শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মেহমান

আব্বু- আম্মু হজ্বে যাবার এক সপ্তাহ পূর্বে যখন ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়িতে গেল সবার সাথে দেখা করতে তখন একদিন আব্বু হঠাত ফুফুর বাড়ি যাবার পথে অজ্ঞান হয়ে গেল।

ফোন দিয়ে আমি সাথে সাথে ঢাকায়
আসতে বললাম। তারা আরো দুইদিন পর
ঢাকায় আসল।

আমি আব্বুকে নিয়ে কার্ডিওলোজি ডিপার্টমেন্টে দেখালাম।স্যার কে দিয়ে ইকো করালাম। রিপোর্ট
খুউব খারাপ। রিপোর্ট রিভিউ
করাতে আরেকজন প্রফেসর স্যার
কে দেখালাম। সেই স্যার রিপোর্ট খুউব
খারাপ এবং আব্বুর হার্ট চেইক
করে আরো কিছু
পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে দিলেন।
সাথে ইকো রিপিট করতে বললেন
আরেকজন বিখ্যাত এবং দক্ষ
কার্ডিওলোজিস্টের কাছে। 

আমার এক ছোট ভাইয়ের সহায়তায়
সেখানে অতি দ্রুত প্রথম সিরিয়াল
নিয়ে আবার আব্বুর ইকো রিপিট করালাম।
সেখানেও একই রিপোর্ট। সেই স্যার
নিজেও হজ্জ করে এসেছেন গত বছর তার
মা কে নিয়ে। আমাকে আব্বুর রিপোর্ট
নিয়ে বললেন এই মুহূর্তে হজ্জ জীবনের
জন্যই হুমকিপূর্ণ। সামান্য দুই কদম হাটার
মত ক্যাপাসিটি আব্বুর হার্টের নেই। দ্রুত
অপারেশান ছাড়া অন্য কোন অপশন নেই।

এসব শুনে বাসায় আম্মুকে ডিটেইলস
জানালাম। তখন হজ্জ ফ্লাইটের আর মাত্র
দুইদিন বাকি। সব আত্মীয় স্বজন
এসে আব্বুকে সান্তনা দিচ্ছে আর ফ্লাইট
ক্যান্সেল করার পরামর্শ দিচ্ছে।সবার
যুক্তি হজ্জের চেয়ে জীবন বড়।

আমি নিজে আব্বুর শারীরিক অবস্থা পূর্ণ
অবগত হওয়া সত্ত্বেও আব্বুকে হজ্জ
ক্যান্সেল করার কোন পরামর্শ দিচ্ছিনা।
আমার মা তো আব্বুকে প্রতিনিয়ত
আধ্যাত্মিক এবং মানসিক সাপোর্ট
দিয়ে যাচ্ছে।

আল্লাহর ঘরে মেহমান
হতে যাচ্ছে সেখানে আমি ডিমোরালাইজ
আব্বুকে কিভাবে করব? আমি খুউব মেন্টাল
স্ট্রেইসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। মৃত্যু
কে তো আমরা কেউই এভয়েড
করতে পারবনা। আল্লাহর কাছেই
আমাদের সবাইকে ফেরত যেতে হবে।
আল্লাহর ঘরে মেহমান
হতে গিয়ে যদি আল্লাহর কাছেই
চলে যেতে হয় তাহলে এটা তো সৌভাগ্য।
আমি মনে মনে এরকমভাবে নিজেকে সেট
আপ করছিলাম।

আত্মীয় স্বজনের ডিমোরালাইজেশান
উপেক্ষা করে আমাদের সাপোর্টে আব্বু
মানসিক শক্তি নিয়ে আল্লাহর
ঘরে মেহমান হতে আমাদের কাছ
থেকে বিদায় নিলেন।

এরপর হজ্বে যাবার মাত্র ৩দিন পর আমার প্রাণপ্রিয় দাদী মারা গেলেন।দাদীর এই হঠাত মৃত্যুর খবর সবার নিষেধ সত্ত্বেও
আমি আব্বুকে সাথে সাথে ফোনে জানালাম।
আব্বু খবর পেয়ে সরাসরি কাবা ঘরের
সামনে গিয়ে দাদীর জন্য
কান্নাকাটি করে দোয়া করতে লাগলেন।
দাদীকে যখন কবরে নামানো হয়
তখনো আব্বু কাবার সামনেই।
আমি দাদী হারানোর শোকে মানসিক
প্রশান্তি পাচ্ছিলাম
এটা ভেবে যে আমার দাদী কত
সৌভাগ্যবান যে মৃত্যুর পর যে সওয়াবের
দরজা খোলা থাকে সেটা দাদী কত
প্রকটভাবে পাচ্ছে। স্বয়ং তার
ছেলে আল্লাহর ঘরে গিয়ে হাত তুলে মন
প্রাণ ভরে সর্বোচ্চ আবেগ
নিংড়িয়ে দোয়া করছে। দাদীর
পরকালের প্রথমধাপ না জানি কত সুন্দর
আর মহিমান্বিত হচ্ছে!
আলহামদুলিল্লাহ।

দাদীর আকস্মিক মৃত্যুর দুইদিন পর আব্বু
উমরা করতে গিয়ে অজ্ঞান
হয়ে পড়ে গেলেন। এদিকে আমার
মা হজ্জে যাবার পর
থেকে ফোনে প্রতিদিন বলছে যে আব্বুর
অবস্থা খুব খারাপ।এক পা হাটলেই
হাপিয়ে উঠছে।

অজ্ঞান হবার পর ওখানে হঠাতই এক
বাংলাদেশি যুবক আমার মা কে সব রকম
হেল্প করল। এম্বুলেন্স খবর দেওয়া,
আব্বুকে ওখানকার নিকটস্থ
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা সব
সেই যুবকই করে দিলেন। আমার
মা তাকে চিনেনা। সেই যুবক আমার
মাকে যাবার পূর্বে শুধু বলে গেলেন
আন্টি, বৃদ্ধ বাবা মা আমার সাথে তাই
আংকেল কে হাসপাতালে দেখে আসতে পারলাম
না। এরপর সেই যুবকের সাথে আর
দেখা হয়নি আমার মায়ের।

হাসপাতালে এম্বুলেন্সে করে নিয়ে গেলে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করা হয় আব্বুকে। আই.সি.ইউ তে ডিউটিরত তিন
বাংলাদেশি ডাক্তার হঠাত আব্বুর
পরনে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ দেখে দ্রুত
আব্বুর কাছে চলে আসেন। 

আমার মা কে আব্বুর সমস্যা জিজ্ঞাসা করতেই
আমার মা ফোন দিয়ে আমাকে,আমার
জামাই এর সাথে কথা বলিয়ে দেয়।
আমরা ফোনে সেই ডাক্তারকে আব্বুর
হার্টের কন্ডিশান ডিটেইলস
বলে দিলে তারা আব্বুকে দ্রুত আই.সি.ইউ
তে নিয়ে যায়।
এরপর ইসিজি,ইকো,সিটি স্ক্যান সহ আব্বুর
ফুল চেইক আপের পর সেই হাসপাতাল
থেকেই কার্ডিওলোজি হাসপাতালে রেফার্ড
করা হয়। সেখানে আব্বুর মেজর
অপারেশান হয়। আব্বুর ভালভ
রিপ্লেইসমেন্ট সার্জারি হয়।

পোস্ট অপে আব্বুর অপারেশানের
ডিটেইলস জেনে আমি আমাদের
হাসপাতালের কার্ডিওলোজি স্যারের
সাথে কনসাল্ট করি।

স্যার বললেন, মেকানিক্যাল ভালভের
বদলে টিস্যু ভালভ যদি ওখানে রিপ্লেইস
হয় তাহলে বুঝতে হবে প্রচুর
দামি এবং পারফেক্ট অপারেশান
ওখানে হয়েছে।

বাসায় এসে আব্বুর কাছে খোজ
নিয়ে জানলাম যে মেকানিকাল ভালভ
এর পরিবর্তে টিস্যু ভালভ রিপ্লেইস
হয়েছে। আমি শুনে শুধু বললাম
আলহামদুলিল্লাহ।

এরপর ছিল আরো ভয়াবহ কঠিন সময় আমার
বাবা মায়ের জন্য। অপারেশানের দুইদিন
পর আব্বুকে আই.সি.ইউ তে রেখেই আমার
মা কে মদিনায় চলে যেতে হয়। মেজর
অপারেশানের পর আব্বুর মানসিক
অবস্থা আমার মা কে কাছে না পেয়ে পুরাই
ভেংগে পড়ে।

এদিকে দেশে থেকে আমরা খুউব অস্থির
হয়ে পড়ি আব্বুর এই কন্ডিশানে।
মাঝে মাঝে ওখানকার বাংলাদেশি ডাক্তারের
সাথে ফোনে কথা হলে একটু রিলাক্স হই।
আর সর্বোপরি নামাজে শুধু
দোয়া করে যাই।

অবশেষে এক অবিশ্যাস্য
মিরাকেলে হজ্জের কঠিন পাচটা দিন
অনেক ঝক্কি ঝামেলার আড়ালে আব্বু
আম্মু দুজনেই হজ্জের কাজ সুসম্পন্ন করেন।আব্বু হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে হজ্বের সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবে, এটা ছিল কল্পনার বাইরে।
আলহামদুলিল্লাহ।

এদিকে সব রিলেটিভরা আব্বুর ব্যয়বহুল
চিকিতসা খরচের জন্য অস্থির হয়ে যায়।
আমিও কিভাবে টাকা পাঠানো যায়
সে ব্যবস্থা করতে লাগলাম।কিন্তু এটাও
এক মিরাকেল যে আব্বুর
ওখানে চিকিতসার ও অপারেশানের জন্য এক পয়সাও খরচ
করতে হয়নি। সেই যুবক যে আমার
মা কে এম্বুলেন্সের
ব্যবস্থা করে হাসপাতালে পাঠায়
ওটা ছিল সরকারি হাসপাতালে,কোন
প্রাইভেট হাসপাতাল না। আর
সরকারি হাসপাতালে হাজিদের জন্য
সৌদি সরকার সম্পূর্ন
বিনামূল্যে উন্নতমানের
চিকিতসা সেবা দিচ্ছে। মিরাকেলের পর
মিরাকেল।

আমি ফোনে সরকারি হাসপাতালের
কথা শুনে কেবল চোখে আমার
হাসপাতালের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে।
নোংরা পরিবেশ,অনুন্নত ব্যবস্থা,বিস্বাদ
খাবারের
কথা চিন্তা করে চোখে পানি এসে গেল
আব্বুকে একা একা ওখানে থাকতে হচ্ছে ভেবে।
পরক্ষনেই আব্বু জানাল ওখানকার
সরকালি হাসপাতাল আমাদের দেশের
এপোলো ক্যাটাগরি হাসপাতাল। এটুকু
শুনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ।

গতকাল আব্বু-আম্মু হজ্ব থেকে দেশে ফিরেছে।আব্বু আম্মুকে কাছে পেয়ে শুধু এটুকু
উপলব্ধি করলাম আল্লাহর উপর পূর্ণ
তাওয়াক্কুল করলে কি অভাবনীয়
ব্লেসিং আল্লাহ আমাদের প্রতিনিয়ত
দিয়ে যায়। 
আল্লাহর ঘরে মেহমান
হতে গিয়ে আব্বুকে যে মেহমানের
আতিথেয়তার ব্যবস্থা আল্লাহ করলেন
এরকম সর্বশ্রেষ্ঠ আতিথেয়তা পাবার
সুযোগ যেন আল্লাহ আমাকে খুব শিঘ্রই
দান করেন।
আমীন।

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রথম মা!


ফাইয়াজ হবার পর প্রথম প্রথম আমার সবকিছুতে খুব বেশি চিন্তা হত। ঠিক মত ফাইয়াজের কাথা পরিষ্কার হল কিনা,বার বার নিজের হাত সাবান দিয়ে ধুতাম যেন আমার থেকে ফাইয়াজের ইনফেকশান না হয়। এমনকি বাইরে থেকে কেউ আসলেও তাদের সহজে ফাইয়াজকে কোলে নিতে দিতাম না। তাদের হেক্সিসল দিয়ে হাত এন্টিসেপটিক করে নিয়ে ফাইয়াজ কে আদর করতে দিতাম।

প্রথম মা বলে সবকিছুতে অতিরিক্ত চিন্তা। এমনকি ফাইয়াজের স্বাভাবিক সর্দি,কাশিতেও আমার চিন্তায় ঘুম আসতনা। সাথে সাথে স্টেথো দিয়ে ওর ফুসফুস চেক করতাম, শ্বাস প্রশ্বাস এর গতি মাপতাম,হার্ট বিট দেখতাম। যখন দেখতাম সবকিছুই নরমাল রেইঞ্জের মধ্যে তখন একটু স্বস্তিতে থাকতাম।

দুইদিন পরপরই বেড শিট চেইঞ্জ করতাম, স্যাভলন দিয়ে সবকিছু ওয়াশ করতে দিতাম। আর কেউ যদি আমার সামনে ফাইয়াজ কে চট করে হাত না ধুয়ে আদর করত সাথে সাথে বিভিন্ন ছুতায় ফাইয়াজ কে নিজের কাছে নিয়ে নিতাম।

একদিন দেখি ফাইয়াজের হাতে মশার কামড়ে জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। সেটা দেখেই তো ভয় পেয়ে গেলাম। অজানা আশংকায় রোগ পূর্ববর্তি ইনকিউবেশান পিরিয়ড কাউন্ট করতে লাগলাম,যখন দেখলাম দশ-বার দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু ফাইয়াজের কিছুই হয়নি তখন মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলতাম।

এরকম মোটামুটি দুই থেকে আড়াই মাস পর আমার অতিরিক্ত সচেতনতা কিছুটা কমল।
ছয় মাসের সময় থেকে যখন ওকে বাইরের খাবার দেয়া শুরু করলাম তখন ওর পেট খারাপ হল একবার,প্রচুর পাতলা পায়খানা।সাথে বমি। হাসপাতালে ডিউটি সত্বেও যেতাম না, ফোনে সি.এর কাছে ছুটি চেয়ে নিতাম।ভাবতাম ফাইয়াজের প্রতি কেউ খেয়াল করছেনা তাই নিজেই সারাদিন ফাইয়াজের টেইক কেয়ার করতাম। 

ফাইয়াজের ফিডার দিনে চৌদ্দবার গরম পানিতে ফুটাতাম। আমার অবস্থা তখন এমন ছিল পারলে সব কিছু অটোক্লেভ করতাম।
এরপর যখন পেডিয়াট্রিকসে ডিউটি পড়ল তখন হাসপাতালে বাচ্চাদের অবস্থা দেখে রীতিমত শিউরে উঠতাম। সরকারি হাসপাতাল। খুব গরীব গরীব রোগীদের আবাস। 

একটা ছয় মাসের বাচ্চার নিউমোনিয়া,সাথে মায়ের কোলে দেড় বছরের বাচ্চা। সেই মা একইসাথে দুইটারেই সামলাচ্ছে। রোগ জীবানুর মধ্যেই বাচ্চাগুলা থাকছে। ঠিকমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন হচ্ছেনা। যে হাতে মা একজনের ভেজা কাথা ধরছে, আবার সেই একই হাত দিয়ে অন্যজনকে দুধ খাওয়াচ্ছে।

এরকম দৃশ্য দেখে সি.এ কে বলতাম, ভাইয়া এসবের মধ্যে বাচ্চারা কেমনে চিকিতসা পায়? ভাইয়া হেসে বলত, এসব বাচ্চাদেরই ইমিউনিটি বেশি। ওরা এখনের ধকল গুলা সামলালেই পরে একেবারে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে।
ততদিনে নিজের বাচ্চার প্রতি আমার আদিখ্যেতা কিছুটা হলেও কমেছে। আর এখন তো পুরাই ছেড়ে দিয়েছি।
আমার আম্মা সবসময় বলে যে বাচ্চাদের ছেড়ে দিলে ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। এখন বুঝি সেটার মর্ম।

যদিও আগেই জানতাম, কিন্তু ইদানিং ব্যাপারটা খুব লিটারেলি পালন করছি।
হাইজিন হাইপোথিসিস বলে, যেসব বাচ্চারা ছোটবেলা থেকে জীবানুর সাথে যুদ্ধ করে বড় হয় তাদের অটোইমিউন রোগ,ক্যান্সার এসব হবার সম্ভাবনা কমে যায়।

এখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম,রোগ বালাই নিয়ে যত পড়াশুনা করি তত ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়। 

আমাদের বাসায় ফাইয়াজের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল ঘরের চিপা চাপা জায়গা গুলা। দরজার পিছনে,খাটের নিচে,টেবিলের তলে।সেদিন দেখলাম ওর পুরা জামা তে ধুলা বালি,ঝুল ময়লা লেগে আছে,আর সে সেগুলা চেটে চেটে খাচ্ছে। এমনকি জানালার গ্রিল ধরেও সে জিহবা দিয়ে চাটতে থাকে। এসব দেখে এখন আর ভয় পাইনা।খুব স্বাভাবিক ভাবে জামা কাপড় চেইঞ্জ করে,হাত পা সাবান দিয়ে ধুয়ে আবার খেলার জন্য ছেড়ে দেই। সে আবার পূর্ণ উদ্যমে ধুলা বালির সাথে খেলায় মেতে উঠে। 

সাদিয়া আপুর ওয়ালে দেখলাম যায়নাব কে কাদার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে, আর সে ইচ্ছা মত কাদাতে লাফালাফি করছে। অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে আপু যে তাকে এত ইউনিক ভাবে ইমিউন সিস্টেম ম্যাচিউর করতে পারছে এটা তো বিশাল ব্যাপার।

আমি নিজে দেখেছি স্পুন ফিডিং কিছু বাচ্চার মায়েরা আছে তারা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে এতই চিন্তিত থাকে যে দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে আসলে বিদেশ থেকেই বাচ্চার খাবার দাবার এমনকি পানি পর্যন্ত প্রিসার্ভ করে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের খাবার,পানি খেলে নাকি তাদের বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাবে।

আমি দেশে ও দেশের বাইরে থাকা এসব মেন্টালিটির মায়েদের বলব,প্লিজ আপনারা বাচ্চার ভাল চিন্তা করতে গিয়ে ওদের লং টার্ম ক্ষতির মধ্যে ফেলবেননা। ফার্মের মুরগি কিন্তু অনেক যত্নে পালিত হয় কিন্তু তাদের আয়ু খুবই কম। নিজেদের বাচ্চাকে এরকম ফার্মের মুরগি বানায়েননা।

জীবন যুদ্ধে যাবার পূর্বে ওদের নিজের ইমিউন সিস্টেমের সাথে যুদ্ধ করে ম্যাচিউর হতে দিন,প্লিজ।
বি.দ্র. বাচ্চার প্রথম ছয়মাসে ওদের ইমিউন সিস্টেম খুব নাজুক থাকে।এসময় সচেতন থাকা অদিখ্যেতা না। সচেতন থাকাটা বরং জরুরি।

প্রজন্ম

১.
বর্তমানে যে বাসায় আছি সেখানে যেদিন প্রথম আসি লিফটে খুব হাস্যোজ্জল এক আংকেলের সাথে পরিচয় হয় । আলাপচারিতায় জানতে পারলাম উনি আমাদের ঠিক পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন । খুব আনন্দের সাথে উনি জানালেন তার ওয়াইফ এবার গল্প করার সঙ্গি পাবে । অনেকদিন ফ্ল্যাটটি ফাকা ছিল বিধায় তার ওয়াইফ খুব নিঃসঙ্গ অনুভব করতেন ।
যাইহোক পরবর্তিতে জানতে পেরেছিলাম আংকেল পাকস্থলির ক্যান্সারে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন, সাথে ছিল ডায়াবেটিস । একদিন উনার কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করে দেখলাম উনার ক্যান্সার ছিল এমন পর্যায়ে যা অপারেশানের উপযুক্ত না । কিছুই খেতে পারতেন না তিনি । যা খেত তাই বমি হয়ে যেত। উনার মৃত্যুর শেষ কয়েকটা মাস উনি কেবল ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডের উপর বেচে ছিলেন । প্রায়ই সময় আমাকে যেতে হত উনার শিরায় ফ্লুইড চালু করে দেবার জন্য । জীবনে রিজিক আল্লাহ উনাকে ভরপুর করে দিয়েছেন । ব্যাঙ্কে টাকা পয়সা অগণিত । দুই ছেলের নামে দুইটা ফ্ল্যাট কিনবেন বলে মনস্থির করেছেন । মৃত্যুর আগেও উনি কেবল স্ত্রী,সন্তান নিয়ে চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকতেন । কিন্তু ফ্ল্যাট কিনে দেবার পূর্বেই একদিন আল্লাহর ডাকে উনি পরপারে পাড়ি জমান ।
উনার মৃত্যুর ঠিক চল্লিশ দিন পর চল্লিশা অনুষ্ঠানে বিল্ডিং এর সবাইকে দোয়া করার উদ্দেশ্যে দাওয়াত করা হয় । বাসায় হুজুর এনে কুরআন শরীফ খতম দেওয়ানো হচ্ছে । আমার বাবা গেলেন দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে । বাসায় গিয়ে আংকেলের দুই ছেলেকে নিয়ে একসাথে দোয়ার উদ্দেশ্যে ডাকলেন । বড় ছেলে বাসায় ছিলনা, ছোট ছেলে এসে জানাল তার খুব মন খারাপ । আমার বাবা আর বাকি হুজুর সবাইকে মন ভরে দোয়া করতে বললেন । এরপর মাগরিবের আযান দিয়ে দিল । আব্বু আবার ছোট ছেলেকে ডাকতে গেলেন । ছোট ছেলে এবারও জবাব দিল, ‘ আংকেল আপনারা মসজিদে গিয়ে আব্বুর জন্য দোয়া করবেন ,ওতেই হবে ।‘ এরকম জবাবে আব্বু তো পুরাই তাজ্জব হয়ে নামাজ পড়তে চলে গেল ।

২.
এক পরিচিত আন্টির স্বামী মারা গেলেন । মারা যাবার মাসখানেক পর দেখি আন্টি ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে যায় মন ভাল করার উদ্দেশ্যে । ছেলে-মেয়েরা ফেইসবুকে ছবি আপলোড দেয় মা কে নিয়ে । বাবাকে নিয়ে অনেক স্মৃতিচারণমূলক কথা লিখে । বাবার ছবি আপলোড দিয়ে ছবির ক্যাপশানে লিখে “ বাবা তোমাকে ছাড়া কোথাও যেতে ভাল লাগেনা , তুমি যেখানেই থেক ভাল থেক “। কমেন্টে বন্ধুরা সান্ত্বনা দেয় । বন্ধুরা লিখে R.I.P Uncle. যদিও কারও মৃত্যুতে ইন্নানিল্লাহ পড়ার নিয়ম কিন্তু এই R.I.P এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে । অতঃপর প্রতি বছর বছর মৃত্যু দিবসে হুজুর ডেকে কুরআন শরীফ খতম করিয়ে পালিত হয় ।

৩.
জীবনে একবার একজন মৃত্যুপথযাত্রী মেয়ের চিকিতসা খরচ ঊঠানোর উদ্দেশে এক মুভি শো তে গিয়েছিলাম । জানতাম না এব্যাপারে কিছুই। কাছের ফ্রেন্ডরা সবাই যাচ্ছে বিধায় আমিও গেলাম । মুভি শো এর টিকিটের সব টাকা দিয়ে সেই মেয়ের চিকিতসা খরচ বহন করা হবে । এই নিয়ে ফেইসবুকে ইভেন্ট খোলা হয়েছিল । এরপরের অভিজ্ঞতা ছিল খুব তিক্ত । মুভি শো তে ছেলে মেয়েরা খুব আয়েশ করে মুভি এনজয় করছে । মাগরিবের আযান দিয়ে দিল, কোন বিরতি নেই । দিব্যি সবাই মানবিক তাগিদে একজনের চিকিতসা খরচ দেবার জন্য মুভি দেখার উসুল আদায় করছে । উঠে গেলাম ওখান থেকে। সোজা বাসায় । সুস্থ করার মালিক যিনি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কেবল টাকা দিয়ে একজনের সুস্থতা কামনা করার মত বোকামির জন্য নিজেকেই বারবার ধিক্কার দিলাম । আর কাউকে যদি সাহায্য করতেই হয় তাহলে কেন সেটা মুভি দেখে উসুল করতে হবে? এরকম আরো অনেক অনেক ইভেন্ট দেখেছি ফেইসবুকে। কনসার্ট, মুভি কোনটাই বাদ নেই । গান,বাজনা,সিনেমা দেখে সাদাকা করার এই নিউ থিম কোথা থেকে এল আমি আজও বুঝতে পারলাম না ।
মৃত্যুর পর যে আমল সবসময় জারি থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল সন্তানের দোয়া । কিন্তু সেই সন্তান যদি হুজুর ডেকে দোয়া পড়িয়ে তার দায়িত্ব শেষ করে তাহলে বাবা-মায়ের বিন্দুমাত্র উপকার আসেনা । যে বাবা-মা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের ভালর জন্য সারাজীবন এত পরিশ্রম করে গেলেন তার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কি কেবল ফেইসবুকে বন্ধুদের নিয়ে মন ভাল করার উদ্দেশ্যে মুভি দেখতে গেলেই শেষ হয়ে যায় ? আমরা কি বাবা-মা কে ভালবাসি? সত্যিই যদি ভালবাসি তাহলে তাদের হক আমরা কতটুকু আদায় করছি? আল্লাহর কাছে দোয়া করি এরকম সন্তান যেন আমরা না হই আর এরকম সন্তান যেন আমাদের না হয় ।

একটি সমাজ, অত:পর তার বোঝা.....

সবেমাত্র তখন ৩/৪ দিন হল নতুন এক ক্লিনিকে জয়েন করেছি । জুনিয়র এক ইন্টার্নের অহর্নিশ অনুরোধের ফলে ওই ক্লিনিকে ডিউটি করা । ক্লিনিকের হালচাল বুঝতে না বুঝতেই একদিন সকালে তিনজন লোক আমার চেম্বারে প্রবেশ করে ।
১ম জনঃ বাচ্চা নষ্ট করাতে চাই ।
আমিঃ এখানে বাচ্চা নষ্ট করা হয় না ।
১ম জনঃ যত টাকা লাগে আমি দিব ।
আমিঃ আচ্ছা ... টাকা পয়সা দিয়ে এসব আমি ম্যানেজ করিনা । আপনি অন্য জায়গায় ট্রাই করেন ।
এই কথা শুনে তিনজন লোক ঊঠে পাশের রুমে গেল ক্লিনিক মালিকের সাথে কথা বলতে । প্রায় ঘন্টাখানিক তারা কথা বলে সেদিন চলে গেল ।

২য় দিন
পুনরায় ওই তিনজন লোকের প্রবেশ আমার রুমে । টেবিলে কয়েকটা ইনভেষ্টিগেশানের কাগজ রাখল । খুব বিনয়ের সাথে প্রথম জন বলল-
- ম্যাডাম ,খুব বিপদে পড়েছি। একটু সাহায্য করেন ।
- কিঞ্চিত একটু নরম স্বরে বললাম, কি বিপদ ?
- আসলে ডাক্তারের কাছে কোন কিছু লুকাতে নেই । তাই বিনা সংকোচে বলছি, আমার ওয়াইফের পেটে যে সন্তান সেটা আসলে আমার সন্তান না । এজন্য বাচ্চা নষ্ট করাতে চাই ।
- স্ট্রেঞ্জ !! আপনার সন্তান না সেটা আপনি কিভাবে বুঝতে পারলেন ?
- আমি মাঝখানে দেশের বাইরে ছিলাম । প্রায় ১৫ দিনের বেশি । বিদেশে থেকেই জানতে পারি আমার ওয়াইফ একজনের সাথে পালিয়ে বান্দরবান চলে গেছে । এরপর যখন দেশে আসি তার পরের মাসে শুনি সে প্রেগন্যান্ট । তাহলে এই বাচ্চা কিভাবে আমার হয় বলেন ?
- ঘটনা এটুকু শুনে আমি পুরাই তাজ্জব । বললাম, আপনি সব জেনেও আপনার ওয়াইফ কে কেন ডিভোর্স দিচ্ছেন না বলুন তো ?
- আমার বাড়ি নারায়নগঞ্জ । বাবা প্রভাবশালী লোক । আমার শশুরও ওই এলাকার প্রভাবশালী লোক । আমি ডিভোর্স দিলে আইনি জটিলতায় ফেলে দিবে আমার শশুরবাড়ির লোকেরা ।
- বিয়ে হয়েছে কত বছর ?
- ৫বছর ।
- খুব আশ্চর্যের সুরে বললাম, এই পাচ বছর আপনি সংসার কিভাবে করলেন ?
- এর মাঝখানে আমার ওয়াইফ আরো বেশ কয়েকবার অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছিল । অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ফেরত এনেছি । আসলে ভালবাসার বিয়ে তো !
- লোকটির কথা শুনতে শুনতে আলট্রাসনো রিপোর্টে হাত দিলাম । রিপোর্ট দেখেই আমার চোখ ছানা বড়া । বললাম, পেটে বাচ্চার বয়স ৬মাস প্লাস হয়ে গেছে । এই বাচ্চা কোণভাবে মুখে ওষুধ খাইয়ে নষ্ট করা সম্ভব না ।
- ম্যাডাম দেখেন না এমন কোন ওষুধ আছে কিনা !
(হঠাত মনে হল লোকটির সাথে এত কথা বলছি অথচ যার বাচ্চা নষ্ট করাবে সেই মহিলাই তো আসেনি । আর সাথে আরো দুজন যে লোক বসে তারাই বা কে ? )
জিজ্ঞেস করাতেই প্রথমজন হাসি মুখে জবাব দিল ওই দুজন তার আপন ছোট ভাই । আর তার ওয়াইফকে আনেনি কারণ তার ওয়াইফ বাচ্চা নষ্ট করতে চাইনা । যা করার গোপনে করতে হবে ।
ঘটনাতে মজা পেলাম কিছুটা । যদিও নারায়ঙ্গঞ্জ শুনে একটি ভীতও হলাম । এবার বললাম,
- দেখেন ভাই, এই বাচ্চা এখানে নষ্ট করা যাবেনা । প্রথমত বাচ্চা পেটের মধ্যে অনেক বড় হয়ে গেছে । তারউপর বাচ্চার মা রাজি না । বাচ্চার মায়ের কনসেন্ট ছাড়া নষ্ট করলে অনেক বড় আইনি জটিলতায় পড়তে হবে । তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল বাচ্চা এভাবে নষ্ট করা খুব গুনাহ ।
- আইনি জটিলতা আমি ম্যানেজ করব । আর যত টাকা লাগে আমি দিব ম্যাডাম । আপনি কেবল কাজটা করে দিন ।
- স্মিত হাসি দিয়ে বললাম , দেখেন ভাই আপনি আইনি জটিলতার ভয়ে এরকম ওয়াইফের সাথে আপনি ৫বছর সংসার করে আসছেন, ডিভোর্স দিতে ভয় পাচ্ছেন । সেই আপনাকে কোন ভরসায় ক্লিনিক কতৃপক্ষ ভরসা করবে ? ততক্ষনে আমার ডিউটি টাইম শেষ । আমি ঘড়ি দেখে বের হবার জন্য তাড়া করছি ।
- ঠিক আছে ম্যাডাম, তাহলে আপনার সাথে এটা নিয়ে আবার বসব আমি ।
আমার তখন ছেড়ে দে মা কেন্দে বাচি অবস্থা । ক্লিনিকের মালিক দিদিকে বললাম, এই কেইস আমি ডিল করবনা । আপনি যেভাবে পারেন রেফার্ড করবেন । দিদি দেখলাম কিছুটা নিমরাজি টাইপ অবস্থা ।
পরে ভাবলাম, ক্লিনিকে আমি কোন পাওয়ার খাটাতে পারবনা । এখানে টাকা দিলে সব ওকে হবে । আমি সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম এই ক্লিনিক চাকরি আর না । কয়েকটা শিডিউল ডিউটি শেষ হলেই আমি বাচি ।
কিন্তু ঘটনা তখন আসলে শুরুই হয়নি সেটা বুঝলাম পরদিন সকালে ।

৩য় দিন
১ম জনঃ ম্যাডাম, আপনার জন্যই অনেকক্ষন ওয়েট করছি ।
- আমার জন্য ওয়েট করার কি আছে । ডিউটি ডাক্তার আর কেউ ছিলনা ?
- না আসলে আপনার সাথে বলেই বেশি স্বাচ্ছন্দ ফিল করছি । মুখে ওষুধ ছাড়া আর কি উপায়ে বাচ্চা নষ্ট করা যায় ?
- স্যালাইনে ওষুধ দিয়ে কৃত্তিম লেবার পেইনের মাধ্যমে ।
- আমি তো গত ৩মাস ধরে আমার ওয়াইফকে এন্টাসিড সিরাপের মধ্যে সাইটোমিস ওষুধ গুলিয়ে খাওয়াচ্ছি । এতে কেন কাজ হল না ?
- কি বলেন? ৩মাস ধরে সাইটোমিস খাওয়াচ্ছেন? এটা খাওয়ানোর বুদ্ধি কার কাছে পাইলেন?
- ফার্মেসির লোকেরা বলল, এটা খাওয়ালে নাকি বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় । কই বাচ্চা তো নষ্ট হল না !
- প্রথম তিনমাস খাওয়াননি তো তাই নষ্ট হয়নি । যাইহোক ,ভাই যা হবার হয়ে গছে । আপনার ওয়াইফ কে ৫বছর এভাবে সহ্য করতে পারলে, নিষপাপ মাসুম বাচ্চা আর কি দোষ করল বলেন ? মেনে নিয়ে শান্তিমত সংসার করেন ।
- মেনে তো নিতাম । কিন্তু পেটের বাচ্চা তো ছেলে । পরে আবার আমার সম্পত্তির ভাগিদার হবে । যেখানে আমার বাচ্চা না, সেখানে কেন তাকে আমি সম্পত্তির ভাগ দিব ? আর শান্তিমত সংসারের কথা বলছেন ? ওটা আর হবেনা । আমি দেশ ছেড়ে চলে যাব । কিন্তু এই বাচ্চা নষ্ট না করে যেতে পারছিনা ।
- কেন কেন ??
- প্ল্যান ছিল, দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরবনা । কিন্তু এই বাচ্চাই সব ঝামেলা বাধাল ।
- কিভাবে ?
- বুঝলেন না ! আমি বিদেশে গেলে তো আমার শশুর বাড়ির লোকেরা এই বাচ্চা নিয়ে মামলা করতে যাবে ? অনেক অনেক ব্যাপার আছে ,সব বলে বুঝানো যাবে না । শুধু এই বাচ্চা নষ্ট করলেই আমি খালাস ।
- বললাম, এই বাচ্চা তো আপনার না । আপনার ভয় কিসের ? যদি মামলা করে তাহলে আপনি সুযোগ পাবেন প্যাটার্নিটি টেস্ট করে আপনার মিথ্যা পিতৃত্বের সমুচিত জবাব দিতে ।
- মামলা করলেই তো আমাকে জেলে ঢুকাবে ।
- কয়েকটা দিন জেল খাটলে কি আসে যায় বলেন !
- আমার বিরুদ্ধে আসলে আরো অনেক কেইস আছে, একবার জেলে ঢুকলে আমি অন্য কেইস নিয়ে ফেসে যাব ।
এমনিতেই আমি এসব ফালতু ব্যাপার ডিল করতে চাইনি । কিন্তু কিঞ্চিত ভয় পেয়ে এতক্ষন ধরে উনার কথা শুনতে হয়েছে । এবারের কথা শুনে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম । গতদিন ক্লিনিক মালিকের কাছে শুনলাম ক্লায়েন্ট নাকি এলাকার প্রভাবশালী মাস্তান । সুতরাং বুঝে শুনে সেভাবে ব্যাপারটা মিমাংসা করতে হবে ।
সেদিনের মত ডিঊটি ইস্তফা দিয়ে আসলাম ।

৪র্থ দিন
- ম্যাডাম বললেন না তো কিভাবে আমাকে আপনি সাহায্য করবেন?
- দেখেন ভাই , একমাত্র ন্যাচারালি এবরসন ছাড়া এই বাচ্চা মুখে ওষুধে নষ্ট হবেনা ।
- ন্যাচারালি এবরশন বলতে কি বুঝাচ্ছেন ?
- এই ধরেন বাথরুম থেকে স্লিপ কেটে পড়ে গেল কিংবা সিড়ি থেকে পড়ে গেল এরকম ।
- আচ্ছা, এর আগে তো আমি এরকম ট্রাই করেছিলাম । বাথরুমে সাবানের ফোম দিয়ে স্লিপারি করে রেখেছিলাম । পড়েনি । বাইকে করে ইচ্ছা করে এক্সিডেন্ট করেছিলাম । বাইক থেকে পড়েও তার কিছু হয়নি ।
- তাহলে আর কি ! আমার কাছে আর কোন ওয়ে নাই ।
- আচ্ছা বাচ্চা হবার পর পর বাচ্চা কে মেরে ফেলা যায় না ?
- শুনেই আকাশ থেকে পড়লাম । কি বলেন আপনি ? এরপর অবশ্য মনে মনে ভাবলাম জীবনে কয়টা মার্ডার করেছে আল্লাহই জানে । শুধু শুধু তো আর প্রভাবশালী গুন্ডা হয়নি ।
- দেখেন আমি খুব নিরুপায় । আমাকে সাহায্য করলে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব ।
- আচ্ছা, একটা ব্যাপার ক্লিয়ার হতে পারছিনা । আপনি বললেন শুধু বাচ্চার জন্য আপনি দেশের বাইরে যেতে পারছেন না । কেন আপনার ওয়াইফ কি আপনি বিদেশে পালিয়ে গেলে বিয়ের কাবিন নিয়ে মামলা করতে পারবে না ?
- বিয়েই তো করিনি, কাবিন আসবে কোথা থেকে ? স্যরি, আসলে আপনাকে সত্য বলতে দ্বিধা নেই । তাই সব স্বীকার করেই ফেললাম ।
- মানে এই ৫বছর বিয়ে ছাড়াই সংসার করেছেন । তার মধ্যে আপনার গার্ল ফ্রেন্ড আরো কয়েকবার অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছে ।
- আসলে সে অনেক লম্বা ইতিহাস । মেয়েটা তখন নেশা করত । এই আমি তাকে নেশার জগত থেকে ছাড়িয়ে এনেছি ।

এটুকু বলার পর আমার আর শুনার রুচি হলনা । বললাম, ভাই আপনি যা কিছুই করতে চান আপনি ক্লিনিক মালিকের সাথে কথা বলেন । এটা সমাধান করা আমার এখতিয়ারের বাইরে ।
পরে আর ওই ক্লিনিকে যাওয়া হয়নি । যারা উপরের লেখাটা পড়ে ভাবছেন আমি এই ঘটনার জন্য ক্লিনিক ছেড়ে দিয়েছি তবে ভুল ভাবছেন । উপরের ঘটনাটা ছিল সেই গাধার উপর অর্পিত অগনিত বোঝা যার ফলে সামান্য খড়ের ভার সহ্য করতে না পেরে গাধা টা মারা গিয়েছিল ।

হুম , এরকম আরো বহু কেইস ক্লিনিকে ফেইস করেছি । ঘুনে ধরা সমাজের ঘুন গুলোকে প্রতিনিয়ত নিজ চোখে এভাবে প্রত্যক্ষ করেছি । যখন সমাজ আর এই ঘুনের ভার সহ্য করতে পারেনা তখন টি.এস.সি তে পহেলা বৈশাখে ঘটে যাওয়ার মত নির্লজ্জ, অবর্ণনীয় ঘটনা অবলীলায় ঘটে যায় ।

সিনেম্যাটিক ডাক্তারি!


প্লাষ্টিক সার্জারিতে যখন ডিউটি ছিল
তখন মনের গহীনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে চরম
উতসাহে ডিউটির প্রথম দিন
হাসপাতালে গিয়ে দেখি সেদিন ওটি ডে।
তখন ছিল রোজার ঈদের ছুটি শেষ হবার প্রথম
কার্যদিবস। স্বাভাবিক ভাবে অনেকেই
আসেনি। আমাকেই ফার্স্ট এসিস্ট
করতে হবে ওটিতে। তাই দাড়িয়ে গেলাম।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য একজন প্লাস্টিক
সার্জনের সাথে ওটি করার মধ্যেই ভাবলাম
এটাই সুযোগ নিজের সব কৌতুহল মেটানোর।
স্যারকে বললাম, প্লাস্টিক
সার্জারি করে কি নিজের
চেহারা বদলে ফেলা সম্ভব? স্যার
তো আমার প্রশ্ন শুনে খুব
একটা হাসি দিয়ে বলল সিনেম্যাটিক
মেডিকেলে সম্ভব কিন্তু বাস্তবে না।
হা হা হা। মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় কত
নাটক সিনেমা দেখতাম
সেখানে নায়িকা চেহারা বদলে একেবারে ভিন্ন
মানুষ হিসেবে আবির্ভাব হত। সবই
নাকি প্লাস্টিক সার্জারির কেরামতি!
আচ্ছা এরকম বহু মিসকনসেপশান
আমরা সিনেমা, নাটকে পেয়ে থাকি। চলুন
দেখি কি কি.....
১.প্লাস্টিক
সার্জারি করে সিনেমাতে যে অহরহ
চেহারা বদলানো।যায় এটা বাস্তবে কখনই
সম্ভব না। চেহারার কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন
সম্ভব যেটা সিনেমার তুলনায় খুবই নগন্য।
২. আচ্ছা,যমজ ভাই কিংবা বোন আঘাত
পেলে নাকি অন্যজনও ব্যথা টের পায়।
জানিনা এই থিওরি সিনেমার ডিরেক্টর
কেমনে কোথায় পেল? একজন আঘাত
পেলে অন্যজন কেমনে টের পাবে?
মেকানিজম কি অনারেবল ডিরেক্টর স্যার?
৩.খুব খুব কমন একটি বাংলা সিনেমার দৃশ্য
হল ডাক্তার সাহেব এসে মহিলার হাত ধরেই
বলে দেয় যে সে প্রেগন্যন্ট। পালস দেখেই
যদি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কনফার্ম করা যায়
তাইলে আর আমরা গাইনিতে এতদিন এত এত
পরীক্ষা কেন শিখলাম!
৪.ওহ!
প্রেগন্যান্সি ব্যাপারটিকে মুভিতে আরো গুরুত্ব
বুঝানোর জন্য প্রায়ই বলা হয় দশ মাস দশ
দিন পেটে ধারণ করা মায়ের চোখের জল
ছেলে বুঝলনা। আহা! দশ মাস দশ দিন
হলে তো পোস্ট ডেটেড প্রেগন্যান্সি। প্রকৃত
হিসাব হল নয় মাস সাতদিন।
তাহলে চিন্তা করে দেখেন পুরা একমাসের
হিসাবের গন্ডগোল দিয়ে সিনেমা এখনও
বহাল তবিয়তে জনপ্রিয়তা পেয়ে যাচ্ছে।
৫. কোন এক তুমুল জনপ্রিয় গানে দেখেছিলাম
অন্ধ নায়িকাকে ভালবাসার মোহে নায়ক
তার দুই চোখ দান করে নিজে অন্ধ হয়ে যায়।
আরে ভাই থামেন। বাস্তবে দুই চোখ কেউ
দেয়না আর একচোখ দিলে কেউ অন্ধ
হয়ে যায়না। হয়ত ভাবছেন নায়ক
নায়িকাকে বেশি ভালবাসে তাই দুই চোখ
তো দিতেই পারে। না ভাই,
মেডিকোলিগ্যাল ব্যাপার গুলা অত্যন্ত
জটিল।কেউ চাইলেই দুই চোখ দান
করতে পারবেনা।
৬. কিডনি দান করে বন্ধু মারা যায় এমন
অহরহ ব্যাপার সিনেমাতে কত দেখায়! আর
বন্ধুর কিডনি নিয়ে নায়ক
কিংবা নায়িকা দিব্যি সুখে দিন কাটায়।
আহ! বাস্তব যদি এমন হত! যে কিডনি দান
করে তার কিন্তু বাস্তবে কোন সমস্যা তেমন
হয়না। একটা কিডনি নিয়ে সে দিব্যি জীবন
পার করে দিতে পারে।
সমস্যা হয় যে কিডনি নেয়। কারন
ইমিউনিটি দমিয়ে রেখে কিডনি শরীরে প্রতিস্থাপন
অনেক প্যারার ব্যাপার। আর
সেটা সাকসেসফুল হলেও যে রোগীর
সমস্যা হবেনা এমন বলা টাফ।
অথচ সিনেমাতে পুরাই উল্টা দেখাচ্ছে।
রোগী বেচে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে আর
বেচারা কিডনিদাতা মরে যাচ্ছে।
৭. সিনেমাতে কেন যেন সবার ব্লাড গ্রুপ
নেগেটিভ হয়। আচ্ছা তাও নাহয় হল।
দেখা যায় নায়ক-
নায়িকা হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে শুয়ে একজন
আরেকজন কে রক্ত দান করছে। নায়কের শরীর
থেকে রক্ত
এন্টি গ্রাভিতে উপরে গিয়ে ব্যাগে জমা হয়
আর সেই ব্যাগ থেকে রক্ত সাই সাই
করে নিচে নেমে নায়িকার শরীরে প্রবেশ
করে। আহা! পুরাই এক ঢেউ এর মত ভালবাসার
কার্ভ তৈরি হয়।
বাস্তবে কি হয় জানেন? একজনের রক্ত
নিয়ে সব পরীক্ষার পর ওকে হলে ডোনারের
রক্ত টানা হয়। এরপর সেই রক্ত রিসিভার
কে আলাদাভাবে দেয়া হয়।
এখানে পাশাপাশি বেডে শুয়ে রক্ত দেবার
রোমান্টিসজম পুরাই ডিরেক্টরের
কল্পনাপ্রসূত ভুয়া কাহিনী।
৮.সবচেয়ে লেটেস্ট মিসকনসেপসান
হচ্ছে ক্লোনিং নিয়ে।
বাংলা মুভিতে এটা এখনও আসেনি মনে হয়।
ব্যাপার না। অনন্ত জলিল নিয়ে আসবে হয়ত
খুব শিঘ্রি।
মুভিতে যেটা দেখায় তা হল বিরাট এক
বিজ্ঞানি যে নিজের ক্লোনিং করতে চায়।
সে বিশাল এক ল্যাবের মধ্যে কফিন টাইপ
কিছু একটার মধ্যে ঢুকে যায়। এরপর ল্যাবের
অপর সাইডের বাক্স থেকে সেইম আরেকজন
এডাল্ট ক্লোনিং হয়ে বের হয়।
অনেকটা কপি-পেষ্টের মত।
এদের যদি বিন্দুমাত্র মেডিকেলের
এ,বি,সি জ্ঞানও থাকত তাইলে এরকম
গাজাখুরি কনসেপ্ট বানানো সম্ভব
হইতো না।
ক্লোনিং করতে গেলেও যে মায়ের
গর্ভে তাকে লালিত পালিত হতেই হবে!
এরকম কোন বাক্স আজ পর্যন্ত আবিষ্কার
হয়নি যার মধ্যে কৃত্তিম
উপায়ে বাচ্চা উতপাদন করা যাবে।

(আর আপাতত মনে পড়ছেনা।
পরে মনে হলে এড করে দিব।)

প্রফেশনাল!

১.
পাশের বিল্ডিং এর বাড়ির কর্মসহযোগী মহিলা আমার কাছে প্রায়ই আসে অসুস্থতার জন্য চিকিতসা নিতে। একবার আসল হাইপারসেনসিটিভিটি টাইপ- ১ নিয়ে।
চিংড়ি, বেগুনের ঝোল খেয়ে একেবারে তুলকালাম অবস্থা। চুলকানি সাথে সারা মুখ ফুলে গেছে। সব দেখে আর হিস্ট্রি শুনে চিকিতসা দিয়ে দিলাম।
দুদিন পর সেই একই সমস্যা নিয়ে আবার তিনি হাজির। বললাম, ওষুধ খেয়ে কমেনি? উত্তর জানাল না। খুবই কনফিউসড হয়ে গেলাম। একটু উতসুক হয়ে তাকে তার ওষুধ গুলা আনতে বললাম।আমি তাকে তিনটি খাবার বড়ি লিখে দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন তিনি আমাকে তার ওষুধ গুলা দেখালেন সেখানে মাত্র একটি বড়ি।
খালাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার বাকি দুটা ওষুধ কই গেল? জানাল, ওষুধ কেনার জন্য গৃহকর্তীর কাছে যখন তিনি টাকা চাইতে গেলেন তখন সেই গৃহকর্তী প্রেস্ক্রিপশান দেখতে চাইলেন। উল্লেখ্য গৃহকর্তীর এজমার সমস্যা আছে, এজন্য তিনি স্টেরয়েড খান ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
যাইহোক আমার লেখা প্রেসক্রিপশান দেখে বললেন তিনটে বড়িই কেনা লাগবেনা।শুধু চুলকানির জন্য যে এন্টিহিস্টামিন দিয়েছিলাম সেটা কেনার টাকা দিলেন। সাথে খালাকে বুঝিয়ে দিলেন যে বাকি দুটার একটা হল গ্যাসের ওষুধ, আরেকটা হল শ্বাসকষ্টের ওষুধ যা উনার জন্য অপ্রযোজ্য।
বুঝলাম যে স্টেরয়েড আর এন্টিআলসারেন্ট প্রেসক্রিপশান থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। তাই বুঝলাম দুদিন পর একই সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আগমনের হেতু।
ভাবছি এখন থেকে চিকিতসা দেবার পর প্রতিটা ওষুধের ক্লিনিক্যাল ইন্ডিকেশান যুক্ত বইয়ের পাতাগুলা প্রেসক্রিপশানে এটাচ করে দিব।
বাংগালিরা যেহেতু সবাই ডাক্তার সেহেতু তারা পড়াশুনা করেই ডাক্তারি বিদ্যা ঝাড়ুক।

২.
বয়স্ক এক মহিলা, পাশের বাসার আন্টির শাশুড়ি। নানাবিধ সমস্যা। প্রেসার, ডায়াবেটিস আর হার্টের রোগ। মাঝে মাঝেই আমার কাছে আসে বিভিন্ন ব্যাপারে পরামর্শ নিতে।
হার্টের সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এসপিরিন খেতেন। সম্প্রতি তার কাশি আর শ্বাস কষ্টের জন্য একজন হার্ট স্পেশালিস্ট দেখান। নতুন প্রেসক্রিপশানে পুরানো ওষুধ চেঞ্জ করে নতুন ড্রাগ লিখে দেন।
আমার কাছে আসার হেতু এত এত বড় ডাক্তার দেখায় তবু তার রোগ সারেনা। আমি উনার চিকিতসার ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে বললাম স্যার অনেক ভাল ওষুধই তো প্রেস্ক্রাইব করেছেন। কাজ তো করার কথা।
যথারীতি আমি উনার ওষুদের বক্স ঘেটে দেখলাম এসপিরিন খাচ্ছেন আর চেঞ্জ করে দেয়া ক্লপিডগরেল বক্সে নাই। জিজ্ঞেস করলাম নতুন প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী যে ড্রাগ দিয়েছে সেটা কই?
জানাল, ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়েই পরিচিত এক ফার্মেসিতে গেছিল ওষুধ কিনতে। দোকানদার খুব আন্তরিকভাবে নাকি জানাল যে এসপিরিন দামে কম, হার্টের জন্য ভাল। ক্লপিড আর এসপিরিন তো একই ওষুধ কিন্তু অনেক দামি, শুধু শুধু দাম দিয়ে কেনার দরকার কি? এসব শুনে তিনিও সরল মনে এসপিরিন কিনেই চলে এসেছেন।
সব কথা শুনে মনে মনে বললাম ফার্মেসির দোকানদারের কথাই যখন শুনবেন তাইলে এম.ডি, এফ.সি.পি.এস করা স্পেশালিস্টের কাছে কেন দৌড়াইছিলেন?

৩.
মোবাইলে এক আত্মীয়ের সাথে কথা হচ্ছিল, তার প্রেগনেন্সি রিলেটেড শারীরিক অসুবিধার জন্য আমার কাছে পরামর্শ চাইল। সমুদয় সব বৃত্তান্ত শুনে এস.এম.এসে তাকে ওষুধ লিখে দিলাম।
পরদিনই আত্মীয়ার স্বামী আমাকে জানালেন নাপা যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর জন্য আমি কিভাবে এটা প্রেস্ক্রাইব করলাম? বুঝলাম ঘটনার আদ্যোপান্ত।
ভাবছি চারপাশে সফদার ডাক্তারে ঠাসা এই দেশে এত্ত আনপ্রফেশনাল আমি কবে প্রফেশনাল হব???