বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১০

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-১

মহানুভব হওয়া কিংবা মহত্ত দেখানো আসলে এত সোজা না। কারণ নিজের অনেক কিছু স্যক্রিফাইস করে লোক দেখানো মহানুভব হওয়া যায়না। খুব আশ্চর্য বস্তু এই “বিবেক”। যা কিছুই করিনা কেন বিবেক সেই কাজের পোস্টমর্টেম করবেই। বাইরে থেকে বলি নিজে যা করেছি ঠিক করেছি কিন্তু বিবেক ঠিকই রিপোর্ট দিয়ে দেয় যে সবসময় যা করি তা ঠিক না। প্রতিনিয়ত আমরা এই বিবেকের রিপোর্টের সম্মুখিন হচ্ছি। ধর্ম দিয়ে আসলে মনে হয় বিবেকের সচেতনতাকে জাগ্রত করা হয় যেন বিবেকের দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী কাজ করতে পারি। তা না হলে কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ তা মোটামুটি সবাই জানা সত্ত্বেও সমাজে এর কোন কন্সিকুয়েন্স আমরা দেখিনা কেন? বিবেকের রিপোর্টকে আমরা ক্রমাগত ইগনোর করে চলেছি বোধহয়। কয়েকদিন ধরে কিছু ব্যাপার খুব তীব্রভাবে ফিল করছি। এবসলিউট বলে আসলে কিছু আছে কিনা! মনে হয় নেই। আমি একটা ঘটনাকে যেভাবে ব্যাখ্যা করব অন্যজন সেটা সেভাবে করবেনা। এটাই স্বাভাবিক। ধর্মীয় কিছু ব্যাপারেও মনে হয় সেরকম কিছু আছে। এবসলিউট বলতে শুধু এই যে আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মহানবী (সাঃ) তার রাসূল। আর জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মনোনিত করা হয়েছে। এখন ইসলামের অনেক কিছুই বিভিন্নভাবে ইন্টারপ্রিটেট করা যায়। সবগুলোই সত্য হতে পারে, নাও পারে। কিন্তু কে জাস্টিফাই করবে কোনটা সত্য? এখানেই মনে হয় বিবেকের মেইন কাজ নিহিত রয়েছে। বিবেক ঘটনাকে নিবে যার যার ক্যারেক্টারিস্টিক,পারসোনালিটি আর রিয়েলাইজেসান অনুপাতে। হযরত আবু বকর (রাঃ), কিংবা উমার (রাঃ) কিংবা ওমর (রাঃ) তিনজনের পারসোনালিটি তিনরকম। এবসলিউট ছিল এক জায়গায় যে তারা সবাই মুসলিম, আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা আর মহানবী (সাঃ) কে তারা সবাই জানপ্রাণ দিয়ে ভালবাসত। ঠিক এই জায়গায় এসে যখন চিন্তা করছি তখনই আমার খুব বড় একটা ভুল সংশোধন হল। অনেক ক্ষেত্রেই আমি মনে করি ব্যাপারটা এবসলিউট, সবার একইভাবে ঘটনা ব্যাখ্যা করা উচিত। ইসলামকে মনে হয় আমি এভাবেই অনেক সময় সংকীর্ণ করে ফেলেছিলাম আমার চিন্তা চেতনা দিয়ে। ইসলাম আসলে অনেক অনেক বড় একটা ক্ষেত্র যেটা হয়ত আমার চিন্তার সীমানারও বাইরে। পৃথিবীতে যত মুসলিম রয়েছে সবার চিন্তা ভাবনার গন্ডি সেইম হবেনা। কিন্তু শুধুমাত্র একজায়গায় আমরা সবাই সেইম যে আমরা মুসলিম।এটা পুরাই এবসলিউট। এই সিম্পল ব্যাপারটা আমি বুঝলাম অনেক পরে। তাও সেদিন এক আপু একটা ঘটনা বলতে গিয়ে তার মনোভাবের কথা যখন বলছিলেন তখনই আমি ব্যাপারটা ধরতে পারলাম। সাথে সাথে বাসায় এসে আম্মাকে বললাম যে ইসলামের প্রতি ডেডিকেশান কিংবা ইসলামকে প্র্যাক্টিক্যাল লাইফে ধারন করা একেকজনের কাছে একেকরকম। এটা সম্পূর্ণ রিয়েলাইজেশানের উপর ডিপেন্ড করছে। আমি হয়ত মনে করি আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এভাবে হতে পারে, অন্যজনের কাছে তার প্রচেষ্টা অন্যরকম হবে। কিন্তু দুজনই আমরা ইসলামের জন্যই ডেডিকেশানের দিক থেকে চিন্তা করেছি। তাই কিভাবে বলি তার রিয়েলাইজেশান ভুল আর আমারটা সঠিক! সেই নিখুত বিচারের সাধ্য কি আমাদের আছে?
আজকাল প্রায়ই আমি ডিপ্রেশানের মধ্যে থাকি। কোন কারন ছাড়া, পুরাই ইডিওপ্যাথিক। ২৬শে অক্টোবর থেকে সেকেন্ড এসেসমেন্ট শুরু হয়ে গেল। ২৩থেকেই তাই আমি হলে উঠে গেলাম। খুব কন্সেন্ট্রেসানের সাথে স্টাডি করছিলাম। ২৪ তারিখ খুব টেন্সানের মধ্যে ছিলাম মামুনের রেসাল্ট নিয়ে। মেডিক্যাল এডমিশান আজকাল দূর আকাশের চাদ হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছা করলেও সবাই চিকিৎসক হতে পারেনা যদিনা সে ধনী পরিবারের কেউ হয়। সো সেই দিক থেকেই চিন্তা হচ্ছিল বেশি। কারণ বেসরকারী মেডিক্যালে পড়ানোর মত আপাতত চিন্তা-ভাবনা আব্বা-আম্মার নাই। একটু হিসাব দেই সরকারী মেডিকেল আর বেসরকারী মেডিকেলের মধ্যে। সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে লাগে ৫-৬ হাজার টাকা আর বেসরকারি মেডিকেলে লাগে ১০-১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ অনুপাতটা অনেকটা আকাশ-পাতাল হয়ে যায়। যাইহোক ২৪ তারিখ রেসাল্ট দিলনা। সারারাত ঘুম ভাল হয়নি। খুব ভালভাবেই একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম মামুনের ক্ষেত্রে সবকিছু লেইট করে হয়। ও যেবার এইটে স্কলারশিপ পেল রেসাল্টের দুইদিন পর ও জানতে পারল যে ও স্কলারশীপ পেয়েছে। এরপর এসএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেল সেই রেসাল্টও সে পরে জেনেছে। এরপর এইচএসসিতে গোল্ডেন এ+ পাওয়া সত্ত্বেও সে মেডিকেলে চান্স পেলনা, তারউপর আবার নটরডেমের স্টুডেন্ট। তাই ওর রেসাল্ট আমার থেকে ভাল হওয়া সত্ত্বেও আব্বা-আম্মা ওকে নিয়েই বেশি টেনসান করে। একবছর গ্যাপ দিয়ে সে আবারো মেডিকেলের জন্য চেষ্টা করে গেল। অথচ আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব স্মুথলি হয়ে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ। যাইহোক ২৫তারিখে বিকেলে ওর রেসাল্ট পেলাম, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে চান্স পেল। মনে হল আমি নিজেই চান্স পেয়েছি, সেরকম আনন্দ ফিল করলাম। এরপর পড়তে বসেছি হঠাৎ মুড অফ হয়ে গেল। মুড অফ এবং অন সেখান থেকেই শুরু...

চলবে... 

কোন মন্তব্য নেই: