সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

মেজাজ খারাপের ২৪ ঘন্টা এবং ব্রেইন ওয়াশ!!!

বায়োকেমিস্ট্রি স্যার এর ক্লাসে কিছুতেই মন বসছেনা।পাশে বসা ফ্রেন্ড পরবর্তি ক্লাসের আইটেম এর পড়া পড়তেছে।আর এদিকে স্যার বোরিং ফুড,নিউট্রিশন,ভিটামিন পড়াচ্ছেন।কি যে ডিসগাস্টিং সিচুয়েসন!ট্রাই করতেছি ক্লাসে কনসেনট্রেট করার জন্য।আচ্ছা টিচার রা এত বিরক্তিকর কিভাবে হয়?উফ! আমার মনে হয় ক্লাস নেয়ার আগে সব টিচারদের একটা সাইকোলজির ক্লাস করে আসা উচিত।ইনফ্যাক্ট স্টুডেন্টদের সাইকোলজি না বুঝে পড়ালে সেই ক্লাস আদৌ ইফেক্টিভ হয়না।এই সহজ কথাটা যে টিচাররা যে কেন বুঝেনা!!
২.৩০ ঘন্টার এই ক্লাস শেষ হতে এখনও ১.৩০ ঘন্টা বাকি।ক্লাসের সবার দিকে একটু অবসার্ভ করলাম।দেখি সবাই যে যার পড়া নিয়ে ব্যস্ত।স্যার তার প্রজেক্টরে পড়ানো নিয়ে ব্যাস্ত।এই ক্লাসটাকে মনে হচ্ছে যেন ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন।স্টুডেন্ট-টিচার কারও সাথে কারো কোন কন্ট্যাক্ট নাই,বাট কমিউনিকেশন চলতেছে।এই যখন অবস্থা মনে পড়ে গেল কলেজ লাইফে কেমিস্ট্রি ক্লাসের কথা।আমাদের সেই স্যার ছিলেন ইউনিক।আমরা কখনই শেষ পিরিওয়ডে স্যার এর ক্লাস থাকলে ভুলেও সেই ক্লাস করতামনা।কারন ৪০ মিনিটের ক্লাস স্যার সুযোগ বুঝে ১.৩০ ঘণ্টাও নিয়ে ফেলতেন।একদিন স্যার ক্লাসে জারন-বিজারন বুঝাচ্ছেন।আমি পড়ছিলাম জুওলোজি।কারন বাসায় আমি কখনও বায়োলোজি পড়ার টাইম পেতামনা।সো ক্লাসই ছিল আমার জন্য পারফেক্ট টাইম।তাছাড়া জারন-বিজারনের চ্যপ্টারটা আমার আগেই পড়া ছিল।সো নো টেনসন!
সাডেনলি স্যার খেয়াল করলেন আমি স্যারের ক্লাসে মনোযোগী না।আমাকে দাড় করালেন।জারন-বিজারনের রিএকশান করতে দিলেন।স্যার তো আর জানতনা যে জারন-বিজারন ছিল আমার ফেভারিট ওয়ান।তাই দ্রুত রিএকশান টা করে দিলাম।কেন জানি মনে হল স্যার এতে খুব ইনসাল্ট ফিল করলেন,বললেন “এভাবে কেমিস্ট্রি মুখস্ত করে পরীক্ষায় কখনও পাস করা যাবেনা”।যেভাবেই হোক পরবর্তী এক্সাম এ স্যার এর কথা সত্যি হয়নি।
আর স্কুল লাইফের রসায়নের এক্সপেরিএন্স আমার খুব একটা ভাল ছিলনা।যদিও এক্সামে ৮০% নম্বর ইজিলি থাকত,বাট আমি জানতাম রসায়নে ছিল আমার জমের মত ভয়।অন্যদিকে ফিজিক্স ছিল আমার অন্তরের কাছাকাছি একটা জায়গায়।তাই স্কুল লাইফে ঠিক হয়ে গেছিল আমার এইম ইন লাইফ।হতে চেয়েছিলাম আর্কিটেক্ট।হায়রে আমার সাধের আর্কিটেক্ট!! আর্কিটেক্ট এর স্বপ্ন থেকে ব্যাক করলাম ফুড,নিউট্রিশন,ভিটামিনে...
ও মাই গড! এতক্ষনে মাত্র ৫ মিনিট পার হয়েছে।এত কিছু চিন্তা করলাম,সেই কলেজ,স্কুল এর কথা।এইম ইন লাইফের কথা।ঘড়ি কি স্লো নাকি? ক্লাসের ঘড়ি প্লাস নিজের ঘড়ি মিলাইলাম।আরে ঠিক ই তো আছে।তাহলে??পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম মনের গতিবেগ আলোর গতিবেগের চেয়েও বেশি।
যেভাবেই হোক ভয়ংকর ভাবে সেই বোরিং ক্লাস শেষ করে,পরে চরম একটা খারাপ আইটেম দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
বাসায় এসে মন মেজাজ খুব খারাপ।দুপুরে ঘুম দিলাম।বিকালে উঠে মন ভালো করার জন্য নঈম সিদ্দিকির বই ধরলাম।নঈম সিদ্দিকির বিশ্লেষনধর্মী লেখা পড়ে ধীরে ধীরে মন দ্রবীভূত হতে লাগল।
সন্ধার পরে বাসায় গেস্ট আসল।আমার এর দু;সম্পর্কের চাচা।বেসিক্যালি এই চাচাকে আমি খুব অপছন্দ করি।বিকজ আমাকে দেখলেই উনি অনন্ত ধারার উপদেশ বানী শুরু করে দেয়।চাচার ডাক শুনে গেলাম...
-আসসালামু আলায়কুম চাচা।ভালো আছেন?
-ওয়ালাইকুমাসসালাম।কেমন আছ মা তুমি?
-এইতো চাচা,আলহামদুলিলাহ ভালো আছি।অনেকদিন আপনি আসেননা...
-সময় কই বল আসার?তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে? তোমার হাতে কি বই ওটা?
-এমনি একটা বই পড়ছিলাম।সেরকম কিছুনা।
-দেখি তো একটু...
বইটি দিলাম চাচাকে।অনেক্ষন ধরে চাচা বইটি উলটে পালটে দেখলেন।পরে বললেন মা এসব বই পড়া বাদ দাও।এগুলো পড়লে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাবে।
ব্রেইন ওয়াশ?এমিনেতেই মেজাজ ছিল খুব খারাপ।তার উপর এই মহা বিরক্তিকর চাচা।তার পরে নঈম সিদ্দিকির বই পড়া নিয়ে ব্রেইন ওয়াশ বানী আমাকে একটু বেপরোয়া করে দিল।বললাম
-চাচা আমি হুমায়ুন আহমেদ,জাফর ইকবাল,তসলিমা নাসরিন,হুমায়ুন আজাদ,সূচিত্রা,সুনীল,সমরেশ এর বহু বই পড়েছি।কই তাদের বই পড়া নিয়ে কখনও তো বললেননা যে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাবে?আর এখন নবী(সাঃ) জীবনী নিয়ে লেখা এই বিশ্লেষনধর্মী বই পড়া দেখে কিভাবে বললেন যে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাবে?
তাতক্ষনিক এই জবাবের জন্য চাচা প্রস্তুত ছিলেননা।আর আমার বলার স্টাইলেও কিছুটা কঠোরতা ছিল।চাচা বললেন
-ও আচ্ছা অলরেডি তোমার ব্রেইন ওয়াশ হয়ে গেছে এসব জামাত শিবিরের বই পড়ে??
এবার জামাত শিবির টেনে আনছে বলে মেজাজ হয়ে গেল আরো খারাপ।বললাম
-চাচা আসলে ওইসব হুমায়ুন,জাফর,সমরেশ এর বই গুলো পড়ে ব্রেইন এ ডাস্ট জমা হয়েছিল।তাই একটু ওয়াশ করারা জন্য এসব বই আজকাল আমি প্রায়ই পড়ে থাকি।একথা বলে নিজের রুমে চলে আসলাম।
ধ্যাত! কি একটা শনির বলয় চলছে আজকে?চারপাশের সবকিছুই মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে।লাইট অফ করে কিছুক্ষন বসে থাকলাম।শুনতে পেলাম আম্মার সাথে চাচা কি যেন বলছিলেম।নাহ! আর শোনার চেষ্টা করিনি।যা বলে বলুক।আমি খুব ভদ্রভাবে চাচার সাথে যে কথা বলেছি,প্রতিটা কথার এন্সার দিয়েছি,এটাই অনেক।
মোবাইলে রিং হচ্ছে।আখির ফোন।
-দোস্ত কি খবর?
-ভালো না।শোন কাল ফিজিওলোজি প্র্যাক্টিকাল জমা দেয়ার লাস্ট ডেট।ম্যাডাম হসপিটালে ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছেন।সো কালই সব সাইন করাতে হবে।
-আজব? মানে কি?সম্ভব নাকি এখন সব প্র্যাক্টিকাল শেষ করা?আর ম্যাডাম এটা আগে বলবেনা?আর তাছাড়া আজ বললেও তো হত।এটলিস্ট বিকাল থেকে শুরু করলে শেষ হয়ে যেত।এখন বাজে রাত ১০ টা ।
-তুই তো আইটেম দিয়ে চলে আসলি।নোটিস বোর্ড খেয়াল করিসনি।আর ম্যাডাম আজকে আইটেম এর শেষে বলে গেছেন এই কথা।তোর ফোন এ রিচ করতে পারছিনা সেই দুপুর থেকে।ফোন অফ করে রেখেছিলি কেন?
-ওহ! শিট! আচ্ছা ঠিক আছে দোস্ত,কথা বলার টাইম নাই।আল্লাহ হাফিয।

লাইট অন করলাম।প্র্যাক্টিকাল বই ও খাতা নিয়ে বসলাম।যেইনা লিখতে যাব কারেন্ট গেল চলে।যাহ! আজকে আর কিছুই লিখবনা।সাইনও করাবোনা।এই বলে আবার বিছানায় গেলাম।কখন যে ঘুমিয়া পড়েছি জানিনা।ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে।৮ বাজতে মাত্র ৫ মিনিট বাকি।উহু!! প্রথম ক্লাস্ টা মিস।২য় ক্লাসের জন্য কলেজে গেলাম।শেষ ক্লাসে আমি বাদে প্রায় সবাই প্র্যাক্টিকাল সাইন করালো।আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম।বাট কেন জানি কোন ফিলিংস হচ্ছিলনা।আজকেই লাস্ট ডেট।ম্যাডাম চলে যাবেন।ভোতা হয়ে গেছিলাম কিছুক্ষনের জন্য।

এই ছিল আমার মেজাজ খারাপের ২৪ ঘন্টা।পরবর্তীতে আমারই এক প্রিয় স্যারের কাছে আমার প্র্যাক্টিকাল সব সাইন করিয়ে নিয়েছিলাম।এখনও সেই দিনের কথা মনে পড়লে খুব হাসি পায়।বেশি মজা লাগে সেই ব্রেইন ওয়াশ চাচার কথা মনে পড়লে।হা...হা...ব্রেইন কি আমার সত্যিই ওয়াশ!!!!!

কোন মন্তব্য নেই: