বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১০

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-২

প্রথম প্যাথোলজি পরীক্ষা ভাল হল। তিন ঘণ্টা লিখতে লিখতে কিভাবে কেটে গেল টেরই পেলামনা। এরপর কমিউনিটি মেডিসিন পরীক্ষা। প্রিপারেশান ভালই ছিল, কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে ঠিক ২ঘণ্টা পর খেয়াল করলাম যে আমি আর লিখতে পারছিনা। কারণ লিখার জন্য যে মুড দরকার তা শেষ। খুব কষ্টের সাথে বাকি একঘণ্টা কাটালাম, এন্সার জানা সত্ত্বেও খুব শর্ট-কাট এন্সার দিয়ে দ্রুত লেখা শেষ করে ফেললাম। এরপর মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষা। সাবজেক্টটা আমার কাছে দারুন লাগে। কোয়েশ্চেন ও খুব ভাল হয়েছে। কিন্তু সেদিনও সেইম কেইস। ২ঘণ্টা পর আমি চুপচাপ বসে ছিলাম কিছুক্ষন। স্যার এসে আমাকে চুপচাপ বসে থাকার কারণ জানতে চাইলেন। আমি বললাম যে মাথা ব্যাথা করছে...স্যার প্যারাসিটামল দিতে চাইলেন আমাকে, আমি বললাম যে স্যার আমি সকালে প্যারাসিটামল খেয়ে এসেছি। যাইহোক স্যারের জন্য শান্তিমত চুপচাপ বসে থাকতেও পারছিনা। কিছুক্ষন পর স্যার আবার এসে বললেন যে আমার পানি লাগবে কিনা, পানি খেলে হয়ত কিছুটা ভাল ফিল করতে পারি। আমি বললাম যে স্যার আমার কাছে পানি আছে। অবশেষে পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম, খারাপ হয়নি একেবারে। এরপর আরো দুইটা পরীক্ষা মুড অফ/অনের মধ্যে দিয়ে শেষ করলাম। যেহেতু রিটেন তাই কোন প্রভাব পড়েনি...যদিও ফরেনসিক মেডিসিন পরীক্ষা দেবার সময় একবার মনে হল কোয়েশ্চার পেপার ছিড়ে এক্সাম হল থেকে বের হয়ে যায়। প্রেগনেন্সির বায়োলজিক্যাল টেস্ট ব্যাখ্যা করতে বলেছে। এটা কি কোন প্রশ্ন হল? মেজাজ হঠাৎ করেই খুব খারাপ হয়ে গেল। ঠিক তখনি ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টাল হেড স্যার মাইকে বলছিলেন যে প্রশ্ন দেখে ভয় পাবার কিছু নাই, একটু আনিউজুয়াল প্রশ্ন এসেছে, তাই প্রতিটা প্রশ্নে টাচ করলেই পাশ হয়ে যাবে।
বাসায় এসে ভাবলাম মনটা ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু না হয়নি। বরাবরের মত মামুনের একটা লেইট গুড নিউজ শুনলাম আর সেটা হল ও এইচএসসি তে ঢাকা বোর্ডে ৪৪তম হয়েছে, ট্যালন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে বাট ও কিছুই জানেনা। অথচ এটা একবছর লেইট নিউজ। মেডিকেলে ভর্তির জন্য নটরডেম থেকে সব কাগজ-পত্র তুলতে গিয়ে ও এটা জানল। যাইহোক এই ধরনের ব্যাপার ওর জন্য এখন খুব ইউজুয়াল একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।
 আমাকে প্রায় সময়ই  অনেকে জিজ্ঞাসা করে কেন দুইভাই-বোনই চিকিৎসক হতে চাই? একজন না হয় ইঙ্গিনিয়ার হলাম!  সেদিন একজনকে কথাইয় কথায় বলছিলাম যে আমার এক জুনিয়র ভাই আছে, আমার মেডিকেলেই পড়ে। তার বাবা-মা দুজনেই চিকিৎসক, তার ছোট ভাইকে এবার বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি করাবে, তার যে ছোট বোন আছে তাকেও মেডিকেলে পড়াবে। মেডিকেল ব্যাপারটাতে একটা নেশা আছে। সবাই এই নেশা ধরতে পারবেনা। আর এটা ঠিক বলেও বুঝানো যাবেনা। আমার খুব ইচ্ছা আমার যে ছোট ছোট কাজিন আছে তারাও সবাই মেডিকেলেই পড়ুক। আসলে পেশার সাথে নিজেকে মানবতার সেবাই ডিরেক্টলি যেভাবে এই পেশাতে আত্বনিয়োগ করা যাবে অন্য কোন পেশাতে হয়ত আমি সেভাবে চিন্তা করতে পারছিনা। ওই যে রিয়েলাইজেশানের ব্যাপার! একেজনের রিয়েলাইজেশান একেকরকম। আমি জানি মেডিকেল বাদে অন্য বহু পেশায় নিজেকে মানবতার তরে বিলিয়ে দেবার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু আমার রিয়েলাইজেশান আপাতত আমার জন্য চিকিৎসা পেশাকেই বেস্ট মনে করছে। এটা কিন্তু শুধু যে আমার ক্ষেত্রেই এরকম রিয়েলাইজেশান এসেছে তা নয় আমার ভাইয়ের জন্যও, কাজিনের জন্যও। তাই গতবার যখন যুথী মেডিকেলে চান্স পেল তখনও খুব আনন্দ লেগেছিল যেমন এবার মামুন চান্স পাওয়াতে আনন্দ পেলাম। কিন্তু এত আনন্দের মধ্যেও ডিপ্রেশানের কারণ খুজে পেলাম না। হরমোনাল চেইঞ্জ ডিপ্রেসানের সাথে রিলেটেড। ব্রেইনের অনেক নিউরোট্রান্সমিটার, কেমিক্যাল বস্তুও ডিপ্রেসানের জন্য দায়ী। সেরোটনিন, ডোপামিন লেভেল অনেক কমে গেছে মনে হয়। শেষের দিন ফার্মাকোলজি পরীক্ষা ছিল। এন্টি-ডিপ্রেস্যান্ট,এন্টি-সাইকোটিক, এন্টি-এপিলেপ্টিক,এন্টি-পারকিনসনিজম সহ আরো কিছু টপিকসের ড্রাগস যেভাবে পড়েছিলাম সেই ড্রাগসের নামগুলো এখনও মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে...আমার জন্য সত্যি ডিপ্রেসানের ড্রাগস লাগবে কিনা বুঝতেছিনা। তবে আর যাইহোক এই সমস্যার জন্য আমি কখনই টিচারের কাছে যাবনা...কারণ স্যার আমাকে কি বলবেন তা আমি খুব ভাল ভাবেই জানি, কিছুদিন আগেই মেন্টাল ডিসঅর্ডারের ওয়ার্ড করে এসেছি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে। সো স্যারের কাছে যাবার নেসেসিটি ফিল করছিনা আপাতত...
খুব এলোমেলো, অগোছালো লেখা লিখলাম। সবকিছুর মূলে ছিল নিজের ডিপ্রেশানের একটা এনালাইসিস করা...কিন্তু রিপোর্ট কোনভাবেই আসছেনা.........

চলবে...

কোন মন্তব্য নেই: