সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০০৯

পৃথিবী, আজ আমার ছেলে প্রথম স্কুলে যাচ্ছে ( world, my son starts school today!)

আত্মসম্মানবোধের মূলকথা আব্রাহাম লিঙ্কনের নিচের এই লেখাটাতে যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে তার থেকে ভাল করে প্রকাশ করা যায়না...

হে পৃথিবী, আমার সন্তানের হাত ধর, সে আজ তার স্কুলের পাঠ শুরু করল। কিছুদিন তার কাছে সবই নতুন ও বিস্ময়কর মনে হবে, এবং আমার আশা তুমি তার সঙ্গে সদয়
ব্যবহার করবে। দেখ, এ পর্যন্ত সে কাটিয়েছে এই বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই, মুরগীর ঘরগুলিতে ছিল তার আধিপত্য, বাড়ির পিছনের বাগানের সে ছিল মালিক। তার ক্ষতে ওষুধ লাগাতে আমি সবসময়ে কাছাকাছি ছিলাম, এবং যখন সে মনে আঘাত পেয়েছে আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়েছি।

কিন্তু এখন অবস্থা অন্য রকম হবে। আজ সকালে বাড়ির সামনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে পিছন ফিরে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়বে, তারপর শুরু হবে সেই মহৎ অভিযান, যা তাকে নিয়ে যাবে অনেক যুদ্ধ, বিচ্ছেদ এবং দুঃখের মধ্য দিয়ে।

পৃথিবীতে বাঁচতে হলে বিশ্বাস, ভালবাসা ও সাহসের প্রয়োজন। সুতরাং হে পৃথিবী, আমার বাসনা তুমি তার তরুণ হাতে ধরে এগিয়ে নিয়ে চল, এবং জীবনে যা শেখার প্রয়োজন তা তাকে শিখিয়ে দিও।

আমি জানি, ওকে জানতে হবে যে সব মানুষই ন্যয়পরায়ণ নয়, সব নারী-পুরুষই সৎ নয়, তাকে শিখিয়ে দিও যে সংসারে দুর্বৃত্ত যেমন আছে তেমনি বিরচিত গুনাবলীর মানুষও আছে; শত্রু যেমন আছে তেমনি মিত্রও আছে। প্রথমদিকেই তাকে শিখিয়ে দিও যে উৎপীড়নকারীরা সহজেই পদানত হয়।

বইয়ের পাতায় যে অত্যাশ্চর্য ভান্ডার আছে তা ওকে চিনিয়ে দিও। ওকে কিছু নির্জনতা দিও, যখন ও আকাশে পাখির ওড়া, সূর্যের আলোয় মৌমাছিদের ঘোরাফেরা কিংবা সবুজ পাহাড়ে ফুলের সমারোহ দেখে ভাবতে পারবে। ওকে শিখিও, অসৎ উপায় অবল্মবন করার থেকে অসফল হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। ওকে শিক্ষা দিও, যদি অন্য সকলে বলে যে ওর ধারণাগুলি ভুল তবুও যেন ও নিজের বিশ্বাসে অটল থাকে। আমার ছেলেকে শক্তি দিও। অন্য সকলে যখন ঠেলাঠেলি করে কোনও প্রত্যাশায় গাড়িতে ওঠে, তখন ও যেন জনতাকে অনুসরন না করে। শিক্ষা দিও যেন অন্যের কথা শোনে, কিন্তু যা শোনে তা যেন সত্যের ছাঁকুনিতে ছেঁকে নিয়ে যে সারটুকু থাকে তাই গ্রহণ করে।

শিক্ষা দিও, কখনও নিজের হ্রদয় ও আত্বাকে বিক্রয়যোগ্য না করে। শিক্ষা দিও যেন উচ্ছৃংখল জনতার চিৎকারে কান না দিয়ে নিজে যা সঠিক মনে করে তার জন্য লড়াই করতে পারে।
সহ্রদয়ভাবে শিক্ষা দিও, পৃথিবী, কিন্তু অধিক প্রশ্রয় দিওনা; কারণ আগুনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেলেই উত্তম ইস্পাত তৈরি হয়।
এটি খুবই দীর্ঘ প্রত্যাশা, কিন্তু দেখ কতটা করা যায়। ও এত ভালো ছেলে...

আব্রাহাম লিঙ্কন

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০০৯

অনুভূতিরা কি বাধ্যতামূলক একই থাকে অহর্নিশ??


মন মন মন মন তো চাইল,বিবাহিত আমি তাতে কি হল?
অনুভূতিরা কি বাধ্যতামূলক একই থাকে অহর্নিশ?
..................................................
সে ছিল তখন ১৯,আমি তখন ৩৬
প্রেমে পড়তে লাগেনা বয়স,মনে থাকেনা ১৯/২০......

নচিকেতার গান বাজছিল মোবাইলে। বান্ধবীরা সব মিলে এক জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছিলাম। কথার ফাকে একজন বলে উঠল '' y ক্রোমোসোম হচ্ছে ক্রিমিনাল ক্রোমোসোম''। আড্ডার টপিক টার্ণ করল এবার y ক্রোমোসোমে। সাথে চলছে নচিকেতার 'পেসমেকার' গান...মোটামুটিভাবে এই গানকেই পুরুষের সাইকোলোজি বিশ্লেষণের জন্য আইডিয়াল ধরা হয়েছে। পুরুষবিদ্বেষী অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমি কিছুটা নিরব। ঠিক বুঝতে পারছিলামনা কোন এংগেলে কথা বলব এব্যাপারে। চিন্তা করছিলাম গানের প্রতিটা লাইন। একটা পুরুষের ক্ষেত্রে এটা যেমন সত্য, একটা মেয়ের জন্যও এটা সত্য। তাই আড্ডায় ভালভাবে জয়েন করতে পারছিলামনা।
আরে তুই কিছু বলছিস না যে? একজনের প্রশ্নে কিছুটা প্রস্তুত হয়ে বললাম অনুভূতিরা তো আসলেই বাধ্যতামূলক একই রকম থাকেনা। বুঝতে ছিলাম এটা বলার পর সব আলোচনা আমার দিকে টার্ণ করবে। তাই হল...
বললাম দোস্ত ভুল বুঝিসনা। পুরুষরা খুব এডভেঞ্চার প্রিয় হয়। মেয়েরাও কি কম? হয়ত পুরুষের সেই এডভেঞ্চার ফেইস করার সাহস আছে কিন্তু নারীর সেই সাহস কিছুটা কম। নারী অনেক সহনশীল হয়। মাতৃত্বসুলভ উদারতা নারীর মধ্যে অনেক বেশি প্রকট।
আমার এই কথার ফাঁকে একজন বলল কেনই বা হবে না? ইস্ট্রোজেন হরমোন নারীর মাতৃ্ত্বসুলভ বৈশিষ্ট্য আরো বাড়িয়ে দেয়। এটা শুনে একজন হাসতে হাসতে বলল ''হুম আসলে সবই হরমোনের একশান-রিএকশান''।
আলোচনার টপিক অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে। তাই বললাম এককভাবে পুরুষবিদ্বষী আমি না। ৩৬ বছরের বিবাহিত পুরুষ ১৯ বছরের মেয়ের প্রেমে পড়ে। সেই মেয়ে এটা জেনেও যদি তার সাথে প্রেম করে তাহলে পুরুষের দোষ এককভাবে কেন আসছে?
দেখ সেতু তুই কিন্তু নারীবিদ্বেষী কথা বলতেছিস...একজনের এই কমেন্টে আমি বললাম আজব তো! আমি কেন নারী বিদ্বেষী কথা বলতে যাব?
মেয়েটার বয়স কম। একটু আবেগী,সে অনেক কিছুই বুঝেনা। তাই বলে বাবার বয়সী লোকটা কেন ১৯ বছরের মেয়ের প্রেমে পড়তে যাবে? এক বান্ধবীর খুব রাগতস্বরে এটা বলল।
দেখ আমরা কিন্তু মেয়েটার দোষ কে টলারেট করছি। বাট পুরুষেরটা করছিনা। একটা সমাজে বিশৃঙখলার জন্য এককভাবে কখনও কোন পুরুষ দায়ী থাকতে পারেনা। তুই বল নারীদের সহযোগীতা না থাকলে পুরুষরা কি একাই নারীদের শোষণ করতে পারত? এটা কি লজিক্যাল?
আড্ডা খুব জমে গেছিল সেদিন...
নারীরা এখন পুরুষদের দ্বারা ঘরে ও বাইরে সর্বত্র অপমানিত হচ্ছে। একটা সময় মনে করা হত নারী শিক্ষায় নারীকে মুক্তি দিবে। কিন্তু দেয় নি। নারী আজ শিক্ষিত, অফিসে কাজ করছে পুরুষের পাশাপাশি। কিন্তু নারীর মুক্তি মিলেনি। এর জন্য পুরুষের কতৃ্ত্বপূর্ণ মনোভাব দায়ী কিন্তু নারীরও দোষ আছে। একজন শিক্ষিত ও আত্বমর্যাদাশীল নারী কি অন্যের দ্বারা সহজেই ডাইভার্ট হয়?
তোদের সেন্সে কি বলে? আমাকে একটা ছেলে প্রোপোজ করলেই তার স্মার্টনেস,বাড়ি,গাড়ি,টাকা-পয়সা দেখেই তাকে ইয়েস বলে দিব? কিংবা আমার অনেক ছেলে বন্ধু আছে। শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই তাদের সাথে কি দিন নাই রাত নাই আড্ডা দিব,ঘুরতে যাব,সারা রাত মোবাইলে কথা বলব?
আসলে সব রিলেশনের একটা লিমিট আছে। কনসাসলি সেই লিমিটেশন মেনে চললে কিন্তু কোন প্রবলেম হয়না। আর বয়ঃসন্ধিকালীন যে সমস্যা সেটা ওভারকাম করার জন্য আমাদের দরকার সঠিক পারিবারির ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। কিন্তু আমরা কিন্তু সমাধানের দিকে না যেয়ে উলটা বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা কে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত।
এটা শুনে একজন বলল
- হতে পারে আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠু না।এখানে সার্টিফিকেটে/নম্বরের প্রতিযোগীতা চলে।কিন্তু সুন্দর একটা বন্ধুত্বের পরিবেশ কিন্তু আছে।
-ওহ! তাই নাকি...তাহলে আমাকে বল ১৯ বছরের মেয়েটা যখন ৩৬ বছরের বিবাহিত পুরুষের সাথে প্রেম করছে তখন নিশ্চয় সেটা তার বন্ধুরা জানত।
- তো! জানলেই কি...এটা একেকজনের পারসোনাল ম্যাটার। এসব নিয়ে তার বন্ধুরা কেন ইন্টারফেয়ার করবে?
- হুম! এটাই হচ্ছে ব্যাপার। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যে পেশেন্ট-ডক্টর রিলেশনশিপ নাই। একজন ডক্টর একজন পেশেন্ট কে ট্রিটমেন্ট করে এবং নিজেও সেইফ থাকে। আমরা বন্ধুরা কি তাই করি? আমার খুব কাছের বন্ধুর খারাপ কাজ দেখেও এটা যার যার পারসোনাল ব্যাপার মনে করে এভয়েড করে যাই। আমাদের বন্ধুত্বের রিলেশনে কেউ ডক্টন নাই। এখানে সবাই পেশেন্ট। এটাকে কি তুই সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বলবি?
-না আসলে দেখ এভাবে তো চিন্তা করে দেখা হয় নি।
আসলে এটাই ফ্যাক্ট। আমরা সমস্যার এক চেইন রিএকশানের মধ্যে আছি। বাহ্যিক দিক থেকে সমাধানের চেষ্টা করতে যেয়ে সমস্যা আরো বেড়েই যাচ্ছে।
নাহ! আড্ডার পরিবেশটা খুব থমথমে হয়ে গেছে। আবার নচিকেতার গানে ফিরে গেলাম...

সব পুরুষই যেমন হয় আমিও আলাদা নয়...হু এডভেঞ্চারিস্ট...
....................................................................
তখন আমার অনেক বয়স হাসপাতালে বাইপাস
অপারেশন গেছে হয়ে এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস!
ডাক্তার এসে দাড়াল, চিনলাম তার হাসি দেখে
লজ্জায় মুখ সরালাম তাই সে বলল আমায় ডেকে
পেসমেকার ভেবোনা যেটা রেখেছি তোমার বুকে
ভেবো আমার মাথা যেন আজো আছি মাথা রেখে...
........................................................
........................................................