বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

শূন্যতায় ডুবে যাওয়া এই আমি...

শূন্যতায় ভরে আছে মন।গত দুই মাস ধরে মন ভীষন খারাপ।সাথে ছিল পরীক্ষা আর শারীরিক অসুস্থতা।এই দুই মিলে মানসিক শূন্যতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।অনেকদিন কোন পত্রিকা পড়া হয়না।ব্লগে আসা হয়না।পত্রিকা কেন পড়ব? ভাল খবর কিছু থাকলে তো পড়ব! ভাল লাগেনা অনবরত খারাপ খবর পড়তে।সময় কাটাতে তাই আজ আনেকদিন পর কিছু লিখতেছি...

বেদনায় ভারাক্রান্ত মনকে শান্ত্বনা দিতে খুজতে থাকি কিছু।কিন্তু আশ্চর্য! কিছুই পাচ্ছিনা।টিভি দেখতে ভাল লাগেনা।সেই ইন্টারমিডিয়েট থাকতে টিভি দেখা বাদ দিয়েছি।নতুন করে যখন দেখব বলে চিন্তা করলাম তখন বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন,উদ্দেশ্যহীন অনুষ্ঠান আবার টিভি থেকে আমাকে সরিয়ে আনল। কিন্তু সময় কাটেনা।কাজিন এর কাছ থেকে এবার বইমেলা থেকে কিনে আনা জাফর ইকবাল,হুমায়ুন আহমেদ,সুমন্ত আসলাম এর কিছু বই আনলাম।প্রথমেই যে বইটা হাতে নিলাম তা সায়েন্স ফিকশন।ক্লাস সেভেন-এইট এ থাকতে সায়েন্স ফিকশন সমগ্র পড়ে ফেলতাম নিমিষেই।খুব নেশা ছিল।তাই সেই নেশায় ফিরে যেতে মন চাইল।জাফর ইকবাল এর ইকারাস বইটা শুরু করলাম।বাট অনেকদিন সায়েন্স ফিকশন পড়িনা বলে আমি ঠিক বুঝতে পারলামনা এটা কি কোন সায়েন্স ফিকশন নাকি রুপকথার গল্প? অল্প কয়েক পাতা পড়েই মেজাজ খারাপ করে রেখে দিলাম।এত বড় লেখকের সায়েন্স ফিকশন আমার বুঝার সাধ্যের বাইরে।মনে হয় আমিই ভুলে গেছি সায়েন্স ফিকশন কি।আর বাকি বইসব ফেরত দিলাম কাজিনকে।ঠিক বুঝতে পারছিলামনা আমার মন খারাপ বলেই কি কোন কিছু ভাল লাগছেনা? নাকি সেগুলো আসলেই ভাল কিছু না!

মোবাইলে রেডিও নামক একটি অপশন আছে।কখনও সেই অপশনে যাওয়া হয়নি।আসলে ইচ্ছা বা সময় কিছু ছিলনা বলেই হয়ত যাওয়া হয়নি।টিভি,বই ছেড়ে এবার এফএম রেডিও তে মন দিলাম।আমি বুঝলামনা সব চ্যানেলেই কেন একই টপিকস নিয়ে কথা।সব কিছুতেই প্রেম-ভালবাসা।এফএম রেডিও যারা শুনে তারা সবাই মনে হয় তরুন-তরুনি।কারন যে টানা চার দিন এফএম রেডিও শুনলাম তাতে তরুন-তরুনি ছাড়া কাউকে পার্টিসিপেট করতে দেখিনি।উফ! কি যে বিরক্তিকর সব প্রোগ্রাম।আপনার সবচেয়ে প্রিয় মুহুর্ত কি? আপনার নিকট সবচেয়ে সাহসি কাজ কি? আপনি এই গানটা কাকে ডেডিকেট করতে চান? খুব সুন্দর,নির্জন কোন পরিবেশ এ আপনার কি ইচ্ছা হবে? এই সব টপিকস হচ্ছে আলোচনার বিষয়।আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সবকিছুতেই এই আলোচনার বিষয় প্রেম-ভালবাসা বিষয়ক।সবকিছুর এন্সার ছেলে হলে বলবে তার প্রেমিকার কথা।আর মেয়ে হলে বলবে তার প্রেমিকের কথা।টানা চারদিন এফএম রেডিও শুনলাম এই জন্য নয় যে ভাল লাগছে।আসলে ভাল লাগানোর জন্য টানা চারদিন শুনলাম।বাট এটলাস্ট পূর্ন হতাশা নিয়ে এফএম রেডিও থেকে ব্যাক করলাম।

এবার দূষিত মনকে বিশুদ্ধ করতে প্রিয় উপন্যাসের বইতে মনোযোগ দিলাম।ততদিনে পরীক্ষা শেষ।শারীরিক অসুস্থতা যদিও যায়নি।তারপরও জীবনকে নতুন করে ভাবার জন্য সেসব উপন্যাসে রাত কাটাচ্ছি।কিন্তু কি যেন আরেক হতাশায় মন কেদে উঠল।উপন্যাসের সাথে নিজেকে একাত্ব করে ফেলি।নিজেকেই কোন এক চরিত্রের সাথে একাকার করে ফেলি।ভাবতে থাকি সেসব মহান নায়কের কথা যারা তাদের জীবনে যারা দেশপ্রেম কে,মানবতাকে বিজয়ের জন্য বুকের তাজা খুন বিলিয়ে দিয়েছে।যাদের জীবনের শুরু হয়েছে মানবতাকে রক্ষার জন্য।যারা তরুন বয়স থেকে ভাবতে শিখেছে দেশের সংকটময় মুহুর্তের কথা,চিন্তা করেছে তা থেকে উত্তরনের উপায়।গভীরভাবে ভাবতে শিখাচ্ছে আমাকে।কিন্তু সে ভাবনায় ছেদ পড়ল।আচমকা মেসেজ পেলাম।মেসেজটা ছিল একজনের জীবন-মরন সমস্যা,তাকে সাহায্য করতে হবে।হায়! আমি যদি সত্যি তাকে সাহায্য করতে পারতাম।কিন্তু পরক্ষনেই যখন ঘটনা জানতে পারলাম তখন আর তাকে সাহায্য না করতে পারার জন্য খারাপ লাগল না ।বরং তার জীবন-মরন সমস্যার জন্য তাকে মনে মনে ধিক্কার জানাতে লাগলাম।
আমার খুব প্রিয় একটা উক্তি আছে,'' মওকা বুঝে সওদা অন্তত দিলের বাজারে সব লোকেরা করেনা।আর তা তারা করেনা বলেই এ বাজারে যুগে যুগে ফতুর হয় তারাই।''
যে আমার কাছে জীবন-মরন সমস্যার জন্য সাহায্য চায় তাকে কিভাবে বুঝাব যে মন্দিরের দেবি হবার জন্য তুমি সারা জীবন আকাংখা কর সেই মন্দিরের মঞ্জিলে যখন পৌছে যাবা সেদিন প্রানপনে চাইবা যেন তোমারে কেউ সেই অন্ধ মিঞ্জিল থেকে কেউ রক্ষা করতে আসে।কিন্তু তোমাকে সেই মঞ্জিল থেকে কেউ উদ্ধার করতে আসবেনা।কিভাবে আসবে বল? তারা তো নিজেরাই আজ দিলের বাজারে সওদা করতে এসে পুজি হারিয়ে ফতুর হয়ে গেছে।উপন্যাসে আর মন ধরেনা।উপন্যাসের চরিত্র সব কাল্পনিক মনে হয়।কল্পনার জগতে বেশি থাকতে ইচ্ছা করেনা।কল্পনার জগতে যে তরুন-তরুনি জীবনের মহান উদ্দেশ্যে আত্মত্যাগ করে তাদের সাথে আমার চারপাশের সমাজের কোন মিল পাইনা।সমাজ উচ্ছনে যাক,দেশ রসাতলে যাক, তাতে আমার কি? এফএম রেডিওর এই যুগে সবাই এখন মটো নিয়ে দিলের বাজারে সওদা করার ট্রেনিং নেয়।কিন্তু আমার কাছে কেন জীবন-মরন সমস্যার সমাধান চায়? আমি তো এ সওদা করতে অভ্যস্ত নই।যেসব মিডিয়া এই সওদা করার প্রেরনা যুগায়,পদ্ধতি শেখায় তারা কেন জীবন-মরন সমস্যার সমাধানটুকু দিয়ে দেয়না?বা তাদের কাছেই কেন সাহায্য চায়না?

উদীয়মান সূর্যের সামনে বেশিক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকা যায়না।পত্রিকা খুললাম।সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সেই মহিলা চিকিৎসকের যোতুকের অভিযোগে নৃশংসভাবে হত্যার কাহিনি পড়লাম।উচ্চতর ডিগ্রির সার্টিফিকেট এর পাশাপাশি যদি মূল্যবোধের সার্টিফিকেটও দেয়া হত!! তাহলে হয়তবা এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কোন শিক্ষিত মেয়েকে এভাবে জীবন দিতে হত না।এটা কি সত্যিই কোন সভ্য সমাজের প্রতিচ্ছবি? মনে আজ তাই বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে চরমভাবে।স্ট্রেস হরমোন আর কাজ করছেনা.........


সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

আনন্দ বিতর্কের একদিন...

বিতর্ক সবার কেমন লাগে জানিনা।তবে একসময় এর প্রতি আমার অপরিসীম আগ্রহ ছিল।স্কুল লাইফে অনেক ক্লসভিত্তিক বিতর্ক করা হয়েছে।আর টিভিতে প্রচারিত কোন বিতর্ক মনে হয় আমার মিস হত না তখন।আমি শিডিউল করে টিভিতে বিতর্ক দেখতাম তখন।এই বিতর্ক নিয়েই আমার কিছু অভিজ্ঞতা বলি...
আমাদের স্কুলে তখন নতুন নিয়ম চালু হল।প্রতি বৃহস্পতিবার এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিসের জন্য বিভিন্ন ক্লাব গঠন করা হবে।এবং সেদিন কোন ক্লাস হবেনা।অনলি ক্লাবের আন্ডারে স্টুডেন্টদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য ক্লাস হবে।এই নিউজটা যখন পেলাম তখন যে কি খুশি এই ভেবে যে সেদিন কোন ক্লাস হবেনা প্লাস আমার প্রিয় বিতর্ক ক্লাবে আমি এটেন্ড করতে পারব।যথারীতি আমার যত ফ্রেন্ড আছে সবাই যার যার পছন্দের ক্লাবে মেমবার হয়ে গেল।যেহেতু আমার নাচ,গান,ছবি আকা,খেলাধূলার প্রতি কোন আকর্ষন নাই তাই আমি অনলি উপস্থিত বক্তৃতা,রচনা লেখা,বিতর্ক এসব ক্লাবের মেমবার হলাম।

তো রেগুলার আমি বিতর্কে পার্টিসিপেট করতে লাগলাম।আমাদের টিচাররা টপিকস সিলেক্ট করে দিতেন এবং বিতর্কের বিভিন্ন কৌশল বলে দিতেন।এখনও মনে পড়ে লাস্ট যে বিতর্কে আমি ছিলাম,সেই বিতর্ক থেকে আমি অনেক বড় একটা জিনিস শিখে গেছিলাম।সেটা হল বিতর্ক আমরা কেবল বিতর্ক করার জন্য করতেছি।ইনফ্যক্ট কোন কিছু শিখার মানসিকতায় আমরা কেউ বিতর্ক করতামনা।আমার যে প্রতিপক্ষ থাকত তার কোন যুক্তিবান কথাও আমরা কেউ মেনে নিতামনা।প্রতিপক্ষের অবস্থাও ছিল সেইম।সো যারা জিতে যেত তাদের প্রতি খুব মেজাজ খারাপ হত কেন তারা জিতল?হাঃ হাঃ যদিও সেটা খুব অমূলক ছিল,কিন্তু সেটাই ছিল আমাদের কাছে যৌক্তিক।আমার জীবনে তাই ক্লাস এইট এর পর থেকে সেটাই ছিল শেষ বিতর্ক।বলা যায় সাডেন চেঞ্জ আমার মধ্যে আসল।নিছক বিতর্কের জন্য কোন বিতর্কের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট পুরাপুরি শেষ হয়ে গেছিল।যে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য ক্লাব গঠিত হয়েছিল সেই ক্লাব থেকেই আমার প্রিয় বিতর্কের ইচ্ছার অবসান ঘটেছিল।আর কখনও টিভিতেও কোন বিতর্ক দেখা হয়নি।

৬ বছর পর ২০০৮ সালে মেডিকেল কলেজের কালচারাল ফাংশানে আমি এবার দর্শক।এত বছর পর খুব আগ্রহ ফিল করলাম।কারন বিতর্কটা ছিল ডক্টরদের মধ্যে।চারদিকে পোস্টারে ভরে গেছে ক্যাম্পাস।উহু! কতদিন বিতর্ক দেখিনা।তাই ভিতরের ইচ্ছা এবার জেগে উঠল।

বিতর্কের বিষয় ছিল “ক্লিনিক্যাল ডক্টরদের থেকে প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টররা পারিবারিক জীবনে সুখি।
উল্লেখ্য প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টর বলতে তাদের বোঝায় যারা মেডিক্যাল কলেজের টিচার।আর যারা হসপিটাল এ প্রাক্টিস করে তাদের ক্লিনিক্যাল ডক্টর বলা হয়।যথারীতি বিতর্ক শুরু হল।স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু আমি মেডিকেলের স্টুডেন্ট সো আমি প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টদের পক্ষে।আর আমাদের স্যার ম্যডামদের অংশগ্রহনে ক্যম্পাসের সকল স্টুডেন্টদের ভিতর চঞ্চলতা শুরু হয়ে গেল।পুরা গ্যালারি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।মেডিক্যাল স্টুডেন্ট বনাম ক্লিনিক্যাল ডক্টর।আমার পাশে বসে ছিলেন একজন ইন্টার্নি ডক্টর।উনি ছিলেন খুব আশাবাদী যে ক্লিনিক্যাল ডক্টররাই জিতে যাবে।আমরা সবাই আমাদের টিচারদের হাত তালি দিয়ে উজ্জীবিত করতেছি।খুব টান টান উত্তেজনা।ঠিক যেমন ভারত-পাকিস্তান খেলায় হয়ে থাকে।কে জিতবে ,কে হারবে কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা।অবশেষে আমাদের ফিজিওলোজি ম্যাডামের শেষ একটা কথার জন্য প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টররা জিতে গেল।সেই কথাটা খুবই স্ট্রং ছিল প্রতিপক্ষের জন্য।ম্যাডাম বলেছিলেন, ‘আমি এতদিন পেডিয়াট্রিকস(শিশু বিভাগ) এ ছিলাম।পারিবারিক জীবনে অনেক প্রবলেম হচ্ছিল,ছেলে-মেয়েদের টাইম দিতে পারছিলামনা।কিন্তু যখন পেডিয়াট্রিকস ছেড়ে প্রিক্লিনিক্যালে ট্রান্সফার হলাম তখন থেকেই পারিবারিকভাবে সুখে দিন কাটাচ্ছি। হাঃহাঃ কথাটা শুনে আমরা সবাই হেসে দিছিলাম...

এই বিতর্কের পর ২য় আরেকটা বিতর্ক শুরূ হল।এটাও ছিল খুব মজার।এটার বিষয় ছিল, সার্জারি নয়,মেডিসিনই চিকিতসা বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি।
এই বিতর্কও খুব জমে গেছিল,কারন সমগ্র হসপিটালের মেডিসিন ও সার্জারি ডক্টরদের মধ্যে গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।আর স্টুডেন্ট? যে যার মত বিভক্ত হয়ে গেছিল।সার্জারি আমার ভাল লাগেনা,এই কারনে ডিসেকসান ক্লাস আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগে।সো আমি ছিলাম মেডিসিনের পক্ষে।আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল সার্জারির পক্ষে।যথারীতি এখানেও খুব টান টান উত্তেজনা।সার্জারিতে মেইন প্লাস পয়েন্ট ছিল গাইনি বিভাগ।কারন মানুষ সৃষ্টির ইনিশিয়াল স্টেপ সার্জারি দিয়ে শুরু হয়।খুব স্ট্রং পয়েন্ট।শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মনে হচ্ছিল সার্জারি জিতে যাবে।্কিন্তু এবারও ধারনা ভুল হল।মেডিসিনের স্যার খুব মজার একটা কথা বললেন সবার শেষে।বললেন, সার্জারি যদি চিকিতসা বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হত তাহলে মেডিক্যাল কলেজের নাম সার্জিক্যাল কলেজ হত,মেডিক্যাল কলেজ হতনা।
খুব জোরে হাততালি পড়ল দর্শক সারি থেকে,এবং এট লাস্ট মেডিসিন জিতে গেল।
এই দুইটা বিতর্কে আমি খুব মজা পেয়েছি কারন এখানে সমগ্র ডক্টর,স্টুডেন্ট,টিচারদের মধ্যে তফাত ছিলনা।মনে হচ্ছিল সবাই সমবয়সী এবং যে যার মত গ্রুপে ডিভাইড হয়ে ছিল।৬ বছর পর এই বিতর্ক আমার জন্য ছিল এককথায় আসাধারন।মেডিকেল কলেজে এডমিসনের পর একঘেয়েমি পড়া থেকে এই বিতর্ক আমাদের জন্য ছিল উচ্চমানের বিনোদন,যা ব্রেইনকে রিফ্রেস করে দিয়েছিল একেবারে।ইনফ্যাক্ট মেডিকেল কলেজে আমরা এর থেকে আর বেশি বিনোদন আর কিইবা পেতে পারি???

টার্গেটঃ জয় ও সিওভাক্কোর থিসিস...... প্রেক্ষাপটঃ বাংলাদেশ......... মিশনঃ পসিবল/ইম্পসিবল???

১৯ নভেম্বর,২০০৮ এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমেরিকান পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার সহযোগী ইরাক,আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা পরিকল্পনাকারী কার্ল সিওভাক্কো এক থিসিস প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে প্রকাশিত এই থিসিসে বলা হয় বাংলাদেশে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা একটি মৌলবাদী বাহিনীতে পরিনত হচ্ছে।আরো বলা হয়, বাংলাদেশে বোরকা বিক্রি ৫০০ ভাগ বেড়েছে,মহিলারা বেশি বোরখা পরছে।সেনাবাহিনীতে ৩৫% মাদ্রাসার ছাত্র জয়েন করতেছে।এছাড়াও দেশে ইসলামীকরনকে প্রতিহত করতে পরিকল্পনার কথাও থিসিসে বলা হয়।

গত ২৯ শে ডিসেম্বর এর নির্বাচনে নির্বাচিত ডিজিটাল সরকারের মেইন টার্গেট এখন জয়ের থিসিসের সফল বাস্তবায়ন করা।স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও যে বাঙ্গালি অপূরনীয় স্বপ্নের চেইন রিএকশানে বার বার আবর্তিত হচ্ছে তা বুঝি এবার শেষ হবে।বাংগালি জাতির স্বপ্ন পুরন হবে এবার জয়ের স্বপ্ন পুরনের মাধ্যমে।
মিশন অলরেডি শুরু হয়ে গেছে বিগত ৬ মাসে সরকারের কার্যকলাপের মাধ্যমে।যেমনঃ
১।অনিশ্চিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ইস্যুতে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করা এবং ইসলামকে প্রতিহত করার চেষ্টা।
২। ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারী বিডি আর বিদ্রোহের নামে সেনাবাহিনীকে ধংস করে দেয়া।
৩।৩ জুলাই পিরোজপুরের তিন পর্দানশীন নারীকে জেএমবি সন্দেহে অহেতুক হয়রানি,বখাটেদের প্রতি সরকারের নমনীয় আচরন।
৪।অপেক্ষায় আছে কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের বাস্তবায়ন।
৫।এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে ইসলাম বিরোধী বক্তব্য উল্লেখযোগ্য।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে মুসলিমদের পতনের জন্য কোন খ্রিস্টান,ইহুদি বা অন্য কেউ দায়ী ছিলনা। স্বয়ং মুসলিমদের প্রতারনার জন্য আজ আমাদের এই পরিনতি।ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে স্পেনে মুসলিম জাতি ৭০০ বছর শাসন করেছিল সেই স্পেন ধংসের জন্য দায়ী কতিপয় মুসলিম জাতির সীমাহীন গাদ্দারি।এক্ষেত্রে অবশ্য ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের টুল হিসেবে ইউজ করেছে।এখনও তার ব্যতিক্রম নয়।ধর্ম শিক্ষা উঠিয়ে দিয়ে কুদরাতি-খুদা শিক্ষা নীতি প্রনয়নের চেষ্টা,মাদ্রাসাকে জঙ্গি প্রোডাকশনের সেন্টার হিসেবে চিহ্নিত করা,সম্প্রতি পিরোজপুরে ঘটিত হিজাবের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের ক্যাডার দিয়ে হিজাবকে জেএমবি র ইস্যু ত্তৈরি করা এবং সরকারের সমর্থন সবকিছুই যেন জয়ের থিসিসের মিশনকে পসিবল করে তুলতেছে।

আমি খুব স্পষ্টতঃ আশঙ্কা করছি সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন এই জয়ের থিসিসের হাত ধরে বাংলাদেশ পরিনত হবে ইরাক অথবা আফগানিস্তান।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় জঙ্গিবাদ।পাশ্চাত্য মিডিয়াতে মুসলিমদের জঙ্গি,টেররিস্ট হিসাবে দেখানো হয়।অথচ সেই পাশ্চাত্য মিডিয়ার প্রতিফলন ঘটতেছে বাংলাদেশেও।এখানে কোন টিভি-চ্যানেলে ইসলামকে সুন্দরভাবে রিপ্রেসেন্ট করা হয়না।হিজাবকে ফোকাস করা হয় পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গিতে।এমনকি সম্প্রতি হিজাব নিয়ে ঘটে যাওয়া তিন পর্দানশীন নারীকে বখাটে যুবকদের হয়রানিও ১/২ টি টিভি-চ্যানেল,পত্রিকা বাদে সর্বাধিক জনপ্রিয় পত্রিকার কোথাও এ নিয়ে সাধারন কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়না।অমিমাংসিত বিডি আর বিদ্রোহের নেপথ্যের কাহিণীকে সুকৌশলে ধামা চাপা দেয়া হচ্ছে।মনে হয় সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জয়ের থিসিসের সফল বাস্তবায়ন।এই মিশন এখন কমপ্লিটলি পসিবল কিংবা ইম্পসিবল হবে কিনা তা নির্ভর করছে জনগনের হাতে।কারন সরকার যদি এই মিশনের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে তাহলে জনগনকেই আপারহ্যান্ড নিতে হবে।তা না হলে আমাদের এক ভয়ঙ্কর কঠিন ভবিষ্যতের সম্মুখিন হতে হবে।

জয় ও সিওভাক্কার মিশনের এই কাহিনী শুনে হয়ত আমেরিকান রাজপুত্র জয় ও তার ইহুদি স্ত্রী খুব খুশি হচ্ছেন।জয় তার এই অসাধারন থিসিসের জন্য স্পেশাল কোন এওয়ার্ডও পেয়ে যেতে পারেন পশ্চিমাদের নিকট।সেটাই স্বাভাবিক।যে কখনও দেশে বাস করেনি,দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ শেয়ার করেনি সে কিভাবে আমেরিকাতে থেকে এদেশের সমস্যা সমাধানের জন্য থিসিস করবে??? সে তো পাশ্চাত্যের এজেন্ট হিসাবে কাজ করবে সেটাই স্বাভাবিক।তাই নয় কি???

শেষে একটি কথা জয় সাহেবকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে বোরখার বিরুদ্ধে আপনার এই থিসিস ,আপনার জননী নির্বাচনে হিজাব পরে,ধার্মিক সেজে জনগনকে ধোকা বানানোর চেষ্টা কে আপনি কিভাবে দেখেন?আর আপনি কি মনে করেন যে ইসলামের আপনার এই অবস্থান এর পরিনাম কি হবে? ইতিহাস দেখেন, রিসার্চ করেন।জবাব পেয়ে যাবেন।আর একথাও জেনে রাখুন সত্য সংগ্রামের সৈনিকরা এখনও জীবিত আছেন।প্রয়োজনে বুকের তাজা খুন বিলিয়ে দিতে তারা কার্পন্য করবেনা।

বাঙ্গালি জাতি এখন এমনই এক ক্রান্তি লগ্নে অবস্থান করছে যখন ভবিষ্যত নির্ভর করতেছে জনগনের হাতে।তারা এখনও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর থাকবে নাকি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামগ্রীক জীবন রক্ষার তাগিদে সত্য সংগ্রামের সৈনিকদের পথের সহযোগী হবে, সেটার উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাধীন/পরাধীন ভবিষ্যত...




মেজাজ খারাপের ২৪ ঘন্টা এবং ব্রেইন ওয়াশ!!!

বায়োকেমিস্ট্রি স্যার এর ক্লাসে কিছুতেই মন বসছেনা।পাশে বসা ফ্রেন্ড পরবর্তি ক্লাসের আইটেম এর পড়া পড়তেছে।আর এদিকে স্যার বোরিং ফুড,নিউট্রিশন,ভিটামিন পড়াচ্ছেন।কি যে ডিসগাস্টিং সিচুয়েসন!ট্রাই করতেছি ক্লাসে কনসেনট্রেট করার জন্য।আচ্ছা টিচার রা এত বিরক্তিকর কিভাবে হয়?উফ! আমার মনে হয় ক্লাস নেয়ার আগে সব টিচারদের একটা সাইকোলজির ক্লাস করে আসা উচিত।ইনফ্যাক্ট স্টুডেন্টদের সাইকোলজি না বুঝে পড়ালে সেই ক্লাস আদৌ ইফেক্টিভ হয়না।এই সহজ কথাটা যে টিচাররা যে কেন বুঝেনা!!
২.৩০ ঘন্টার এই ক্লাস শেষ হতে এখনও ১.৩০ ঘন্টা বাকি।ক্লাসের সবার দিকে একটু অবসার্ভ করলাম।দেখি সবাই যে যার পড়া নিয়ে ব্যস্ত।স্যার তার প্রজেক্টরে পড়ানো নিয়ে ব্যাস্ত।এই ক্লাসটাকে মনে হচ্ছে যেন ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন।স্টুডেন্ট-টিচার কারও সাথে কারো কোন কন্ট্যাক্ট নাই,বাট কমিউনিকেশন চলতেছে।এই যখন অবস্থা মনে পড়ে গেল কলেজ লাইফে কেমিস্ট্রি ক্লাসের কথা।আমাদের সেই স্যার ছিলেন ইউনিক।আমরা কখনই শেষ পিরিওয়ডে স্যার এর ক্লাস থাকলে ভুলেও সেই ক্লাস করতামনা।কারন ৪০ মিনিটের ক্লাস স্যার সুযোগ বুঝে ১.৩০ ঘণ্টাও নিয়ে ফেলতেন।একদিন স্যার ক্লাসে জারন-বিজারন বুঝাচ্ছেন।আমি পড়ছিলাম জুওলোজি।কারন বাসায় আমি কখনও বায়োলোজি পড়ার টাইম পেতামনা।সো ক্লাসই ছিল আমার জন্য পারফেক্ট টাইম।তাছাড়া জারন-বিজারনের চ্যপ্টারটা আমার আগেই পড়া ছিল।সো নো টেনসন!
সাডেনলি স্যার খেয়াল করলেন আমি স্যারের ক্লাসে মনোযোগী না।আমাকে দাড় করালেন।জারন-বিজারনের রিএকশান করতে দিলেন।স্যার তো আর জানতনা যে জারন-বিজারন ছিল আমার ফেভারিট ওয়ান।তাই দ্রুত রিএকশান টা করে দিলাম।কেন জানি মনে হল স্যার এতে খুব ইনসাল্ট ফিল করলেন,বললেন “এভাবে কেমিস্ট্রি মুখস্ত করে পরীক্ষায় কখনও পাস করা যাবেনা”।যেভাবেই হোক পরবর্তী এক্সাম এ স্যার এর কথা সত্যি হয়নি।
আর স্কুল লাইফের রসায়নের এক্সপেরিএন্স আমার খুব একটা ভাল ছিলনা।যদিও এক্সামে ৮০% নম্বর ইজিলি থাকত,বাট আমি জানতাম রসায়নে ছিল আমার জমের মত ভয়।অন্যদিকে ফিজিক্স ছিল আমার অন্তরের কাছাকাছি একটা জায়গায়।তাই স্কুল লাইফে ঠিক হয়ে গেছিল আমার এইম ইন লাইফ।হতে চেয়েছিলাম আর্কিটেক্ট।হায়রে আমার সাধের আর্কিটেক্ট!! আর্কিটেক্ট এর স্বপ্ন থেকে ব্যাক করলাম ফুড,নিউট্রিশন,ভিটামিনে...
ও মাই গড! এতক্ষনে মাত্র ৫ মিনিট পার হয়েছে।এত কিছু চিন্তা করলাম,সেই কলেজ,স্কুল এর কথা।এইম ইন লাইফের কথা।ঘড়ি কি স্লো নাকি? ক্লাসের ঘড়ি প্লাস নিজের ঘড়ি মিলাইলাম।আরে ঠিক ই তো আছে।তাহলে??পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম মনের গতিবেগ আলোর গতিবেগের চেয়েও বেশি।
যেভাবেই হোক ভয়ংকর ভাবে সেই বোরিং ক্লাস শেষ করে,পরে চরম একটা খারাপ আইটেম দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
বাসায় এসে মন মেজাজ খুব খারাপ।দুপুরে ঘুম দিলাম।বিকালে উঠে মন ভালো করার জন্য নঈম সিদ্দিকির বই ধরলাম।নঈম সিদ্দিকির বিশ্লেষনধর্মী লেখা পড়ে ধীরে ধীরে মন দ্রবীভূত হতে লাগল।
সন্ধার পরে বাসায় গেস্ট আসল।আমার এর দু;সম্পর্কের চাচা।বেসিক্যালি এই চাচাকে আমি খুব অপছন্দ করি।বিকজ আমাকে দেখলেই উনি অনন্ত ধারার উপদেশ বানী শুরু করে দেয়।চাচার ডাক শুনে গেলাম...
-আসসালামু আলায়কুম চাচা।ভালো আছেন?
-ওয়ালাইকুমাসসালাম।কেমন আছ মা তুমি?
-এইতো চাচা,আলহামদুলিলাহ ভালো আছি।অনেকদিন আপনি আসেননা...
-সময় কই বল আসার?তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে? তোমার হাতে কি বই ওটা?
-এমনি একটা বই পড়ছিলাম।সেরকম কিছুনা।
-দেখি তো একটু...
বইটি দিলাম চাচাকে।অনেক্ষন ধরে চাচা বইটি উলটে পালটে দেখলেন।পরে বললেন মা এসব বই পড়া বাদ দাও।এগুলো পড়লে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাবে।
ব্রেইন ওয়াশ?এমিনেতেই মেজাজ ছিল খুব খারাপ।তার উপর এই মহা বিরক্তিকর চাচা।তার পরে নঈম সিদ্দিকির বই পড়া নিয়ে ব্রেইন ওয়াশ বানী আমাকে একটু বেপরোয়া করে দিল।বললাম
-চাচা আমি হুমায়ুন আহমেদ,জাফর ইকবাল,তসলিমা নাসরিন,হুমায়ুন আজাদ,সূচিত্রা,সুনীল,সমরেশ এর বহু বই পড়েছি।কই তাদের বই পড়া নিয়ে কখনও তো বললেননা যে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাবে?আর এখন নবী(সাঃ) জীবনী নিয়ে লেখা এই বিশ্লেষনধর্মী বই পড়া দেখে কিভাবে বললেন যে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাবে?
তাতক্ষনিক এই জবাবের জন্য চাচা প্রস্তুত ছিলেননা।আর আমার বলার স্টাইলেও কিছুটা কঠোরতা ছিল।চাচা বললেন
-ও আচ্ছা অলরেডি তোমার ব্রেইন ওয়াশ হয়ে গেছে এসব জামাত শিবিরের বই পড়ে??
এবার জামাত শিবির টেনে আনছে বলে মেজাজ হয়ে গেল আরো খারাপ।বললাম
-চাচা আসলে ওইসব হুমায়ুন,জাফর,সমরেশ এর বই গুলো পড়ে ব্রেইন এ ডাস্ট জমা হয়েছিল।তাই একটু ওয়াশ করারা জন্য এসব বই আজকাল আমি প্রায়ই পড়ে থাকি।একথা বলে নিজের রুমে চলে আসলাম।
ধ্যাত! কি একটা শনির বলয় চলছে আজকে?চারপাশের সবকিছুই মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে।লাইট অফ করে কিছুক্ষন বসে থাকলাম।শুনতে পেলাম আম্মার সাথে চাচা কি যেন বলছিলেম।নাহ! আর শোনার চেষ্টা করিনি।যা বলে বলুক।আমি খুব ভদ্রভাবে চাচার সাথে যে কথা বলেছি,প্রতিটা কথার এন্সার দিয়েছি,এটাই অনেক।
মোবাইলে রিং হচ্ছে।আখির ফোন।
-দোস্ত কি খবর?
-ভালো না।শোন কাল ফিজিওলোজি প্র্যাক্টিকাল জমা দেয়ার লাস্ট ডেট।ম্যাডাম হসপিটালে ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছেন।সো কালই সব সাইন করাতে হবে।
-আজব? মানে কি?সম্ভব নাকি এখন সব প্র্যাক্টিকাল শেষ করা?আর ম্যাডাম এটা আগে বলবেনা?আর তাছাড়া আজ বললেও তো হত।এটলিস্ট বিকাল থেকে শুরু করলে শেষ হয়ে যেত।এখন বাজে রাত ১০ টা ।
-তুই তো আইটেম দিয়ে চলে আসলি।নোটিস বোর্ড খেয়াল করিসনি।আর ম্যাডাম আজকে আইটেম এর শেষে বলে গেছেন এই কথা।তোর ফোন এ রিচ করতে পারছিনা সেই দুপুর থেকে।ফোন অফ করে রেখেছিলি কেন?
-ওহ! শিট! আচ্ছা ঠিক আছে দোস্ত,কথা বলার টাইম নাই।আল্লাহ হাফিয।

লাইট অন করলাম।প্র্যাক্টিকাল বই ও খাতা নিয়ে বসলাম।যেইনা লিখতে যাব কারেন্ট গেল চলে।যাহ! আজকে আর কিছুই লিখবনা।সাইনও করাবোনা।এই বলে আবার বিছানায় গেলাম।কখন যে ঘুমিয়া পড়েছি জানিনা।ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে।৮ বাজতে মাত্র ৫ মিনিট বাকি।উহু!! প্রথম ক্লাস্ টা মিস।২য় ক্লাসের জন্য কলেজে গেলাম।শেষ ক্লাসে আমি বাদে প্রায় সবাই প্র্যাক্টিকাল সাইন করালো।আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম।বাট কেন জানি কোন ফিলিংস হচ্ছিলনা।আজকেই লাস্ট ডেট।ম্যাডাম চলে যাবেন।ভোতা হয়ে গেছিলাম কিছুক্ষনের জন্য।

এই ছিল আমার মেজাজ খারাপের ২৪ ঘন্টা।পরবর্তীতে আমারই এক প্রিয় স্যারের কাছে আমার প্র্যাক্টিকাল সব সাইন করিয়ে নিয়েছিলাম।এখনও সেই দিনের কথা মনে পড়লে খুব হাসি পায়।বেশি মজা লাগে সেই ব্রেইন ওয়াশ চাচার কথা মনে পড়লে।হা...হা...ব্রেইন কি আমার সত্যিই ওয়াশ!!!!!

রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

একটি মিনতি প্রথম আলোর কাছে...রাখবে?

শপথের কথা মনে হলেই মনে পড়ে স্কুল জীবনের এসেম্বলীতে দাঁড়িয়ে সেই বিরক্তিকর শপথের কথা।প্রতিদিন একই কথা…’আমি শপথ করিতেছি যে সদা সত্য কথা বলিব,দেশের তরে কাজ করিব।দেশ ও মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিব.........’ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া প্রতিদিনই আমার জন্য খুব কষ্টকর ছিল।আর যখনি মনে পড়ে স্কুলে যেয়ে পিটি করতে হবে তখন আরও বিরক্ত লাগত।মনে হত কে যে এই পড়ালেখা নামক জিনিসটা আবিষ্কার করেছিল!!! কিন্তু আম্মু জোর করে প্রতিদিন স্কুলে পাঠাত।উফ! স্কুল জীবন ছিল সত্যিই অনেক কষ্টের।আনন্দ যে ছিলনা তা বলবনা।কিন্তু নষ্টালজিক হতে আমার আপত্তি আছে।যে আনন্দ আমি স্কুলে থাকতে বুঝতে পারলামনা তা এখন বুঝে অতীত বিলাসের কোন মানে নাই।স্কুল জীবন যখন প্রায় শেষের পথে তখন একটা জিনিস ভেবেই খুব আনন্দ লাগছিল যে আমাকে আর পিটি,সেই একঘেয়ে শপথ করা লাগবেনা।কিন্তু হায়! যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়।আমার ক্ষেত্রেও অবস্থা তাই হল।সেই একই চক্রের পুনরাবৃত্তি।আবার পিটি,আবার শপথ...
কিন্তু কলেজে উঠার পর আমি অনেক ফাকিবাজ হয়ে গিয়েছিলাম।প্রায় সময় এসেম্বলীর পর কলেজে যেতাম।তবে অবশ্য এই ফাকিবাজি বেশিদিন কাজে লাগেনি।কলেজের নতুন প্রিন্সিপাল খুব কড়া ছিলেন।তাই আবার ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন।সেই এসেম্বলি,সেই পিটি।
ওহ! প্রথম আলোর দিন বদলের শপথের কথা দেখে একটু অতীতে ফিরে গেছিলাম।স্কুল কিংবা কলেজ লাইফে শপথের মূল্য না বুঝলেওএখন কিছুটা বুঝতে পারি।শপথ কেবল মৌখিক বাক্য নয় বরং এর সাথে মিশে আছে বাস্তব শপথের প্রতিশ্রুতি।ঠিক যেমন শিকড়ের সাথে বৃক্ষের সম্পর্ক।
ম্যাচুরিটির যে লেভেলে আমাদের মৌখিক শপথ করানো হয়,সেই লেভেলে বাস্তব শপথের কোন প্রাক্টিস শেখানো হয়না।ফলে যা হবার তাই হয়।এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিই।
প্রথম আলোর দিন বদলের শপথকে আমি সাধুবাধ জানাই।অনেক আগে থেকেই আমি প্রথম আলো পড়ি।নারী মঞ্চ আমার বিশেষ আকর্ষন।নারীদের অধিকার আদায়ের কথা,অনেক না বলা অব্যক্ত কথা এখানে ফুটে উঠে।মনে করতাম নারীদের জন্য সত্যিকারের একটা প্লাটফর্ম নারী মঞ্চ।দিন বদলের শপথের এই গান শুনে তাই মনে করেছিলাম প্রথম আলো পারবে সমাজের মৌখিক শপথকে বাস্তবে কনভার্ট করতে।
গতকাল নারীমঞ্চ পড়ছিলাম।একটা খবর বিশেষভাবে খুজতেছিলাম।পিরোজপুরের সেই তিন বোনের কথা।তাদের এই অহেতুক হয়রানিতে নারী মঞ্চ নিশ্চয় নির্বাক থাকবেনা।প্রকাশ করবে বিশেষ প্রতিবেদন।কিন্তু নাহ! অনেক খুজেও সেখানে বিশেষ প্রতিবেদন তো দূরের কথা সাধারন কোন খবরও আমি নারী মঞ্চে পাইনি।খুব খারাপ লাগল।পিরোজপুরের সেই ঘৃ্ন্য ঘটনায় প্রথম আলো র নারী মঞ্চ কিভাবে নির্বাক থাকল?বখাটেদের বাচাতে ডিজিটাল সরকারের উদ্যোগের কথা নাহয় নাই বললাম।কিন্তু যে প্রথম আলো নারীদের নিয়ে এত সোচ্চার তারা কেন আজ এত শীতল,উত্তাপহীন?? তবে কি হিজাব পরিহিতা বলেই তাদের ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব? কিন্তু তারাও তো নারী।মুসলিম নারী।৮০% মুসলমানের এই দেশে যদি হিজাব পরিহিতাদের জঙ্গি সন্দেহে রিমান্ডে নেওয়া হয়,অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হয় তাহলে তো বলতেই হয় দেশ আসলে ডিজিটালি যাচ্ছে কোথায়??
তাই নারী মঞ্চের এই নির্বাক উপস্থিতি আমাকে বাধ্য করল ভার্চুয়ালী কিছু লিখতে।প্রথম আলোকে বলি প্লিজ তুমি তোমার এই কেবল স্পন্সর নির্ভর মৌখিক দিন বদলের গান বন্ধ কর।যেদিন তুমি নিজে বদল হতে পারবা,দেশের অন্যায় দেখলেই নিরপেক্ষভাবে সবাক হয়ে উঠবা,বাস্তব দিন বদলের রঙ্গে নিজেদের রাঙ্গায়িত করতে পারবা সেই দিন তোমার সাথে আমিও গাইব।আমরা সবাই গাইব।প্লিজ আমার এই মিনতি টুকু রাখ।প্লিজ...