বুধবার, ১৭ জুন, ২০০৯

ভারসাম্যহীন চাওয়া-পাওয়ার কিছু গল্প...

ঘটনা ১

সুন্দর,হ্যান্ডসাম,শিক্ষিত ছেলের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই ছেলের উপযোগী মেয়ে পাওয়া যাচ্ছেনা।কারন ঐশ্বরিয়ার মত সুন্দরী মেয়ে কোথাও মিলতেছেনা।ছেলের মায়ের খুব ইচ্ছা তার বৌমা হবে বিশ্বের সেরা সুন্দরিদের একজন।কিন্তু ব্যাটে বলে মিলতেছেনা।খুব সুন্দরী মেয়ে হলে সে হয় খাট।আবার খুব লম্বা হলে হয় শ্যামলা।এই জাতীয় সমস্যায় যখন সবার ঘুম হারাম তখন হঠাত মিলে গেল কাংখিত ঐশ্বরিয়ার সন্ধান।মেয়ে যেমন লম্বা তেমন সুন্দরী।বাবা মার একমাত্র মেয়ে।মেয়েকে দেখে ছেলের মায়ের খুশি আর ধরেনা।মেয়ের মা বললেন ‘আমার মেয়ে গ্লাসে পানি ঢেলেও খেতে পারেনা,খুব শৌখিন।বিয়ে ,সংসারের ঝামেলা কি সামলাতে পারবে?’ছেলের মায়ের সাথে সাথে জবাব...আমি আমার বৌমাকে ঘরে সাজায় রাখব।তাকে দিয়ে কখনো কাজ করাব নাকি?আমার নিজের মেয়ের মত করে রাখব...এত সুন্দর জবাবে মেয়ের মায়ের আর কোন কথা থাকেনা।খুব দ্রুত বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যায়।

যথাসময়ে বিয়ের কিছুদিন পর ঐশ্বরিয়ার মত সুন্দরী বৌ এর সৌন্দর্য আর ভাল লাগেনা।শ্বাশুড়ী বৌ এর প্রতিটা পদক্ষেপে ভুল ধরে।খুব তিক্ত সম্পর্কের শুরু হয়।ওদিকে স্বামীর সাথেও বৌ এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভাল হয় না।কে কখন ফোন করে,কি মেসেজ দেয় এই নিয়ে শুরু হয় মান-অভিমান।একসময় বিশ্বাস-অবিশ্বাস এর এক কঠিন স্থানে দাঁড়িয়ে যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।ঐশ্বরিয়ার মত সুন্দরী মেয়ের এভাবে দ্বন্দ্ব-কলহে চলতে থাকে সাংসারিক জীবন...


ঘটনা ২

মেয়ে খুব সুন্দরী,পড়াশুনায় খুব বেশি ভাল না হলেও আনেক স্মার্ট।প্রসেনজিত তার ড্রীমহিরো।প্রসেনজিতের স্বপ্নে বিভোর থাকে সর্বদা সে।মেয়ের বাবা এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব।মেয়ের বিয়ের জন্য তাই যে ছেলে খোজা হচ্ছে তাকে হতে হবে সেইম রাজনৈ্তিক আদর্শের অনুসারী।তো একসময় বাবার ও মেয়ের পছন্দ অনুযায়ী ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়।বাবার আদর্শবান ও মেয়ের স্বপ্নের হিরোর সাথে বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়।এবং বিয়েও হয়......


বছরখানেক পর শ্বশুরের সাথে জামাই এর দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাজনৈ্তিক ব্যাপার নিয়ে।দ্বন্দ্বটা একসময় খুব চরম আকার ধারন করে এবং পরবর্তিতে বাপের বাড়ির সাথে মেয়ের সমস্ত সম্পর্কের ইতি টানতে হয় চিরতরে...


ঘটনা ৩

মেয়ে শিক্ষিতা,সুন্দরী,মোটামুটি ধার্মিক।মেয়ের বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে চিন্তা করে ছেলে দেখার ধুম পড়ে গেছে।সবাই খুব মহড়া করে ছেলে খুজতেছে।একটা ছেলে পাওয়া গেল।ইঙ্গিনিয়ার,বুয়েট থেকে পাস।সবই ঠিকঠাক কিন্তু সমস্যা হল ছেলের দাড়ি নিয়ে।ছেলে খুবি ধার্মিক।শুধুমাত্র দাড়ির জন্য এত সুন্দর একটা ছেলে কে হাতছাড়া করতে হল।তারপর আবার ছেলে দেখার পর্ব...এবার যে ছেলে পাওয়া গেল সে অসম্ভব হ্যান্ডসাম,শিক্ষিত,রাজউক এ চাকরি করে,অনেক মোটা বেতনের চাকরি।মেয়েরো ছেলেকে পছন্দ।তাই সবকিছু দেখে শুনে বিয়ে দেয়া হল মেয়েকে।
বছর খানিক পর দুর্নীতির অভিযোগে জামাই এর চাকরি চলে গেল।কিন্তু তাতে কি? জামাই তো কোটি টাকার মালিক,তাই মেয়ের সংসারে কোন প্রবলেম হলনা।কিন্তু মেয়ের বাবা-মায়ের চিন্তার কোন শেষ নেই।দুর্নীতিবাজ ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়ে তারা এখন সর্বদা মানষিক কষ্টে সাফার করতেছে...


ঘটনা ৪

এবারের ঘটনা একটু ভিন্ন...মধ্যবিত্ত পরিবারের অত্যন্ত ধার্মিক এবং সুন্দরী মেয়ে।শিক্ষিত এবং ধার্মিক ছেলের জন্য পরিবারের সবাই চিন্তি।ইনফ্যাক্ট শিক্ষিত ছেলে পাওয়া গেলেও ধার্মিক পাওয়া খুব কঠিন।আর ধার্মিক হলে শিক্ষিত হয়না।এই যুগে এই দুই গুনের সংমিশ্রন আসলেই খুব রেয়ার।যাইহোক,মেয়ের চাচার বন্ধুর মাধ্যমে এক উচ্চ শিক্ষিত এবং ধার্মিক ছেলের সন্ধান মিলল,ছেলে অস্ট্রেলিতে পি.এইচ.ডি করছে।উচ্চবিত্ত এবং অত্যন্ত ধার্মিক পরিবারের সন্তান।কিন্তু মেয়ের ফ্যামিলির স্ট্যাটাস এর সাথে ছেলের ফ্যামির স্ট্যাটাস একেবারেই ভিন্ন।দিনক্ষন ঠিক করে একদিন ছেলে পক্ষ মেয়ে দেখতে আসল।্মেয়ে দেখতে এসেই ছেলের + ছেলের ফ্যামিলির সবার পছন্দ হয়ে গেল।স্ট্যাটাস এর ব্যবধান যদিও অনেক বড় কিন্তু যেহেতু মেয়ে ধার্মিক+সুন্দরী তাই ছেলে পক্ষ সবাই রাজি হয়ে গেল।আর মেয়ের ফ্যামিলির তো কোন আপত্তি নেই।তারা যেন পেয়েছে সোনার ছেলে।উচ্চবিত্ত,উচ্চশিক্ষিত,অত্যন্ত ধার্মিক এরকম ছেলে লাখে তো একজন।তারপর বিয়ের সবকিছু চূড়ান্ত হয় এবং যথাসময়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের পর...যেহেতু উচ্চবিত্ত পরিবারে মেয়ের বিয়ে হয়েছে তাই সেখানে মেয়ের এডজাস্ট করতে অনেক সময় লাগে।মেয়ের কোন স্বাধীনতা সেখানে নেই।নিজের বাবা-মাকে দেখতে আসার জন্য শ্বাশুড়ির নিকট অনুমতি নিতে হয়।কিন্তু অনুমতি খুব সহজে মিলে না।কঠোর পর্দা রক্ষার জন্য তাই সবকিছুতেই সীমাবদ্ধতা রক্ষা করতে হয়।আর শ্বশুরবাড়ির কেউ মেয়ের বাড়ির সাথে সেরকম সম্পর্ক রাখতে চায়না তাদের স্ট্যাটাস রক্ষার জন্য।আর জামাই? সে তো মায়ের অনুমতি ছাড়া এক পাও চলেনা।সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে মায়ের কথামত সব কাজ করে।মেয়ের বাবা-মা খুব বেশি খুশি না যতটা তারা বিয়ের আগে ছিল।তারা মেয়ের শ্বশুর বাড়ির সাথে তাল মিলাতে পারেনা।তাদের ৫/৬ টা গাড়ি নেই,বাড়ি নেই।ইচ্ছা করলেই মেয়েকে তারা দেখে আসতে পারেনা।মেয়ে একসময় ছেলের সাথে চলে যায় অস্ট্রেলিয়াতে।বছরে ২ বার দেশে আসে।দেশে আসলেও জামাই এর সাথে মেয়ে তার বাপের বাড়ি আসতে পারেনা।জামাই অনেক রিসার্ভ ।মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয় বাবা-মার সাথে।এইতো! মেয়ের বাবা-মার সান্ত্বনা শুধু এইটুকুই যে তারা বলতে পারে তাদের মেয়ে জামাই অস্ট্রেলিয়াতে থাকে,উচ্চশিক্ষিত,ধার্মিক ও ধনি পরিবার।(যদিও ধর্ম টা তারা শুধু নিজেদের মত করে পালন করে।ধার্মিক হওয়া সত্তেও উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত র ব্যাবধান তাদের কাছে কখনো কমে না।)...মেয়ে যেমন সর্বদা বাবা-মা,ভাই-বোন এর চিত্র অনুভব করে তেমনি বাবা-মাও তাদের সেই আদরের মেয়েকে না দেখার বেদনায় তারা দিনযাপন করে।