শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০

আমার স্টুডেন্ট !

টেনশনে আছি রুহিত কে নিয়ে। রুহিত আমার স্টুডেন্ট। উহু, শুধু আমার না। আমার ভাইয়েরও। দুজনই পার্ট টাইম পড়ায় ওকে। যখন আমার পরীক্ষা থাকে তখন আমার ভাই আর আমার ভাইয়ের যখন অন্য কাজ থাকে তখন আমি। এভাবেই চলছে আজ চার মাস। আসলে বাড়িওয়ালা আন্টির সাথে এরকমই কথা হয়েছিল যে আমি বিজি থাকলে আমার ভাই পড়াবে। তো সেভাবেই চলছে...
এই পর্যন্ত খুব বেশি যে স্টুডেন্ট পড়িয়েছি তা না। তবে যাদের পড়িয়েছি তাদের থেকে রুহিত আলাদা। কি রকম আলাদা?
যদিও আমি শুধু ম্যাথ আর বিজ্ঞান পড়াই তারপরও আমি মাঝে মাঝে রুহিতের সাথে গল্প করার জন্য অন্য সাবজেক্টের আলোচনাও করি। একদিন রুহিতকে বললাম,
- আচ্ছা রুহিত, হাজার বছর ধরে উপন্যাস কেমন লাগে তোমার?
- ভালই তো লাগে, আপু।
- একটু বলবা হাজার বছর ধরে উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত কাহিনী?
- (কিছুক্ষন চুপ থেকে শুরু করল) মকবুল বুড়া খুব খারাপ একটা লোক। একদিন করল কি জানেন আপু?
- কি করল?
- সে রাতে তার বৌ দের দিয়ে সবার অগোচরে অনেক অনেক কষ্টের কাজ করাল যা কিনা কেবল গরুই করতে পারে, মানুষ না।
- আচ্ছা, কাহিনী টা আমি জানতে চাইছি...
- এটাই তো কাহিনী!
- হুম, বুঝেছি। তাহলে আমাকে একটু বলতো হাজার বছর ধরে উপন্যাসের সামারি কি?
- আমি আসলে আপু বুঝতেছিনা কিভাবে মানুষ হাজার বছর বেচে থাকে? এই নাম দেয়ার মানে বুঝতেছিনা, তাই সামারি আমার ব্রেইনে আসতেছেনা।
- ওকে বলা লাগবেনা। তুমি পরের ম্যাথটা কর।

এই হচ্ছে রুহিত। যে কোন উপন্যাস বা গল্পের কাহিনী বা সামারি বলতে বললে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে কাহিনী শেষ করে। গত রোজার ঈদের পরে রুহিত কে বললাম
- তোমার দেখা সবচেয়ে প্রিয় মুভি কোনটি?
- আমি তো মুভি দেখেছি একটা। ভালই লেগেছে
- মাত্র একটা?
- জি। কারণ পড়ার চাপে আমি মুভি দেখার টাইম পাইনা।
- আচ্ছা, কোন মুভি দেখেছ?
- থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার।
- হুম। এই মুভির কাহিনী কি?
- এত বড় কাহিনী কিভাবে বলি!
- না না, সংক্ষিপ্ত করে বললেও হবে।
- আচ্ছা। একদিন রুবা সন্ধায় তার স্বামীর সাথে হাটছিল। হঠাৎ পুলিশ ওদের ধরে থানায় নিয়ে গেল। এরপর ওদের বহু প্রশ্ন করতে লাগল। এরকম করে কাহিনি এগিয়ে যায়...
- আচ্ছা বুঝেছি। মুভিটার সামারি কি?
- মুভিটার সামারি তার নামের মধ্যেই আছে। থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। মানুষ হচ্ছে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। তাই তার আরো মানুষ দরকার যেন সে প্লুরাল হতে পারে। হাজার হলেও মানুষ হচ্ছে সামাজিক জীব।
- গুড। দারুন বলেছ তো!

আমার পরে যখন একদিন আমার ভাই পড়াতে গেল সেতো রীতিমত বিরক্ত। মেজাজ খারাপ করে সে আমাকে বলল “ আচ্ছা তুই রুহিতকে পড়াস কি করে? আজকে ওকে আমি চার ঘণ্টা ধরে সাইন থিটা=লম্ব/ অতিভুজ, কস থিটা= ভূমি/অতিভূজ পড়ালাম। অথচ সে বার বারই ভুল লিখে যাচ্ছে। ধ্যাৎ আজকে আমার সারাদিন নষ্ট ওর জন্য।“
আমার ভাইকে বললাম, “ রুহিত হচ্ছে যান্ত্রিক টাইপ বুঝেছিস। তুই ওকে সাইন থিটা, কস থিটা ২০ বার করে মোট ৪০ বার লেখা। দেখবি পরে ঠিক হয়ে যাবে। কারণ বার বার লিখতে লিখতে সেটা ওর ব্রেইনে সেট হয়ে যাবে।“ সত্যি সত্যি আমার ভাই ওকে ২০ বার করে মোট ৪০বার লেখানোর পর রুহিত ঠিকভাবে বলতে পারে।
যাইহোক ইদানিং আমি রুহিত কে নিয়ে খুব বেশি টেনশনে আছি। ২০১১ তে ওর এসএসসি পরীক্ষা। ম্যাথ ওকে রিভাইস করাচ্ছি। রুহিতের আরেকজন টিচার আছে যে ম্যাথ ও বিজ্ঞান ঠিকমত পড়া হচ্ছে কিনা সেটা মনিটর করে। সেই টিচার রিভাইস করা ম্যাথ থেকে ওকে আটটা অংক করতে দিয়েছে সেদিন, রুহিত ৩ঘণ্টা পর একটা অংক মিলাতে পেরেছে। সেই খাতা পরে দেখে আমার তো মাথা খারাপ হবার মত অবস্থা। আমি রুহিত কে এবার বললাম
- রুহিত, তোমার এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে কি টেনশন হয়?
- জি আপু হয়।
- তাহলে পড়াশুনা বাদ দিয়ে টেনশান কর।
- মানে?
- মানে হল, তুমি যখন টেনশান কর তখন তোমার ব্রেইনের যে পার্ট পড়াশুনা মেইন্টেইন করে সেটা ব্লক হয়ে যায়। তাই তুমি যদি সত্যি সত্যি পরীক্ষায় পাশ করতে চাও তাহলে টেনশান বাদ দিয়ে পড়াশুনা কর।
- আপু, আমার মনে হচ্ছে আমি ছিটকে পড়ে যাব।
- হুম, যাবা তো! কিন্তু আমার কথা হচ্ছে তুমি তো সর্বোচ্চ ফেইল করবা। তাহলে টেনশান কিসের?
- ফেইল করলে তো আমি পানিতে ডুবে যাব।
- মানে?
- মানে পরীক্ষা হল পানির মত। পাশ করতে না পারলে সেই পানিতে আমি ডুবে যাব।
- হুম। তো কি হয়েছে? তোমাকে সেই পানি থেকে উঠিয়ে সাতার শেখাব। তারপর আবার পরের বছর তোমাকে পানিতে নামিয়ে দিব। তখন ডুবে যাবানা। তাহলে টেনশান কিসের???
- একবার যদি ডুবে যায়, তাহলে কি আর আমি পানি থেকে উঠতে পারব?
- আচ্ছা, রুহিত আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে...
- ঠিক আছে আপু, আপনি টেনশান কইরেননা। আমি দেখি কি করা যায়...

উফ! বাসায় এসে মনে হল, ছেড়ে দে মা কেন্দে বাচি টাইপ অবস্থা। আহারে! ওর জন্য খুব খারাপও লাগে আবার। পাশ করতে পারলেই ওর বাবা-মা ওকে নিয়ে মাথায় করে রাখবে। কিন্তু সেই পাসই ওর জন্য ভয়াবহ কঠিন ব্যাপার। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য আমি অপেক্ষা করছি। রুহিত যদি পাশ করে তাহলে আমি যতটা খুশি হব তা মনে হয় আমার নিজের পরীক্ষার ভাল রেজাল্টের জন্য তত খুশি হবনা………

একটু খানি জীবন চাই...!!

হাতের মুঠো ফোনের দিকে যখন তাকায় তখন খুউব অবাক হয়ে যাই। কি এক আজব জিনিস যা আমাকে প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে নিয়ে যায় নিমেষেই। প্রতি মুহূর্তে প্রিয়জনের সাথে ইচ্ছা হলেই যোগাযোগ করতে পারি। অপেক্ষা করতে হয়না একটুও। অন্তর্জালের মোহনীয় শক্তিতে ইচ্ছা হলেই মনের কথা অন্যের কাছে পৌছে দিতে পারি। তাই ডাকপিয়নের অপেক্ষায় আজ কারো প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে হয়না। কিন্তু আজ খুব অপেক্ষা করতে ইচ্ছা হচ্ছে কারো হাতে লেখা চিঠি পেতে। যে চিঠির পরতে পরতে হাতের লেখার সাথে আবেগের উঠা-নামা অনুভব করতে পারব। মনের যত আকুলতা সেটাকে নিজের মনের আকুলতার সাথে একাকার করে ফেলতে পারব। ছোটবেলায় খালামনিকে একবার চিঠি লিখেছিলাম। চিঠির শেষে নিজের হাতের একটা ছাপ দিয়ে ছবিও একে দিয়েছিলাম। আম্মু জিজ্ঞেস করেছিল কেন এই ছবি আকা? শিশুসুলভ মন নিয়ে বলেছিলাম যে হাত দিয়ে খালামনিকে চিঠি লিখছি সেই হাতের ছবিও নিশ্চয় খালামনির দেখতে মন চাইবে, তাই এই ছবি আকা। এখন সেই স্মৃতি রোমন্থন করলে খুব হাসি পায়, কি হাস্যকর রকম মানসিকতা ছিল তখন। কিন্তু আজ আমি শিশুসুলভ সেই মানসিকতাকে খুব বেশি অনুভব করছি, খুব মিস করছি। আমাকে কেউ হয়তবা কখনও হাতে লিখে চিঠি পাঠাবেনা। তাই কারো আবেগ,ভালবাসা ও স্নেহের উষ্ণতা আমাকে আর শিহরিত করবেনা। যান্ত্রিকতার এই যুগে সবকিছু হাতের মুঠোয় থাকা সত্ত্বেও আমি আজও খুজে ফিরি বারবার আদিম সেই প্রাচীন সম্পর্ক যা বার বার আবেগে আমাকে প্রকম্পিত করবে।

নস্টালজিক আমি কখনই সেরকম ছিলামনা। হতেও চাইনি। দৃষ্টিতে শুধু ভবিষ্যত দেখি। অতীত আমাকে প্রেরণা যোগায় কিন্তু কখনও অতীতে ফিরে যেতে চাইনি। অতীতের দুঃখ বর্তমানে আমাকে ব্যথিত করেনা, বরং ভবিষ্যতের জন্য পাথেয় যোগায়। কিন্তু তাহলে আজ কেন বার বার ব্যতিক্রম হচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে যাবার পথে হাইওয়ের পাশে সবুজের মাঝে ছোট ছোট ঘর,পাশে বয়ে যাওয়া নদী,মাথার উপর অন্তিম আকাশ আর রাতের বেলায় ঘরের উঠোনে বসে জ্যোৎস্না স্নান করতে আজ খুব মন চাইছে। হোক না সাদা-মাটা জীবন তাতে কি! সেখানে আর কিছু না থাকুক অন্তত পরস্পরের প্রতি ভালবাসার কোন অভাব থাকতনা। ঠিক কবির মত আজ আমারও বলতে ইচ্ছা করছে ভালবাসাহীন হাজার বছর আমি চাইনা। চাই একটুখানি জীবন কিন্তু ভালবাসা, মায়া-মমতা,স্নেহের আবেগে পরিপূর্ণ এক সুন্দর পৃথিবী।

পৃথিবী আজ আমার ভাল লাগেনা। ভাল লাগেনা অপরের সাথে শুধুই যান্ত্রিক কোন সম্পর্ক। না, কোন অভিমানে নয় চরম বাস্তবতায় আজ আর আমার সত্যি পৃথিবী ভাল লাগেনা। এখানে কি আছে? হয়তবা হাতের মুঠোয় আমার পুরা পৃথিবী আছে কিন্তু কি লাভ সেই পৃথিবী দিয়ে? যেখানে মায়ের পরকীয়ার বলি হয় ভালবাসার সন্তানের। নিজ অস্তিত্ব কি আজ হুমকির সম্মুখিন? দশ মাস দশ দিন সুগভীর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে শিশুটি যখন নিরাপত্তাহীন পৃথিবীতে পদার্পন করে তখন তার একমাত্র নিরাপত্তা তার মা। সেই নিরাপত্তার স্থানও আজ নিরাপত্তাবিহীন। এরকম পরকীয়ার বলি কেবল একজন নয়, হয়ত আরো বেশি। ভবিষ্যতে কি হবে ভাবতে ভয় পাচ্ছি...

প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসার গভীরতাও আজ আর নেই। থাকবে কি করে? এখন বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ড থাকা একটা স্ট্যাটাস। তাই ভালবেসে বিয়ে করে অতি দ্রুত বিচ্ছেদ হওয়া যেন অতি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ঠিক কোথায় যেন আমরা সবাই ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছি। যেখানে আমাদের ভালবাসা, বিশ্বাস, আস্থা সব হারিয়ে যাচ্ছে। জীবনে দুঃখ আসবে, দুর্দশা আসবে, বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে কিন্তু তাতে কি? কারো ভালবাসার টানে, কারো আস্থার প্রতি আস্থা রেখে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাব। নাহ! আজ সেই প্রেরণাও নাই। কারো প্রতি আজ আর আস্থা রাখতে পারিনা।

সন্তানের হাতে বাবা খুন কিংবা বাবার হাতে সন্তান খুন, এটা তো নিছক একটা দুঃসংবাদ এখন। পত্রিকার হাজারো দুঃসংবাদের মধ্যে এই দুঃসংবাদ এখন নিয়মিত প্রকাশিত হয়। শুধু এই নয়, আরো আছে। দুঃসংবাদের প্রকারভেদ শুনতে চান? প্রতিনিয়ত কোন না কোন মেয়েকে আত্বহত্যা করতে হচ্ছে ইভটিজিং এর কারণে। আজকাল কোন ছেলে আর মেয়েদের বোন হিসেবে সম্মান জানায়না। হয়ত বোনরাও আজকাল ভাইদের ভাই হিসেবে বিশ্বাস করতে পারেনা। সবই সম্ভাবনা...কিছুই জানিনা। শুধু এইটুকু অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পাচ্ছি চারপাশ থেকে ভালবাসা, বিশ্বাস আর আস্থা রা হারিয়ে যাচ্ছে।

পত্রিকার পাতা উল্টায়না আজকাল। বাতাসেই খবর যেভাবে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তাতে আর পত্রিকার পাতা পড়া লাগেনা। তবুও মাঝে মাঝে একটু খুজে ফিরি, কোন ভাল কিছু পাওয়া যায় কিনা! একটু ভালবাসার ছিটেফোটা দেখা যায় কিনা! বার বার হতাশ হই। বার বার চোখের মাঝে ভাসে আবু বকরের মত নিরীহ কোন ছেলে কিংবা দেশের হাজার হাজার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষারত সেইসব ভাইদের কথা যাদের মনে কতইনা স্বপ্ন ছিল দেশকে কিছু দেবার, দশের জন্য কিছু করার। ভালবাসাহীন এই নিষ্ঠুর পৃথিবী তাদের থাকতে দেয়নি। আমি কোন রাজনীতি করিনা, চাইনা কোন ক্ষমতা, করিনা কোন দল, করিনা কারো পক্ষপাতিত্ব। শুধু একটুখানি ভালবাসা চাই, ভালবাসায় পরিপূর্ণ একটা ছোট পৃথিবী চাই। দরকার নেই মুঠো ফোন কিংবা অন্তর্জালের মত কোন যাদুকরি জিনিস। সেই পুরোনো পৃথিবীতে ফিরে যেতে চায়, যেখানে আর কিছু না থাকুক মায়ের ভালবাসার মত অটুট আস্থা মাথার উপর সর্বক্ষন থাকবে অন্তত।

উন্নয়নের দিক থেকে আজো আমরা পিছিয়ে আছি। তাই উন্নয়নের জোয়ারে ভাসার জন্য পরিবর্তন হয় সরকার, আমরা স্বপ্ন দেখি। হয়ত এবার আমরা কিছু একটা পাব, আর কিছু না হোক অন্তত বিশ্বাস আর ভালবাসা। কিন্তু হতাশ ও পিপাসার্ত মন বার বার হতাশ হয়, পিপাসায় গলা শুকিয়ে যায়। মনের পিপাসা মেটানোর জন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে পাশে পাইনা। প্রধাণমন্ত্রী নাকি একটা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অভিভাবক, সেটাই জানতাম সব সময়। কিন্তু কই? প্রতিবারই কোন নৃশংস ঘটনার জন্য একটা নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠন কিংবা বিরোধী দল বারবার আমাদের অভিভাবকের চক্ষুশূল হয়! মা স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী আজ তার জনগনরূপ সন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে। হায়রে মা! হায়রে সন্তান! সব ভালবাসার স্থান আজ বিষে ভরা, দূষিত হয়ে গিয়েছে। কেউ কাউকে আমরা ক্ষমা করিনা, কেউ কাউকে ভালবাসিনা। তাই ট্রেন দুর্ঘটনায় খুব সহজেই অবলিলায় আমাদের দেশের অভিভাবক বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে সস্তি খুজে পান। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য নির্বিশেষে বিরোধী দলকে ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে উল্লেখ করে। কি যে এই সস্তি তিনি পান আমরা জানিনা তবে আমরা বার বার আস্থা হারিয়ে ভবঘুরে হয়ে যাই।

শিক্ষা ব্যবস্থার চরম উন্নতি দরকার। এজন্য প্রয়োজন পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিশীলন। সেই লক্ষ্যেই যে শিক্ষা নীতির রূপ দেখলাম সেখানেও আবার আস্থা হারালাম। যান্ত্রিকতার এই যুগে প্রযুক্তির সাথে শিক্ষাকে সংযোগ ঘটানোর জন্য আমাদের অভিভাবকের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এখানেও মন ও মানসিকতা গঠনের উপকরনকে অবলিলায় ছুড়ে ফেলা হল। ধর্ম নিছক কোন ধর্মীয় ব্যাপার না যে এটা প্রযুক্তিগত শিক্ষার জন্য বাধাস্বরূপ। যা দিয়ে আমরা এই পৃথিবী গড়ে তুলব তা কিন্তু ওই প্রযুক্তির মধ্যে নেই কিংবা ওই প্রযুক্তি আমাদের শেখাবেনা কিন্তু ধর্ম শেখাবে। আবার যে শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন করে আমরা উন্নত পৃথিবী গড়ে তুলতা চাইছি সেই পৃথিবীতে কিন্তু আমরা নিজেরাই আর বসবাস করতে চাইবনা। বিশ্বাস, আস্থা,ভালবাসা,মূল্যবোধ বিহীন প্রযুক্তিগত শিক্ষা দিয়ে যে পৃথিবী গড়তে চাইছি সেখানে হয়ত কেবল রোবটই বাস করতে পারবে, কোন মানুষ নয়। অথবা এরকম হতে পারে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় আমাদের মন-মগজের বিবর্তন হয়ে যাবে ফলে মানুষ আর ভালবাসা চাইবেনা, কারো প্রতি বিশ্বাস রাখবেনা, কোন স্বপ্ন দেখবেনা, কোন আস্থার সম্পর্ক চাইবেনা, কোন আবেগ থাকবেনা, অনুভুতিগুলো দুমড়ে মুচড়ে ভোতা করে ফেলবে...কেউ আর তখন কারো জন্য পরম ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষা করবেনা, কোন মা তার সন্তানের জন্য ভালবাসার ছিটে-ফোটাও মনের গহীনে পোষণ করবেনা, স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা হবে কেবল জৈবিক...

জানিনা এই দুঃস্বপ্নের প্রহর কখন শেষ হবে। নাকি এই দুঃস্বপ্নই সত্যিকারভাবে বাস্তবায়িত হয়ে যাবে কোন একদিন। তাহলে আমি আবার বলতে চাই ভালবাসাহীন এই পৃথিবীতে চাইনা আমি হাজার বছর, একটুখানি জীবন চাই যেখানে আস্থা, আবেগ,ভালবাসা আর বিশ্বাস আমাকে নতুন করে প্রাণে জোয়ার জোগাবে...একটুখানি জীবনের এই স্বপ্ন কি আমি দেখতে পারিনা?? নাকি এই স্বপ্নও অন্য কোন দুঃস্বপ্নের ভিন্ন রূপ!! 

প্রকৃত সুখের সন্ধান...

মানব মনের প্রকৃতি বড়ই বিচিত্র। কিসে সে কষ্ট পায় কিসে সে সুখী হয় তা সে নিজেই জানেইনা। হয়ত বিচিত্র মনের বৈচিত্রতায় আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। রাতের আকাশের যে মোহনীয় চাঁদ দেখে মন আনন্দে উদ্বেলিত হয় সেই একই চাঁদ দেখে চোখের কোণে জমে দুঃখের অশ্রুবিন্দু। সমুদ্রের বিশালতা কখনও এনে দেয় অসীম শূণ্যতা কখনওবা পূর্ণতা। বহুরূপী মনের এই সত্তা তাই বিশ্লেষণ করা খুব সহজ না।
কতটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলে একজন নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবতে পারে? হঠাৎ এই প্রশ্নে চিন্তার জগতে ছেদ ধরল। আসলেই কি মানুষ কখনও পরিপূর্ণ হতে পারে? খুব চিরন্তন ও আদি প্রশ্ন। অভিজ্ঞতা অর্জনের মাপকাঠি নাকি বয়স! কিন্তু বয়সই কি সবসময় সেই মাপকাঠি হতে পারে?
আট/দশ বছরের কোন ছেলের অভিজ্ঞতার পরিসীমা কতটুকু? সাথে সাথে একটি চিত্র মনের পর্দায় ভেসে আসল । সকালে ঘুম থেকে উঠেই কিভাবে স্কুল ফাঁকি দেওয়া যায়, কিভাবে আজ বিকালে ক্রিকেট খেলায় জেতা যায় কিংবা বাবাকে যে নতুন গাড়ি,ক্যাটবেরি কিনতে বলা হয়েছে তা আনতে ভুলে যাবেনাতো! মাকে কিভাবে কনভিন্স করে কম্পিউটারে “মোস্ট ওয়ান্টেড’’ গেইমস খেলা যায়...এইরকম হাজারো চিন্তায় ছেলেটির মন বিভোর থাকে। একই বয়সের যে ছেলে গাড়িতে হেল্পার এর কাজ করে তার চিন্তা জুড়ে থাকে কিভাবে যাত্রী বেশি উঠানো যায়, কিভাবে বেশি টাকা আয় করে পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়া যায়। সারাদিন কাজের ফাঁকে হয়ত সে চিন্তা করে তার মা চুলার পাশে বসে আছে এই অপেক্ষায় যে তার ছেলে কখন বাজার নিয়ে আসবে! আরো যে ছোট ভাই-বোন আছে তারাও সারাদিন বড় ভাইয়ের অপেক্ষায় থাকে। স্কুল ফাঁকি দেওয়া দূরে থাক পড়াশুনার চিন্তায় সেখানে বিলাসিতা মাত্র। চিন্তার এই অভিজ্ঞতা তার বয়সকেও হার মানিয়েছে। হয়ত অস্বাভাবিক কিন্তু বাস্তব...
এই অভিজ্ঞতা যেহেতু আমাদের নাই তাই এগুলো দেখতে দেখতেই আমরা অভিজ্ঞ। চারপাশে এত্ত অস্বাভাবিকতার ছড়াছড়ি মাঝে মাঝেই স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিকের মধ্যে পার্থক্য করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
সুখের সন্ধানে আজ মানুষ দিশেহারা। সুখের আসল সংজ্ঞা কেঊ দিতে পারেনি।কিন্তু আইন্সটাইন সেই অসাধ্য সাধন করে গেছে। পৃথিবীতে সব কিছুই আপেক্ষিক, কোন কিছুই পরম নয়। আমার কাছে যা সুখ অন্যের কাছে তা অসুখ। কিন্তু তারপরও সুখের সংজ্ঞা মিললেও সুখ খুজে পাচ্ছেনা মানুষ। সমাজের একটা পার্ট বাদ দিয়ে সুখের অন্বেষণ যেন ট্রেডিশানে পরিণত হয়েছে। শরীরের একটা অংশ প্যারালাইসিস হলে হয়ত তার ব্যথা অনুভব করা যায়না কিন্তু সেই অঙ্গের অনুপস্থিতি ঠিকই অনুভুত হয়।
অপূর্ণ শরীর হাজার চেষ্টা করলেও পূর্ণ হতে পারবেনা যতক্ষন না ওই অংশ ঠিক হয়। এসব কথা ভাবতেই পরিচিত একজনের কথা মনে পড়ল। সে বছরে আনুষ্ঠানিক একবার এতিমখানায়, মসজিদে টাকা দান করে আত্বতৃপ্তি অনুভব করে। মনে করে ইসলামের বড় একজন খাদেম...সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু যদি সে ব্যাপারটা ট্রেডিশনালি না নিত , যদি মনে করত তার উপার্জনের টাকায় গরীবেরও হক আছে তাহলে হয়তবা সে এরকম অকেশনাল ইসলামের সেবা করে আত্বতৃপ্তি পেতনা। পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস/বিজয় দিবস উদযাপন সবই আজ নিছক ট্রেডিশান। একারনেই যারা পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ি পরে পুরো বাঙ্গালিয়ানা সাজে তারাই আবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে ওয়েস্টার্ন কালচার খুব গর্বের সাথে পালন করে। নারী দিবসে নারী অধিকারের দাবি যাদের মুখে সোচ্চার হয় তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকার পাতায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে নিউজ আসে। খুব বিচিত্রভাবেই ট্রেডিশানের এই সিলসিলা প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ বিদ্যমান।
মানব মনের প্রকৃতি অনুসন্ধান করে চলছিলাম। অভিজ্ঞতা অর্জন নাকি এই রিসার্চে ওনেক হেল্পফুল হবে। সব কিছু প্র্যাকটিক্যালি অভিজ্ঞতা অর্জন যেহেতু সম্ভব না তাই দেখে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। প্রকৃতি কখনও মনকে শূন্য থাকতে দেয়না। সুখের জন্য আকুল মন যে অংশ ডিলিট করে সেই অংশটি মন আরেকটি অংশ দিয়ে রিফিল করে। অটোমেটিক প্রোসেস। যে সত্তা মনকে একটিভলি লিড দিবে সে আজ প্যাসিভ। এই জন্যই হয়তবা যা কিছু করছি সব ট্রেডিশান, সব শুণ্য মনকে রিফিল করার চেষ্টা মাত্র। প্রকৃত সুখ পাবার প্রোসেসকে ইগ্নোর করে, সমাজের একটা পার্টকে বঞ্চিত করে সব কিছু ট্রেডিশনালি করে সবাই আমরা কৃত্তিম সুখের নিদ্রায় বিভোর । জানিনা এই নিদ্রার প্রহর কখন শেষ হবে...জানিনা দেখে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের দিন কবে শেষ হবে...জানিনা ট্রেডিশনাল সুখের কালচার কবে সমাপ্তি হবে...

বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১০

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-৪

আমি খুব ভালভাবেই খেয়াল করলাম যে আমরা যে বিষয়েই তর্ক-বিতর্ক করিনা কেন সবশেষ ফলাফলে যা হয় তা হল আমরা সবাই আসলে একই গ্রাউন্ডে কথা বলেছি, আমরা কেউ কারও যুক্তিকে অগ্রাহ্য করিনি। কিন্তু তবুও এই বিতর্ক চলতে থাকে।
একজনের কিছু কমেন্টের ভিত্তিতে এই ব্যাপারটা ফোকাস করলাম। আমি আমার নোটেই বলে দিয়েছি যে সব পেশাতেই আত্বমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যাবে। এখন কেউ কি ইচ্ছা করলেই নিজেকে সব পেশাতে নিয়োজিত করতে পারবে? সেটা তো অসম্ভব। ছোট বেলায় আমি মনে করতাম কেন একই সাথে চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়না? সকালে মেডিকেলে ক্লাস করলাম আর বিকালে ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্লাস। তাহলেই তো আমি একই সাথে চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলাম। যাইহোক এখন সব পেশার গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও একজন কোন পেশা বেছে নিবে সেটা নির্ভর করবে সম্পূর্ণ তার রিয়েলাইজেশানের উপর, তার ক্যাপাবিলিটির উপর। ঠিক এই কথাই আমি ফোকাস করতে চেয়েছি। চিকিৎসা পেশাকে ভাল বলা মানে অন্য পেশাকে অবমাননা করা নয়। একজনের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল, সে কিসে পড়ে এটা জিজ্ঞেস করতেই সে এন্সার দিল সে নন-মেডিকেল স্টুডেন্ট। আরে! পৃথিবীতে কি মেডিকেল ছাড়া আর কোন সাব্জেক্ট নাই? খুব বিরক্ত হয়ে আমি তাকে এই কথা বললাম। আমার এই জবাবে সে স্বস্তি নিয়ে বলল, “ যাক, তাহলে আপনারা মেডিকেল বাদে অন্য সাবজেক্টকেও গুরুত্ব দেন...”
আসলে পেশা টা কোন ফ্যক্টর নয়। আমি নিজের জন্য কোন পেশাকে ভাইটাল মনে করছি, কোন ফ্যাক্টর আমার ক্যারেক্টারিস্টিকের সাথে যাবে সেটা তো একেক জনের কাছে একেক রকম। আমার কাছে মেডিকেল পেশা আমার রিয়েলাইজেশানের উপর ভিত্তি করে বেস্ট মনে হয়েছে। এখন সেটা আমার কেন মনে হল এটা কোন বিতর্কের টপিকস হতে পারেনা।
 তবে খুব জোর গুরুত্ব দিয়ে বলছি ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া মেডিকেল পেশা পুরাই অর্থহীন হয়ে যাবে। অপারেশান থিয়েটারে আমি যতদিন ঢুকেছি ততদিনই আমার মনে হয়েছে ইঞ্জিনিয়াররা যদি এত প্রযুক্তি আবিষ্কার না করত তাহলে মেডিকেল পেশা মনে হয় চিরকাল অন্ধকার যুগেই পড়ে থাকত। এই যে আমি মেডিকেল পেশার গুনাগুন করছি সেটাও করছি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে, যা কোন ইঞ্জিনিয়ারের অবদান, কোন চিকিৎসকের নয়। তারপরও মেডিকেল পেশাকে আমার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, ইঞ্জিনিয়ারিং কে নয়। হয়ত আমার ক্যাপাবিলিটি ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাকে সাপোর্ট করবেনা, কিংবা আমার উপলব্ধিতে ইঞ্জিনিয়ারিং টা সেরকম জায়গা করে নিতে পারছেনা। সেটা কেবল আমার জন্য, অন্যের জন্য না।

যাইহোক হাসপাতালে প্রতিদিন আমি যখন সুইপারকে ঝাড়ু দিতে  দেখি, হাসপাতাল পরিস্কার করতে দেখি তাদের দেখে আমি ফিল করি কাজটা অনেক ছোট, কিন্তু এটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা হয়ত ওই সুইপারও জানেনা। নার্সদের যোগ্যতা চিকিৎসকদের তুলনায় কম হলেও তাদের কাজের গুরুত্ব যে চিকিৎসকদের তুলনায় বেশি তা আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করব। একজন রোগীর সবচেয়ে বেশি কন্ট্যাক্টে থাকে নার্স, চিকিৎসক নয়। অর্থাৎ আমি যদি এভাবে হিসাব করতে থাকি তাহলে হয়ত প্রতিটা পেশার কতখানি গুরুত্ব তা বর্ণনা করতে অনেক সময় লেগে যাবে। তারপরও কথা থেকে যায়, শেষ পর্যন্ত আমি নিজের জন্য চিকিৎসা পেশাকেই বেস্ট বলব। এত কিছু বলার পরও কেউ যদি আবার এটা নিয়ে বিতর্ক করতে বসে যায় তাহলে ভাবব, এতক্ষন যা বলেছি তা সবই বৃথা...

চলবে...

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-৩

কিছু কিছু মানুষের পড়াশুনার স্টাইল এত বিরক্তিকর যে বলার বাইরে। কেন জানিনা এই বিরক্তিকর পরিস্থিতি সবসময় আমার সামনেই ঘটে থাকে। দশম শ্রেণীতে যখন পড়ি তখন মিলি আপুর বাসা অনেক দূরে হওয়াতে আম্মা মিলি আপুকে বললেন আমাদের বাসা থেকে ক্লাস করতে। আপু তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। খুব ভাল কথা। উনি সন্ধ্যায় পড়তে বসেন। সেটাও ভাল কথা। এরপর শুরু হল উনার পড়া। সেটা কে একচুয়ালি পড়া বলা হয় কিনা জানিনা তবে আমার যে কানের বারোটা বেজে তা উনি কখনই খেয়াল করেননা। গলা ফাটায়, চিৎকার করে উনি পড়ে। বাট আমি কিছু বলতামনা। কারণ উনাকে কিছুটা ভয় পেতাম আর আম্মার কাছেও নালিশ করতামনা। মিলি আপুকে আম্মা আবার চরম আকারে পছন্দ করে। পছন্দের কারণ আর কিছুই না। আপু অসাধারণ ব্রিলিয়্যান্ট। আর জোরে জোরে চিৎকার করে পড়া আম্মার খুব পছন্দ। তার ধারণা এতে করে পড়াশুনা খুব ভাল হয়। অথচ সারাজীবন আমি কোনদিন জোরে জোরে পড়িনি। একদম লো সাউন্ডে পড়ি যেন আমিই কেবল শুনতে পাই। মিলি আপুর এই যন্ত্রণা মোটামুটি আমাকে ছয় মাস সহ্য করতে হয়েছে।
মনে পড়ে প্রথম যখন যশোরে বাসা নেই তখন আমাদের পাশের বাসার এক ছেলে যে ভোর বেলা থেকে তার ঐতিহাসিক পড়া শুরু করে সেটা থামতে থামতে সাত/আট ঘণ্টা লেগে যায়। সেই ছেলের যন্ত্রণাও প্রায় আমাকে এক বছর সহ্য করতে হয়েছে। সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিল আম্মা সবসময় আমাকে সেই ছেলের মত ভোর বেলা উঠে জোরে জোরে পড়তে বলতেন, তখন আমি পড়ি ক্লাস ফাইভে।সেই ছেলে পড়ে ক্লাস সেভেনে। আমার তখন মনে হত ভোর থেকে উঠে সাত/আট ঘণ্টা পড়ার মত পড়া আসলে আমার নাই। সো এত কষ্ট করার কোন মানে হয়না। তারপরও প্রায় প্রতিদিনই ওই ছেলের জন্য আমাকে বকা শুনতে হত।
ইন্টার পরীক্ষার সময় আমার এক ফ্রেন্ড তার বাসা রিলেইটেড কিছু সমস্যার জন্য আমাদের বাসায় কিছুদিনের জন্য থেকেছিল। তার পড়াশুনার স্টাইল হচ্ছে সারারাত জেগে জেগে পড়বে। অথচ আমি রাত ১২টার পরে জেগে থাকলেও আর পড়তে পারিনা। যেহেতু আমার ফ্রেন্ড সারারাত ধরে পড়ে তাই আম্মার ধারণা যে আমি কিছুই পড়িনা তার তুলনায়। সেটার জন্যও অনেক বকা শুনতে হয়েছে।
ঢাকায় যখন আসি কোচিং করতে তখন আমার সাথে আরো দুজন ফ্রেন্ড এসেছিল। তারাও আমাদের বাসায় থেকেই কোচিং করত। এরমধ্যে একজন ছিল সে যখন পড়ত, মোটামুটি আশে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ সবাই জেনে যেত যে আমাদের বাসায় পড়াশুনার তুফান বয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমি কোন উচ্চবাচ্য করিনি, যদিও আমি চরমভাবে ডিস্টার্ব ফিল করতাম।মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয়ে গেলে ওর পাশে বসে থাকতাম। ও জোরে জোরে পড়ত সেটা শুনে শুনে আমি পড়ার চেষ্টা করতাম। এরপর একসময় যখন দেখলাম যে আসলেই ওর পাশে বসে আর যাই হোক পড়াশুনা করা সম্ভব না। তখন ওকে এক রুম ছেড়ে দিলাম। এদিকে মামুনের জন্য এক রুম ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আল্টিমেইটলি অন্য রুমে বাকি দুজন মিলে চুপচাপ পড়তাম। একদিন পাশের ফ্ল্যাটেই বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। রাত হতেই জোরে জোরে গান-বাজনা শুরু হয়ে গেল। আমরা সব দরজা-জানালা আটকিয়ে দিয়েও সেই লাউড সাউন্ড কমাতে পারিনি। সেই রাতে পড়াও হয়নি। অথচ সেই রাতেও আমার সেই ফ্রেন্ড গলা ফাটিয়ে জোরে জোরে বোটানি পড়েছে।
এরপর যাইহোক মেডিকেলের এডমিশানের পর একজন খুলনা মেডিকেল এবং অন্যজন আর্মড ফোর্সে চলে গেল। আমি সেদিন খুলনা মেডিকেলের ওই ফ্রেন্ড কে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিলাম যে সে এখন কিভাবে পড়ে? আমার একথা শুনে সে কিছুক্ষন হেসে বলল, “আসলে আমি তোমাদের অনেক জ্বালিয়েছি, না? তুমি বিশ্বাস করবানা আমি এখন চুপচাপ পড়ি। কারণ আমার জন্য হলের বাকি কেউ পড়তে পারেনা। এজন্য বাধ্য হয়েই পড়াশুনার স্টাইল চেইঞ্জ করেছি।“ ওর কথা শুনে সেদিন সস্তি পেয়েছিলাম।
এরপর যুথী আর সাথী ওরা দুবোন যখন আমাদের বাসায় কোচিং করতে আসল, তখনও দেখি সেইম কেইস। যুথীও গলা ফাটায় ফাটায় পড়ে। কিছু বলিনি সেই বছর। এরপর যুথী যখন আমার কানের পাশে বসে বসে এনাটমি গলা ফাটায় পড়ে তখন ওকে বলি “ আচ্ছা  হলে সিট কবে পাচ্ছ তুমি?” ও বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে  বলে আপু আমাকে তো সবাই হল থেকে বের করে দিবে!! একটা বিরক্তিকর ফেসিয়াল এক্সপ্রেসান দেখিয়ে  আর কিছু বলিনা....

চলবে......

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-২

প্রথম প্যাথোলজি পরীক্ষা ভাল হল। তিন ঘণ্টা লিখতে লিখতে কিভাবে কেটে গেল টেরই পেলামনা। এরপর কমিউনিটি মেডিসিন পরীক্ষা। প্রিপারেশান ভালই ছিল, কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে ঠিক ২ঘণ্টা পর খেয়াল করলাম যে আমি আর লিখতে পারছিনা। কারণ লিখার জন্য যে মুড দরকার তা শেষ। খুব কষ্টের সাথে বাকি একঘণ্টা কাটালাম, এন্সার জানা সত্ত্বেও খুব শর্ট-কাট এন্সার দিয়ে দ্রুত লেখা শেষ করে ফেললাম। এরপর মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষা। সাবজেক্টটা আমার কাছে দারুন লাগে। কোয়েশ্চেন ও খুব ভাল হয়েছে। কিন্তু সেদিনও সেইম কেইস। ২ঘণ্টা পর আমি চুপচাপ বসে ছিলাম কিছুক্ষন। স্যার এসে আমাকে চুপচাপ বসে থাকার কারণ জানতে চাইলেন। আমি বললাম যে মাথা ব্যাথা করছে...স্যার প্যারাসিটামল দিতে চাইলেন আমাকে, আমি বললাম যে স্যার আমি সকালে প্যারাসিটামল খেয়ে এসেছি। যাইহোক স্যারের জন্য শান্তিমত চুপচাপ বসে থাকতেও পারছিনা। কিছুক্ষন পর স্যার আবার এসে বললেন যে আমার পানি লাগবে কিনা, পানি খেলে হয়ত কিছুটা ভাল ফিল করতে পারি। আমি বললাম যে স্যার আমার কাছে পানি আছে। অবশেষে পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম, খারাপ হয়নি একেবারে। এরপর আরো দুইটা পরীক্ষা মুড অফ/অনের মধ্যে দিয়ে শেষ করলাম। যেহেতু রিটেন তাই কোন প্রভাব পড়েনি...যদিও ফরেনসিক মেডিসিন পরীক্ষা দেবার সময় একবার মনে হল কোয়েশ্চার পেপার ছিড়ে এক্সাম হল থেকে বের হয়ে যায়। প্রেগনেন্সির বায়োলজিক্যাল টেস্ট ব্যাখ্যা করতে বলেছে। এটা কি কোন প্রশ্ন হল? মেজাজ হঠাৎ করেই খুব খারাপ হয়ে গেল। ঠিক তখনি ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টাল হেড স্যার মাইকে বলছিলেন যে প্রশ্ন দেখে ভয় পাবার কিছু নাই, একটু আনিউজুয়াল প্রশ্ন এসেছে, তাই প্রতিটা প্রশ্নে টাচ করলেই পাশ হয়ে যাবে।
বাসায় এসে ভাবলাম মনটা ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু না হয়নি। বরাবরের মত মামুনের একটা লেইট গুড নিউজ শুনলাম আর সেটা হল ও এইচএসসি তে ঢাকা বোর্ডে ৪৪তম হয়েছে, ট্যালন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে বাট ও কিছুই জানেনা। অথচ এটা একবছর লেইট নিউজ। মেডিকেলে ভর্তির জন্য নটরডেম থেকে সব কাগজ-পত্র তুলতে গিয়ে ও এটা জানল। যাইহোক এই ধরনের ব্যাপার ওর জন্য এখন খুব ইউজুয়াল একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।
 আমাকে প্রায় সময়ই  অনেকে জিজ্ঞাসা করে কেন দুইভাই-বোনই চিকিৎসক হতে চাই? একজন না হয় ইঙ্গিনিয়ার হলাম!  সেদিন একজনকে কথাইয় কথায় বলছিলাম যে আমার এক জুনিয়র ভাই আছে, আমার মেডিকেলেই পড়ে। তার বাবা-মা দুজনেই চিকিৎসক, তার ছোট ভাইকে এবার বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি করাবে, তার যে ছোট বোন আছে তাকেও মেডিকেলে পড়াবে। মেডিকেল ব্যাপারটাতে একটা নেশা আছে। সবাই এই নেশা ধরতে পারবেনা। আর এটা ঠিক বলেও বুঝানো যাবেনা। আমার খুব ইচ্ছা আমার যে ছোট ছোট কাজিন আছে তারাও সবাই মেডিকেলেই পড়ুক। আসলে পেশার সাথে নিজেকে মানবতার সেবাই ডিরেক্টলি যেভাবে এই পেশাতে আত্বনিয়োগ করা যাবে অন্য কোন পেশাতে হয়ত আমি সেভাবে চিন্তা করতে পারছিনা। ওই যে রিয়েলাইজেশানের ব্যাপার! একেজনের রিয়েলাইজেশান একেকরকম। আমি জানি মেডিকেল বাদে অন্য বহু পেশায় নিজেকে মানবতার তরে বিলিয়ে দেবার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু আমার রিয়েলাইজেশান আপাতত আমার জন্য চিকিৎসা পেশাকেই বেস্ট মনে করছে। এটা কিন্তু শুধু যে আমার ক্ষেত্রেই এরকম রিয়েলাইজেশান এসেছে তা নয় আমার ভাইয়ের জন্যও, কাজিনের জন্যও। তাই গতবার যখন যুথী মেডিকেলে চান্স পেল তখনও খুব আনন্দ লেগেছিল যেমন এবার মামুন চান্স পাওয়াতে আনন্দ পেলাম। কিন্তু এত আনন্দের মধ্যেও ডিপ্রেশানের কারণ খুজে পেলাম না। হরমোনাল চেইঞ্জ ডিপ্রেসানের সাথে রিলেটেড। ব্রেইনের অনেক নিউরোট্রান্সমিটার, কেমিক্যাল বস্তুও ডিপ্রেসানের জন্য দায়ী। সেরোটনিন, ডোপামিন লেভেল অনেক কমে গেছে মনে হয়। শেষের দিন ফার্মাকোলজি পরীক্ষা ছিল। এন্টি-ডিপ্রেস্যান্ট,এন্টি-সাইকোটিক, এন্টি-এপিলেপ্টিক,এন্টি-পারকিনসনিজম সহ আরো কিছু টপিকসের ড্রাগস যেভাবে পড়েছিলাম সেই ড্রাগসের নামগুলো এখনও মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে...আমার জন্য সত্যি ডিপ্রেসানের ড্রাগস লাগবে কিনা বুঝতেছিনা। তবে আর যাইহোক এই সমস্যার জন্য আমি কখনই টিচারের কাছে যাবনা...কারণ স্যার আমাকে কি বলবেন তা আমি খুব ভাল ভাবেই জানি, কিছুদিন আগেই মেন্টাল ডিসঅর্ডারের ওয়ার্ড করে এসেছি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে। সো স্যারের কাছে যাবার নেসেসিটি ফিল করছিনা আপাতত...
খুব এলোমেলো, অগোছালো লেখা লিখলাম। সবকিছুর মূলে ছিল নিজের ডিপ্রেশানের একটা এনালাইসিস করা...কিন্তু রিপোর্ট কোনভাবেই আসছেনা.........

চলবে...

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-১

মহানুভব হওয়া কিংবা মহত্ত দেখানো আসলে এত সোজা না। কারণ নিজের অনেক কিছু স্যক্রিফাইস করে লোক দেখানো মহানুভব হওয়া যায়না। খুব আশ্চর্য বস্তু এই “বিবেক”। যা কিছুই করিনা কেন বিবেক সেই কাজের পোস্টমর্টেম করবেই। বাইরে থেকে বলি নিজে যা করেছি ঠিক করেছি কিন্তু বিবেক ঠিকই রিপোর্ট দিয়ে দেয় যে সবসময় যা করি তা ঠিক না। প্রতিনিয়ত আমরা এই বিবেকের রিপোর্টের সম্মুখিন হচ্ছি। ধর্ম দিয়ে আসলে মনে হয় বিবেকের সচেতনতাকে জাগ্রত করা হয় যেন বিবেকের দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী কাজ করতে পারি। তা না হলে কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ তা মোটামুটি সবাই জানা সত্ত্বেও সমাজে এর কোন কন্সিকুয়েন্স আমরা দেখিনা কেন? বিবেকের রিপোর্টকে আমরা ক্রমাগত ইগনোর করে চলেছি বোধহয়। কয়েকদিন ধরে কিছু ব্যাপার খুব তীব্রভাবে ফিল করছি। এবসলিউট বলে আসলে কিছু আছে কিনা! মনে হয় নেই। আমি একটা ঘটনাকে যেভাবে ব্যাখ্যা করব অন্যজন সেটা সেভাবে করবেনা। এটাই স্বাভাবিক। ধর্মীয় কিছু ব্যাপারেও মনে হয় সেরকম কিছু আছে। এবসলিউট বলতে শুধু এই যে আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মহানবী (সাঃ) তার রাসূল। আর জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মনোনিত করা হয়েছে। এখন ইসলামের অনেক কিছুই বিভিন্নভাবে ইন্টারপ্রিটেট করা যায়। সবগুলোই সত্য হতে পারে, নাও পারে। কিন্তু কে জাস্টিফাই করবে কোনটা সত্য? এখানেই মনে হয় বিবেকের মেইন কাজ নিহিত রয়েছে। বিবেক ঘটনাকে নিবে যার যার ক্যারেক্টারিস্টিক,পারসোনালিটি আর রিয়েলাইজেসান অনুপাতে। হযরত আবু বকর (রাঃ), কিংবা উমার (রাঃ) কিংবা ওমর (রাঃ) তিনজনের পারসোনালিটি তিনরকম। এবসলিউট ছিল এক জায়গায় যে তারা সবাই মুসলিম, আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা আর মহানবী (সাঃ) কে তারা সবাই জানপ্রাণ দিয়ে ভালবাসত। ঠিক এই জায়গায় এসে যখন চিন্তা করছি তখনই আমার খুব বড় একটা ভুল সংশোধন হল। অনেক ক্ষেত্রেই আমি মনে করি ব্যাপারটা এবসলিউট, সবার একইভাবে ঘটনা ব্যাখ্যা করা উচিত। ইসলামকে মনে হয় আমি এভাবেই অনেক সময় সংকীর্ণ করে ফেলেছিলাম আমার চিন্তা চেতনা দিয়ে। ইসলাম আসলে অনেক অনেক বড় একটা ক্ষেত্র যেটা হয়ত আমার চিন্তার সীমানারও বাইরে। পৃথিবীতে যত মুসলিম রয়েছে সবার চিন্তা ভাবনার গন্ডি সেইম হবেনা। কিন্তু শুধুমাত্র একজায়গায় আমরা সবাই সেইম যে আমরা মুসলিম।এটা পুরাই এবসলিউট। এই সিম্পল ব্যাপারটা আমি বুঝলাম অনেক পরে। তাও সেদিন এক আপু একটা ঘটনা বলতে গিয়ে তার মনোভাবের কথা যখন বলছিলেন তখনই আমি ব্যাপারটা ধরতে পারলাম। সাথে সাথে বাসায় এসে আম্মাকে বললাম যে ইসলামের প্রতি ডেডিকেশান কিংবা ইসলামকে প্র্যাক্টিক্যাল লাইফে ধারন করা একেকজনের কাছে একেকরকম। এটা সম্পূর্ণ রিয়েলাইজেশানের উপর ডিপেন্ড করছে। আমি হয়ত মনে করি আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এভাবে হতে পারে, অন্যজনের কাছে তার প্রচেষ্টা অন্যরকম হবে। কিন্তু দুজনই আমরা ইসলামের জন্যই ডেডিকেশানের দিক থেকে চিন্তা করেছি। তাই কিভাবে বলি তার রিয়েলাইজেশান ভুল আর আমারটা সঠিক! সেই নিখুত বিচারের সাধ্য কি আমাদের আছে?
আজকাল প্রায়ই আমি ডিপ্রেশানের মধ্যে থাকি। কোন কারন ছাড়া, পুরাই ইডিওপ্যাথিক। ২৬শে অক্টোবর থেকে সেকেন্ড এসেসমেন্ট শুরু হয়ে গেল। ২৩থেকেই তাই আমি হলে উঠে গেলাম। খুব কন্সেন্ট্রেসানের সাথে স্টাডি করছিলাম। ২৪ তারিখ খুব টেন্সানের মধ্যে ছিলাম মামুনের রেসাল্ট নিয়ে। মেডিক্যাল এডমিশান আজকাল দূর আকাশের চাদ হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছা করলেও সবাই চিকিৎসক হতে পারেনা যদিনা সে ধনী পরিবারের কেউ হয়। সো সেই দিক থেকেই চিন্তা হচ্ছিল বেশি। কারণ বেসরকারী মেডিক্যালে পড়ানোর মত আপাতত চিন্তা-ভাবনা আব্বা-আম্মার নাই। একটু হিসাব দেই সরকারী মেডিকেল আর বেসরকারী মেডিকেলের মধ্যে। সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে লাগে ৫-৬ হাজার টাকা আর বেসরকারি মেডিকেলে লাগে ১০-১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ অনুপাতটা অনেকটা আকাশ-পাতাল হয়ে যায়। যাইহোক ২৪ তারিখ রেসাল্ট দিলনা। সারারাত ঘুম ভাল হয়নি। খুব ভালভাবেই একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম মামুনের ক্ষেত্রে সবকিছু লেইট করে হয়। ও যেবার এইটে স্কলারশিপ পেল রেসাল্টের দুইদিন পর ও জানতে পারল যে ও স্কলারশীপ পেয়েছে। এরপর এসএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেল সেই রেসাল্টও সে পরে জেনেছে। এরপর এইচএসসিতে গোল্ডেন এ+ পাওয়া সত্ত্বেও সে মেডিকেলে চান্স পেলনা, তারউপর আবার নটরডেমের স্টুডেন্ট। তাই ওর রেসাল্ট আমার থেকে ভাল হওয়া সত্ত্বেও আব্বা-আম্মা ওকে নিয়েই বেশি টেনসান করে। একবছর গ্যাপ দিয়ে সে আবারো মেডিকেলের জন্য চেষ্টা করে গেল। অথচ আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব স্মুথলি হয়ে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ। যাইহোক ২৫তারিখে বিকেলে ওর রেসাল্ট পেলাম, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে চান্স পেল। মনে হল আমি নিজেই চান্স পেয়েছি, সেরকম আনন্দ ফিল করলাম। এরপর পড়তে বসেছি হঠাৎ মুড অফ হয়ে গেল। মুড অফ এবং অন সেখান থেকেই শুরু...

চলবে... 

একজন জেড, অতঃপর...

জেড নামক এক ব্যক্তি, ইসলামের ব্যাপারে যার সামান্যতম জ্ঞান নেই। তবে তিনি শুনেছেন ইসলাম নাকি সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। না ঠিক ধর্ম নয় পরিপূর্ণ জীবন বিধান! ইসলামের ব্যাপারে তার জানার প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি জানতে পারেননি। কিন্তু তিনি ধরে নিয়েছেন ইসলাম হচ্ছে থিওরিটিক্যালি বেস্ট ধর্ম কিন্তু প্র্যাক্টিক্যালি নয়। আচ্ছা তিনি কেন জানতে পারেননি। তাহলে জেডের সামনে ঘটের যাওয়া কিছু ঘটনা দেখে আসি



১.

জেড পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছে হঠাৎ চোখে আটকে গেল একটি নিউজ। পরকিয়ার অপরাধে গ্রাম্য এক মেয়েকে দোররা মারা হয়েছে। অথচ পুরুষ ছেলেটি বেকসুর খালাস! এই নিউজের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি নিউজ পড়ে জেড রীতিমত শিউরে উঠল। হিল্লা বিয়ে নামক এক অমানবিক প্রসেসের জন্য এক মেয়েকে আত্বহত্যা করতে হল। গ্রাম্য হুজুরদের এসব ইসলামি ফতোয়া পড়ে জেড ক্রমানয়ে অভিভূত হতে লাগল। তবে ইসলামের ব্যাপারে তার আগ্রহ বাড়তেই থাকল...

২.

একদিন জেড অদম্য কিউরিসিটি নিয়ে শুক্রবার জুমার নামাজে গেল। সে দেখতে চায় মসজিদে মুসল্লিরা আসলে কি করে। জেড যেহেতু আরবি জানেনা তাই সে খুতবা বুঝতে পারলনা। খুতবা শেষে সে যখন তার পাশে বসে থাকা মুসল্লিকে খুতবাতে যা বলা হল তার মানে জানতে চাইল তখন সেই মুসল্লি জানাল যে সেও আরবি জানেনা। শুধু সেই মুসল্লি নয় মসজিদের অধিকাংশই খুতবার মানে বুঝতে পারেনি। অথচ কেউ খুতবার মানে জানতে চাইলনা, আজব! খুতবা শুনলে নাকি অনেক নেকী পাওয়া যায় এই ভরসাতেই সবাই শান্ত ছিল। অবশেষে জুমার নামাজ শেষে জেড ভাবল ইসলাম নাকি পরিপূর্ণ জীবন বিধান অথচ জীবনের সাথে রিলেইটেড কোন নির্দেশনাই মসজিদে পেলামনা। তাহলে এটা কিভাবে জীবন বিধান হয়?? সত্যি সেলুকাস!

৩.

একদিন জেড রাস্তায় পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এক মুসলিমে দেখতে পেলেন। সুন্দর দাড়িও আছে তার। জেড তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলেন। আসলে জেডের জানার খুব ইচ্ছা একজন মুসলমান কেমন হয়! অতঃপর সেই মুসলিমের সাথে অনেক কথা-বার্তা বললেন। কিন্তু যখনই সেই মুসলিম জানতে পারলেন যে জেড মুসলিম না বরং বিধর্মি তখনি সে পিছুটান দিল। জেডের সাথে আর কথা বলতে চাইলনা, এড়িয়ে চললেন, আর বন্ধুত্বতো অনেক দূরের ব্যাপার। জেড কিছুটা মর্মাহত এতে। ইসলামে ব্রাদারহুড বলে কিছু নাই মনে হয়। তা না হলে একজন মুসলিম কিভাবে এত সংকীর্ণমনা হয়?

৪.

জেড টিভি দেখছিল। ইসলামি সংস্কৃতি জানার জন্য সে চ্যানেলের পর চ্যানেলের স্ক্যান করে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও সে সেভাবে পেলনা। আচ্ছা ইসলামের নিজস্ব সংস্কৃতি বলে কি আসলেই কিছু আছে? যদি থাকে তাহলে কেন ইসলামপন্থীরা তাদের আইডিওলোজিকে আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেনা? এরকম ভাবতে ভাবতেই জেড নিউজ শুনছিল হঠাৎ শুনতে পেল জিহাদের নামে কয়েক যুবকের জঙ্গি হবার নিউজ এবং বিদ্ধংসী কর্মকান্ড। সেই যুবকগুলোর হাতে কিছু লিফলেট পাওয়া গেছে যেখানে লেখা ছিল আল্লাহর আইন কায়েম করতেই তারা এরকম জিহাদি কাজে অংশগ্রহন করেছে। জেড দেখে চিন্তা করছে ইসলাম কি স্বৈরাচারী ধর্ম! একদম জোর করে হলেও ইসলাম কায়েম করতে হবে?...এটা কিভাবে জীবনের ধর্ম হতে পারে তাহলে? জেডের বিবেকে বার বার এই প্রশ্ন উত্থিত হল...

৫.

রাস্তার পাশ দিয়ে হাটার সময় জেড মসজিদের গায়ে একটা লেখা দেখেছিল যেটা তার মনে খুব দাগ কেটেছিল। “পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ”- আল-হাদীস। ইসলাম তার মনে সেদিন পজিটিভ ভিউ এনেছিল। কিন্তু সে আরেকদিন যখন মসজিদের পাশ দিয়ে হাটছিল তখন মসজিদের পাশেই প্রচুর ময়লা আবর্জনা দেখে সেই মসজিদের ঈমাম কে এব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু সেই ঈমাম জবাবে বলেছিল যে ঝাড়ুদার আসেনি বলে জায়গা অপরিস্কার রয়ে গেছে। জেড সাথে সাথেই জানতে চাইল যে আপনাদের হাদীসে যেখানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের পার্ট বলা হচ্ছে সেখানে আপনারা কেন নোংরা জায়গা ঝাড়ুদারের অপেক্ষায় পরিস্কার করলেননা। আকস্মিক এই যৌক্তিক প্রশ্নে ঈমাম খুবই মনক্ষুন্ন হলেন। তিনি জেডকে বললেন যে “ঈমানের পার্ট আপনি কিভাবে বুঝবেন, জানেন আমি কুরয়ানের হাফেজ, অমুক-তমুক ডিগ্রি আছে, আপনি আমাকে ঈমানের পার্ট শেখান!” জেড এধরনের ব্যবহার আশা করেনি। সে শুধুমাত্র হাদীসের এপ্লিক্যাশানটা কেন হচ্ছেনা সেটা জানতে চাইল। অথচ এই ঈমাম যার সুন্দর দাড়ি রয়েছে, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা তিনি এভাবে রিএক্ট কেন করলেন? জেড শিউর হল আসলে ইসলাম হচ্ছে পোশাক সর্বস্ব ধর্ম ছাড়া কিছুই না... পেয়েছেন? নাহ! জেড ইসলামের উপর চরম বিরক্ত আবার।


উপরের সব ঘটনা একজন জেডের দৃষ্টিতে ইসলামের জেনারেল পিকচার প্রেসেন্ট করা হয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন জেড কিভাবে ইসলাম কে নেবে সেটা খুব সহজেই অনুমেয়। সেদিন আলোচনা হচ্ছিল ইন্ডিয়ান কালচার, ওয়েস্টার্ন কালচার আমাদের যুবসমাজকে কিভাবে অধপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিভাবে যুবসমাজ প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে? কিভাবে তারা অন্যায়কে সহজেই মেনে নিচ্ছে? কিভাবে তারা কেবল ফেইসবুক, এফএমরেডিও, বলিউড,হলিউড এর জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে? খুব দোষারোপ করছিলাম যারা এভাবে আমাদের যুবসমাজকে অধপতনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খেয়াল করলাম খুব কমই আমরা নিজেদের সমালোচনা করলাম। আমরা কেন আজ প্রযুক্তিকে লিড করতে পারিনি? কেন আজ আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারিনি? কেন আমরা মিডিয়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে ইসলামের নামে সকল অপপ্রচারের জবাব দিতে পারিনি? আমাদের প্রতিপক্ষ যেখানে ডান-বাম-উপর-নিচ দিয়ে তাদের সমগ্র মেধা-মনন, ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে তাদের দিকে সবাইকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদের অবস্থান কোথায়? আমাদের অবস্থান তো হওয়া উচিত ছিল সমগ্র ক্ষেত্রে বিস্তৃত যেখানে এক ইসলামের প্রতিপক্ষ কেবল হবে ইসলামই। এরকমই তো দিক নির্দেশনা কুরয়ানে রয়েছে। অথচ আমরা আজো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘরে বসে নিন্দা জানাতেই আত্বতৃপ্তি অনুভব করছি। আমি তো দেখছি ইসলামের আজ বড় প্রয়োজন শক্তিশালি মিডিয়া ও প্রযুক্তি। অনেক তো ঘরে বসে আরবী কুরয়ান পড়ে নেকি অর্জন করলাম এবার মনে হয় সেই কুর‌্যান কেই ছড়িয়ে দেবার জন্য আমাদের মিডিয়া ও প্রযুক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। আসলে দৃষ্টিপাত অনেক পূর্বেই করা উচিত ছিল যা আমাদের প্রতিপক্ষরা করে গিয়েছে। এখন না হয় তাদের দেখানো পথেই আমাদের এগোতে হবে, তাদের অনুসরন করতে হবে। তারপরও যদি আমাদের এই বোধদয় না হয় যে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে ইসলামের অন্যতম প্রতিপক্ষ কোন ব্যক্তি না, দল না বরং মিডিয়া ও প্রযুক্তি। এই মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে যতদিন আমাদের আয়ত্বে না আনতে পারব ততদিন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের নিন্দা করে ঘরে বসেই আত্বতৃপ্তি অনুভব ছাড়া গত্যন্তর নাই।


মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০১০

খুব মায়া হয় তোমাদের দেখে!

সামাজিক স্তরের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার একটি শ্রেণীবিভাগ পড়েছিলাম। অনেকটা এরকম... উচ্চস্তরের মানুষের ছেলে-মেয়েরা ইংলিশ মিডিয়ামে, মধ্যবিত্তরা বাংলা মিডিয়ামে আর নিম্নবিত্তরা মাদ্রাসায়। কোন প্রাতিষ্ঠানিক বইতে এই শ্রেণীবিভাগ পড়িনি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা শিক্ষা সংস্কারমূলক একটি প্রবন্ধে এটা পড়েছিলাম। খুব মজা পেয়েছিলাম এটা পড়ে। আজ হঠাৎ এই শ্রেণীবিভাগের কথা মনে পড়ে গেল।
যখন নাইনে পড়তাম তখন খুব ইচ্ছা করত স্টুডেন্ট পড়াতে। অন্যকে পড়ানোর মধ্যে নাকি একটা আলাদা আনন্দ আছে। স্টুডেন্ট পড়ানোকে মনে করতাম খুব বড় একটা ব্যাপার। আমাদের বাসায় তখন আমি,আমার ছোট ভাই, কাজিন সহ মোট ৫/৬ জন স্যারের কাছে পড়তাম। ব্যাপারটা খুব দারুন ছিল, কারণ সেখানে কেউ সেইম ক্লাসের থাকতনা। ছয়জন ছয় ক্লাসের। অনেকটা রিক্রিয়েশানমূলক পড়াশুনা হত। খুব গল্প,হাসাহাসি,পড়াশুনা সব । আমি ছিলাম নাইনে, হাসান এইটে, মামুন (আমার ছোট ভাই) সেভেনে, পলি আপু টেনে, শিলা সিক্সে আর অনিক ছিল ফোরে। হাসান আমার খুব ভক্ত ছিল, সো স্যার তাকে যতনা অংক করাত সে আমার কাছে অংক বেশি করত। স্যার এটা জানতেন এবং অংক আমার ফেবারিট সাবজেক্ট হওয়ায় স্যারও হাসানকে উৎসাহিত করতেন যেন না পারলে সে আমার কাছে হেল্প নেয়। অনিক ছিল আমাদের মাঝে সবচেয়ে ছোট এবং খুব দূরন্ত। একদিন স্যার আমাকে বললেন অনিককে একটা সম্পাদ্য শিখায় দিতে। আমি তো মহা উৎসাহে তাকে সম্পাদ্য আঁকানো শিখায় দিলাম এবং আঁকানো শেষে বললাম যে প্রসেসে সম্পাদ্য এঁকেছো সেটাই এখন নিজের ভাষায় বর্ণনা করে লিখে দিলেই হবে। সাথে সাথেই অনিক আমাকে প্রশ্ন করল, " আচ্ছা আপু আমার নিজের ভাষা তো বাংলা, আমি কি বাংলায় লিখব তাহলে?" আমি ঠিক সে মুহূর্তে কি বলব বুঝতে পারছিলামনা। যাইহোক সেই ঘটনা আমাকে কিছুটা শিক্ষা দিয়েছিল যে কাউকে কোন কিছু শেখানো বা পড়ানো সবসময় সহজ না।
কিছুদিন পূর্বে বাড়িওয়ালা আন্টি খুব খুব রিকোয়েস্ট করে গিয়েছেন মামুন যেন তার ছেলেকে পড়ায়। যেহেতু মামুনের সামনে এডমিশান টেস্ট তাই সে এখন পড়াতে পারবেনা এই অযুহাত দিলে আন্টি আমাকে খুব রিকোয়েস্ট করলেন যেন এটলিস্ট মামুনের এডমিশানের আগ পর্যন্ত আমি পড়ায়। এমনিতেই আন্টি একজন প্রফেসার মানুষ, সারাবছরই কিছু না কিছু সত্যায়িত করার জন্য আন্টিকে আমি খুব খুব বিরক্ত করি, তার উপর বাড়িওয়ালা- সবকিছু চিন্তা করে মামুনের টিউশানির প্রক্সি দেবার জন্য কিছুদিনের জন্য রাজি হলাম।
রুহিত, আমার স্টুডেন্ট। সামনে এসএসসি দিবে। ম্যাথ আর বিজ্ঞান পড়াচ্ছি। তাকে একদিন খুব সাধারণভাবে একটা প্রশ্ন করলাম যে সে কিভাবে তার অবসর কাটায়? খুব সিম্পল এন্সার, তার কোন অবসর সময় নেই। বাংলা, ধর্ম, ভূগোল, ইংলিশ, একাউন্টিং,ম্যাথ+বিজ্ঞান, সমন্বিত সাবজেক্ট এর জন্য যার আলাদা আলাদা টিচার থাকে সে কিভাবে অবসর সময় পাবে? আমার তো তার সাবজেক্ট ভিত্তিক টিচারের শিডিউল শুনে মাথা খারাপ হবার মত অবস্থা। এসএসসিতে আমি মাত্র একজনের কাছে পড়েছি তাও কেবল ম্যাথ। বাকি সব নিজে নিজেই পড়তাম। স্কুলের পড়ানো + বাসায় সেলফ অধ্যয়নের জন্য সায়েন্সের সাবজেক্টও আমি নিজেই পড়ে নিতাম। কোন অসুবিধা হতনা। শুধু কি তাই? যত্ত ধরনের আউট বুকস আছে সেগুলো আমার রেগুলার স্টাডির একটা অবিচ্ছেদ্য পার্ট ছিল। টিভি দেখা হত খুব লিমিটেড। আলিফ লায়লা বা সিন্দাবাদ টাইপ সিরিয়াল দেখতাম। সবচেয়ে মারাত্বক ছিল গল্পের বই এর প্রতি নেশা। কত রাত জেগে জেগে আমি ক্লাসের বই এর মাঝে লুকিয়ে তিন গোয়েন্দা পড়েছি তার হিসাব নাই। প্রথম আলো পেপারের সাথে যে "আলপিন" বা "ছুটির দিনে" বা "নারী মঞ্চ" দিত তাতো পুরা মুখস্ত হয়ে যেত আমার। অথচ রুহিত গল্পের বই পড়া তো দূরের কথা সে নিজের জন্য পারসোনাল সময় বের করতে পারেনা টিচারের শিডিউলের কারণে। উহ! কি মর্মান্তিক লাইফ স্টাইল। রুহিত কে দেখলে আমার সত্যি খুব মায়া লাগে।
ইসহাক সেও স্টুডেন্ট। তবে কোন রিকোয়েস্টের স্টুডেন্ট না। পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ অনেক। কেউ গেলেই তার কাছে পড়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখায়। তবে তার অবসর সময় প্রচুর। রুহিতের মত তার সাবজেক্ট ভিত্তিক টিচার নাই, রুহিতের মত উচ্চবিত্তের ছেলেও সে না। কিন্তু ইসহাকের জন্য মিনিমাম একজন টিচারও নাই যে তার কাছে সে রেগুলার পড়বে। ইসহাক কোন স্কুলে পড়েনা, কারণ স্কুলে পড়ার খরচ তাকে কে দিবে? আর থাকে সেই বস্তিতে কোন দালান কোঠাতে না। ইসহাকের জন্যও আমার খুব খুব মায়া লাগে, যেমন লাগে রুহিতের জন্য।

রুহিতের শিক্ষার সাথে ইসহাকের শিক্ষার এত এত তফাৎ শুধুমাত্র সামাজিক স্তরভেদের জন্য। জাফর ইকবালের সেই প্রবন্ধের কথা তাই মনে পড়ে গেল।লেখক অবশ্য সেই লেখাতে ইংলিশ মিডিয়াম ও মাদ্রাসার খুব নেগেটিভ সমালোচনা করে বাংলা মিডিয়ামের বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরেছেন। সেই আলোচনাতে আজ গেলামনা। তবে আমি ঠিক জানিনা বর্তমান শিক্ষা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। শুধু এটুকুই বুঝতে পারছি সবাই এ প্লাসের জন্য ছুটছে। আমার এক কাজিন সেদিন এসেছিল "হাজার বছর ধরে" উপন্যাস বুঝতে। উপন্যাস কিভাবে কাউকে শেখানো যায় আমি জানিনা। তবে সে কখনও কোন উপন্যাস পড়েনি, গল্পের বই এর প্রতি আগ্রহ নাই। যেটুকু সময় পায় সেটা সে টিভিতে বাংলা নাটক,হিন্দি সিরিয়াল,মুভি,মিউজিক এসবেই কাটায়।
হাজার বছর ধরে উপন্যাস যখন প্রথম পড়েছিলাম একদম মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। মকবুল মারা যাবার পর টুনির ম্যাচিউরিটির সাথে নিজের মধ্যেও এক ধরনের ম্যাচিউরিটি ফিল করেছিলাম। অথচ সেই ব্যাপারটাই কি কাউকে ম্যাথ/বিজ্ঞান শেখানোর মত শেখানো যায়? এরকম আরো কয়েকদিন সেই কাজিন যখন বাংলা গল্প,কবিতা বুঝতে আসে তখন তাকে বিভিন্ন গল্প,উপন্যাস পড়ার পরামর্শ দিলাম। বললাম যে তোমাদের মত সময়ে আমরা আউট বুকস লুকিয়ে পড়তাম, কিন্তু তোমাদের জন্য এখন লুকিয়ে পড়া লাগবেনা বরং এগুলাও তোমরা টেক্সট বই হিসাবে একটু সময় করে পড়ে নিও।
আজকাল সব ছেলে-মেয়েরা কি এরকম রোবোটিক হয়ে যাচ্ছে? আনন্দবিহীন পড়াশুনা করে শুধুমাত্র এক সার্টিফিকেইটের জন্য এক কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত হচ্ছে? অন্যদিকে সামাজিক শ্রেণীবিভেদ এত বেশি যে কেউ টিচারের শিডিউলের জন্য নিজের জন্য সময় পায়না আর কারো জন্য কোন টিচারই থাকেনা! কি অস্বাভাবিক এক রেশিও!! ঠিক কিরকম যেন একটা হ্যাপাজার্ড অনুভূতি হচ্ছে আমার। কিরকম সেই অনুভূতি তা বলতে পারবনা তবে বর্তমান জেনারেশান দেখে ও ভবিষ্যত জেনারেশানের কথা চিন্তা করে একটি কথাই বলতে ইচ্ছা করছে "সত্যি খুব কষ্ট ও মায়া হয় তোমাদের দেখে..."

তোমার কি আজ মন খারাপ??

তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। অ-নে-ক অ-নে-ক দেখতে ইচ্ছা করছে। তোমার অসীমতা আর সাথে আকাশের বিশালতার মাঝে আজ নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে। আচ্ছা শেষ কবে তোমাকে দেখেছিলাম? হুম, মনে পড়েছে ক্লাস ফোরে। ক্লাস ফোরের সেই ছোট্ট মেয়েটি আজ বড় হয়ে তোমাকে আবার দেখতে চাইছে। ছোট্ট বেলায় তোমাকে প্রথম দেখে আমার অনুভূতি কেমন হয়েছিল জান? অনেক বিস্ময়কর! চারদিকে শুধুই অসীমতা বিরাজ করছিল, তোমার অসীমতার মাঝে নিজেকে শুধুই হারিয়ে ফেলছিলাম। তখন ক্ষুদ্র নিজ সত্তাকে তোমার সামনে আরো বেশি ক্ষুদ্রতর মনে হচ্ছিল।এখনও কি তাই মনে হবে তোমাকে আবার দেখলে?
খুব বেশি ব্যবধান নয়, মাত্র ১১ বছরের ব্যব্যধান। এতদিনে তোমার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? নাকি তুমি সেই আগেরই মত রয়েছ? দশ বছরের ক্ষুদ্র বালিকার দৃষ্টিতে তুমি ছিলে অসীম, আর একুশ বছরের এই আমার চোখে তুমি মনে হয় সসীম। সত্যি বলছি। তুমি বিশ্বাস করছনা?

এত্ত কমপ্লেক্স, এত্ত জট্টিল সব মানুষের মাঝে বসবাস যে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে যাই। আচ্ছা তোমারো কি তাই করতে হয়? প্রতিনয়ত আমাকে জীবন দর্শন খুজে যেতে হয়, প্রতিনিয়ত বিভিন্নমুখী সত্তার সম্মুখীন হতে হয়, প্রতিনিয়ত সত্যিকার বন্ধুত্ব খুজতে গিয়ে এক নির্মম নিষ্ঠুর বন্ধুত্বের সন্ধান পাই, প্রতিনিয়ত এক অজানা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে যেতে হয়, প্রতিনিয়ত স্বপ্ন পূরণ আর স্বপ্ন ভঙ্গের মধ্য দিয়ে নতুন জীবনের প্রেরণা পাই, প্রতিনিয়ত সীমাহীন এক মনোজাগতিক জটিলতা ফেইস করতে হয়, প্রতিনিয়ত নিজ সত্তার সাথে অবিরত সংগ্রাম করতে হয়, প্রতিনিয়ত মনপবনে জোয়ার আসে।, প্রতিনিয়ত মনপবনের ভাটা আসে, প্রতিনিয়ত কোন পরম সত্যকে সন্ধান করতে হয়, প্রতিনিয়ত নিজের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যেতে চাই, প্রতিনিয়ত সীমাবদ্ধতার মাঝে এক সুষম সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়, প্রতিনিয়ত ভুল করে যাই, প্রতিনিয়ত ভুল শুধরাতে হয়, প্রতিনিয়ত কারও কাছ থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাই, প্রতিনিয়ত কারো খুব কাছাকাছি চলে যাই, প্রতিনিয়ত কারো জটিলতাকে নিজের সরলতা দিয়ে ঢেকে দিতে চাই, প্রতিনিয়ত নিজের জটিলতাকে অন্যের সরলতার মাঝে নবরূপ পায়, প্রতিনিয়ত সবাইকে ভালবেসে যাই, প্রতিনিয়ত সবার ভালবাসা পেতে চাই...
তোমারও কি আমার মত এরকম প্রতিনিয়ত রঙ বদলায়? নাকি তুমি চিরকাল একই ধারায় বহমান প্রতিনিয়ত?? আকাশের নীলীমা আর তোমার সাথে গোধূলীর মিশ্রিত ঐন্দ্রজালিক মুহূর্ত আমি নতুন করে উপভোগ করতে চাই। তুমিও কি চাও? তোমার রঙ কি আমার মনের মত কখনও লাল, কখনও নীল, কখনও সবুজ, কখনও বেগুনী কিংবা আসমানী!!! কিংবা সর্বদাএকই থাকে?
তুমি কি বুঝতে পারছ তোমার ক্ষুদ্রতা কোথায়? আর আমার অসীমতা কোথায়? তুমি কি রাগ করেছ? তোমার কি আজ মন খারাপ সমুদ্র..................!!!!!

সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০১০

হ্যলুসিনেসান,ইলিউসান এন্ড ডিলিউসান….

কিছুদিন আগেই সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ড শেষ হল। মনোজগতের কিছু অস্বাভাবিকতার সাথে পরিচিত হলাম। অনেক কেইস হিস্ট্রি রেকর্ড করলাম, হিস্ট্রি নিয়ে স্যারের সাথে অনেক ডিসকাশনও হল। প্রতিটা হিস্ট্রির পিছনে যে গভীর প্রভাববিস্তারকারী ফ্যক্টর আছে সেগুলো নিয়ে স্যার ডিপলি লেকচার দিলেন। মেডিক্যাল লাইফে এই প্রথম আমি কিছু ব্যাপার খুব আগ্রহ ও চরম উদ্দ্যম নিয়ে স্টাডি করলাম। আসলে মেডিসিন/সার্জারি ওয়ার্ড যখন করতাম তখন এটা মনে করতাম যে মেডিক্যালে যখন পড়তেছি তখনতো এসব করতেই হবে।এটলিস্ট পরীক্ষা হবে, পাশ করতে হবে এসব চিন্তা করেই পড়াশুনা। কিন্তু সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ডে আমি নিজেকে ভিন্নভাবে ফিল করলাম।
সাইকোলজি আর সাইকিয়াট্রির মধ্যে যে বেসিক পার্থক্য আমি বুঝলাম তা হল সাইকোলজি ডিল করে মানুষের স্বাভাবিক ব্যবহার ও তার সমস্যার পরিব্যাপ্তি নিয়ে যা কাউন্সিলিং এর গুরুত্ব প্রমোট করে। আর সাইকিয়াট্রি ডিল করে মানুষের অস্বাভাবিক ব্যবহারের জটিলতা নিয়ে যা অবশ্যই মেডিকেশানের সাথে রিলেইটেড।
মন অদ্ভুত এক ব্যাপার। ব্রেইনে যেখানে মন নামক  সেন্টার টা আছে তার প্রকৃতি খুব আজব। মনকে রেগুলেট করা, কন্ট্রোল করা সবকিছুই অনেক জটিল এক প্রসেস। একেকজনের ক্ষেত্রে এই রেগুলেটিং সিস্টেম আলাদা। কথায় বলে নানা মুনির নানা মত। ছেলেবেলা থেকে যেভাবে গড়ে তোলা হয় আমাদের মনও সেদিকেই ধাবিত হয়।
সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ডে বেশিরভাগ রোগীর সমস্যা শুরু হয় অত্যধিক ধার্মিকতা দিয়ে। তাদের হিস্ট্রি নিয়ে জানা যায় যে তারা কোন পীর/হুজুর/মাজার এ যেত। গায়েবী কিছু এডভাইস অনুযায়ী তারা কাজ করত। নিজে খুব বেশি ধার্মিক না হলেও এটলিস্ট ইসলামকে বুঝে পালন করার ট্রাই করি। তাই যতবারই হিস্ট্রি নিতে যাই ততবারই কিছুটা বিব্রত ফিল করি। ইসলাম ধর্ম অত্যধিক পালন করতে গিয়ে কেউ সাইকো হয়ে যাবে এই ব্যাপারটা খুব বিব্রতকর। আমি যতবার হিস্ট্রি নেই ততবার একজায়গায় প্রশ্ন করে থেমে যায় যে তারা কেন অমুক পীর/হুজুরকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে? ইসলামে কোথাওতো লেখা নাই যে ধর্মীয় আনুগত্য ও ভালবাসার একটা ধাপ হল পীর/হুজুরকে ভালবাসা, তাদের ইললজিক্যাল কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা!
হ্যলুসিনেসান,ইলিউসান,ডিলিউসান যেভাবে হয়…একটু নিজের মত ব্যখ্যা করি।
ইসলাম ধর্মে বেসিক সাতটি বিষয় মনে প্রাণে বিশ্বাস করে বাকি জীবনের সমগ্র বিষয় যুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই করতে হবে। আমি ইসলাম কে নিয়ে শুধু এটুক্লুই বুঝি যে ঈমানের সাতটি বিষয় ব্যতিরেকে বাকি সব কিছু অত্যধিক স্ট্রং লজিক দিয়ে নিজের লাইফে ইম্পলিমেন্ট করতে হবে।
হুমায়ুন আহমেদের আত্বজীবনীমূলক একটা লেখা পড়েছিলাম। সেখানে লেখক এক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে কমেন্ট করেছিলেন যে, গ্রামের মানুষ যা বিশ্বাসযোগ্য নয় তা  খুব সহজেই বিশ্বাস করে। আর যেসব ব্যাপার খুব লজিক্যাল সেগুলো নিয়ে তাদের  মাথা ব্যথার শেষ নাই। আচ্ছা যে ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখক এই কমেন্ট করেছিলেন ঘটনাটা একটু সংক্ষেপে বলি।
এক ছেলে যে খুব চুরি করে। যেখানেই যায় সেখান থেকেই কিছু না কিছু চুরি করে। সে কারো সাথে খুব একটা কথাও বলেনা। একাকি বসবাস করে। তাকে নিয়ে প্রায়ই সময় গ্রামে শালিস বসে। অভিযোগ একটাই সে চুরি করে। তার এই চুরির স্বভাবের জন্য কোন মানুষ তার সাথে ঠিকভাবে কথাও বলেনা। লেখকের সাথে পরিচয় হল ছেলেটার। লেখক তার সাথে অনেক ভালভাবে ব্যবহার করলেন, কিন্তু যাবার আগে লোকটা লেখকের কলম চুরি করে নিয়ে যায়। পরে তার এই চুরি করা কলম গ্রামের কেউ একজন দেখে ফেললাম তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে দেয়। চুরির সাক্ষী হিসাবে লেখককে উপস্থিত করানো হলে লেখক বলে যে কলমটা সে তাকে গিফট করেছে। এটা বলার কারণ ছিল লেখত ইতোমধ্যেই ছেলেটার একটা হিস্ট্রি নিয়ে ফেলেছে। হিস্ট্রিটা ছিল এরকম…একবার ছেলেটার খুব অসুখ হয়। এতটাই মারাত্বক যে একসময় সে সেন্স হারিয়ে ফেলে এরপর আর সেন্স ফিরে আসেনি। সবাই তাকে মৃত ভেবে কবরে রেখে আসে। এরপর ছেলেটার বোন দেখতে আসলে বলে যে তার মন বলছে যে তাই ভাই বেচে আছে তাই কবর থেকে তাকে তুলা হোক। সত্যিই তাকে কবর থেকে তুলে আনা হলে দেখা যায় সে বেচে আছে। কিন্তু সে অনেক মেন্টালি আস্বাভাবিক ছিল। এরপর থেকেই সে চুপ হয়ে যায়, কারো সাথে সেরকম মিশেনা। আর কোথাও গেলেই কিছু না কিছু চুরি করে।
এরকম একটা আস্বাভাবিক ঘটনা গ্রামের সবাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। কারণ তাদের ধারনা ছেলেটা আসলেই মরে গিয়েছিল পরে আল্লাহর কুদরতে সে আবার বেচে গিয়েছে। কিন্তু একটা ছেলের জীবনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, তার মানসিক যে বড়রকম এক পরিবর্তন আসল, তার ব্যবহার অস্বাভাবিক হয়ে গেল এসব তারা কোন আমলে না দিয়ে তারা সামান্য চুরির ব্যাপার নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে দেয়।
বাঙ্গালিকে যত সহজে ধর্ম দিয়ে ইললজিক্যালি বাইয়াসড করা যায় তা মনে হয় হাজার নিউটন/আইন্সটাইন তাদের লজিক দিয়ে বাইয়াসড করতে পারবেনা। ছেলেবেলা থেকেই কেন যেন ইসলাম কে যুক্তি দিয়ে না বুঝিয়ে অলৌকিক কিছু অদ্ভুত ব্যপার স্যাপার দিয়ে বুঝানো হয়। শুধু যে বুঝানো হয় তা নয়, সেটা মানতে বাধ্য করা হয়। একসময় এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে যায় আমরা। ফলে কোন অলৌকিক, আস্বাভাবিক খুব সহজেই বিশ্বাস করতে পারি। যেহেতু ছেলেবেলা থেকেই শুনে এসেছি যে বিশ্বাসই মূল জিনিস! গায়েবী আওয়াজ বিশ্বাস করি, পীর/হুজুরের ম্যজিক্যাল স্বপ্নে পাওয়া চিকিৎসাকে অমোঘ বিধান মনে করি। হ্যালুসিনাশান, ইলিউশান মনে হয় এভাবেই তৈরি হয়।
১৫বছরের এক কিশোরি মেয়ের হিস্ট্রি নিচ্ছিলাম। খুব ভাল পড়াশুনায় সে। চলাফেরা স্বাভাবিক আর আট-দশটা মেয়ের মতই। একদিন হঠাৎ সে এক নিকটস্থ পীরের কাছে যায়, পীরের উপদেশ অনুযায়ী সে কঠিন পর্দা শুরু করে। হাত/পা মোজা থেকে শুরু করে শুধুমাত্র চোখ ছাড়া তার আর কিছুই দেখা যায়না। পীর তাকে আরো উপদেশ দিয়েছিল মেয়েদের জন্য পড়াশুনা নাকি ইসলামে পারমিট করেনাই। তাই সে পড়াশুনায় আর উদ্যম পায়না। পীর তাকে বলেছিল য বেশি বেশি তওবা করতে, বেশি বেশি দুনিয়াবি কাজ বাদ দিয়ে নামাজ-রোজা করতে। এভাবেই মেয়েটি একসময় গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়। ফেরেশতারা নাকি তাকে কি কি সব করতে বলে। পরে ধীরে ধীরে পুরা সাইকো হয়ে যায়। তার ব্যবহার, আচার-আচরন সব কিছু আস্বাভাবিক। মেডিকেশান দিয়ে স্ট্যাবল রাখতে হয়। হিস্ট্রি নিতে গিয়ে আমি ভাবলাম ধর্মকে ইউজ করে যেভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে আস্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে এব্যাপারে আমাদের পজিশান কোথায়? মিডিয়াতে হিল্লা বিবাহ, দোররা মারা, পর্দা, স্বামী কতৃক স্ত্রীকে পিটানোর যে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে ইসলামকে ফোকাস করা হয় সেটা কি আদৌ সঠিক ইসলাম?
ইসলামিক হিস্ট্রি যত পড়ি, নবী-রাসূলদের দাওয়াহ পদ্ধতি যত পড়ি তত আমি মুগ্ধ হই। মানুষের সাইকোলজি বুঝে ভাল জিনিস প্রেসেন্ট করে দাওয়াহ পদ্ধতি বর্তমান সময়ে কেমন এপ্লাই হয় সেব্যাপারে আমি সন্দিহান। মক্কাতে যখন ইসলাম আবির্ভুত হয় তখন মানুষ অলরেডি প্রভুর ব্যাপারে কিছু নলেজ ছিল। তারা জানত যে তাদের একজন প্রভু আছে যার ইবাদাত করা তাদের দায়িত্ব। আমাদের নবীজি(সাঃ) যখন আসলেন তখন তিনি তাওহীদ নিয়ে সর্বপ্রথম দাওয়াহ দিলেন। কারণ তাওহিদের একাত্বতা ঘোষণা ব্যতিত বেসিক ইসলামে প্রবেশ করা যাবেনা। তাওহীদের মূল কথা মূলতঃ ৩টি। আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস অর্থাৎ এই বিশ্বের একমাত্র শাসন কর্তা তিনি, আল্লহর সমস্ত গুনাবলি ও প্রসংশা শুধুমাত্র তার জন্যই প্রযোজ্য তার বান্দার জন্য না, আর ইবাদাতের যোগ্যতা কেবল আল্লাহর। এই তিনটা জিনিস বুঝতে পারলে বেসিক ইসলামে বুঝতে খুব অসুবিধা হয়না। কারণ এখানেই নিহিত রয়েছে যে এই পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে তার ফলাফল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, সবকিছু করার মালিক একমাত্র তিনি, বান্দা এবং আল্লাহর ইবাদাতের মাঝখানে কোন মিডিয়া নেই, কেউ তার সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। সো দ্যাট কোন পীর/হুজুর/তাবিজের কেরামতিতে যে কিছুই হবেনা তা শুধুমাত্র এই তাওহীদের কনসেপ্টেই বুঝা যায়।
কিন্তু ইসলাম আরব থেকে যখন বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়েছে তখনই সমস্যাটা হয়েছে। কারণ মক্কার মানুষ তাওহীদের কনসেপ্ট বুঝে ইসলাম গ্রহন/ত্যগ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষ তাওহীদের কনসেপ্ট না বুঝেই ইসলাম কে মনে প্রানে ভালবেসে বহুরকম নিজের অজান্তেই শিরকে লিপ্ত আছে। বলা যায় ইসলামবিহীন মুসলিম জাতি আমরা। তাই এখানে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। খুব আজব ব্যাপার এটা। কারণ যেখানে ৮০% মুসলমান সেখানে কেউ আমরা ইসলামের মেইন ডিমান্ড বুঝিনা, একচুয়াল ইসলাম কি চায় আমাদের কাছে সেটা বুঝিনা।
ইসলামি দাওয়াহর কনসেপ্ট কখনও জোর করে কাউকে চাপানো হয়নি। যখন মেজোরিটি ইসলাম কে বুঝে গ্রহন করেছে, ইসলামের রুলের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেছে তখনই ইসলামের রুল খুব স্ট্রিকটলি পালিত হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। কিন্তু যেখানে আমরা তাওহীদের মত মেজর কনসেপটই মানুষকে বুঝাতে পারিনি সেখানে ইসলামি ড্রেস কোড, দাড়ি রাখা/না রাখা এসব মাইনর ব্যাপার যদি কাউকে পালন করতে বাধ্য করানো হয় তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াবে?
ইসলাম সবসময় মানবতার কথা বলে, ইসলামে চিন্তার স্বাধীনতার সুযোগ আছে বলেই জেনে বুঝে ইসলামর বেসিক ডিমান্ড বুঝে, লাইফের কম্পলিট কোড এর প্রসেস কেন এরকম হল সেব্যাপারে রিসার্চ করে, লজিক্যালি ইসলামকে নিজের লাইফে ইম্পলিমেন্ট করতে হয়। এখানে হ্যালুসিনেসান, ইলিউসানের আশ্রয় নেবার  কোন সুযোগ নায়।
মানুষের সাইকোলজির ন্যনোমিটার বুঝে দাওয়াহ না দিলে ইসলাম কে খুব কঠিন ও কট্টর মনে হবে। আচ্ছা যে বুঝেইনা ইসলাম ভাল কেন, যে জানেইনা ইসলামে এরকম ড্রেস কোড কেন দেওয়া হল, তাকে যদি আমি সেটা করতে বাধ্য করি হোক সেটা  ১০০% ভাল তাহলে কি সে এটা করবে? এটলিস্ট আমাকে কেউ জোরপূর্বক কিছু করাতে বাধ্য করলে তা হাজার ভাল হলেও আমি তার কথামত সেটা করবনা। আগে নিজেকে বুঝতে হবে যে সেটা আসলেই ভাল তারপর করব, কারো জোরপূর্বক ইনফ্লুয়েন্সে না।
কেন জানিনা ইসলাম পন্থী আমরা যারা আছি তারা সব কিছু অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চাই। ব্যাপারটা আমার কাছে অনেকটা এরকম লাগে যে, যে ক্লাস ওয়ানই পড়েনি তাকে ক্লাস এইটের জিনিস জোরপূর্বক বুঝানোর কঠোর ট্রাই করতেছি। শুধু তাই না, সে ক্লাস এইটের জিনিস কেন বুঝবেনা ও মানবেনা সেটা নিয়েও গভীর এনালাইসিস করি। ফলে হাজার হাজার বছর পূর্বে নবী-রাসূলরা সবাই একটা ইউনিট ছিল। কারণ তাদের সবাই বেসিক্যালি মানুষকে ইসলামের কন্সেপ্ট ক্লিয়ার করাতেই ব্যস্ত ছিল। পরবর্তিতে ধীরে ধীরে ইসলামের অন্যান্য লাইফ রিলেটেড ব্যাপারে তারা মানুষকে এডুকেইট করেছে। আর আমরা বেসিক জিনিস বাদে অন্যান্য ব্যাপারে চর্চা করতেই ব্যস্ত। ফলে ইসলামের বহু শাখা-প্রশাখা বেরিয়েছে।ফলে আমরা  একই ইউনিটে অবস্থান করছিনা। যদিও মনে প্রাণে  ইসলামকে ভালবাসি সবাই…
সবশেষে শুধু এটুকুই বলব, যে ইসলাম  হিউম্যানিটির কথা বলে সেই ইসলাম কখনও স্বৈরাচার মূলকভাবে কোন কিছু মানুষকে চাপাতে দেয়না। আর তাই যদি হত তাহলে আল্লাহ নিজেই ফেরেশতা দিয়ে এই পৃথিবীতে সবকিছু করতে মানুষকে বাধ্য করাত। তাই মানব সাইকোলজির ন্যনোমিটার বুঝে ইসলাম কে প্রতিষ্ঠা করা যতটা সহজ ভাবা হয় আসলে ততটা না। তা না হলে নবী-রাসূলদের জীবনে এত দুঃখ-কষ্ট আসতনা যদিও তারা ছিলেন আল্লহর মনোনিত ব্যক্তি। তারা ইচ্ছা করলেই পারতেন ইসলামের রুল কে মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে, ইচ্ছা করলেই পারতেন তাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের পাওয়ারে মানুষকে কিছু করাতে বাধ্য করতে। কিন্তু তারা সেটা করেননি। তারা ইসলাম কে তুলে ধরেছেন লাইফের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ধর্ম হিসাবে, তারা প্র্যাক্টিক্যালি  প্রুফ করেছেন যে ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। যেহেতু ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবি তাই নিশ্চয় আমাদের ততদিন পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে যতদিন পর্যন্ত আমরা ইসলামকে স্বৈরাচারি হিসাবে না বরং একমাত্র গ্রহনযোগ্য লাইফ স্টাইল হিসাবে প্রুফ করতে না পারি…

শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০১০

তুমি নারী বলেই এই লেখা তোমার জন্য উৎসর্গিত !!!

লেখাটা শুরুর করার পূর্বেই বলে নেই এই চিন্তা ভাবনার প্রেরণা পেয়েছি আমার সবচেয়ে প্রিয় আপুর কাছ থেকে। নারী কেন্দ্রিক লেখাটা খুব সাহস করেই লিখে ফেললাম যেহেতু আমি নিজেও একজন নারী। তাই একজন নারী হিসাবে নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই ও অন্য নারীদের প্রতি প্রত্যাশা করি সেটাই অকপটে বলে ফেললাম। কেউ এটা পড়ে যদি মাইন্ড করেন তবে সেটার দায় দায়িত্ব তার উপর পড়বে, লেখকের উপর নয়।

নিজ পরিবার, সমাজ ও দেশের সীমানা পেরিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির এই বিশ্বে একজন নারী যখন উন্নত বিশ্বের দিকে দৃষ্টিপাত করে তখন এক জটিল সমস্যা অনুভব করে সে। একদিকে নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার পাবার চরম আকাঙ্ক্ষা অন্যদিকে নিজ অস্তিত্ব সংকট। সবকিছুর সংমিশ্রন একজন নারীর চিন্তা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

যাইহোক হাজার নেগেটিভিটি, বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এক নারী যখন নিজেকে নিয়ে প্রচলিত ট্রেডিশান বা ঐতিহ্যের বাইরে নিজেকে নিয়ে ভিন্নরকম চিন্তা শুরু করে এবং বাস্তব জগতে তার প্রতিফলন ঘটাতে চায় তখনই তাকে সম্মুখিন হতে হয় বিভিন্নমুখী পারিবারিক ও সামাজিক বিপত্তির। অবশ্য আজকাল পারিবারিক ও সামাজিক বিপত্তির মাত্রা কিছুটা হলেও কমে গেছে। এজন্যই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নারীকে কেবল আমরা ঘরের ঘরনী হিসাবে দেখিনা। বরং চিকিৎসক, আর্কিটেক্ট, টিচার, সংবাদ পাঠিকা, জার্নালিস্ট, মিডিয়া ওয়ার্কার ইত্যাদি বিভিন্ন প্রফেশানে একজন নারী নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। এসব যত দেখি তত ভাল লাগে, নিজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগে, সমাজে নারী হিসাবে কিছু করার তাগিদ অনুভব করি। আসলে নারী-পুরুষের সমান পার্টিসিপেশান নিশ্চিত করে সমাজের চাকা গতিশীল রাখতে। কিন্তু, কিন্তু এত কিছুর পরেও কোথায় যেন একটা সমস্যা দেখতে পাই।

সেদিন আমার এক স্টুডেন্টের সাথে কথা বলছিলাম, সে খুব আফসোস করে বাংলাদেশের ছেলেদের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করে বলল, নিউজিল্যান্ড থেকে একজন চিকিৎসক এদেশের গরীব মানুষের সেবা দেবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কতটা মানবদরদী না হলে সে তার নিজের দেশের উন্নত ব্যবস্থা বাদ দিয়ে, নিজের আরাম-আয়েশ ভুলে গিয়ে অন্য দেশের গরীব মানুষের জন্য নিজেকে এভাবে উৎসর্গ করতে পারে? অথচ বাংলাদেশের চিকিৎসকদের পক্ষে কি এটা সম্ভব? এরা তো নিজের দেশের গরীব মানুষকে কিভাবে তিলে তিলে শেষ করতে পারে এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে! কথা বলার সময়ই আমার মধ্যে ভিন্ন একধরনের চিন্তা শুরু হল......একটা পরিবারের পুরা ভরনপোষণের দায়িত্ব থাকে সেই পরিবারের পুরুষের উপর। গৃহকর্ত্রী বাইরে জব করলেও পরিবারের ভরনপোষণের জন্য বিন্দুমাত্র কোন মাথা-ব্যাথা তার উপর বর্তায় না, যতটা বর্তায় একজন পুরুষের উপর। চিন্তা ভাবনাটাকে আরো একটু এক্সটেন্ড করে দেখলাম যে, পরিবারের সেই পুরুষ যদি তার নিজের জীবন নিউজিল্যান্ডের সেই চিকিৎসকের মত মানবতার উদ্দেশ্যে স্যক্রিফাইস করে তাহলে তো মহা সর্বনাশ!! তাই পুরুষরা কেন মানবতাবাদী হয়ে সেই নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসকের মত হয়না একথাটা বাইর থেকে বলা যতটা সহজ বাস্তব জীবনে এটার প্র্যাক্টিক্যাল প্রয়োগ ততটাই কঠিন।

ভাবতে ভাল লাগে যে নারীরা আজ শিক্ষার অবাধ সুযোগ পেয়েছে।পরিবারেও নারীকেশিক্ষার ব্যাপারে প্রচুর সহযোগিতা করা হয়। ফলে সর্বত্র পুরুষের পাশাপাশি নারীর দৃড় পদচারনা আমাকে স্বপ্ন দেখায় একটি সুখি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু যে শিক্ষার সুযোগ পাবার জন্য নারীরা এত সংগ্রাম করল সেই শিক্ষার আলো পেয়ে কতজন নারী তাদের চিন্তা ভাবনার জগতকে আলোকিত করতে পেরেছেন? খুব দূরে যাবনা, আমার ফ্রেন্ড সার্কেলেই যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, যারা ভবিষ্যৎ চিকিৎসক তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তুমুল আলোচনা করেছিলাম। কারও ইচ্ছা প্রচুর টাকা ইনকাম করার, কারও শুধুই গাড়ি,বাড়ি,শপিং, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর, কারও ইচ্ছা সোস্যাল স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্য বড় বড় ডিগ্রি নেবার, কারও ইচ্ছা শখের মেডিক্যাল শেষে একদম ঘরোয়া হয়ে যাবার। কেন জানি অসামঞ্জস্য লাগছিল তাদের এই ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাগুলো। নিজের প্রতি, নিজ পরিবার,সমাজ ও দেশের প্রতি নারী হিসাবে কি কোন দায়বদ্ধতা নেই? আবার সেই নারী তাহলে কিভাবে পুরুষের কাছ থেকে পারিবারিক ও সামাজিক সকল দায়িত্বের পূর্ণ প্রয়োগ প্রত্যাশা করে??

তাই একজন নারী হিসাবে সকল নারীর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালবাসা জানিয়ে কিছু অনুরোধ করতে চাই...

অবিবাহিত নারীর প্রতিঃ
নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য আপ্রানচেষ্টা করতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় পারে সংকীর্ণ চিন্তার গন্ডি থেকে মুক্তি দিতে। নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি সচতন হোন। সমাজে আপনার ভূমিকা কি হবে এটা ক্যালকুলেইট করেন। নিছক উচ্চ শিক্ষা নারী মুক্তি আনবেনা বরং শিক্ষার সাথে নিজের চারপাশ, পরিবেশ ও সমাজের প্রতি দৃষ্টিপাত করুন। শুধু শপিং, পার্লার, ঘুরাঘুরি করে নয় বরং অবসর সময়ে নিজেকে ক্রিয়েটিভ ও প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যস্ত রাখুন। একটা ব্যাপার বিয়ের পর সংসার বা দাম্পত্য ঝামেলা, মনোমালিন্য এড়াতে আজকাল এফেয়ারের যে নতুন ট্রেডিশান শুরু হয়েছে এতে করে ঝামেলা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। একে অপরকে চেনার জন্য বিয়ের পূর্বে প্রেম এই থিওরিটা এখন চরম আকারে ধ্বসের সম্মুখিন হচ্ছে। কারণ সিটি কর্পোরেশানের এক জরীপের মতে বর্তমানে ভালবাসাজনিত বিয়ের ডিভোর্সের সংখ্যা আনুপাতিকহারে বেড়েই চলেছে। তাই বিয়ের আগে এফেয়ার জনিত কেইসে সময় না দিয়ে সর্বোপরি জীবনমুখী বাস্তব চিন্তা করুন। বিয়ের পূর্বে নিজের দাবি, অধিকার, স্বাধীনতা ও কাজের ব্যাপারে হবু বরের নিকট পরিষ্কার জানিয়ে রাখুন। পরস্পর মিউচুয়ালের মাধ্যমে একটা লিখিত ডকুমেন্টে আসুন। এতে করে পরে ঝামেলা হলেও সেটা সলিউশান করা খুব বেশি কষ্টের হবেনা আশা করি। আর যেটা অনিশ্চিত সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে নিশ্চিত যেটা আপনি করতে পারবেন সেটা নিয়ে রিসার্চ করেন। আপনি পারবেন ভবিষ্যত একটি পরিবারকে নেতৃত্ব দেবার, নিজের অবস্থানকে সুদৃড় করে সামাজিকভাবে নিজেকে অধিক গ্রহনযোগ্য করে তুলতে।

বিবাহিত নারীর প্রতিঃ
খুব সাধারণ কিন্তু ভুল একটি ধারণা বর্তমান আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে আর সেটা হল একটা মেয়ে পড়াশুনা করবে অথচ বাইরে জব করবেনা তাই কি হয়!! এতে করে মনে করা হয় নারীর সমস্ত শিক্ষায় বৃথা, নারী নিজের প্রতি এব্যাপারে খুব হীনমন্যতায়ও ভুগে। অথচ একজন শিক্ষিত নারী যদি বাইরে জব নাও করে তার সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ জব করতে হয় ঘরের ভিতরে। একজন নারী ঘরে বসে বিশ্ব পরি্চালনায় অংশগহন করে। এই বিশ্ব পরিচালনার কাজ
নিশ্চয় এত সহজ না যতটা একজন নারী ভাবে! আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। আগামী ভবিষ্যতের দায়ভার একজন নারীকে নিতে হয়, কোন পুরুষকে নয়। তাদের পারিবারিক আবহে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশের নিশ্চয়তা দেওয়া, মানসিক ও শারিরীক বিকাশে ভূমিকা রাখা ইত্যাদি এসব কাজের জন্য যদি কোন প্রতিষ্ঠান খোলা হয় আমি নিশ্চিত পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও প্রেস্টিজিয়াস প্রতিষ্ঠান হবে সেটা। একটা শিশুর মনে মায়ের প্রভাব কিভাবে বিস্তার করে সেটা নিয়ে গবেষণা করলে সেই গবেষণার পেপার এতখানি গুরুত্ব পাবে পুরা বিশ্বে যে সবাই একথা
একবাক্যে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবে যে এক মায়ের জন্যই পুরা পৃথিবী টিকে আছে। তাই ঘরে বসে বাইরে জব না করার আক্ষেপ না করে বিশ্ব পরিচালনায় অংশ নেবার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। একথা আমি হলফ করে বলতে পারি কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক ঘরে বসে এই বিশ্বপরিচালনার কাজ পৃথিবীর হাজার শ্রেষ্ঠ কাজের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। একজন পুরুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কেবল একজন নারী। তাই সাধ্যের অতিরিক্ত প্রত্যাশা করে নিজের স্বামীকে খারাপ পথে ইনকাম করতে বাধ্য করবেননা, অন্ধকার জগতে পা বাড়াতে দিবেননা। নিজেদের মধ্যে সামান্য ব্যাপারে দাম্পত্য কলহ না করে সুষ্ঠুভাবে চিন্তা করুন। আপনাদের এই কলহ বাচ্চার মনে যে গভীর খারাপ ইফেক্ট ফেলবে সেটার ক্ষতি পূরণ সহজে হবেনা।

আর যেসব নারী বিবাহিত এবং বাইরে জব করছেন , কিংবা যারা নিছক ঘরনী হতে চাননা আবার বাইরেও জব করেননা তাদের প্রতি অনুরোধ আমি জানি সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আপনি অবস্থান করছেন। যেহেতু পারিবারিক ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাপারের দায়ভার আপনার উপর নেই তাই আপনি খুব দারুন ভূমিকা রাখতে পারেন সোস্যাল ওয়ার্কে। যেহেতু আপনার দক্ষতা আছে নেতৃত্ব দেবার, সময় আছে নিজেকে অন্যরকমভাবে রিপ্রেজেন্ট করার তাই কেবল শখের জব নয় পাশাপাশি সামাজিক ও মানবতাবাদী কাজে সময় দিন। যে দায়িত্ব পুরুষের পক্ষে নেওয়া কিছুটা কষ্টকর সেই দায়িত্ব আপনি নিয়ে নেন। নারীদের জন্য উপকারি কোন কিছু করার পরিকল্পনা নেন। কিংবা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সামাজিক ও মানবতাবাদি কাজে নিযুক্ত করুন ও সমাজে নারীর অবস্থান, প্রাপ্য অধিকার, স্বাধীনতার ক্ষেত্র এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শিক্ষিত নারীর দুর্ভোগ নিয়ে গবেষনার কাজে নিযুক্ত থাকুন। বাইরে জব করা মানেই নিছক টাকা ইনকাম করা কিংবা কেবল চাকরির উদ্দেশ্যে চাকরি নয় বরং সমাজে নিজের উপস্থিতি প্রমান করা এইভাবে যে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে নারীরাও এগিয়ে। এখনই সময় এসেছে নারীর সমান অধিকারের নামে যুক্তিহীন সংগ্রামে পুরুষের সাথে না ঝাপিয়ে নিজেদের ব্যাপারে সচেতন হোন, নিজেদের প্রাপ্য অধিকারের ব্যাপারে সংগ্রামী হোন। পুরুষরা আপনাদের প্রতিযোগী নয়, আবার আপনারাও পুরুষদের প্রতিযোগী নন, তাই নারী-পুরুষ সমান এটা প্রমাণের উদ্দেশ্যে বাইরে জব করা নারীর জন্য বোকামী ছাড়া কিছুইনা। তাই একজন প্রফেশনাল নারীর প্রতি এই অনুরোধ আপনারা এই বোকামী ছেড়ে নিজের ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে সাথে পরিবারকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে খুব স্মার্টভাবে রিপ্রেজেন্ট করুন।

শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

ইভটিজিংঃ নেপথ্যের আড়ালে ও আমাদের দায়বদ্ধতা।

অনেকদিন ধরে ভাবছি কিছু লিখব। কিন্তু চারপাশের পরিবেশ, সাম্প্রতিক ঘটনা সব মিলিয়ে চিন্তা-ভাবনা গুলো জট পাকিয়ে যাচ্ছে। সমস্যা ও দুর্যোগের এমন এক চেইন রিএ্যকশানের মধ্যে পড়ে গেছি , যে, চিন্তা ভাবনার জট একটি খুলার পর দেখি আরেকটিতে জট লেগে গেছে। তারপরও কী-বোর্ড হাতে নিলাম। নিজের একদম ভিতরের স্বত্তার জোরেই কিছু লেখার সাহস খুজে পেলাম।


ফার্মগেট হতে রিক্সা করে আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড বাসায় ফিরছিলাম। তখন সম্ভবত এইচ.এস.সি পরীক্ষা চলছিল। যাইহোক পরীক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চারপাশে। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের ঠিক সামনের রিক্সাতে দুইজন কলেজ ইউনিফর্ম পরা মেয়েকে একটি ছেলে খুব বাজে মন্তব্য করতেছে। ছেলেটি রিক্সার পাশে পাশে দৌড়ে যাচ্ছিল। ঘটনাটা আরো বেশি নজরে আসল তখন দেখি ছেলেটি তার হাতে কোমল পানীয়ের একটি বোতল মেয়েগুলোর দিকে সজোরে ছুড়ে মারে। সাথে কিছু কথা “ তুমি আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছ। আমি তোমাকে ছাড়বোনা।এভাবে তুমি আমাকে রেখে ওই ছেলের সাথে প্রেম করলে আমি দেখে নিব...............”

ঘটনাটা ক্রমেই খুব মারাত্বক আকার ধারণ করছিল। ছেলেটা কে আমার খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। মনে হল ছেলেটাকে আমার কিছু বলা উচিৎ। কিন্তু পাশ থেকে আমার ফ্রেন্ড আমাকে খুব স্ট্রঙ্গলি বাঁধা দিল। এতক্ষন ধরে যে ছেলেটিকে আমার অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল তখন আমার চারপাশের মানুষকে আরো বেশি অস্বাভাবিক মনে হল। রাস্তা ভর্তি মানুষ, সবাই ঘটনাটা মনে হল খুব উপভোগ করছিল। কেউ ছিলনা ওখানে ছেলেটাকে বাঁধা দেবার। নিজের চোখের সামনে সংঘটিত ঘটনার সাক্ষী হয়ে মন খুব খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। বাসায় পত্রিকা খুলতেই দেখি, ইভটিজিং খুব মারাত্বক আকার ধারণ করেছে...
রেগুলার বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম পড়ে বুঝার চেষ্টা করলাম আসলে ইভটিজিংকে কে কিভাবে ব্যাখ্যা করছে। কে বা কারা দায়ী এটা বিশ্লেষণ করার আগে কি জন্য এরকম হচ্ছে সেটা নিয়ে চিন্তিত হলাম।

ছেলে এবং মেয়ের প্রতি একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক আকর্ষন আছে। সুতরাং কোন সুন্দর ড্রেস আপ, গেট আপের কোন মেয়ে দেখলে যেকোন ছেলে আকর্ষিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। মেয়েদের প্রতি ছেলেদের এই আকর্ষনের প্রকাশ ভঙ্গি যখন কোন মেয়েকে সামাজিকভাবে হেয় করে, বিব্রত করে সেটাই ইভটিজিং এর পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে। খুব সহজভাবে পর্যবেক্ষন করলে বুঝা যায় যে ইভটিজিং এর জন্য ছেলে
এবং মেয়ে উভয়ই দায়ী। কোন মেয়ে যদি বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষিত করার জন্য অশালীন পোশাকে রাস্তায় বের হয় সেক্ষেত্রে ছেলেরাতো ইভটিজিং করবেই। আর ছেলেদের যদি এই নৈতিক ও মানবিকবোধ না থাকে যে যাকে সে টিজ করছে সে হতে পারত তারই বোন। আল্টিমেইটলি যা হছে মেডিকেলের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ইভটিজিং এর সাফারার হচ্ছে মেয়েরা আর ক্যারিয়ার হল ছেলেরা।
কে বা কারা দায়ী এই প্রশ্নে আসলে আমি যেটা খুব স্ট্রঙ্গলি ফিল করি সেটা হল আমরা নিজেরা, আমাদের সমাজ ও আমাদের রাষ্ট্র। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা যখন নারীদের সমান অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছিলাম তখন আমরা কি একবারও ভেবেছিলাম যে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুন্দর প্ল্যাটফর্ম লাগবে যেটা নিশ্চিত করবে নারীর নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের সুন্দরতম সমন্বয়। যে নারীরা শিক্ষা ও বাইরে চাকরি থেকে বঞ্চিত ছিল তারাই পেল শিক্ষার অধিকার, ঘরের বাইরে পুরুষের সহকর্মী হিসাবে চাকরি করার অধিকার। নারীরা যখন অশিক্ষিত ছিল তখন তারা অত্যাচারিত ও লাঞ্ছিত হত ঘরের ভিতরে আর যখন নারী শিক্ষিত হয়ে বাইরের কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রকাশের সুযোগ পেল তখন তারা লাঞ্চিত ও অপমানিত হল সর্বত্র। যেখানেই নারীরা সদর্পে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য মাঠে নেমে এল ঠিক তখনি নারীর সমঅধিকার আদায়ের কর্ণধার পুরুষরা তাদের বিভিন্নক্ষেত্রে লাঞ্চিত করল। তাই শুরুতেই ছিল একটি বিরাট ভুল। যতক্ষন পর্যন্ত এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের জন্য একটি সুন্দর, নিরাপদ ও বিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রসেস বন্ধ রাখাই ভাল। নারীরা নিজেদের অবস্থান নিজেরা বুঝতে পারেনি। শুধুই কি তাই? আজকাল রাস্তার বিলবোর্ড বা টিভি খুললেই দেখি বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নারীরাও খুব স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজেদের পণ্য হিসাবে প্রচার করে। কর্পোরেট মিডিয়া এই নারী পণ্যকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন নতুন আইডিয়া জেনারেট করছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা, ফ্যাশান শো অনুষ্ঠানের নামে নারী সৌন্দর্যের নামে যে নগ্ন প্রচারণা চলছে তা দেখে এই প্রজন্ম কি শিখবে? নারীরা কেবল ভোগ্যবস্তু ব্যতীত কিছুইনা!! ফলে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের প্রতিটি ছেলে ভোগ্যপণ্য হিসাবে দেখছে এবং ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে নারীরা। এর জন্য দায়ী কারা পাঠক বিবেচনা করুন।
আর আমদের রাষ্ট্রের ভূমিকা আর কি বা বলব! আইনের শাসন যদি কড়া না হয় এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতিটি ছেলের নৈতিক শিক্ষা ও মেয়েদের ধর্মীয় অনুশাসনে গড়ে তোলা না হয় তাহলে ইভটিজিং এর করাল গ্রাস কখনই বন্ধ হবেনা। ভেবেছিলাম যে ইভটিসিং এর জন্য এই সংকটময় মুহুর্তে সরকারের অবস্থান হবে খুব দৃঢ়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যা হল তা দেখে মনে হল লোকদেখানো দৃঢ়তা প্রদর্শনীর ছলনা মাত্র!
তাই ভাবতে ভয় লাগে, চিন্তা করতে শিহরিত হই , আমরা নিজেরা, আমাদের সমাজ ও আমাদের রাষ্ট্র যদি এখনও এব্যাপারে সচেতন পদক্ষেপ না নেই হয়তবা আরো হাজার হাজার মেয়েকে ইভটিজিং এর স্বীকার হতে হবে। জীবন ও সমাজের প্রতি ঘৃণা থেকে হয়ত অনেক নারীকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আত্বহননের পথ বেছে নিতে হবে।
স্বাধীনভাবে চিন্তা করা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন নিরবে নিভৃতে কাঁদে। কিন্তু বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক সরকার দেশ শাসন করে পাঁচ বছর আর দেশের সুশীল সমাজ,সাংবাদিক,লেখক বা যাদের বিবেক বলে কিছু আছে তারা সত্য প্রকাশ করে, নিজেদের জান-মালের নিরাপত্তার কথা না ভেবে,  দেশ শাসন করে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই কিছু লিখে নিজেকে দায়মুক্ত করার এক কৃত্তিম প্রচেষ্টা চালালাম।
 

শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০১০

লাভগুরু আপনাকেই বলছি...

আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যদি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে অন্য কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে ভালবাসে এবং সেক্ষেত্রে যদি দুই পরিবার এই বিয়েতে রাজি না থাকে তাহলে তারা কি করতে পারে? কেন জানিনা আমাকে এই ধরনের পরিস্থিতি বেশি ফেইস করতে হয়। বিশেষ করে এই ধরনের ভালবাসার কেস বেশি হ্যান্ডেল করতে হয়। তবে ফলাফল আল্টিমেইটলি জিরো। কেননা ভালবাসার রঙ এর মধ্যে কোন এক অদৃশ্য প্রবল আকররষণী শক্তি থাকে যেটার সামনে সব যুক্তি একেবারে ভ্যানিশ হয়ে যায়। ইন্টারমিডিয়েটে থাকতে আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবির একজনের সাথে এফেয়ার ছিল। সূত্র মোবাইল ফোন। একেবারেই অজানা, অচেনা,অদেখা। ইমেইলও চালাচালি হত। ঘটনা আমি জানতাম। শুরু থেকেই শুধু তাকে একটা কথা বলেছিলাম যে এভাবে মোবাইলে এফেয়ার পুরাই অযৌক্তিক। তাছাড়া আমার আর বলার কিছু ছিলনা। প্রায় ৬/৭ মাস পর সেই মোবাইল প্রেম ভেঙ্গে যায়। কারণ ছিল খুব ইন্টারেস্টিং। মুঠোফোনের ছেলেটি তার একটা ছবি পাঠায় ডাকযোগে। সেই ছবি দেখে আমার বান্ধবির স্বপ্ন একেবারে চুরমার হয়ে যায়। তারপর মোবাইল প্রেম সেদিনই শেষ। মোবাইল প্রেম শেষে আরো কিছু এফেয়ার ঘটিত ঘটনায় সে আবার জড়িয়ে যায়। সেটা এতটাই সিরিয়াস পর্যায়ের ছিল যে কলেজ ক্যাম্পাসে সেটা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। অতঃপর অঘটন...সন্ত্রাসী দ্বারা বিপক্ষের কোন গ্রুপ আহত হল। সব কিছুর সাথে কিভাবে যেন সে জড়িয়ে পড়ল। প্রিন্সিপাল পর্যন্ত ঘটনা গেলে আমার বান্ধবির টিসির সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা সে পেয়ে গেল। এই নিয়ে অবশ্য আমাকে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে বেশ। উপর মহলের সাথে যোগাযোগ করে তাকে টিসি থেকে নিস্তার দেয়া হল। অবশ্য ক্রেডিট ছিল ওরই বেশি। কারণ প্রচন্ড মেধাবী ছিল সে, কলেজের কিছু একাডেমিক পরীক্ষায় তার সাফল্যের কাছে কেউ দাড়াতে পারেনি। মোটামুটি মেধার জোরেই তার জন্য সুপারিশ করা সহজ হয়েছিল। কেন জানিনা ভালবাসার অবমনানা আমাকে যেভাবে পীড়া দেয় তা অন্য ক্ষেত্রে খুব কম দেয়।
বন্ধুত্বের দাবি থেকে ভালবাসার সর্বনাশা স্থান থেকে কাউকে যখন দূরে সরাতে ক্রমাগত চোখের পানি দিয়ে হলেও তার জন্য চেষ্টা করে যাই ঠিক তখনই যদি জানতে পারি যে তার কোন ভাই কিংবা বোন পরিবার থেকে মা-বাবার অলক্ষ্যে তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে তখন নিজেকে খুব ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। পরিবারেই যেখানে আদর্শগত শিক্ষা দিয়ে কেউ বেড়ে উঠেনা সেখানে ভাই/বোন তো সাহায্য করবেই!!! বাবা-মা আক্ষেপ করে আর কতটুকুই বা শেষ রক্ষা করতে পারবে......
টিভি দেখা হয়না অনেক অনেক বছর। মাঝে মাঝে দুই একটা অনুষ্ঠান হয়ত পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেখি, সেটাই আমাকে বিনোদন জগতের আপডেইট রাখে। ছোট ছোট কোমলমতি বাচ্চাদের নিয়ে আজকাল যে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান করা হয় সেগুলো দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বাচ্চাদের মধ্যে এখন থেকেই মিডিয়াতে আসার যে প্রবনতা, নিজেদের টিভি পর্দায় আনার লোভ, স্টার হবার যে ইচ্ছা জাগিয়ে তোলা হচ্ছে সেটা কতটা যৌক্তিক আমি বুঝিনা। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম বাচ্চারা যেসব গান বা নাচের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করে সেখানে যে যত বেশি ম্যচিউর রোমান্টিক ভাব তুলে ধরতে পার বিচারক তাতেই বেশি খুশি হয়। এত অল্প বয়সে যাদের ভালবাসার রূপ বুঝানোর জন্য ইন্সপায়ার করা হচ্ছে তারা ইন ফিউচার কি রিপ্রেসেন্ট করবে সেটা আর ভাবতে ইচ্ছা করেনা।
মনোবিদ্যার অধ্যাপক মেহতাব খানমের আর্টিকেল আমার সবসময় খুব ফেবারিট। সেদিন প্রথম আলোতে উনি একটি ফিচারে বাচ্চাদের নিয়ে করা কিছু বিজ্ঞাপনের চরম সমালোচনা করে দারুন কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। আজকাল ফ্ল্যাট বাড়ি,গাড়ি,এসি র বিজ্ঞাপনে একটা বাচ্চা যখন বলে “কক্সবাজারে সমুদ্রের পাশে আমাদের কি একটি বাড়ি বা ডট ডট ইত্যাদি হবেনা?” লেখিকা ফোকাস করেছেন যে একটা বাচ্চা সমুদ্রের পাশে বাড়ি থাকার মর্ম কি বুঝে? এতে করে কি আমরা তাদের স্বাভাবিক শিশুকাল কে ব্যহত করে কিছু মানবিক দূর্বলতম বৈশিষ্ট্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছিনা? তাদের লোভকে আমরা জাগিয়ে দিচ্ছিনা? রোমান্সের ব্যাপারটা অস্বাভাবিকভাবে তাদের মধ্যে গ্রো করার জন্য কি আমরা দায়ী না? তিনি এসব বিজ্ঞাপনের চরম নিন্দা জানিয়ে বাচ্চাদের মাধ্যমে কর্পোরেট বাণিজ্যকে বিজনেস না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
যাইহোক ভালবাসার কথার মধ্য ছিলাম। যে দেশে বাচ্চাদের নিয়েও বিজনেস হয় সেখানে বড় হয়ে তারা আর কতটুকুই বা দিতে পারে বা আমরাই বা কতটুকু আশা করতে পারি? রেডিও আমারে আমার ভালবাসা নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ভাল। এতে করে সাধারণ যারা এপর্যন্ত ভালবাসা নিয়ে যেসব ভুল করে এসেছে রেডিও আমারের দর্শকরা যেন এই ভুল না করে সেই জন্য এই অনুষ্ঠান। কিন্তু আমার সন্দেহ এতে করে উদ্দেশ্যে কতটুকু পরিপূর্ণতা পাচ্ছে? যাই হোক আমার কাজিন এই অনুষ্ঠান রেগুলার শুনে থাকে, সেই সুবাদে আমারও মাঝে মাঝে শোনা হয়। রিসেন্টলি সেখানে ভালবাসার যে ঘটনা শুনলাম সেটা শুনে আমি পুরাই তাজ্জব। ক্লাস এইটের একটা মেয়ে ভালবেসে পরিবারের অমতে বিয়ে করে। জাস্ট এটুকু শুনেই বাকিটুকু শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। লাভগুরুর কথা শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। যে প্রশ্ন দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম ঠিক সেই প্রশ্নই এবার লাভগুরুকে করে সেই মেয়েটি। খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। লাভগুরু প্রথমে একটু এভয়েড করে এন্সার দিলেন পরে সেটা আবার শুধরে দিয়ে উলটা মেয়েটিকে প্রশ্ন করলেন “ তুমি কি পারবা বাবা/মা কে রেখে শুধু তোমার ভালবাসার জন্য বাবা-মাকে ত্যাগ করতে?” মেয়েটি সুন্দর জবাব দিল নেগেটিভ। অথচ এই নেগেইভ জবাবটাই কেন যেন ভালবাসার আবেগের রসাতলে একদম ভেসে চলে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই লাভগুরুকে তার প্রশ্নের জন্য। এখন আমার লাভগুরুর প্রতি একটাই অনুরোধ যে-
“ আপনার প্রোগ্রামে যারা ভালবাসা নিয়ে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় তারাই আপনার কাছে সেই কাহিনি শুনাতে আসে। এরকম কি কোন প্রোগ্রাম করতে পারবেন যেখানে যেসব তরুন সমাজ বর্তমান ভালবাসা নিয়ে সঙ্কটে আছে, ক্রাইসিসের মধ্যে আছে তারা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার প্রোগ্রামে আসবে? যদি করতে পারেন আমার বিশ্বাস হাজার হাজার তরুণ-তরুণি আপনার প্রোগ্রামে আসবে সমস্যার সমাধানের জন্য। এতে করে হয়ত অনেককেই আপনি পারবেন জীবনের স্বাভাবিক গতিপথে ফিরিয়ে আনতে। হয়ত পারবেন জীবন আধারের করাল গ্রাসে প্রায় ডুবন্ত কোন তরুন-তরুণীকে বেঁচে থাকার কোন উপকরণ বের করে দিতে। কারন রেডিও আমারে ভালবাসার কাহিনি শুনে নিজের ভালবাসার সময় কেউ তাদের ভুল প্র্যাকটিক্যালি দেখতে পায়না। যদি পারেন তাহলে প্লিজ আমার এই অনুরোধটা রাখবেন। আশা করি এতে করে তরুণ সমাজ সুন্দর সমাধানের একটা মিডিয়া সোর্স পাবে।"

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০১০

আত্বকথন...

দুঃখবোধ পুরা মন জুড়ে ব্যপ্ত থাকে। মনের কষ্ট যে এত উপকারী সেটা আগে বুঝিনি। খুব কাছের কেউ কষ্ট দিলে সেটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। এতদিন পরে বুঝতে পারলাম যে উদার হওয়া এত্ত সহজ না। অথচ নিজেকে একসময় খুব উদার মনে হত। কিন্তু উদার হবার সুযোগ যখন এল তখনই বুঝলাম উদারতা প্রদর্শনের জন্য মানসিক শক্তি কত প্রকট হতে হয়। মনটা যদিও খুব খারাপ লাগছে, তারপরও ভাল লাগছে । চরম কঠিন সত্য নিজের কাছে প্রকাশিত হল। মানুষ সর্ব প্রথম পরাজিত হয় নিজ সত্তার কাছে। আমিও হলাম। কিন্তু এই পরাজয় আমাকে যে শিক্ষা দিল তা হাজার বিজয়ের চেয়েও অনেক বেশি।
ক্ষমা অনেক বড় গুন। মাঝেই মাঝেই চিন্তা করি কত শত শত অন্যায় করছি, অথচ এর জন্য আল্লাহ সাথে সাথে আমাকে শাস্তি দিচ্ছেননা। বরং অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চাইলে আমাদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নবী রাসূল (সাঃ) এর জীবনী যখন পড়ি তখন মনে হয় কি অসীম মানবতাবাদী ছিলেন তিনি। নির্দ্বিধায় চরম শত্রুদের ক্ষমা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। এখানেই সম্ভবত একজন মহামানব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তফাৎ। ইচ্ছা করলে আমিও পারি ক্ষমা করে দিতে যে ভুল করেছে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা! আমি সেটা করতে পারছিনা। নিজের ভিতর অন্য আরেকটি সত্তার উপস্থিতি অনুভব করছি খুব দৃড়ভাবে। প্রতিনিয়ত দুইটি সত্তার মধ্যে ক্রমাগত বিতর্ক চলছে। কিন্তু আবেগী সত্তার কাছে যুক্তিবাদি সত্তা কোন পাত্তাই পাচ্ছেনা।
অন্যের ভুল, অন্যের সমস্যা আমার কাছে কখনও প্রাধাণ্য পায়নি। কিন্তু এবার পাচ্ছে। বুঝতে পারলাম মানুষ কেন এত কষ্ট পায়। অন্যের প্রতি প্রত্যাশা থাকে বেশি। নিজে কি করলাম সেটা কোন ব্যাপার না, কিন্তু অন্যে কি করল সেটাই মূখ্য ব্যাপার। মানুষের কষ্টের কারণ খুব গভীরভাবে অনুভব করলাম। অথচ এই দিকটা আমি কখনও এত গভীরভাবে ভাবিনি। আমি খুব সহজেই অন্যের দোষ ইগ্নোর করতে পারি। কিন্তু কেন জানি অনেক চেষ্টা করেও আমি ইগ্নোর করতে পারছিনা।
অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত নিজেকে একটা মাঝামাঝি পর্যায়ে আনতে পেরেছি। এখন নিউট্রাল হয়ে গেছে মনের বেদনাঘন পরিবেশ। খুব কাছের কাউকে আউটসাইডার মনে হচ্ছে। আর আউটসাইডারের কোন কিছু আমাকে এফেক্ট করেনা। এখন তার অন্যায় আচরন খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছি। কষ্টের ব্যাপার যে একজন কাছের মানুষ কত সহজে আউটসাইডার হয়ে গেল!! এটা কি স্বাভাবিক? অথচ সেই মানুষটা কখনও বুঝতেও পারবেনা যে আমি তার থেকে দূরে সরে গেলাম। আমার ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েই তাকে নিরাপদ স্থানে রেখে গেলাম। হয়ত সে বুঝতে পারবে, কিংবা পারবেনা।
মানব মনের রসায়ন আসলেই রহস্যময়। দুঃখ, কষ্ট না পেলে সেই রসায়নের ক্রিয়া-বিক্রিয়া বুঝা যায়না। তাই স্যালুট জানাই দুঃখ ও কষ্ট...............
৯/৩/২০১০

মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১০

স্মৃতির পর্দায় বন্দী করে রাখা কিছু মুহূর্ত…

স্মৃতির পর্দায় বন্দী করে রাখা কিছু মুহূর্ত…

স্টার কাবাবে প্রায় ৯/১০ জনের মত বসে খাচ্ছিলাম। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। হঠাৎ বাইরে লাঠি হাতে জীর্ন-শীর্ণ এক বৃদ্ধ ফকিরকে দেখা গেল। দেখা মাত্রই তিঁনি উঠে গেলেন। নিজ হাতে তাকে পিৎজা খাওয়ালেন, কোক দিলেন। সবচেয়ে নতুন ৫০টাকার একটা নোট দিলেন বেছে বেছে। অবাক হয়ে দেখছিলাম এই দৃশ্যটা। কিন্তু আমার অবাক হবার যে আরো বাকি ছিল সেটি তখনও বুঝতে পারিনি।
স্টার কাবাব থেকে বের হলাম সবাই। তিঁনি চিন্তা করছেন সবাই কিভাবে বাসায় যাবে? অতঃপর সবার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে তাদের যাবার ব্যবস্থা করলেন। এরপর বাকি ছিলাম আমি,যুথি আর মামুন। আমাদের জন্য একটি ট্যাক্সি ক্যাব ঠিক করে নিজে সি.এন.জি করে রওনা দিলেন।
গন্তব্য আমাদের মোহাম্মদপুর, তাঁর বাসায়। বিশেষ আতিথেয়তায় তিঁনি আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন তার বাসায়। বয়সে অনেক অনেক সিনিয়র হবেন, তবুও মনে হচ্ছিল আমাদের অন্তরংগ বন্ধুর মত। রাস্তা জুড়ে মনে আরো অনেক জল্পনা-কল্পনা করছিলাম। অবশেষে উঁনার বাসায় পৌছলাম।
দীর্ঘ বছর প্রবাস জীবন অতিবাহিত করছেন। প্রায়ই দেশের টানে, দেশের মানুষের টানে জন্মভুমিতে ফিরে আসেন। এখনও তাই কানাডা ফিরে যাবার ডেইট পার হয়ে গেলেও দেশে রয়েছেন শুধু দেশের মানুষের টানেই। বাসায় থাকে তাঁর মা ও ভাবি। খুব অনাড়ম্বর জীবন-যাপন তাঁর। রাস্তা-ঘাটে দুঃখি-গরীব মানুষের জন্য যে নিঃশর্তে ক্রমাগত দান করতে থাকে তাঁর জীবন-যাপন অনাড়ম্বর হবে এটাই স্বাভাবিক। একসাথে বসলাম, বিভিন্ন কথা শেয়ার করলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম যেকথা শেয়ার করার জন্য মানুষ খুজে পাচ্ছিলাম না মনে হলে আল্লাহ আমাদের নিজে তাঁর সন্ধান দিলেন। খুব প্রাঞ্জল একটা আলোচনা করলাম আমরা সবাই।
জোহরের নামাজ শেষে আবার একসাথে বসলাম ফ্লোরে এক মাদূরে। সোফা ছিল কিন্তু উনার ফেবারিট প্লেস ফ্লোর। আমার মনে হচ্ছিল রাজকীয় কোন স্থানে বসে আছি। আসলে মনের প্রাচুর্যর কাছে পার্থিব সবই যে হার মানায় সেটা খুব গভীরভাবে অনুভব করলাম।
দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তুতি নিলেন তিঁনি। সব কিছু নিজ হাতে করলেন। আতিথেয়তায় যে তিঁনি অনন্য সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
একজন ড্রাগ এডিক্টেড মানুষের জীবনের মোড় কিভাবে ঘুরে যায় ল্যাপটপে বসে তিঁনি আমাদের সেটাই দেখাচ্ছিলেন। একবার ল্যাপটপে আরেকবার তাঁর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। এত সুন্দরভাবে হাস্যরসের মাধ্যমে প্রতিটা কথার জবাব অদ্ভুত লাগছিল। অনেক ঘটনা বললেন। একটি ঘটনা শুনাই...
জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটি একবার এক ছেলের সাথে কথা হচ্ছিল উঁনার। ছেলেটি নাস্তিক ছিল। তাই উনাকে প্রশ্ন করলেন “ আচ্ছা আল্লাহ দেখতে কেমন?” জবাবে তিনি হাসতে হাসতে বললেন “ ভাই তুমি বিয়ে করবানা আবার কনে কিরকম তা জানতে চাও কেন?” জবাবে ছেলেটি কিছুই বুঝলনা। পরে উনি ব্যাখ্যা করলেন “ তুমি তো আল্লাহ কে বিশ্বাস করনা তাইলে আবার জানতে চাও কেন যে আল্লাহ দেখতে কেমন” এই জবাবে ছেলেটি তাৎক্ষনিক জবাব দিল “ ধরেন আমি বিশ্বাস করি এবার বলেন আল্লাহ দেখতে কেমন?” না না ভাই, কোন ধরাধরিতে আমি নাই,যদি বিশ্বাস করেন তাইলে বলতে রাজি আছি।
এবার ছেলেটা বাধ্য হয়ে বলল “ হ্যা আমি বিশ্বাস করি যে আল্লাহ আছে” এই জবাবে খুশি হয়ে তিনি বললেন “ যিনি ক্ষুদ্র পিপড়া সৃষ্টি করেছেন, তিনি বৃহৎ হাতি সৃষ্টি করেছেন, আবার তিনিই তোমারে আর আমারে সৃষ্টি করেছেন, এখন তিনি দেখতে কেমন হবে সেটা বাড়ি বসে তুমি চিন্তা কর, উত্তর পেয়ে যাবা”…কি এন্সার!!!!
এটিএন বাংলায় অনেক পুর্বে থেকে তাঁর প্রোগ্রাম দেখে রীতিমত আমি তাঁর ভক্ত ছিলাম। তাঁর বাসায় তাঁর ল্যাপটপে বসে তাঁর জীবন ইতিহাসের কিছু অংশ দেখছিলাম এটা চিন্তা করেই খুব আজব লাগছিল।
কিভাবে যে ঘড়ির কাটা দ্রুত চলে যাচ্ছিল বুঝতেছিলামনা। আসরের নামাজের পর কিছু কাজের প্ল্যানের পর তাঁর বাসা থেকে বের হলাম। রাস্তায় কিছু দূরে ৩/৪ জন ছেলে আড্ডা দিচ্ছিল,কেউ মোবাইলে কথা বলছিল। অনেক দূর থেকে তাঁর সালাম শুনেই ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে গেল। হাসিমুখে সালামের জবাব দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করল। মুদি দোকানদার , সেলুনের লোক, আশেপাশের বাড়ির দারোয়ান, রিকসাওয়ালা, সি.এন.জিওয়ালা কেউ তার সালামের জবাব হাসিমুখ ছাড়া দেয়নি। রাস্তায় এক ফকিরের সাথে দেখা হয়। তাকে তিঁনি সালাম দিয়ে নতুন টাকার নোট দিলেন। বৃদ্ধ খুশি হয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে দোয়া দিতে চাইল। কিন্তু উনি হাত নয় বৃদ্ধকে বুকে জড়িয়ে তার প্রতিউত্তর দিলেন। আমি দেখছিলাম, ভাবছিলাম...মনে হচ্ছিল রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতের কিছু অংশ প্র্যাকটিক্যাল দেখছি যা এতদিন থিওরিতে পড়েছিলাম।
অবশেষে সি.এন.জি ঠিক করে ভাড়া মিটিয়ে আমাদের যাবার ব্যবস্থা করলেন। আসার সময় প্রতিটা মুহূর্ত তাকে নিয়ে চিন্তা করছিলাম। আমার ভাই কখনও কোথাও গেলে বেশিক্ষন থাকতে পারেনা আমাদের সাথে। সেদিন সে সারাদিন ছিল,একটুও বোরড হয়নি। বাস্তবিকই মনে হল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান তাকে বলেছিলেন “ কত ডিগ্রিওয়ালা হুজুরদের এটিএন বাংলায় প্রোগ্রাম করতে দিলাম। তাদের কথা বার্তা এত টানেনি আপনি কি বলেন সবই তো মন ছুঁয়ে যায়” মানবতাবোধ কে যে ইসলামের মেইন পার্ট মনে করে ইসলামের দাওয়াহ দিচ্ছে তার কথা শুনলে যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নাই।
সন্ধ্যার কিছু পর বাসায় ফিরলাম। মনে হল এতক্ষন কোন মোহের ভিতর ছিলাম। সম্বিত ফিরে পেলাম কিছুক্ষন পর। অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষের সংস্পর্শে থেকেছি, অনেক ইসলামপন্থী মানুষকে কাছ থেকে দেখেছি, অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সাথে মিশেছি, অনেক বন্ধুর সাথে সময় পার করেছি কিন্তু সম্বিত ফিরে আসার পর মনে হল,
এতক্ষন যাঁর সাথে ছিলাম তার জ্ঞানের প্রাচুর্য হাজার হাজার ডিগ্রিকেও হার মানায়...মানবতাবোধ যাঁর প্রকৃত ধর্ম তথাকথিত ইসলাম্পন্থীরা তার সামনে লজ্জা পাবে...সম্পদের প্রাচুর্য সত্ত্বেও অনাড়ম্বর জীবন যাপনে যে অভ্যস্ত এবং রাস্তার ফকিরদের বুকে জড়িয়ে ধরতে যে কুন্ঠাবোধ করেনা তাঁর সামনে অহংকারি উচ্চবিত্তদের প্রেস্টিজ চলে যাবে বৈকি!...আর বন্ধু? সমবয়সী অনেক ইন্টিমেইট বন্ধুর থেকেও তিনি হতে পারে যেকোন বয়সের,যেকারো প্রকৃত বন্ধু......

স্বপ্ন দেখব বলে দুচোখ পেতেছি...



সারকেডিয়ান রিদম আমার অনেক আগেই চেইঞ্জ হয়ে গিয়েছে। তাই রাত জাগা পাখির মত নিয়ত জেগে থাকা নিয়ত অভ্যাসে দাড়িয়েছে। আর রাত জেগে পড়ার সুবাদে এই অভ্যাস আরো বেশি পাকাপোক্ত হয়েছে।
রাতের দৃশ্য দেখছিলাম। কি যেন মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যাচ্ছিলাম ক্রমাগত। জানালার ওপাশে ফ্লাইওভারে সোডিয়াম বাতির আলোতে সবকিছুকে আরো বেশি মায়াবী করে তুলছিল। মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি যাচ্ছে,সাথে সাথে প্যা প্যা ধ্বনি...ফ্লাইওভারের অপর পাশেই পাঁচতলা একটি সাদা বাড়ি। সোডিয়াম বাতির আলোর প্রতিফলনে সাদা বাড়িকে ঠিক যেন আলিফ লায়লার কোন ভুতড়ে বাড়ি বলে মনে হচ্ছিল। জানালার ওপাশের দৃশ্যের একটি ফ্লোচার্ট করে ফেললাম। ফ্লোচার্ট হচ্ছেঃ আমার জানালা, বস্তি, ফ্লাইওভার,সাদা পাঁচতলা বাড়ি। অসীম আকাশে তখন নিকষ নীল অন্ধকারের প্রতিচ্ছায়া।
নতুন করে চিন্তা করতে হয়না, নিউরণে এক্সট্রা প্রেসার দিয়ে কিছু ভাবা লাগেনা...বস্তি থেকে ভেসে আসা অকথ্য ভাষায় গালাগালির আওয়াজ, কখনওবা চাপা কান্নার মৃদু করুণ সুর, কখনো পুরুষ কতৃক নারীকে প্রহারের প্রতিধ্বনি প্রকৃতিকে আনমোনা করে তোলে। আমিও প্রকৃতির সাথে বিষন্ন হয়ে যায়। নিউরনে ভাইব্রেশান হয় কিঞ্চিৎ......
সেদিন ক্যম্পাস থেকে ফেরার সময় টিকিট কেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এক বৃদ্ধ মহিলা কাছে এসে বলল, “ মা সকাল থেকে কিছু খাইনি কিছু টাকা দে আমারে”। পাশে এক ফ্রেন্ড ছিল। দুজন মিলে কিছু টাকা দিলাম। বৃদ্ধ মহিলা টাকা পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলল। জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনার বাড়ি কোথায়?” রাস্তা-ঘাটই আমার বাড়ি, আমার যে কোন যাওয়ার জায়গা নেই! এই জবাবে খুব ধাক্কা খাইলাম। ততক্ষনে বাস চলে এসেছে। কিছুই করার নেই ,কঠিন এক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে নিজের ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বস্তি থেকে এখন চরম আকারে গালিগালাজের শব্দ ভেসে আসছে। অকথ্য শব্দের প্রতধ্বনিতে প্রকৃতির নিরবতা খান খান করে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আমি এই গভীর রাতে দুঃখ বিলাস করছি ,হয়তবা এই গভীর রাতেই ময়না নামের মেয়েটি রাত জেগে সেলাই করছে। খুব স্বপ্ন তার পড়ালেখা করার। কিন্তু দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতা তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। হয়ত এই গভীর মায়াবী রাতে ময়না তার স্বপ্নের সমাধি দিয়ে আপন মনে সেলাই করছে। এভাবে হাজার রাত কেটে যায় হাজার স্বপ্নের সমাধির ফুল দিয়ে...নিউরনে আবারো ভাইব্রেশান হয়...খুব অসহায় লাগে নিজেকে।
রাস্তা দিয়ে সেদিন এক রিক্সার চাকার সাথে প্রাইভেট কারের ধাক্কা লাগে। রিক্সার চাকা সম্পূর্ন বেঁকে যায়। ঘটনার পর পরই দেখলাম গাড়ি থেকে নেমে আসলেন এক ভদ্র লোক। ভাবলাম নিশ্চয় সমবেদনা বা ক্ষতিপুরন দেবার জন্য ভদ্রলোক এগিয়ে আসছেন। পরের ঘটনায় খুব মর্মাহত হলাম। তথাকথিত ভদ্রলোকের দ্বিগুন বয়সী রিক্সাওয়ালাকে প্রচন্ড গালিগালাজ ও সাথে ক্রমাগত চড়-থাপ্পড় মারতে লাগলেন। “ এই বেটা তুই ঠিকমত রিক্সা চালাস না কেন, কত টাইম নষ্ট করছস আমার তুই জানস??” এসব বলেই রিক্সাওয়ালাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। চারপাশের লোকজন সব এই দৃশ্য উপভোগ করছিল। উহ! সেইসময় আমার যে কিরকম ফিলিংস হচ্ছিল ভাষায় বলার মত না। খুব বলতে চাইলাম সেই তথাকথিত ভদ্রলোককে “ জনাব আপনার টাইমের মূল্য আছে, তার কি নেই? তার বাড়িতে ছেলে-মেয়ে না খেয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছে ,সেসবের কি কোনই মূল্য নেই? তার যে ক্ষতি হয়ে গেল এর জন্য তার পরিবারের কতটা সাফার করবে সেসব কি একবারও চিন্তা করেছেন? তার ছেলে-মেয়েরা হয়ত স্বপ্ন দেখচে আজ তার বাবা অনেক টাকা আয় করে তাদের জন্য কিছু কিনে আনবে। এই স্বপ্নের কি কোন দাম নেই?” কিন্তু আমি পারিনি বলতে, আমার এবিলিটি ছিলনা ওই জঘন্য পরিবেশে এসব কথা সেই তথাকথিত ভদ্রলোককে বলার। শুধু একরাশ দুঃখবোধ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
রাত যতই গভীর হচ্ছে মন ততই খারাপ হচ্ছে...যেখানে হাজার স্বপ্নের সমাধি হয় নির্দ্বিধায়, সেই সমাধির উপর দাঁড়িয়ে স্বপ্ন বিলাসীরা আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে গর্বের সাথে...মৌসুমি ভোমিকের মত আমারও গাইতে ইচ্ছা করে

“কেন শুধু শুধু ছুটে চলা ,একে একে কথা বলা, নিজের জন্য বাঁচা নিজেকে নিয়ে,
যদি ভালবাসা নাই থাকে শুধু একা একা লাগে ,কোথায় শান্তি পাব,
বল কোথায় গিয়ে......!!
........................................................
.........................................................
আস্থা হারানো এই মন নিয়ে আমি আজ তোমাদের কাছে এসে দুহাত পেতেছি
আমি দুচোখের গও ভরে শূণ্যতা দেখি শুধু রাত ঘুমে আমি আর স্বপ্ন দেখিনা,
তাই স্বপ্ন দেখব বলে আমি দুচোখ পেতেছি...
তাই তোমাদের কাছে এসে আমি দুহাত পেতেছি...”

রাত গভীর হচ্ছে। গভীর ও জটিল হচ্ছে আমার চিন্তা ভাবনা গুলোও... স্বপ্ন দেখতে আকুল এই দুচোখে আর ঘুম আসছেনা। দুচোখে শুধুই কৃতজ্ঞতার অশ্রু সেই মহান সত্তার নিকট বারবার বলছে পারবতো এই জীবনের শুকরিয়া আদায় করতে? যে জীবনে আশ্রয়হীনতার ঝুঁকি নেই, ঝুঁকি নেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে স্বপ্নকে সমাধি দেবার,...

প্রকৃত সুখের সন্ধান..

মানব মনের প্রকৃতি বড়ই বিচিত্র। কিসে সে কষ্ট পায় কিসে সে সুখী হয় তা সে নিজেই জানেইনা। হয়ত বিচিত্র মনের বৈচিত্রতায় আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। রাতের আকাশের যে মোহনীয় চাঁদ দেখে মন আনন্দে উদ্বেলিত হয় সেই একই চাঁদ দেখে চোখের কোণে জমে দুঃখের অশ্রুবিন্দু। সমুদ্রের বিশালতা কখনও এনে দেয় অসীম শূণ্যতা কখনওবা পূর্ণতা। বহুরূপী মনের এই সত্তা তাই বিশ্লেষণ করা খুব সহজ না।
কতটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলে একজন নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবতে পারে? হঠাৎ এই প্রশ্নে চিন্তার জগতে ছেদ ধরল। আসলেই কি মানুষ কখনও পরিপূর্ণ হতে পারে? খুব চিরন্তন ও আদি প্রশ্ন। অভিজ্ঞতা অর্জনের মাপকাঠি নাকি বয়স! কিন্তু বয়সই কি সবসময় সেই মাপকাঠি হতে পারে?
আট/দশ বছরের কোন ছেলের অভিজ্ঞতার পরিসীমা কতটুকু? সাথে সাথে একটি চিত্র মনের পর্দায় ভেসে আসল । সকালে ঘুম থেকে উঠেই কিভাবে স্কুল ফাঁকি দেওয়া যায়, কিভাবে আজ বিকালে ক্রিকেট খেলায় জেতা যায় কিংবা বাবাকে যে নতুন গাড়ি,ক্যাটবেরি কিনতে বলা হয়েছে তা আনতে ভুলে যাবেনাতো! মাকে কিভাবে কনভিন্স করে কম্পিউটারে “মোস্ট ওয়ান্টেড’’ গেইমস খেলা যায়...এইরকম হাজারো চিন্তায় ছেলেটির মন বিভোর থাকে। একই বয়সের যে ছেলে গাড়িতে হেল্পার এর কাজ করে তার চিন্তা জুড়ে থাকে কিভাবে যাত্রী বেশি উঠানো যায়, কিভাবে বেশি টাকা আয় করে পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়া যায়। সারাদিন কাজের ফাঁকে হয়ত সে চিন্তা করে তার মা চুলার পাশে বসে আছে এই অপেক্ষায় যে তার ছেলে কখন বাজার নিয়ে আসবে! আরো যে ছোট ভাই-বোন আছে তারাও সারাদিন বড় ভাইয়ের অপেক্ষায় থাকে। স্কুল ফাঁকি দেওয়া দূরে থাক পড়াশুনার চিন্তায় সেখানে বিলাসিতা মাত্র। চিন্তার এই অভিজ্ঞতা তার বয়সকেও হার মানিয়েছে। হয়ত অস্বাভাবিক কিন্তু বাস্তব...
এই অভিজ্ঞতা যেহেতু আমাদের নাই তাই এগুলো দেখতে দেখতেই আমরা অভিজ্ঞ। চারপাশে এত্ত অস্বাভাবিকতার ছড়াছড়ি মাঝে মাঝেই স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিকের মধ্যে পার্থক্য করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
সুখের সন্ধানে আজ মানুষ দিশেহারা। সুখের আসল সংজ্ঞা কেঊ দিতে পারেনি।কিন্তু আইন্সটাইন সেই অসাধ্য সাধন করে গেছে। পৃথিবীতে সব কিছুই আপেক্ষিক, কোন কিছুই পরম নয়। আমার কাছে যা সুখ অন্যের কাছে তা অসুখ। কিন্তু তারপরও সুখের সংজ্ঞা মিললেও সুখ খুজে পাচ্ছেনা মানুষ। সমাজের একটা পার্ট বাদ দিয়ে সুখের অন্বেষণ যেন ট্রেডিশানে পরিণত হয়েছে। শরীরের একটা অংশ প্যারালাইসিস হলে হয়ত তার ব্যথা অনুভব করা যায়না কিন্তু সেই অঙ্গের অনুপস্থিতি ঠিকই অনুভুত হয়।
অপূর্ণ শরীর হাজার চেষ্টা করলেও পূর্ণ হতে পারবেনা যতক্ষন না ওই অংশ ঠিক হয়। এসব কথা ভাবতেই পরিচিত একজনের কথা মনে পড়ল। সে বছরে অকেশনালি একবার এতিমখানায়, মসজিদে টাকা দান করে আত্বতৃপ্তি অনুভব করে। মনে করে ইসলামের বড় একজন খাদেম...সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু যদি সে ব্যাপারটা ট্রেডিশনালি না নিত , যদি মনে করত তার উপার্জনের টাকায় গরীবেরও হক আছে তাহলে হয়তবা সে এরকম অকেশনাল ইসলামের সেবা করে আত্বতৃপ্তি পেতনা। পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস/বিজয় দিবস উদযাপন সবই আজ নিছক ট্রেডিশান। একারনেই যারা পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ি পরে পুরো বাঙ্গালিয়ানা সাজে তারাই আবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে ওয়েস্টার্ন কালচার খুব গর্বের সাথে পালন করে। নারী দিবসে নারী অধিকারের দাবি যাদের মুখে সোচ্চার হয় তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকার পাতায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে নিউজ আসে। খুব বিচিত্রভাবেই ট্রেডিশানের এই সিলসিলা প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ বিদ্যমান।
মানব মনের প্রকৃতি অনুসন্ধান করে চলছিলাম। অভিজ্ঞতা অর্জন নাকি এই রিসার্চে ওনেক হেল্পফুল হবে। সব কিছু প্র্যাকটিক্যালি অভিজ্ঞতা অর্জন যেহেতু সম্ভব না তাই দেখে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। প্রকৃতি কখনও মনকে শূন্য থাকতে দেয়না। সুখের জন্য আকুল মন যে অংশ ডিলিট করে সেই অংশটি মন আরেকটি অংশ দিয়ে রিফিল করে। অটোমেটিক প্রোসেস। যে সত্তা মনকে একটিভলি লিড দিবে সে আজ প্যাসিভ। এই জন্যই হয়তবা যা কিছু করছি সব ট্রেডিশান, সব শুণ্য মনকে রিফিল করার চেষ্টা মাত্র। প্রকৃত সুখ পাবার প্রোসেসকে ইগ্নোর করে, সমাজের একটা পার্টকে বঞ্চিত করে সব কিছু ট্রেডিশনালি করে সবাই আমরা কৃত্তিম সুখের নিদ্রায় বিভোর । জানিনা এই নিদ্রার প্রহর কখন শেষ হবে...জানিনা দেখে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের দিন কবে শেষ হবে...জানিনা ট্রেডিশনাল সুখের কালচার কবে সমাপ্তি হবে...

সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০১০

সমালোচনার জারন-বিজারন...

"যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক সমাজ "- এক সেমিনারে বসে ছিলাম। খুব অস্বস্তিকর পরিবেশ। মাত্র কমিউনিটি মেডিসিন তিনটা আইটেম দিয়ে আসার পর এই সেমিনারে বাধ্যতামূলক এটেন্ড করা যেন পুরাই শাস্তি মনে হচ্ছে। তারপরও স্পিচ শুনছি। মাঝে মাঝে বোরড হয়ে গেলে পুরা লেকচার গ্যালারির কয়টা লাইট, ফ্যান, এসি আছে সেটা গুনছি। একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর তার মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা বলছিলেন, ডায়াসের মাঝখানে বসা প্রিন্সিপাল স্যার কে দেখে কিছু ঘটনা মনে পড়ল। মেডিকেল লাইফে তিনটা ঘটনা আমার জন্য খুব উল্লেখযোগ্য...

প্রথম ঘটনাঃ ময়মনসিং মেডিকেল কলেজে প্রথম দিন ফিজিওলোজি লেকচার ক্লাসে দুই মিনিট দেরি হবার জন্য ঢুকতে না দেওয়া। আরে বাবা! প্রথম দিন, দুই মিনিট দেরি হতেই পারে! তারপরও দেরি হবার কারণ ছিল লেকচার হল চিনতে না পারা...

২য় ঘটনাঃ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে এম্ব্রায়োলোজি ক্লাসের ২য় দিন। অদ্ভুত সুন্দরভাবে স্যার লেকচার দিচ্ছে। ইনফ্যাক্ট স্যারের প্রেসেন্টেশান, বোঝানোর ক্যাপাসিটি আমাকে এত মুগ্ধ করেছিল যে এম্ব্রায়োলোজির ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম আমি তখন। ৩য়দিন কলেজে গিয়ে শুনলাম স্যার ঢাকা মেডিকেলে পোস্টিং হয়ে চলে গেছেন। খুব শকড হলাম...

৩য় ঘটনাঃ সরকারী মেডিকেলে প্রিন্সিপাল বারবার চেইঞ্জ হবে এটাই স্বাভাবিক। এই পর্যন্ত আমাদের মেডিকেলে ৩য়বারের মত প্রিন্সিপাল চেইঞ্জ হল। কিন্তু মর্মাহত হলাম এই কারণে যে পূর্বের প্রিন্সিপাল ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। খুব অমায়িক ব্যবহার উনার। সার্জারীর হেড ছিলেন। স্যারের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল কিন্তু কোন ভয় ছিলনা। সেই স্যারের রিপ্লেসমেন্টে বর্তমান তুখোড় রাজনীতিবিদ অল্পবয়স্ক স্যারকে দেখে আবারো শকড...

সেমিনার অবশেষে শেষ হল। খুব বেশি খারাপ লাগেনাই স্পিচ। একটু ব্যত্ক্রমধর্মী বক্তব্য শুনলাম এবার.." বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে বিজয় লাভের পর সামনে এগোতে পারেনি শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীর কারণে। তাই তাদের বিচার না করে একজন সাধারণ চোরের বিচার করা নৈতিকতা বিরোধী...”
বুঝলাম সরকার কেন বর্তমান ছাত্রলীগের দ্বারা তৈরি সন্ত্রাসী কাজের বিচার কেন করছেনা। ভাল লাগল যে সরকারী এটলিস্ট নৈতিকতা বিরোধী কোন কাজ করছেনা।

ক্লাস সেভেন/ এইট পর্যন্ত মারাত্বকভাবে হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালের ভক্ত ছিলাম। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে যখন সুনীল, সমরেশ, শীর্ষেন্দুর বই পড়া শুরু করলাম তখন নেশা কেটে যেতে লাগল। সম্ভবত বয়সের কারণে এই চেইঞ্জ এসেছিল। ্কিছুদিন আগে আনিসুল হকের বই পড়ার সুযোগ আসল ফ্রেন্ডদের মাধ্যমে। ‘ ফিরে এসো সুন্দরীতমা’ , ‘পাই বা নাহি পাই’, ‘মায়া’...৩টা বই পড়ে আমার অবস্থা খুব খারাপ। খাবারের শেষে যখন বিস্বাদ কোন কিছু খেলে পুনরায় টেস্টি কিছু খেয়ে রুচি ফেরত আনতে আমার অবস্থা সেরকম হল। হলে তখন হুমায়ুন আহমেদের ‘ কহেন কবি কালিদাস’ ও জাফর ইকবালের ‘ রবো নিশি’ বইটি ছিল। সেই বই ২টা পড়ে মানসিক অবস্থা সুস্থ করলাম। আর মনে মনে দুই ভাইকে হাজার স্যালুট জানালাম। তারা যাই লিখুক এটলিস্ট তাদের বই পড়ে মানসিক অবস্থা এত খারাপ হয়নি।

'মনপুরা' সিনেমা নিয়ে মাঝখানে খুব তোল্পাড়। এদিকে পেপার, ব্লগ থেকে আমি এত কিছু পড়লাম 'মনপুরা' নিয়ে যে আমার তখন সিনেমা দেখার আগ্রহ পুরাই শেষ। কোন উপন্যাস পড়ার আগে কেউ যদি আমাকে কাহিনী বলে দেয় তাহলে সেই উপন্যাস পড়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকেনা আমার। সিনেমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না। থ্রি ইডিয়টস যখন দেখলাম ঠিক তার এক সপ্তাহ পর দেখি পুরা ব্লগে, পেপারে এটা নিয়ে তোল্পাড় শুরু হয়েছে। এমনকি মেডিসিন ওয়ার্ডে একদিন স্যার আমাদের এই সিনেমাটা দেখার কথা বললেন। কি অবস্থা!! আমার কাজিনকে ধন্যবাদ জানালাম থ্রি ইডিয়টস তার ল্যাপটপে দেখানোর জন্য। এক সপ্তাহ দেরি হলেই সিনেমাটা আর আমার দেখা হতনা।
সর্বশেষ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার... এটা নিয়ে চরম সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল পুরা ইন্টারনেট। এজ ইউজুয়াল সিনেমার কাহিনী ও সমালোচনা পড়তে পড়তে আমি টায়ার্ড। সেদিন এটা নিয়ে ফ্রেন্ড সার্কেলে এক বিতর্ক হয়ে গেল। হুম...সিনেমার এন্ডিং আমার একদম পছন্দ হয়নি। কিন্তু ওভারল সিনেমাটা খারাপ লাগে নাই। বর্তমান সমাজে মেয়েদের এরকম চিত্র যে খুব আনকমন তা কিন্তু না। ফারুকী তার চিন্তা থেকে এটা বানালো। সমালোচনাকারীদের সমালোচনা দেখে আমার মনে হল যে ফারুকীর এই সিনেমাটা আমাদের ভাল সমাজকে একদম নষ্ট করে দিল। নেগেটিভ বাস্তবতা আমরা দেখতে অভ্যস্ত নই। বা দেখলেও সেটা ইগ্নোর করাকেই শ্রেয় মনে করি। সিনেমাতে কোথাও দেখানো হয়নি যে তিশা খুব ভাল আছে। সে কারো কাছে মর্যাদা পায়নি, পায়নি নিরাপত্তার স্থান। এটা দেখেও কেন যুব সমাজ ইন্সপায়ার হবে খারাপ হবার জন্য আমি বুঝলামনা। এখন ফারুকী যদি বর্তমান ইভ টিসিইং নিয়ে কোন সিনেমা বানায় আমি শিউর সমালোচনাকারীরা তাদের সমালোচনার ঝড় তুলতে ভুলবেননা। সিনেমা যদি সমাজে দর্পন হয় তাহলে সেখানে নেগেটিভ বাস্তবতা তুলে আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বারবার আমরা সেই নেগেটিভ বাস্তবতাকে কিভাবে রিমুভ করা যায় সেটা না ভেবে বারবার কেন এই নেগেটিভ চিত্র চোখে তুলে দেখাইল সেটা নিয়ে ঝড় তুলি। তারপরও যারা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের বিরোধী তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই বিনীতভাবে......
আগেই বলে রাখি ফারুকীর ভক্ত আমি নই... যদি তার সিনেমা সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ হয় তাহলে সমাজে ভালোর জন্য আপনারা কয়টা সিনেমা তৈরি করেছেন? যদি ওয়েস্টার্ন কালচারকে ফারুকী এদেশে এস্টাবলিশ করার জন্য তার মেধা,মননের বিকাশ ঘটিয়ে সিনেমা বানায় তাহলে আপনারা নৈতিকতাকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের টাকা, সময়, মেধা ব্যয় করে কয়টা ভাল সিনেমা সমাজকে উপহার দিয়েছেন? যদি মনে করেন সিনেমা বানানো শুধুই সময় ও টাকার অপচয় তাহলে ফারুকীর সিনেমা নিয়ে এত তোল্পাড়ের কি আছে, আমাদের সমাজ যদি ভাল হয় তাহলে এই সিনেমা কাউকে কোন এফেক্ট করবেনা। আর যদিও করে এই শঙ্কা নিয়ে সমালোচনা করে কি লাভ? পারলে ফারুকীর সিনেমার জবাব নতুন কোন ভাল সিনেমা দিয়ে চ্যালেঞ্জ দেন...সমাজের কোন সেক্টর আজ ফাঁকা নেই। সব জায়গায় খারাপের সুদৃঢ় অবস্থান। তাদের বিরুদ্ধে শুধু সমালোচনা কেবল অরন্যে রোদন। সবাই এক্টিভিটি দেখতে চায়, সমালচনা শুনতে চায়না। ফারুকী যদি তার সিনেমা দিয়ে সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয় তাহলে শিউর থাকেন সেই অবক্ষয়কে আপনারা সমালোচনা দিয়ে শেষ রক্ষা করতে পারবেননা। তাই সমালোচনার আসন ছেড়ে ফিল্ডে আসুন, যদি আসলেই সমাজের প্রতি কোন দায়বোধ থাকে তাহলে সমালোচনা বাদ দিয়ে প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করুন সুন্দর রুচিশীল কোন সিনেমা দিয়ে....

রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

এক সত্তায় বহুভুবনঃ কানেক্টিং স্টক


ঢাকা ১২১ কি.মি.......সন্ধ্যা ৬.৩০

নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আসামীর কাঠগড়ায় বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চারপাশে থমথমে পরিবেশ। কেউ কোন কথা বলছেনা। নিরব, নিথর। গাড়ির গ্লাস থেকে হালকা বাতাস আসছে। হালকা হালকা শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু সেটা মনের গরম আবহের কাছে পাত্তা পাচ্ছেনা।
কখনও কোনও কিছু নিয়ে আমার ফিলিংস মাত্রাতিরিক্ত হয়না। আমি নিজে সেখানে লিমিটেশান টেনে দিই। কিন্তু এবার আমি সেটা করতে পারছিনা। জগতের সবচেয়ে ভালবাসার জিনিস থেকে আমি ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছি। তাশফিনকে এবার প্রথম কোলে নিলাম। অপলক অয়নে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি মায়াবী সে চাহনি! মনে হল সারাজীবন যদি এভাবে ওকে কোলে করে রাখতে পারতাম তাহলে আমার আর জীবনে কিছুই লাগবেনা। জানিনা তাশফিনকে নিয়ে মিতু আপুর ফিলিংস কেমন ছিল। সেই অসীম ভালবাসার ফিলিংস অকল্পনীয়। মৃত্যুর কিছুদিন আগে মিতু আপুর পারসোনাল ডায়েরীতে তার দুই ছেলে ফারদীন ও তাশফিন নিয়ে লেখা অপ্রকাশ্য ফিলিংসগুলো আমাকে বার বার ভাইব্রেইট করে। মা! মাতৃ্ত্ব! এক অদ্ভুত সম্পর্ক। এই সম্পর্ক নিয়ে লেখার সাহস আমি পাচ্ছিনা।

কিন্তু আজই ঢাকা যেতে হবে? শিডিউল টাইমের আগে ঢাকা ত্যাগ করলাম একটু বেশি করে ভালবাসার কাছাকাছি সময় কাটাব। সব প্ল্যান ভ্যানিশ!!

ঢাকা ১১০ কি.মি....

মনের গরম আবহ ধীরে ধীরে শিতল হয়ে যাচ্ছে। ধীর মোশনে গাড়ি চলছে। জানালা দিয়ে ঝিরি ঝিরি বাতাস আসছে। বাইরে নিকষ গাঢ় অন্ধকারের দৃশ্য দেখতে ভাল লাগছে। এই পরিবেশে খুব স্বপ্ন বিলাসী হতে ইচ্ছা করছে। স্মৃতির এলবামে ভেসে আসছে রূপন্তির কথা। এক স্বপ্নবিলাসী মেয়ে...ওর সাথে পরিচয় ক্লাস নাইনের শেষ দিকে। আমি সায়েন্সে আর রূপন্তি কমার্সে। সবাই নতুনদের স্বাগতম জানাতে পারেনা। আমি পেরেছিলাম। খুব কাছের করে নিয়েছিলাম ওকে। ভাল লাগত ওর অসম্ভব বাস্তববাদি কথা। খুব অবাক হয়ে যেতাম কিভাবে একটা মানুষের মধ্যে স্বপ্ন বিলাসী ও বাস্তববাদীতার সমন্বয় ঘটে। কিন্তু ওর সাথে আমার সম্পর্ক শুরু হয়েছিল হঠাৎ এবং শেষ হয়েছিল হঠাৎ করে। নাহ! শেষ বললে ভুল হবে। শেষ যোগাযোগ হয়েছিল হঠাৎ করে। এসএসসি পরীক্ষার কয়েক মাস আগে মেইল চেক করতে গিয়ে দেখি হলুদ গোলাপের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়ে ছোট একটা মেইল। হঠাৎ মেইল দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। পরে ফোন ,মেইলের রিপ্লাই দিয়েও তার কোন রিপ্লাই পাইনি। পুরা গায়েব!!! বন্ধু তোমার জন্য শুভকামনা আমারও...

মাওয়া ফেরী ঘাট...

জোরে একটা ব্রেক! সামনে ঝুকে পড়লাম। রূপন্তির কল্পনার জগত থেকেও ব্রেক টানলাম। গাড়ির ফ্রন্ট গ্লাস দিয়ে দেখা যাচ্ছে এক অসীম রাস্তা। চারপাশে গাছপালা। গাড়ির হেডলাইটের আলোতে সব কিছু স্বপ্নীল মনে হচ্ছে। সেই স্বপ্নের জগতে ভেসে উঠল এবার তিশার ছবি। একজন অলরাউন্ডার। ছোটবেলায় যদি কাউকে ঈর্ষা করতাম তাহলে সেই ছিল প্রথম ও শেষ। যদিও সেই ঈর্ষা মনের গহীন কোন থেকে কখনও বাস্তবে আসেনি। সেই তিশার সাথে দেখা হল দশ বছর পর। অবিকল আগের মত চেহারা। শুধু মাত্র লম্বা হয়েছে। সেই আগের মত হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, আকর্ষণীয় চাহনি। চট্টগ্রাম ভ্রমনের সুপ্ত কারণ পূর্ন হল এবার। প্রথম কয়েক মিনিট আমাকে দেখে সে নির্বাক ছিল। পরে জোরে এক চিৎকার দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। কোনদিন কল্পনাও করেনি আমি এভাবে ওর সামনে হাজির হব। খুব ভাল লাগল আমি ওর অকল্পনীয় কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করেছি। আমি ওর রুমের চারপাশ দেখতেছি। পুরা রুম জুড়ে শুধু তিশা। ওর হাতে আকা ছবি, ওয়ালমেট, হাজারো পুরস্কারের ক্রেস্ট পুরা রুম জুড়ে আছে। শুধু মাঝখান থেকে ঝরে গেছে তার সেই প্রতিভা যা ওকে করত পুরা স্কুল ফার্স্ট। এফেয়ার জনিত সমস্যার কারণে জীবনের ক্যারিইয়ারে অনেক পিছনে পড়ে গেছে। কিছু কিছু শুনলাম ওর সমস্যা । শুধুই স্বান্তনা দেওয়া আর চোখ দিয়ে দু’ফোটা অশ্রু সংবরন ছাড়া কিছুই করার ছিলনা সেদিন...


ঢাকা ৩৩ কি.মি.....

কোন এক মন্ত্রীর জন্য দুই ঘণ্টা লেইট হল। চাচার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। ‘এই দেশের যে কি হবে? সবকিছুতেই আনডিসিপ্লিন্ড।‘ দেশের ব্যপারে রাগ প্রকাশ করতেই প্রসংগ চলে গেল রাজনীতির দিকে। দেশের এই বর্তমান অরাজক পরিস্থিতিতে কিইবা বলার আছে। শুধু এইটুকুই মনে করছিলাম যে ঢাকার বাইরে দুইদিন কৃত্তিম শান্তিতে কাটাব। কোন খবর শুনবনা, টিভি দেখবনা,ইন্টারনেটে যাবনা। কিন্তু সেটা আর হয়নি। বড় মামার সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কথা হল রাজনীতি নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন। স্বাধীনতার গল্প তাই বহুবার শুনেছি উনার কাছে। এবার শুরু হল মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার দের অপকর্মের কাহিনী। শিবির এর উত্থানের ইতিহাস। শিবির নিধনের এই কাজকে মামা প্রশংসা করলেন। বাহ! এসব শুনে আমি এটাই বললাম যে মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোন সমাধান হলে সরকারের এই কাজকে আমিও সাধুবাদ জানাই। রাবি তে যে ফারুক নিহত হল সে যেমন আমার ভাই তেমনি আবু বকর, মহিউদ্দিনও আমার ভাই। ভাইয়ে ভাইয়ে এই সংঘাত আমি মেনে নিতে পারছিনা। ব্যক্তি বিশেষের অন্যায়কে পুরা সংগঠনের উপর চাপিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ের সংঘাতকে আমি আরো উস্কে দিতে পারিনা। রাজনীতি কেন সবসময় প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়?? আর গণতান্ত্রিক সরকারের এই কাজ কে আমি কখনই সাপোর্ট দিতে পারছিনা। নিরপেক্ষ বিচার হলে সেখানে আমার আপন কেউ দোষী হলে আমি মেনে নিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু কেন এই পক্ষপাতিত্ব?? লীগ কি একদম সাধু? তাদের কি কোন দোষ নাই? এই প্রশ্নের জবাব মামা দ্রুত দিলেন। বললেন লীগও চরম খারাপ, তবে শিবির থেকে ভাল। মানে খারাপের ভাল। তাহলে কিভাবে আপনি এই খারাপে খারাপের সংঘাতকে উস্কে দেবার জন্য সরকারকে প্রশংসা দিচ্ছেন। লীগ হোক আর শিবির হোক আমার ভাই তো তারা। তাদের মধ্যে হানাহানিকে আপনি কেন ভাল চোখে দেখছেন। তুই তো ইতিহাস জানিসনা। তাই এসব বলছিস। মামার এই কথার প্রেক্ষিতে বললাম মামা বর্তমান যা দেখছি ইতিহাস কি আদৌ দেখার প্রয়োজন আছে আমার?? ইতিহাসের পুনারবৃত্তি হচ্ছে বারবার...

মাঝে মাঝে আমি চিন্তা করি নেক্সট জেনারেশান কে আমরা অনেক জিনিস উপহার দিতে পারব। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাদের আমরা সুন্দর সুন্দর ইতিহাসের কাহিনী শোনাতে পারব। ইনফ্যাক্ট যুগের পরিবর্তনে ততদিনে নিশ্চয় জ্বীন-ভূতের কাহিনী তাদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা হারাবে, তারা হয়ত দাদী-নানীর কোলে শুনে এসব শুনতে চাইবেনা। তখন তাদের কি বলে গল্প শোনাব...হয়ত গল্প হবে এরকম...

.....এক সময় ছিল ডিজিটাল যুগ। সেসময় যদি কেউ খুন হত তাহলে খুব রহস্যজনক ভাবে সেই খুনের কোন কিনারা পাওয়া যেতনা। হোটেলে রহস্যজনকভাবে কোন এক হতভাগ্য নারীর গলা কাটা লাশ পাওয়া যেত। রহস্যজনকভাবে কিছু খুন হত বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আর কিছু খুন হত মহা গুরুত্বপূর্ণ। সেই খুনের দাবানল রহস্যজঙ্কভাবে পুরা দেশে ছড়িয়ে যেত। যদি কেউ কোন খুনের কিনারা করতে যেত তাহলে সে আরো রহস্যের অক্টোপাসে জড়িয়ে যেত। সেই ডিজিটাল যুগে ছিল শুধুই রহস্য আর রহস্য...জানিনা এই গল্প কতটুকু গ্রহণযোগ্য পাবে তার কাছে।চিন্তায় আছি...

ওয়েলকাম টু ঢাকা......রাত ২.৩০

কিছুটা নিদ্রা ভঙ্গের পর জেগে দেখি ঢাকায় চলে এসেছি। রাতের ঢাকাকে দেখতে অসাধারণ লাগছিল। কিন্তু আবার যান্ত্রিক জীবনে ফিরে যাচ্ছি এটা চিন্তা করে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেই ক্যাম্পাস, সেই পড়াশুনা, সেই ব্যস্ততম দিন। আমার এক ফ্রেন্ডের সবসময় ইচ্ছা সে লাইফে শুধু একজন চিকিৎসকই হবেনা, সে মানবতার জন্য কাজ করবে। আরো অনেক স্বপ্ন তার। কিন্তু এখন তার চিন্তা শুধুই নিজেকে নিয়ে। কারণ সে নিজের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। একজনকে ভালবাসে। সেই ভালবাসাই তার জী্বনের মটো চেইঞ্জ করে দিয়েছে। ভালবাসা কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সে এখন তার ফ্যামিলিকেও ত্যাগ করতে রাজি। আর মানবতা??? সে তো অপরিপক্ক আবেগের কথা। সবাই পারসোনাল সমস্যা নিয়ে এত বিজি, মানবতাকে নিয়ে চিন্তা করার টাইম কই? ক্যাম্পাসে আড্ডা, গল্প খুব বেশি ভাল লাগেনা। একই টপিকস নিয়ে ডিসকাসন ভাল লাগেনা। তারপরও সেই বিরক্তিকর ভুবনটাও মেইন্টেইন করতে হয় অনেক বেশি টাইম।
পরিবারের সান্নিধ্য খুব বেশি ভাল লাগে। এখনও দাদী-নানীর কোলে শুয়ে গল্প শুনতে ইচ্ছা করে। এই ভুবনে ইচ্ছা করলেও বেশি টাইম দেওয়া যায়না। ভার্চুয়াল জগতে পুরা বিশ্বের সাথে কানেকশান আমাকে গতিশীল রাখে। নিজের সত্তা আর বাইরের সত্তার সাথে মিলানোর চেষ্টা এই ভার্চুয়াল জগতে। এই ভুবনটাও আমার অনেক কাছের। কিন্তু এখানেও বেশিক্ষন থাকতে পারিনা। আর সম্পূর্ণ নিজের একটা ভুবন আছে যেখানে আমি সবকিছুতেই রাজা। স্বাধীনভাবে চিন্তা করি, কারো কোন হস্তক্ষেপ নাই। নিজের মত কল্পনা জগতে ঘুড়ি ওড়াতে পারি। ইচ্ছা করলেই পাখির মত আকাশে উড়ে যেতে পারি, কিংবা সবুজ মাঠ ধরে গ্রাম্য কিশোরীর মত দূর-বহুদূর হেটে যেতে পারি। কিংবা শরতের বিকালে সাদা মেঘের মত ভাসতে পারি, কিংবা সাগরের নীল ঢেউয়ে নিজেকে একাত্ব করতে পারি ডুবে যাওয়া রক্তিম সূর্যের সাথে...... কিন্তু ,কিন্তু এখানেও বেশি বিচরন করা যায়না। ব্যস্ততম জীবন কি দিল আমাকে! এক সত্তায় বহু ভুবনের জুগপৎ বসবাস...নিজেকে একটি কানেক্টিং স্টকের মত ভাবতে সাহায্য করছে। জগতের নিয়ম মনে হয় প্রতিনিয়ত নিজেকে শুধুই বহু ভুবনের সাথে কানেক্ট করে যাওয়া...


* ছবিতে ফারদিন ও তাশফিন।