শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০১০

লাভগুরু আপনাকেই বলছি...

আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যদি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে অন্য কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে ভালবাসে এবং সেক্ষেত্রে যদি দুই পরিবার এই বিয়েতে রাজি না থাকে তাহলে তারা কি করতে পারে? কেন জানিনা আমাকে এই ধরনের পরিস্থিতি বেশি ফেইস করতে হয়। বিশেষ করে এই ধরনের ভালবাসার কেস বেশি হ্যান্ডেল করতে হয়। তবে ফলাফল আল্টিমেইটলি জিরো। কেননা ভালবাসার রঙ এর মধ্যে কোন এক অদৃশ্য প্রবল আকররষণী শক্তি থাকে যেটার সামনে সব যুক্তি একেবারে ভ্যানিশ হয়ে যায়। ইন্টারমিডিয়েটে থাকতে আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবির একজনের সাথে এফেয়ার ছিল। সূত্র মোবাইল ফোন। একেবারেই অজানা, অচেনা,অদেখা। ইমেইলও চালাচালি হত। ঘটনা আমি জানতাম। শুরু থেকেই শুধু তাকে একটা কথা বলেছিলাম যে এভাবে মোবাইলে এফেয়ার পুরাই অযৌক্তিক। তাছাড়া আমার আর বলার কিছু ছিলনা। প্রায় ৬/৭ মাস পর সেই মোবাইল প্রেম ভেঙ্গে যায়। কারণ ছিল খুব ইন্টারেস্টিং। মুঠোফোনের ছেলেটি তার একটা ছবি পাঠায় ডাকযোগে। সেই ছবি দেখে আমার বান্ধবির স্বপ্ন একেবারে চুরমার হয়ে যায়। তারপর মোবাইল প্রেম সেদিনই শেষ। মোবাইল প্রেম শেষে আরো কিছু এফেয়ার ঘটিত ঘটনায় সে আবার জড়িয়ে যায়। সেটা এতটাই সিরিয়াস পর্যায়ের ছিল যে কলেজ ক্যাম্পাসে সেটা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। অতঃপর অঘটন...সন্ত্রাসী দ্বারা বিপক্ষের কোন গ্রুপ আহত হল। সব কিছুর সাথে কিভাবে যেন সে জড়িয়ে পড়ল। প্রিন্সিপাল পর্যন্ত ঘটনা গেলে আমার বান্ধবির টিসির সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা সে পেয়ে গেল। এই নিয়ে অবশ্য আমাকে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে বেশ। উপর মহলের সাথে যোগাযোগ করে তাকে টিসি থেকে নিস্তার দেয়া হল। অবশ্য ক্রেডিট ছিল ওরই বেশি। কারণ প্রচন্ড মেধাবী ছিল সে, কলেজের কিছু একাডেমিক পরীক্ষায় তার সাফল্যের কাছে কেউ দাড়াতে পারেনি। মোটামুটি মেধার জোরেই তার জন্য সুপারিশ করা সহজ হয়েছিল। কেন জানিনা ভালবাসার অবমনানা আমাকে যেভাবে পীড়া দেয় তা অন্য ক্ষেত্রে খুব কম দেয়।
বন্ধুত্বের দাবি থেকে ভালবাসার সর্বনাশা স্থান থেকে কাউকে যখন দূরে সরাতে ক্রমাগত চোখের পানি দিয়ে হলেও তার জন্য চেষ্টা করে যাই ঠিক তখনই যদি জানতে পারি যে তার কোন ভাই কিংবা বোন পরিবার থেকে মা-বাবার অলক্ষ্যে তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে তখন নিজেকে খুব ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। পরিবারেই যেখানে আদর্শগত শিক্ষা দিয়ে কেউ বেড়ে উঠেনা সেখানে ভাই/বোন তো সাহায্য করবেই!!! বাবা-মা আক্ষেপ করে আর কতটুকুই বা শেষ রক্ষা করতে পারবে......
টিভি দেখা হয়না অনেক অনেক বছর। মাঝে মাঝে দুই একটা অনুষ্ঠান হয়ত পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেখি, সেটাই আমাকে বিনোদন জগতের আপডেইট রাখে। ছোট ছোট কোমলমতি বাচ্চাদের নিয়ে আজকাল যে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান করা হয় সেগুলো দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বাচ্চাদের মধ্যে এখন থেকেই মিডিয়াতে আসার যে প্রবনতা, নিজেদের টিভি পর্দায় আনার লোভ, স্টার হবার যে ইচ্ছা জাগিয়ে তোলা হচ্ছে সেটা কতটা যৌক্তিক আমি বুঝিনা। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম বাচ্চারা যেসব গান বা নাচের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করে সেখানে যে যত বেশি ম্যচিউর রোমান্টিক ভাব তুলে ধরতে পার বিচারক তাতেই বেশি খুশি হয়। এত অল্প বয়সে যাদের ভালবাসার রূপ বুঝানোর জন্য ইন্সপায়ার করা হচ্ছে তারা ইন ফিউচার কি রিপ্রেসেন্ট করবে সেটা আর ভাবতে ইচ্ছা করেনা।
মনোবিদ্যার অধ্যাপক মেহতাব খানমের আর্টিকেল আমার সবসময় খুব ফেবারিট। সেদিন প্রথম আলোতে উনি একটি ফিচারে বাচ্চাদের নিয়ে করা কিছু বিজ্ঞাপনের চরম সমালোচনা করে দারুন কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। আজকাল ফ্ল্যাট বাড়ি,গাড়ি,এসি র বিজ্ঞাপনে একটা বাচ্চা যখন বলে “কক্সবাজারে সমুদ্রের পাশে আমাদের কি একটি বাড়ি বা ডট ডট ইত্যাদি হবেনা?” লেখিকা ফোকাস করেছেন যে একটা বাচ্চা সমুদ্রের পাশে বাড়ি থাকার মর্ম কি বুঝে? এতে করে কি আমরা তাদের স্বাভাবিক শিশুকাল কে ব্যহত করে কিছু মানবিক দূর্বলতম বৈশিষ্ট্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছিনা? তাদের লোভকে আমরা জাগিয়ে দিচ্ছিনা? রোমান্সের ব্যাপারটা অস্বাভাবিকভাবে তাদের মধ্যে গ্রো করার জন্য কি আমরা দায়ী না? তিনি এসব বিজ্ঞাপনের চরম নিন্দা জানিয়ে বাচ্চাদের মাধ্যমে কর্পোরেট বাণিজ্যকে বিজনেস না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
যাইহোক ভালবাসার কথার মধ্য ছিলাম। যে দেশে বাচ্চাদের নিয়েও বিজনেস হয় সেখানে বড় হয়ে তারা আর কতটুকুই বা দিতে পারে বা আমরাই বা কতটুকু আশা করতে পারি? রেডিও আমারে আমার ভালবাসা নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ভাল। এতে করে সাধারণ যারা এপর্যন্ত ভালবাসা নিয়ে যেসব ভুল করে এসেছে রেডিও আমারের দর্শকরা যেন এই ভুল না করে সেই জন্য এই অনুষ্ঠান। কিন্তু আমার সন্দেহ এতে করে উদ্দেশ্যে কতটুকু পরিপূর্ণতা পাচ্ছে? যাই হোক আমার কাজিন এই অনুষ্ঠান রেগুলার শুনে থাকে, সেই সুবাদে আমারও মাঝে মাঝে শোনা হয়। রিসেন্টলি সেখানে ভালবাসার যে ঘটনা শুনলাম সেটা শুনে আমি পুরাই তাজ্জব। ক্লাস এইটের একটা মেয়ে ভালবেসে পরিবারের অমতে বিয়ে করে। জাস্ট এটুকু শুনেই বাকিটুকু শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। লাভগুরুর কথা শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। যে প্রশ্ন দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম ঠিক সেই প্রশ্নই এবার লাভগুরুকে করে সেই মেয়েটি। খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। লাভগুরু প্রথমে একটু এভয়েড করে এন্সার দিলেন পরে সেটা আবার শুধরে দিয়ে উলটা মেয়েটিকে প্রশ্ন করলেন “ তুমি কি পারবা বাবা/মা কে রেখে শুধু তোমার ভালবাসার জন্য বাবা-মাকে ত্যাগ করতে?” মেয়েটি সুন্দর জবাব দিল নেগেটিভ। অথচ এই নেগেইভ জবাবটাই কেন যেন ভালবাসার আবেগের রসাতলে একদম ভেসে চলে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই লাভগুরুকে তার প্রশ্নের জন্য। এখন আমার লাভগুরুর প্রতি একটাই অনুরোধ যে-
“ আপনার প্রোগ্রামে যারা ভালবাসা নিয়ে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় তারাই আপনার কাছে সেই কাহিনি শুনাতে আসে। এরকম কি কোন প্রোগ্রাম করতে পারবেন যেখানে যেসব তরুন সমাজ বর্তমান ভালবাসা নিয়ে সঙ্কটে আছে, ক্রাইসিসের মধ্যে আছে তারা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার প্রোগ্রামে আসবে? যদি করতে পারেন আমার বিশ্বাস হাজার হাজার তরুণ-তরুণি আপনার প্রোগ্রামে আসবে সমস্যার সমাধানের জন্য। এতে করে হয়ত অনেককেই আপনি পারবেন জীবনের স্বাভাবিক গতিপথে ফিরিয়ে আনতে। হয়ত পারবেন জীবন আধারের করাল গ্রাসে প্রায় ডুবন্ত কোন তরুন-তরুণীকে বেঁচে থাকার কোন উপকরণ বের করে দিতে। কারন রেডিও আমারে ভালবাসার কাহিনি শুনে নিজের ভালবাসার সময় কেউ তাদের ভুল প্র্যাকটিক্যালি দেখতে পায়না। যদি পারেন তাহলে প্লিজ আমার এই অনুরোধটা রাখবেন। আশা করি এতে করে তরুণ সমাজ সুন্দর সমাধানের একটা মিডিয়া সোর্স পাবে।"

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০১০

আত্বকথন...

দুঃখবোধ পুরা মন জুড়ে ব্যপ্ত থাকে। মনের কষ্ট যে এত উপকারী সেটা আগে বুঝিনি। খুব কাছের কেউ কষ্ট দিলে সেটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। এতদিন পরে বুঝতে পারলাম যে উদার হওয়া এত্ত সহজ না। অথচ নিজেকে একসময় খুব উদার মনে হত। কিন্তু উদার হবার সুযোগ যখন এল তখনই বুঝলাম উদারতা প্রদর্শনের জন্য মানসিক শক্তি কত প্রকট হতে হয়। মনটা যদিও খুব খারাপ লাগছে, তারপরও ভাল লাগছে । চরম কঠিন সত্য নিজের কাছে প্রকাশিত হল। মানুষ সর্ব প্রথম পরাজিত হয় নিজ সত্তার কাছে। আমিও হলাম। কিন্তু এই পরাজয় আমাকে যে শিক্ষা দিল তা হাজার বিজয়ের চেয়েও অনেক বেশি।
ক্ষমা অনেক বড় গুন। মাঝেই মাঝেই চিন্তা করি কত শত শত অন্যায় করছি, অথচ এর জন্য আল্লাহ সাথে সাথে আমাকে শাস্তি দিচ্ছেননা। বরং অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চাইলে আমাদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নবী রাসূল (সাঃ) এর জীবনী যখন পড়ি তখন মনে হয় কি অসীম মানবতাবাদী ছিলেন তিনি। নির্দ্বিধায় চরম শত্রুদের ক্ষমা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। এখানেই সম্ভবত একজন মহামানব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তফাৎ। ইচ্ছা করলে আমিও পারি ক্ষমা করে দিতে যে ভুল করেছে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা! আমি সেটা করতে পারছিনা। নিজের ভিতর অন্য আরেকটি সত্তার উপস্থিতি অনুভব করছি খুব দৃড়ভাবে। প্রতিনিয়ত দুইটি সত্তার মধ্যে ক্রমাগত বিতর্ক চলছে। কিন্তু আবেগী সত্তার কাছে যুক্তিবাদি সত্তা কোন পাত্তাই পাচ্ছেনা।
অন্যের ভুল, অন্যের সমস্যা আমার কাছে কখনও প্রাধাণ্য পায়নি। কিন্তু এবার পাচ্ছে। বুঝতে পারলাম মানুষ কেন এত কষ্ট পায়। অন্যের প্রতি প্রত্যাশা থাকে বেশি। নিজে কি করলাম সেটা কোন ব্যাপার না, কিন্তু অন্যে কি করল সেটাই মূখ্য ব্যাপার। মানুষের কষ্টের কারণ খুব গভীরভাবে অনুভব করলাম। অথচ এই দিকটা আমি কখনও এত গভীরভাবে ভাবিনি। আমি খুব সহজেই অন্যের দোষ ইগ্নোর করতে পারি। কিন্তু কেন জানি অনেক চেষ্টা করেও আমি ইগ্নোর করতে পারছিনা।
অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত নিজেকে একটা মাঝামাঝি পর্যায়ে আনতে পেরেছি। এখন নিউট্রাল হয়ে গেছে মনের বেদনাঘন পরিবেশ। খুব কাছের কাউকে আউটসাইডার মনে হচ্ছে। আর আউটসাইডারের কোন কিছু আমাকে এফেক্ট করেনা। এখন তার অন্যায় আচরন খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছি। কষ্টের ব্যাপার যে একজন কাছের মানুষ কত সহজে আউটসাইডার হয়ে গেল!! এটা কি স্বাভাবিক? অথচ সেই মানুষটা কখনও বুঝতেও পারবেনা যে আমি তার থেকে দূরে সরে গেলাম। আমার ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েই তাকে নিরাপদ স্থানে রেখে গেলাম। হয়ত সে বুঝতে পারবে, কিংবা পারবেনা।
মানব মনের রসায়ন আসলেই রহস্যময়। দুঃখ, কষ্ট না পেলে সেই রসায়নের ক্রিয়া-বিক্রিয়া বুঝা যায়না। তাই স্যালুট জানাই দুঃখ ও কষ্ট...............
৯/৩/২০১০