বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১০

একজন জেড, অতঃপর...

জেড নামক এক ব্যক্তি, ইসলামের ব্যাপারে যার সামান্যতম জ্ঞান নেই। তবে তিনি শুনেছেন ইসলাম নাকি সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। না ঠিক ধর্ম নয় পরিপূর্ণ জীবন বিধান! ইসলামের ব্যাপারে তার জানার প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি জানতে পারেননি। কিন্তু তিনি ধরে নিয়েছেন ইসলাম হচ্ছে থিওরিটিক্যালি বেস্ট ধর্ম কিন্তু প্র্যাক্টিক্যালি নয়। আচ্ছা তিনি কেন জানতে পারেননি। তাহলে জেডের সামনে ঘটের যাওয়া কিছু ঘটনা দেখে আসি



১.

জেড পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছে হঠাৎ চোখে আটকে গেল একটি নিউজ। পরকিয়ার অপরাধে গ্রাম্য এক মেয়েকে দোররা মারা হয়েছে। অথচ পুরুষ ছেলেটি বেকসুর খালাস! এই নিউজের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি নিউজ পড়ে জেড রীতিমত শিউরে উঠল। হিল্লা বিয়ে নামক এক অমানবিক প্রসেসের জন্য এক মেয়েকে আত্বহত্যা করতে হল। গ্রাম্য হুজুরদের এসব ইসলামি ফতোয়া পড়ে জেড ক্রমানয়ে অভিভূত হতে লাগল। তবে ইসলামের ব্যাপারে তার আগ্রহ বাড়তেই থাকল...

২.

একদিন জেড অদম্য কিউরিসিটি নিয়ে শুক্রবার জুমার নামাজে গেল। সে দেখতে চায় মসজিদে মুসল্লিরা আসলে কি করে। জেড যেহেতু আরবি জানেনা তাই সে খুতবা বুঝতে পারলনা। খুতবা শেষে সে যখন তার পাশে বসে থাকা মুসল্লিকে খুতবাতে যা বলা হল তার মানে জানতে চাইল তখন সেই মুসল্লি জানাল যে সেও আরবি জানেনা। শুধু সেই মুসল্লি নয় মসজিদের অধিকাংশই খুতবার মানে বুঝতে পারেনি। অথচ কেউ খুতবার মানে জানতে চাইলনা, আজব! খুতবা শুনলে নাকি অনেক নেকী পাওয়া যায় এই ভরসাতেই সবাই শান্ত ছিল। অবশেষে জুমার নামাজ শেষে জেড ভাবল ইসলাম নাকি পরিপূর্ণ জীবন বিধান অথচ জীবনের সাথে রিলেইটেড কোন নির্দেশনাই মসজিদে পেলামনা। তাহলে এটা কিভাবে জীবন বিধান হয়?? সত্যি সেলুকাস!

৩.

একদিন জেড রাস্তায় পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এক মুসলিমে দেখতে পেলেন। সুন্দর দাড়িও আছে তার। জেড তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলেন। আসলে জেডের জানার খুব ইচ্ছা একজন মুসলমান কেমন হয়! অতঃপর সেই মুসলিমের সাথে অনেক কথা-বার্তা বললেন। কিন্তু যখনই সেই মুসলিম জানতে পারলেন যে জেড মুসলিম না বরং বিধর্মি তখনি সে পিছুটান দিল। জেডের সাথে আর কথা বলতে চাইলনা, এড়িয়ে চললেন, আর বন্ধুত্বতো অনেক দূরের ব্যাপার। জেড কিছুটা মর্মাহত এতে। ইসলামে ব্রাদারহুড বলে কিছু নাই মনে হয়। তা না হলে একজন মুসলিম কিভাবে এত সংকীর্ণমনা হয়?

৪.

জেড টিভি দেখছিল। ইসলামি সংস্কৃতি জানার জন্য সে চ্যানেলের পর চ্যানেলের স্ক্যান করে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও সে সেভাবে পেলনা। আচ্ছা ইসলামের নিজস্ব সংস্কৃতি বলে কি আসলেই কিছু আছে? যদি থাকে তাহলে কেন ইসলামপন্থীরা তাদের আইডিওলোজিকে আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেনা? এরকম ভাবতে ভাবতেই জেড নিউজ শুনছিল হঠাৎ শুনতে পেল জিহাদের নামে কয়েক যুবকের জঙ্গি হবার নিউজ এবং বিদ্ধংসী কর্মকান্ড। সেই যুবকগুলোর হাতে কিছু লিফলেট পাওয়া গেছে যেখানে লেখা ছিল আল্লাহর আইন কায়েম করতেই তারা এরকম জিহাদি কাজে অংশগ্রহন করেছে। জেড দেখে চিন্তা করছে ইসলাম কি স্বৈরাচারী ধর্ম! একদম জোর করে হলেও ইসলাম কায়েম করতে হবে?...এটা কিভাবে জীবনের ধর্ম হতে পারে তাহলে? জেডের বিবেকে বার বার এই প্রশ্ন উত্থিত হল...

৫.

রাস্তার পাশ দিয়ে হাটার সময় জেড মসজিদের গায়ে একটা লেখা দেখেছিল যেটা তার মনে খুব দাগ কেটেছিল। “পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ”- আল-হাদীস। ইসলাম তার মনে সেদিন পজিটিভ ভিউ এনেছিল। কিন্তু সে আরেকদিন যখন মসজিদের পাশ দিয়ে হাটছিল তখন মসজিদের পাশেই প্রচুর ময়লা আবর্জনা দেখে সেই মসজিদের ঈমাম কে এব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু সেই ঈমাম জবাবে বলেছিল যে ঝাড়ুদার আসেনি বলে জায়গা অপরিস্কার রয়ে গেছে। জেড সাথে সাথেই জানতে চাইল যে আপনাদের হাদীসে যেখানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের পার্ট বলা হচ্ছে সেখানে আপনারা কেন নোংরা জায়গা ঝাড়ুদারের অপেক্ষায় পরিস্কার করলেননা। আকস্মিক এই যৌক্তিক প্রশ্নে ঈমাম খুবই মনক্ষুন্ন হলেন। তিনি জেডকে বললেন যে “ঈমানের পার্ট আপনি কিভাবে বুঝবেন, জানেন আমি কুরয়ানের হাফেজ, অমুক-তমুক ডিগ্রি আছে, আপনি আমাকে ঈমানের পার্ট শেখান!” জেড এধরনের ব্যবহার আশা করেনি। সে শুধুমাত্র হাদীসের এপ্লিক্যাশানটা কেন হচ্ছেনা সেটা জানতে চাইল। অথচ এই ঈমাম যার সুন্দর দাড়ি রয়েছে, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা তিনি এভাবে রিএক্ট কেন করলেন? জেড শিউর হল আসলে ইসলাম হচ্ছে পোশাক সর্বস্ব ধর্ম ছাড়া কিছুই না... পেয়েছেন? নাহ! জেড ইসলামের উপর চরম বিরক্ত আবার।


উপরের সব ঘটনা একজন জেডের দৃষ্টিতে ইসলামের জেনারেল পিকচার প্রেসেন্ট করা হয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন জেড কিভাবে ইসলাম কে নেবে সেটা খুব সহজেই অনুমেয়। সেদিন আলোচনা হচ্ছিল ইন্ডিয়ান কালচার, ওয়েস্টার্ন কালচার আমাদের যুবসমাজকে কিভাবে অধপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিভাবে যুবসমাজ প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে? কিভাবে তারা অন্যায়কে সহজেই মেনে নিচ্ছে? কিভাবে তারা কেবল ফেইসবুক, এফএমরেডিও, বলিউড,হলিউড এর জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে? খুব দোষারোপ করছিলাম যারা এভাবে আমাদের যুবসমাজকে অধপতনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খেয়াল করলাম খুব কমই আমরা নিজেদের সমালোচনা করলাম। আমরা কেন আজ প্রযুক্তিকে লিড করতে পারিনি? কেন আজ আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারিনি? কেন আমরা মিডিয়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে ইসলামের নামে সকল অপপ্রচারের জবাব দিতে পারিনি? আমাদের প্রতিপক্ষ যেখানে ডান-বাম-উপর-নিচ দিয়ে তাদের সমগ্র মেধা-মনন, ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে তাদের দিকে সবাইকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদের অবস্থান কোথায়? আমাদের অবস্থান তো হওয়া উচিত ছিল সমগ্র ক্ষেত্রে বিস্তৃত যেখানে এক ইসলামের প্রতিপক্ষ কেবল হবে ইসলামই। এরকমই তো দিক নির্দেশনা কুরয়ানে রয়েছে। অথচ আমরা আজো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘরে বসে নিন্দা জানাতেই আত্বতৃপ্তি অনুভব করছি। আমি তো দেখছি ইসলামের আজ বড় প্রয়োজন শক্তিশালি মিডিয়া ও প্রযুক্তি। অনেক তো ঘরে বসে আরবী কুরয়ান পড়ে নেকি অর্জন করলাম এবার মনে হয় সেই কুর‌্যান কেই ছড়িয়ে দেবার জন্য আমাদের মিডিয়া ও প্রযুক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। আসলে দৃষ্টিপাত অনেক পূর্বেই করা উচিত ছিল যা আমাদের প্রতিপক্ষরা করে গিয়েছে। এখন না হয় তাদের দেখানো পথেই আমাদের এগোতে হবে, তাদের অনুসরন করতে হবে। তারপরও যদি আমাদের এই বোধদয় না হয় যে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে ইসলামের অন্যতম প্রতিপক্ষ কোন ব্যক্তি না, দল না বরং মিডিয়া ও প্রযুক্তি। এই মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে যতদিন আমাদের আয়ত্বে না আনতে পারব ততদিন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের নিন্দা করে ঘরে বসেই আত্বতৃপ্তি অনুভব ছাড়া গত্যন্তর নাই।


1 টি মন্তব্য:

HJKL বলেছেন...

এ এক নির্মম বাস্তবতা.... হায় মুসলিম!!