়ে আমি নতুন কর্ম ক্ষেত্র খুজঁবনা কখনোই।আমার মনে হয়েছে রেইন এটাই বলেছে।ও কাউকে বাধ্য করছেনা ক্যারিয়ার না গড়ার জন্য।অনুপ্রানিত করছে আল্লাহ নারীদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা যথাযথভাবে পালন করার জন্য আর আল্লাহ যে সম্মান দিয়েছেন সেটাকে মূল্যায়ণ করার জন্য।

শিহান মির্জার জবাবঃ
ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন। কোন কিছু চর্চায় না থাকলে মানুষ তা ভুলে যায়। আসলে, এখানে কেউই বলেনি যে, কোন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট মা বা কম্পিউটার প্রোগ্রামার মা তার সন্তান লালনপালনের জন্য তার স্কিলটার চর্চা বাদ দেবেন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ...হচ্ছে, নিজের অর্জিত শিক্ষার প্র্যাকটিক্যাল ইমপ্লিমেন্টেশন ফিল্ড কেন শুধু জবকেই ধরা হবে? আপনি একটিবার চিন্তা করুন, ধরুন কোন এম বি বি এস পাশ করা মা যদি নিজের ঘরেই একটা ছোট ক্লিনিক খুলে এলাকার গরীব মহিলাদের বিনা চিকিৎসায় ট্রিটমেন্ট দেয় কিংবা, কোন প্রোগ্রামার মা যদি ঘরে বসে নিজের স্কিলকে কাজে লাগিয়ে, ঘরে বসে পড়াশোনা করে একটা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার তৈরী করার চেষ্টা করে, সেটা কি তার সন্তান লালনপালনে খুব একটা ব্যাঘাত ঘটাবে? তাছাড়া অনেক ইসলামিক স্কলারই বলেছেন যে, আধুনিক কোন ইসলামী রাষ্ট্রে যে দুটি ফিল্ডে মেয়েদের সবচেয়ে বেশী জড়িত হওয়া দরকার তার একটি হচ্ছে ডাক্তারী পেশা অপরটি হচ্ছে শিক্ষকতা।
আর কোন ছেলে যদি ইউনিতে/মেডিকেলে চান্স না পায় সেটা কি মেয়েটার দোষ নাকি ছেলে আর সরকারের দোষ?


আহমাদ মুসাফফা ভাইয়ার প্রশ্নঃ
আপনি যখন "নারীর প্রকৃত ক্যারিয়ার কি হবে" এমন বিষয়ে লিখবেন তখন আপনাকে নারীর ব্যাপারে
১ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কি হওয়া উচিত,
২ শিক্ষাব্যবস্থাকে নারীর উপযোগি করে কিভাবে ঢেলে সাজাতে হবে,
৩ আধুনিক নারীর চাওয়া পাওয়া নিয়ে আপনার মূল্যায়ন,
৪ ইনফরমেশন ট...েকনলজি যেভাবে সামাজিক বাধা দূর করে দিয়ে তথ্য আদান প্রদানকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে সেই গ্লোবাল ভিলেজে নারীর ভূমিকা কি
সহ আরো অনেক বিষয়ে আপনাকে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিতে হবে ।

মনে রাখবেন, নারী সমাজে বেগম রোকেয়া কথাগুলো রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয় । "পুরুষ মেজিস্ট্রেট হতে পারলে আমরা কেন লেডি মেজিস্ট্রেট হতে পারবনা" এর স্থলে আপনি নারীদের হয়ত বাসায় থাকতে বলবেন । আবার আপনি যদি এও বলেন যে পাঁচ থেকে দশ পর চাকুরী করতে সেটা কতটুকু যৌক্তিক সেটা বিবেচনায় রাখবেন আশা করি ।
আপনি কি বেগম রোকেয়ার বইগুলো পড়েছেন?


রেইন স্পটের জবাবঃ নারীর প্রকৃত ক্যারিয়ার কি হবে সেটা আমার এই পোস্টেই স্পষ্ট বলা আছে। আপনার বাকি প্রশ্ন ডিসকাশনের আরো দিক উন্মোচন করবে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত ক্যারিয়ার এর ব্যাপারে আল্টিমেইট এন্সার সেইম। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি,শিক্ষাব্যবস্থা, আধুনিক নারীর চাওয়া-পাওয়া, ইনফরমেশান টেকনোলজি সবকিছুই এখন নারীরে প্রতিকূলে। কারণ নারীরা এখন যে আইডিয়া তে আধুনিক হচ্ছে, বা যে আইডিয়াতে আমাদের সেকুল্যার সমাজ নারীকে আধুনিক করতে চাইছে সেটাকে পরিবর্তন করা বা কিরকম হওয়া উচিত সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নাই, আমি আসলে আধুনিক নারীদের কিছু চিন্তা ভাবনার ভুল সাইড টা নক করতে চাইছি। কারণ নারীরা যদি সমাজের চাওয়া-পাওয়ার পুতুল হয়ে থাকে, যদি তারা নিজেদেরকে সমাজের এক্সপেকটেশান অনযায়ী আধুনিক হয় কোনদিন তাদের মুক্তি আসবেনা। তাদের মুক্তি আসবে তাদের ভ্রান্তি আইডিয়া যদি সংশোধিত হয় তবেই। আমি কেবল ওই ভ্রান্তি আইডিয়ার দিকেই ফোকাস করছি।

বেগম রোকেয়া নারী মুক্তি নিয়ে সামান্য কিছু জিস্ট আজকের পোস্টে দিলাম। ইচ্ছা আছে বেগম রোকেয়ার নারী কেন্দ্রীক চিন্তা ভাবনা নিয়ে আরো পোস্ট দিব।

(বিশেষ কৃতজ্ঞ নির্ঝর, মুসাফফা ভাইয়া, শিহান ও সত্য কন্ঠের প্রতি এবং দুঃখিত এত বড় পোস্টের জন্য)

কোন মন্তব্য নেই: