বুধবার, ৯ মে, ২০১২

অতঃপর এক মুঠো রোদ্দুর....

এই লেখাটি পড়ার পূর্বে একটি লেখা পড়তে হবে। 
http://shetuzohra.blogspot.com/search?updated-min=2010-01-01T00:00:00%2B06:00&updated-max=2011-01-01T00:00:00%2B06:00&max-results=21

অবশেষে পাশ করেছে রুহিত। হয়ত ভাবছেন যেখানে ফেইল ব্যাপারটাই খুব ব্যতিক্রম, এ প্লাসের ছড়াছড়ি চারিদিকে সেখানে রুহিতের পাশ কি আর এমন ব্যাপার ! কিন্তু এটাই অনেক বড় একটি ঘটনা। ড.ইউনুস যখন শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পেলেন- সমগ্র বাংলাদেশ যেমন আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ল, কিংবা মুসা ইব্রাহীম প্রথম এভারেস্ট জয় করলেন সারাদেশে চরম উত্তেজনা অনেকটা সেরকম উত্তেজনার মধ্যে আছি আমি। শুধু আমি না সাথে মামুনও। কারণ আমাদের দুজনের কম্বাইন্ড স্টুডেন্ট হল রুহিত।

থার্ড ইয়ারে থাকতে যখন সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ড করতে জাতীয় মানসিক হাসপাতালে প্রতিদিন যেতাম তখন সত্যিই খুব ভাল লাগত সাইকিয়াট্রি সাবজেক্ট। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মানসিক সমস্যার ইতিহাস নিতে অন্যরকম ভাল লাগত। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পার্ট ছিল কাউন্সিলিং করা। কারণ জীবন সমুদ্রে পরাজিত চরম হতাশাগ্রস্থ একজন মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব পজিটিভ দিক খুজে বের করতে হয়, সেই অনুযায়ী তাকে আশার আলো দেখিয়ে জীবন সমুদ্রে বাকি পথ পাড়ি দেবার কথা বলা এত সোজা না। আর যদি সেটা হয় দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রতিনিয়ত অবজার্ভেশান করা, ফলো আপ করা তাহলে সেটা কত কঠিন বলার অপেক্ষা রাখেনা।

স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় মানসিক সমস্যাগ্রস্থ মানুষের প্রধাণ সমস্যা একটাই, সেটা হল যে ধারণা একবার তাদের ব্রেইনে সেট হয়ে যাবে সেটা থেকে বের করে আনা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। স্যার এক গল্প শুনিয়েছিলেন। ঠিক গল্প না এক কিশোরী মেয়ের ঘটনা। মেয়েটির ধারণা ছিল এক ছেলে তাকে ভালবাসে, যার জন্য সে প্রতিদিন ভোরে বাড়ির পাশেই খেলার মাঠে সেজে গুজে অপেক্ষা করত। মেয়েটির ডিলিউশান ছিল। কোন ফোন আসলে, কলিংবেল বাজলে সে ভাবত হয়ত ছেলেটিই তাকে নিতে এসেছে। এই ডিলিউশান থেকে মেয়েটিকে বের করে আনার কাউন্সিলিং প্রসেস খুব সহজ ছিলনা। খুব সহজে প্রেসক্রিপশানের পাতায় কয়েকটি ড্রাগস লিখে দিলাম, ব্যস। সেরকমও না।

ভেবেছিলাম সাইকিয়াট্রি তে ক্যারিয়ার করব। প্রথমত অনেক বেশি ইন্টারেস্ট খুজে পেতাম এই সাবজেক্টে, আর স্যারও অনেক বেশি কো-অপারেটিভ ছিলেন। সবমিলিয়ে ভালই লাগত। কিন্তু এই ক্যারিয়ার চুজিং এর চিন্তা যে সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল এটা পরে বুঝেছিলাম রুহিত কে পড়াতে গিয়ে।

রুহিত বছরে দু’বার ব্যংকক যায় মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাতে। ২০১১সালে ওর এস.এস.সি পরীক্ষা দেবার কথা ছিল। কিন্তু ওর মানসিক ভয়, টেনসান এত বেশি ছিল যে পরীক্ষা দেবার কথা ভাবতেই রুহিত আরো বেশি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শেষমেষ ওকে পরীক্ষার হলে না গিয়ে ব্যাংকক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লেগেছিল।
২০১১সালের পুরোটা বছর খুব ধৈর্য্যের সাথে ওকে পড়ানো লেগেছে। সপ্তাহে তিনদিন কমপক্ষে তিনঘন্টা করে ওকে কাউন্সিলিং করা লেগেছে। ওকে এটাই শুধু বুঝাতে হয়েছে যে তুমি পরীক্ষায় পাশ কর আর নাই কর পরীক্ষা দেবার ফলে যে অভিজ্ঞতা হবে সেটাই অনেক বড় একটা এচিভমেন্ট।

পড়াতে গিয়েই যখন দেখতাম ও মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে তখন আমারও মন খারাপ হয়ে যেত। মন ভাল করার জন্য বলতাম,
- আচ্ছা রুহিত তোমার পিছনেই এক বিশাল সমুদ্র আছে, এটা তুমি বিশ্বাস কর?
- না আপু, বিশ্বাস করিনা।
- এক বিশাল পাহাড় রয়েছে, এটা বিশ্বাস কর?
- না আপু, করিনা।
- তাহলে তুমি এটা কিভাবে বিশ্বাস কর যে তুমি পরীক্ষা দিলেই ফেইল করবে। তুমি তো এখনও পরীক্ষায় দেউনি !
- আমার টেনসান হয়, খুব মেন্টাল স্ট্রেস হয় পরীক্ষার কথা ভাবলেই।
- সেটা তো আমারো হয়। তাই বলে কি আমি তোমার মত পরীক্ষা না দিয়ে ঘরে বসে ফেইল করব ভেবে আর পরীক্ষা দিইনি !
- আপু, আপনার কথা আলাদা।
- মোটেই আলাদা না রুহিত। জাস্ট পরীক্ষায় তুমি এটেন্ড কর। পাশ/ফেইল পরে চিন্তা কর।
- জ্বি.....( খুউব মন খারাপ করে, মাথা নিচু করে বসে থাকবে)

সাইকিয়াট্রিতে যাবার চিন্তা আমি বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম রুহিতকে পড়াতে গিয়ে। আসলে এত ধৈর্য্য রাখা সত্যিই খুব কঠিন। যখন আমারও পরীক্ষা চলত সেসময় নিজের পরীক্ষার চিন্তা, রুহিতের কাউন্সিলিং সব মিলিয়ে মেজাজ সবসময় ভাল থাকতনা। এরমধ্যেও বাড়িওয়ালা আন্টির খুব আন্তরিক রিকুয়েষ্টের কথা ভেবে রুহিতের কেয়ার করা লেগেছ। মনের সব কষ্ট, নিজের পরীক্ষার টেনশান চেপে রেখে হাসিমুখে রুহিতকে কাউন্সিলিং করা লেগেছে।

মানসিক সব চাপকে কিছু সময়ের জন্য চাপা দিয়ে হাসিমুখে কারও দিকে চেয়ে কিছু ফর্মালিটি রক্ষা করা হয়ত সহজ। কিন্তু অন্য একজন মানসিক সমস্যাগ্রস্থ মানুষের জীবনের গভীরে ঢুকে গিয়ে তার জীবনের একটি পার্ট হয়ে জীবনকে কল্পনা করা, তার সব না বলা কষ্টের অনুভূতির সাথে মিশে যাওয়া, অতঃপর জীবনের বেঁচে থাকার পয়েন্টগুলো খুজে বের করে হাসিমুখে সেটাই ফোকাস করা, নিছক ফর্মালিটি রক্ষার চেয়ে অনেক কঠিন।

কিন্তু এত কষ্টের পরেও ভাল লাগত যখন একদম শেষের দিকে রুহিত খুব ভাল রেসপন্স করত। যখন বড় বোন হিসেবে সে খুব কো-অপারেটিভ হয়ে উঠত আমার সাথে, অন্যরকম আনন্দে মন ভরে যেত। যখন সামনে গোল সেট করে দিতাম বাক প্রতিবন্ধি সাবেরা ইয়ামিন কে যে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে ইউনিভার্সিটিতে সফলতার সাথে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছে তখন রুহিতের হৃদয়েও অন্যরকম স্পন্দন তৈরি হত। সেও আশায় বুক বাধত, হয়ত আশার তরী তারও একদিন সব গন্ডি পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পৌছবে।

অতঃপর রুহিত এস.এস.সি তে পাশ করল। জীবনে নিজের পরীক্ষার সর্বোচ্চ রেসাল্টেও কোনদিন এত খুশি হইনি। বাসায় এসে রুহিত আমাকে,মামুনকে সালাম করল । মনের খুশি ব্যক্ত করতে গিয়ে সে বলল, 'ঈদের আনন্দ কি জানিনা। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি যে কি পরিমান অস্বাভাবিক আনন্দ মনের ভিতর হচ্ছে বলে বুঝানো যাবেনা।'

রুহিতের এই অসামান্য কৃতিত্ব আমার কাছেও মনে হচ্ছে বহুদিন ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা শেষে এক মুঠো রোদ্দুর হাসি মনের কোণে ঝিলিক দিয়ে গেল। সাথে আল্লাহর নিকট অনেক শুকরিয়া। প্রকৃতপক্ষে সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য।

ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : টিউশনি,রেজাল্ট, আনন্দ
বিষয়শ্রেণী: বিবিধ

ভাগাভাগির সংসার

আজ পাঁচদিন হল বাসায় আব্বু-আম্মু কেউ নেই। দাদী, ছোট ভাই মামুন আর আমার সংসার। এমনিতেই বাসায় খুব হইচই থাকে। যদিও ভাই-বোন মোটে দু’জন আমরা তবু বাসায় সবসময় অনেক ভাই-বোন মিলেই থাকতে হয়।
খুব ছোটবেলা থেকেই অনেক অনেক ভাই-বোনের খুব শখ আমার। কারণ একটাই, অনেক খেলা করা যাবে, আনন্দ করা যাবে। খুব ছোটবেলায় এ শখ পূরণ না হলেও বড়বেলায় এ শখ একেবারে ষোলআনা পূর্ণ হয়েছে আমার। খালাত ভাই, বোন, ফুফাত ভাই-বোন সবাই মিলে সবসময় বাসায় পাঁচ-ছয় ভাই/বোন একসাথে থাকা হয়। আর দাদী সবসময় আমাদের সাথেই। সেই ক্লাস ফাইভ থেকে এটা দেখে আসছি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এদের মধ্যে যেসব কাজিনের বিয়ে হয়ে যায় কিংবা পড়াশুনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকে যায় এর পরেই আসে নেক্সট আরেক গ্রুপের কাজিন। এভাবে করে এখনও চলছে ব্যাপারটা।

সবাই মূলতঃ পড়াশুনার জন্যই থাকার সুবিধার্থে মেসে থাকার পরিবর্তে আমাদের বাসায় উঠে। আর আমার মা, যিনি খুব অতিথিপরায়ণ এবং অতিমাত্রায় সামাজিক তাদের পড়াশুনা,থাকা-খাওয়ার সুবিধার জন্য একেবারে বাসায় রেখে দেয়। তো আল্টিমেইটলি আমার মায়ের জন্য আমরা দু’ভাই বোন অনেক ভাই বোন না থাকার ব্যাপারটা কখনই মিস করিনা।
আব্বু খুব গম্ভীর এবং রাশভারী প্রকৃতির মানুষ। খুব বেশি মানুষজন খুব একটা পছন্দ করেননা। তবু আমার মায়ের এই সামাজিকতার কাছে তার এই গম্ভীরতা খুব একটা ধোপে টিকেনা। যাইহোক বাসায় খুব হইচই এর মধ্যেও আব্বু সবসময় নিজের জগতে একাকি বিচরন করতেই ভালবাসেন এবং আমরাও কেউ তার জগতে ডিস্টার্ব করিনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আব্বু-আম্মু পুরোপুরি দুই মেরুর মানুষ হয়েও এতকাল একসাথে সংসার কিভাবে করেছে।

জমিজমা সংক্রান্ত কাজে আব্বু কিছুদিন আগেই গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। আমার কলেজ বন্ধ হওয়াতে আম্মাও এই সুযোগে আমাকে বাসায় রেখে নানীকে দেখতে চলে গেল। বাকি যেসব কাজিন ছিল তারাও হরতালের ফাকে ,ছুটি কাজে লাগাতে ঢাকার বাইরে নিজেদের বাড়ি চলে গেল। দুম করে পুরা বাসা একবারে ফাকা হয়ে গেল।

তো এখন সংসার পুরা আমার হাতে। রেগুলার রান্না-বান্না, ঘর গুছানো, ঝাড়ু দেয়া, দাদীর আর আমার কাপড়-চোপড় পরিস্কার করা, দাদীর যত্ন নেওয়া সব আমাকেই করতে হচ্ছে। এই প্রথম সবকিছু আমার উপর ছেড়ে দিয়ে আব্বু-আম্মু পুরাপুরি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই ছোট সংসারেও মামুন আমাকে তার সাধ্যমত ভালই সাহায্য করছে।
আম্মু চলে যাবার দিন থেকেই কাজ আমরা ভাগাভাগি করে নিয়েছি। ও পানি ফুটাবে প্রতিদিন, জগে-বোতলে পানি ভরবে, বোতলে পানি ভরে ফ্রিজে রাখবে আর বাজার করবে টুকটাক। কিন্তু প্রথমদিন কাজ করার পর দেখা গেল আমার কাজ অ-নে-ক বেশি ওর তুলনায়। তাই দ্বিতীয় দিন আবার কাজ ভাগ হল। এবার ওর এক্সট্রা কাজ হল সকালে অথবা রাতে সব প্লেট,গ্লাস,হাড়ি-পাতিল সব মেজে পরিষ্কার করবে। মামুন মেনে নিল।

তৃতীয় দিন বুঝতে পারলাম, খুব ভোরে ঘুম বাদ দিয়ে ভাত রান্না করে দাদীকে মেখে খাওয়ানো, সব ঘর গুছানো,ঝাড়ু দেবার পরে একটু পড়তে বসা। এরপর দুপুরে রান্না-বান্না ,গোসল করে, নামাজ পড়ে দাদীকে খেতে দিতে দিতে খুব টায়ার্ড হয়ে যাচ্ছি। তাই তৃতীয় দিন আবার কাজ ভাগ হল। এবার মামুনের ভাগে আরো যোগ হল ও ঘর ঝাড়ু দিবে, দুপুরে দাদীকে গুছিয়ে খেতে দিবে এবং প্লেট ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখবে। যাইহোক এতে করে আমার একটু রিলাক্স হল।

রান্না-বান্না একেবারে কিছুই পারিনা তা না। সব মোটামুটি শিখে ফেলেছিলাম কয়েক মাস আগেই। কে জানত এই রান্না-বান্নার ইন্টার্নিও আমাকে করতে হবে পুরোদমে ! এরমধ্যে আমার এক ফ্রেন্ডকে বাসায় ইনভাইট করলাম আমার হাতের রান্না খাওয়ার জন্য। বাসার কাছেই বাসা তার, তাই অফারটা সাথে সাথে লুফে নিল। দুপুরে মুরগি, বিকেলে নুডলস খাওয়ালাম ওকে। সর্বশেষে ও তো আমার এত্ত গুনে একেবারে মুগ্ধ। আগেই বলে রাখি, আমার ওই ফ্রেন্ড রান্না-বান্নার এ ব সি ডিও জানেনা। সুতরাং একেবারে যিরোর কাছে আমার পারফর্মেন্স একেবারে পিকে উঠে গেল।
আমার ভাই এত ভদ্র টাইপের না। ওকে যা বলা হবে ও সেভাবেই করবে এধরনের তথাকথিত ভদ্র সে না। কিন্তু সে এখন আমার সাথে কাজ ভাগাভাগি করে ঠিকমতই সংসার করছে। আমার ধারণা, আমি যা রান্না করছি সেটা ওর খেতে খুব ভালই লাগছে। তাই ভালমনেই সব কাজ করে যাচ্ছে। যদিও মামুন আমাকে ব্যাপারটা বলছেনা তবু আমি আন্দাযে ধরে নিচ্ছি।

চতুর্থ দিন ভাগাভাগির কাজে ভালই দিন কেটে গেল। এবার আর কারো কোন অভিযোগ নেই। বিকেল বেলা দুজন মিলে গল্প করলাম। ছোটবেলার কিছু স্মৃতিচারণ করলাম...বেশ সুন্দর, মিষ্টি এক বিকেল হল আমাদের দু’ভাই-বোনের।

পঞ্চম দিন কিছু বই আনতে আমি কলেজে গেলাম। রাস্তায় খুব জ্যাম আর বাস/রিকশা পেতে অনেক দেরি হওয়ায় কলেজে পৌছলাম অনেক দেরি করে। ফলে কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে তিনটার বেশি বেজে গেল। মোবাইলে মামুনকে মেসেজ পাঠালাম ভাত রান্না করে, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি করতে। ফ্রিজে ডাল ছিল ওটা গরম করতে বললাম। বাসায় এসে দেখি ও সব ঠিকমত করে রেখেছে, নিজের ভাগের কাজ তো করেছেই সাথে দাদির কাপড় পরিস্কার করে নেড়ে দিয়েছে, দুপুরে নিজে রান্না করে দাদিকে খেতে দিয়েছে। সব একেবারে পারফেক্টলি করেছে। আমিও খুব খুশি হয়ে গোসল করে ওর রান্না করা ভাত্, ডিম ভাজি, আলু ভর্তা আর ফ্রিজ থেকে গরম করা ডাল দিয়ে পেট ভরে খেলাম।
বিকেলে এবার মামুন বলছে, ‘ আজকে তো সব কাজ আমার ভাগেই দিয়ে দিলি!’ আমিও সাথে সাথে বললাম, দেখেছিস তাহলে আমার কাজগুলো কত কষ্টের।
একেবারে মিনা কার্টুনের মত গড়গড় করে বাকিটুকুও বললাম...... ষষ্ঠদিন থেকে চল আমরা দুজন কাজ এক্সচেইঞ্জ করি। তোর কাজ আমি করব আর আমার কাজ তুই করবি। কিন্তু এবার আর ও রাজি হলনা। অলরেডি বুঝে গিয়েছে আমার ভাগের কাজ ওর চেয়ে কষ্টের।

সবকিছু ভালই চলছিল। মিনা কার্টুনে দেখাত যে পরিবারের সবাই ছেলে হওয়াতে রাজুকে বেশি গুরুত্ব দেয়। মেয়ে হিসাবে মিনা বঞ্চিত। এমনকি মিনার দাদিও রাজুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করত। কিন্তু আমাদের বাসায় ব্যাপারটা অনেক ক্ষেত্রে উলটো হত। অবশ্য অনেক ভাই-বোন একসাথে থাকার সুবাদে কেউ গুরুত্ব কম বেশি পাবার কোন স্কোপ আসতনা। কিন্তু আজ বাসায় আসতেই যখন দাদি বলল, আজ মামুন সব কাজ করেছে। তখনই মনে হল মিনার দাদির মত হয়ে গেল না তো ব্যাপারটা ! আমি প্রতিদিন সব করছি, কিন্তু আজ মামুন করতেই দাদি খুব স্পেশালি আমাকে জানান দিল।
কি জানি !!

কবে আমাদের এই ভাগাভগির সংসার সমাপ্ত হবে জানিনা। কারণ আব্বু-আম্মু কেউই কবে আসবে এ ব্যাপারে কিছুই বলছেনা।কিন্তু একেবারে খারাপ যাচ্ছেনা আমাদের দু'ভাই-বোনের এই ভাগাভাগির সংসার........
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : রান্না-বান্না, সংসার
বিষয়শ্রেণী: ব্লগর ব্লগর

প্রশান্ত হৃদয় !



মেঘলা দিনে কি কারো মন খারাপ থাকতে পারে? মনের যত দুঃখ, ক্ষোভ, আক্ষেপ, না পাওয়ার হতাশা সব বৃষ্টির অঝোর ধারায় ধুয়ে মুছে একেবারে বিলীন হয়ে যায় না?

তীব্র গরমের পর বিকেলে যখন আকাশ কালো করে চারিদিক অন্ধকার হয়ে উঠে তখন মনের কোনায় এক চিলতে আনন্দ ঝিলিক দেয়। এখনি নামবে বৃষ্টি। হিমেল হাওয়া বইবে। চারদিক ঠান্ডা হয়ে যাবে। এক শীতল পরশ চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে। এই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।অ-নে-ক.. শুধুমাত্র এই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা উপভোগ করার জন্য হয়ত পৃথিবীকে আমি সবসময় ভালবাসব। কিংবা খুব ভোরের ঝুম বৃষ্টির শব্দে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই ঘুম ভাঙ্গা মুহূর্তে নিশ্চুপ চারদিকের বৃষ্টিভেজা ভোরের জন্য পৃথিবীকে অ-নে-ক বেশি ভালবাসব।



নাহ! শুধু বৃষ্টি না। অথই, উন্মত্ত সাগরের উথাল পাতাল ঢেউ এর গর্জনের মধ্যেও যে অদ্ভুত এক ধরনের হৃদয় ছুয়ে যাওয়া অনুভূতি আছে সেটার কি কোন তুলনা হয়? সামনে বিশাল জলরাশির সামনে যখন একাকি আনমনে কিছুক্ষন বসে থাকি তখন সৃষ্টির সব সৌন্দর্য মনে হয় কেবল এই সাগরের মধ্যেই ঢেলে দেয়া হয়েছে। মনটা কেমন যেন আনচান করে উঠে। এত্ত ভাললাগা অনুভূতির ভিতরেও কেমন যেন শূণ্যতা তৈরি হয়।



এই সাগরের ঢেউ আর সাথে যদি রাতের আকাশে হাজার তারার মেলার মাঝে চাঁদের আলোয় চারপাশের অন্ধকার এক ধরনের আলো-ছায়াময় মায়াবি পরিবেশ সৃষ্টি করে তখন কেমন লাগে? মনে হয়না, ইশ! এই পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য যে দেখেনি সে ভালবাসার অর্থও বুঝেনি।
চাঁদের আকর্ষনে জোয়ার-ভাটা হয়। জোয়ার ভাটা কি কেবল সাগরেই হয়? মনের ভিতর যে উত্থাল পাতাল ঢেউ জীবনের সব আকাঙ্ক্ষা,প্রত্যাশা আর না পাওয়ার হিসাবকে একেবেরা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় সেটার জন্যও কি হৃদয়ে জোয়ার-ভাটা হয়না? শরীরের ৭০ভাগই পানি। তাই হয়ত চাঁদনী রাতে আমাদের হৃদয়মনেও একধরনের জোয়ার-ভাটা হয়। সেই জোয়ারে জীবনের ফেলে আসা সব কিছু ভাসিয়ে কেবল সামনের দিকে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়না আমাদের?

শরতের আকাশের স্নিগ্ধতা আর ঘন কাশফুলের স্নিগ্ধতার সাথে মিশে যাবার অনুভূতি কেমন? মনে হয় সাদা মেঘের সাথে আমিও ভেসে বেড়াই সারা আকাশ জুড়ে।



কিংবা শীতের সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঘেরা পৃথিবীকে কেমন লাগে? সবকিছুকে খুব রহস্যে ঘেরা মনে হয়না ! কুয়াশা ঢাকা সকাল যখন সূর্যের হাসিতে আলোকিত হয় তখন এক মুঠো রোদ্দুরের যে প্রতীক্ষায় অপেক্ষারত মন তা অজান্তেই নেচে উঠে না !

সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্তে কার কথা বেশি মনে পড়ে? বৃষ্টিমুখর দিনে কাকে বেশি কাছে পেতে চায় মন। সেই প্রিয়জনের সাথে কাটানো পু্রোনো স্মৃতিই সেই বৃষ্টিমুখর দিনকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেনা ! ইচ্ছা করেনা, প্রিয়জনের সাথে কোন এক সুন্দর বিকেলে দূর-বহুদূর হেটে যেতে। পাশে থাকবে সারি সারি গাছের ঘন ছায়া আর মন জুড়ানো হিমেল হাওয়া। কিংবা কোন এক চাঁদনী রাতে নৌকার উপর দুজনে বসে চাঁদ দেখা আর সারারাত গল্প করা। ইচ্ছা করেনা?



এত সৌন্দর্য চারপাশে। এত মাধুর্য চারদিকে। আর কিছু লাগে মন ভাল করার জন্য? সব দুঃখ-কষ্টকে খুব তুচ্ছ মনে হয় তখন। সীমাহীন ভাললাগার অনুভূতিতে হৃদয় ছেয়ে যায়। কিন্তু এতকিছুর পরেও ঠিক কোথায় যেন এক শূন্যতা থাকে। ঠিক বুঝানো যায়না, কিন্তু অনুভব করা যায়। এত ভাল লাগার মধ্যেও হৃদয়ের প্রশান্তি আসেনা সেই শূণ্যতার জন্য।

হৃদয়ের প্রশান্তি খুজে বেড়াই পাগলের মত। এই অসীম মায়াময় সৌন্দর্যে ঘেরা জগত খুব স্পষ্টভাবেই কি যেন আমাদের হৃদয়ে অনুভব করাতে চাই। সেই অনুভূতির ক্লাইমেক্সে যেতে পারিনা বলেই হয়ত একধরনের শূণ্যতা অনুভব হয়। প্রশান্তি আসেনা।

বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ হৃদয়ে যে ছন্দ তৈরি করে, চাঁদনী রাত মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা যে বেদনাকে ভুলিয়ে দেয়, বিশাল সীমাহীন সমুদ্রের গর্জন হৃদয়ে যে জোয়ার আনে এসব কিছু কি এমনি এমনিই হচ্ছে? এসব মায়াময় সৌন্দর্য কি কেবল আমাদের জীবন, ফেলে আসা অতীত আর আগত ভবিষ্যতের হাতছানির দিকেই ইশারা দেয়? জীবন তো একদিন শেষ হয়ে যাবে। জীবনের ক্যনাভাসের এসব অসাধারণ চিত্র কি শুধুই ক্যামেরায় বন্দি করে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আনন্দ পাবার জন্য? ফটো তুলে ক্যাপশানে লিখলাম, Life is really beautiful. ব্যস এটুকুই? অন্তরের পিপাসা এতে মিটেনা। তৃষ্ণার্ত হৃদয় খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তাই বলে উঠে উদ্দেশ্যবিহীন এরকম নশ্বর ভাললাগার অনুভূতি নিয়ে এত মাতামাতি কিসের?



কুরআনে এই নশ্বর মায়াবী সৌন্দর্যের অনুভূতির ক্লাইমেক্স কিভাবে অর্জিত হয় সেটা এত নিখুতভাবে বর্ণিত হয়েছে,

“যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। (তারা আপনা আপনি বলে ওঠেঃ) “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।” সূরা-আল ইমরান

অচিরেই হৃদয়ের শূণ্যতা কেটে যায়। এক গভীর প্রশান্তিতে মন ভরে যায়। আমাদের চারপাশ, প্রকৃতি, আকাশ, পৃথিবী, বৃষ্টি, সাগর, চাঁদ, জ্যোৎস্না সবকিছুই অনুভূতির এই ক্লাইমেক্সে না আসা পর্যন্ত শূণ্যতা রয়ে যায়। এত্ত মায়াবী সৌন্দর্যে ঘেরা পৃথিবীর এই না বলা অমোঘ, চির শাশ্বত সত্য উপলব্ধি না করা পর্যন্ত এই শূন্যতা কাটেনা। অনন্ত অসীম এই সুন্দরের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার নিকট সবিনয়ে আত্মসমর্পন না করা পর্যন্ত হৃদয়ে প্রশান্তি আসেনা।

তাই বার বার বলতে ইচ্ছা করে “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।”
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : প্রশান্ত হৃদয়, সুন্দর প্রকৃতি,পৃথিবী
বিষয়শ্রেণী: বিবিধ

হারানো আকাশ !


https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhB65N-OY__vuCWLh1UDfhT2my9fanypdqns6sYxm9Zx5_ZCVgZbnjfjtEwPeQC7zF0-dHowPOhd2-6arStYwezo4vBzYBwkCUAtOzyt3oICWbZ0VYGHd7roUw2bxW-Fb5cY18IFyxGkk0b/s1600/kapal.jpg

শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই প্রিয়তমা স্ত্রীকে ডেকে বললেন, তোমার কাছে যে মূল্যবান অলংকার রয়েছে সেটা হয় সরকারি কোষাগারে জমা দাও নয়ত আমাকে ত্যাগ কর। বুদ্ধিমতি স্ত্রী সাথে সাথে সমস্ত অলংকার সরকারি কোষাগারে জমা দিল।

শাহী বাসভবনে প্রবেশ করলেন শাসক। বংশের সকল লোক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কি কি উপহার এবার তারা পাবে,কেননা প্রতিবার শাসন ক্ষমতা বদলানোর পরেই বংশের লোকেরা শাহী বাসভবন হতে প্রচুর উপহার পেয়ে থাকে। কিন্তু শাসক শাহি বাসভবনে প্রবেশ করেই সকল সম্পত্তি সরকারি কোষাগারে দান করলেন। সবাই তীব্র ক্ষোভ ও রাগ নিয়ে বিদায় নিল।

প্রিয় বন্ধু শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। বন্ধুত্বের খাতিরেই সরকারি কোষাগার থেকে প্রাপ্য অর্থ আদায় করতে বন্ধুর কাছে আগমন। একটি শাহী ফরমান দেখিয়ে বন্ধুকে বলল, এটা পূর্বের শাসক হতে প্রাপ্ত যেখানে সে সরকারি কোষাগার হতে বিপুল পরিমান অর্থের দাবিদার। সব দেখে শাসক বন্ধুকে বলল, সরকারি কোষাগার জনগনের সম্পদ, পবিত্র আমানত। সেখান হতে কিভাবে পূর্বের শাসকের এই শাহী ফরমান দেখে তোমাকে অর্থ দেই যেখানে পূর্বের শাসকরা ন্যয় বিচার করে এই শাহী ফরমান লিখে যাননি ? বন্ধু বিষন্ন হৃদয়ে ফিরে গেল।

চাচাত ভাই এসে দাবি করল, পূর্বের সকল শাসক সরকারি কোষাগার হতে বংশের সকল লোকের জন্য ভাতা বৃদ্ধি করে গিয়েছে তাই তার ভাতাও যেন এবার বৃদ্ধি করা হয়। শাসক তাকে খুব ধীর স্থির ভাবে বললেন ভাই, আমি তো কেবল আমার বংশের লোকের জন্য শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হইনি ! বরং আমার পূর্ববর্তী যারা তোমাদের অন্যায়ভাবে কেবল স্বজনপ্রীতিমূলকভাবে জনগনের সম্পদ হতে অতিরিক্ত ভাতা দিয়ে গিয়েছেন সেটা আজ থেকে বন্ধ করে দিলাম।

অনেক অভিযোগ নিয়ে ফুফু এসেছেন শাসকের নিকট দেখা করতে। ভাতিজা কে বললেন তোমার পূর্বে তোমার বাবা, চাচা আমার জন্য যে ভাতা বরাদ্দ করে গিয়েছিলেন সেটা নাহয় তুমি বৃদ্ধি করলেনা, কিন্তু বরাদ্দকৃত ভাতা কমালে কেন? খুব শ্রদ্ধার সাথে এবার শাসক ফুফুকে বললেন, সাধারণ জনগন যে ভাতা পাবে আপনিও তাই পাবেন। সরকারি কোষাগার হতে জনগনের সম্পদ আপনাকে দিয়ে তো আমি আপনাকে সুখী করতে পারিনা !

চাচাত ভাই এসে রাজনৈতিক মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করল। বলল, বংশের লোকেদের অখুশি করে তো শাসন ক্ষমতায় বেশিদিন থাকতে পারবেনা। তারচেয়ে বরং আমাদের যে ভাতা দেয়া হত সেটাই নির্দিষ্ট থাকুক, সেটা তোমার আর বৃদ্ধি করা লাগবেনা। সব শুনে শাসক বললেন আল্লাহর নিকট আমি সমগ্র জনতার সামনে অপমানিত হওয়াকে খুব ভয় করি। শাসক হবার মত কন্টকপূর্ণ জীবন আর হয়না। ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা থাকে কিন্তু শাসকের জীবনে কোন স্বাধীনতা থাকেনা। কারন শাসক কোন ব্যক্তি নয় পুরা জাতি। সাধারণ মানুষ যে অবস্থায় থাকবে আমাকেও আজ সেই অবস্থায় থাকতে হবে। রাজনৈতিক চালকে ধূলায় মিশিয়ে দিলেন শাসক। চাচাত ভাই ক্ষুব্ধ মনে ফিরে গেল।

ব্যক্তিগত যত সম্পত্তি বংশানুক্রমিকভাবে শাসক পেয়েছিলেন সব বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দিলেন। শুধুমাত্র একান্ত ব্যক্তিগত একটি জায়গীর রেখে দিলেন যা থেকে খুব সামান্যই আয় হয়। সরকারি কোষাগার হতে শাসক হিসেবে প্রাপ্য ভাতাও তিনি গ্রহন করতেননা। কারণ তার যে ব্যক্তিগত জায়গীর রয়েছে, ওতেই তার হয়ে যাবে। শুধু শুধু কোষাগারের উপর চাপ বাড়িয়ে কি লাভ!

ওমর বিন আব্দুল আজিজ ছিলেন ঠিক এরকমই একজন শাসক। যিনি খলিফা হয়েই পূর্ববর্তী সব খলিফাদের অন্যায়,যুলুম,অত্যাচার, অবিচারের নিষ্কাশন করেছিলেন।

একবার সাধারণ এক লোক ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের বংশের কোন এক লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলল তার জমি দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে দখল করেছে সে। ওমর তার বংশের লোককে এর কারণ দর্শাতে বললে সে জমির দলিল নিয়ে দেখাল এটা পূর্বের খলিফা তাকে দিয়ে গেছে। এবার ওমর তাকে বললেন যদি এমন কোন অবস্থা দাঁড়ায় যে একজন আব্দুল মালেকের দলিল দেখাচ্ছে অন্যজন মারওয়ানের দলিল দেখাচ্ছে সেক্ষেত্রে কোনটা গ্রহন করা উচিত? সাথে সাথে বংশীয় লোক জবাব দিল পূর্বের দলিল অর্থাৎ মারওয়ানের দলিল গ্রহন করা উচিত। ন্যয়পরায়ন ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ বললেন আমিও সবচেয়ে পুরান দলিল- কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী এই জমি ওই সাধারণ লোককে দিয়ে দিলাম।
http://www.kalamullah.com/img/ibnmajah.gif

ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ, ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নাম। যিনি উমাইয়া বংশের সেই খলিফা যে উমাইয়া বংশীয় সকল পাপ-পংকিলতার উর্ধে থেকে একেবারে স্বতন্ত্র ও সঠিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ইসলামিক ইতিহাসের কিছু পার্ট আমি সবসময় এভয়েড করে যাই। বনু হাশেমী ও বনু উমাইয়া গোত্রের পারস্পরিক বিরোধের যে লজ্জাজনক ঐতিহাসিক পরিণতি তা আমি বরাবরই এভয়েড করি। কিন্তু হঠাৎ করে ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের জীবনী পড়তে খুব আগ্রহ হল। আগ্রহের প্রধাণ কারণ ছিল উমাইয়া গোত্রের লোক হয়ে, মারওয়ানের পৌত্র হয়েও কিভাবে তিনি এতটা স্বতন্ত্র ছিলেন?
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg_C-dg1weksuDzboTPbD2mfcqp9BGMyPAXb8yStAyOkxSS2ySXIjLY_HQuwhMP3xc8oxCx2TB5JjPSpcPOSXv12ltziYWC6Jc8IJJc5ae73hUbQr8rzsjBB-38nz9Hv27e9Wg0taB29-sF/s1600/fondillo_1920x1200.jpeg
খুব গভীরভাবে ব্যপারটা খোঁজার চেষ্টা করি। ঠিক একজায়গায় এসে কিছুটা মানসিক তৃপ্তি পেলাম । ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ, যার মাতা ঊম্মে আসেম। উম্মে আসেমের দাদা ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)। এক্ষেত্রে একটি ঘটনা না উল্লেখ করে পারছিনা।

হজরত ওমর (রাঃ) যখন খলিফা ছিলেন তখন একবার রাতে সাধারণ জনগনের অবস্থা সফরকালে এক বিধবার ঘরে এসে শুনতে পেলেন বিধবা এবং তার মেয়ের কথোপকথন। সেসময় দুধে পানি মিশানো ওমর(রাঃ) নিষেধ করে দিয়েছিলেন। বিধবা দুধে পানি মেশাতে চাইলেও মেয়ে কিছুতেই পানি মিশাতে দিবেনা। বিধবা তার মেয়েকে বলল, এখন তো ওমর দেখছেনা, পানি মেশালে কি হবে? কিন্তু মেয়ে বলল, ওমর হয়ত দেখছেনা যে দুধে পানি মিশাচ্ছি কিন্তু ওমরের আল্লাহ তো দেখছেন ! এই কথোপকথনে মুগ্ধ হয়ে ওমর (রাঃ) তার পুত্র আসেমের সাথে বিধবার কন্যার বিয়ে দেন। খলিফা ওমর (রাঃ) কেবল দ্বীনি গুনে মুগ্ধ হয়েই এটি করেন, উচ্চবংশ না নিম্ন বংশ এটা একেবারেই পাত্তা দেননি। পরবর্তীতে এই ঘরেই জন্মগ্রহন করেন উম্মে আসেম যাকে বিবাহ করেন মিশরের শাসক আব্দুল আজীজ ইবনে মারওয়ান।

এতো গেল ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের বংশ পরিচয়। এরপর যেটা পড়ে আরো বেশি মানসিক তৃপ্তি পেলাম সেটা হল ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের বাল্যজীবন ও পড়াশুনা। তিনি মদিনায় প্রতিপালিত হয়েছেন মাতামহের গৃহে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর তাঁকে নিজ হাতে লালন পালন করেছেন, আরবি ভাষা-সাহিত্য শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওতবাকে ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের অন্যতম শিক্ষক নিযুক্ত করেন। অন্যদিকে পিতা আব্দুল আজীজও পুত্র ওমরের সঠিক শিক্ষার জন্য মদিনায় তার জন্য মাসিক দিনার বরাদ্দ করেছিলেন। ফলস্বরূপ উমাইয়া বংশের উত্তরাধিকারী হয়েও ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের বাল্যজীবন, কিশোর ও শিক্ষা-দীক্ষা সরাসরি দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর পরিবার হতেই পরিচালিত হয়েছিল।

ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের উপর তার শিক্ষকের কিরূপ প্রভাব বিরাজ করত সেটার একটি ঘটনা উল্লেখ করি। উমাইয়া বংশের সকল লোক হযরত আলী (রাঃ) ও তার পরিবারবর্গকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করত। ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ একদিন বংশের ধারা অনুযায়ী হযরত আলী (রাঃ) এর নামে কিছু কটু কথা বলেন। এটি শুনে ওবায়দুল্লাহ ইবনে উতবা রাগ করে ওমরকে বলেন, “ তুমি কবে থেকে অবগত হলে যে আল্লাহ বদরবাসীদের উপর সন্তুষ্ট হবার পর পুনরায় অসন্তুষ্ট হলেন?” ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন এবং প্রতিজ্ঞা করলেন কখনও এরকম আর করবেননা।
ওমর ইবনে আব্দুল আজীজের বাল্যজীবন, কিশোর, শিক্ষা-দীক্ষা ,পরিবেশ ও শিক্ষকের ভূমিকা এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সেটা তাকে উমাইয়া বংশ থেকে একেবারে পৃথক করে দিয়ে স্বমহিমায় মহিমান্বিত করেছিল।

এইতো সেই ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ, যাকে বলা হয় দ্বিতীয় ওমর, উমাইয়া বংশের একমাত্র নক্ষত্র যাঁকে ইতিহাস অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরন করে।
http://t2.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcSrDwi-ToBul_L-vsvcmjsdrqjynZlgPSpGG2rtMY2Q8WYT1J0afSFv-aFX
বর্তমান যুগের শাসকদের দূর্নীতি, অন্যায়-অবিচার দেখে দেখে যখন মন খুব বিষাক্ত হয়ে উঠে তখন এধরনের স্বর্ণালি জীবনী আশার আলোকে এখনও জিইয়ে রাখে। হয়ত কোন একদিন এমন কোন শাসক আসবেন যেদিন সুরঞ্জিতের মত মন্ত্রীরা জনগনের টাকা নিয়ে লুটপাট করবেনা, রাতের আধারে কেউ নৃশংসভাবে খুন হবেনা, বিনা অন্যায়ে কেউ শাস্তি পাবেনা। এখনও আশা রাখি কোন এক ওমর আসবেন যিনি জনগনের কাতারে নেমে যাবেন, ব্যক্তিগত সুখ বাদ দিয়ে সাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহন করবেন। আর ধীরে ধীরে আমাদের হারানো আকাশ আবার দীপ্তিময় হয়ে উঠবে.....

ভালবাসার বন্ধন




মুহাম্মাদ। ২৫বছরের এক সুদর্শন,হ্যান্ডসাম,সৎ যুবক। যাঁর সাথে ৪০ বছরের এক বিধবা নারীর বিয়ে হয়েছিল। কেমন ছিল তাঁদের সেই ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবন?

অত্যন্ত ধনাঢ্য মহিলা ছিলেন খাদিজা। কিন্তু মুহাম্মাদের সাথে বিয়ে হবার পর তার সব সম্পত্তি নির্দ্বিধায় ইসলামের জন্য ব্যয় করতে কার্পন্য করেননি। একসময় এমন অবস্থায় এসেছে যে এই সম্পদশালী খাদিজাকে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন-যাপন করতে হয়েছে। কখনও খুব মানবেতর, দিন আনে দিন খায় পর্যায়েও চলে আসতে হয়েছে। অথচ মুহাম্মাদের সাথে খাদিজার এটা নিয়ে কখনও কোন অভিযোগ ছিলনা।

মুহাম্মাদের কাছে জীবরাঈল যখন প্রথম অহী নিয়ে আসলেন তখন মুহাম্মাদ অত্যত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে খাদিজাকে ডেকে বললেন তাকে চাদর দিয়ে আবৃত করে দিতে। সারা বিশ্বজাহানের পথপ্রদর্শক যিনি হবেন, যার প্রতি আবর্তিত হবে কুরআনের সুস্পষ্ট সত্য বানী তাকে যখন জীবরাঈল প্রথম অহী শুনানোর সূচনা করলেন তখন তো মুহাম্মাদ টেনসড হবেনই। মানসিক সেই চাপের মুহূর্তে খাদিজা তাকে সাপোর্ট দিলেন, বললেন- "ভয় পাবেননা। আপনি সত্য কথা বলেন, আমানত রক্ষা করেন, প্রতিবেশির হক আদায় করেন, এতিম ও গরীব কে সাহায্য করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন। সুতরাং আপনার ভয় পাবার কোন কারণ নেই"। কত দারুন! একেই না বলে ভালবাসা। এখনকার মেয়েরা অনেক শিক্ষিত এবং মডার্ণ। স্বামীর মেন্টাল ক্রাইসিসে তারাও কি এরকম সাপোর্ট দেয়? অবশ্য এখন যেভাবে পরকীয়া বেড়ে গেছে সেখানে সাপোর্টের চিন্তা অনেক পরে। স্বামীকে নিয়ে সন্দেহ করতেই অভ্যস্ত তারা। ক্রিটিক্যাল কোন মুহূর্তে কি এই শিক্ষিত, মডার্ণ মেয়েরা সেই অনেক আদি যুগের খাদিজার মত সাপোর্ট দিতে পারে? তারা তো জানেইনা তাদের স্বামীর আসলে কি কি পজিটিভ সাইড আছে। খাদিজা যখন মুহাম্মাদকে যেসব কথা বলে সাপোর্ট দিচ্ছিলেন তা ছিল মুহাম্মাদের জীবনে ধ্রুব সত্য। অযথা মিথ্যা, মন ভুলানো, আবেগের কথা দিয়ে সাপোর্ট দিতে হয়নি। মুহাম্মাদকে খুব ভালভাবেই জানতেন খাদিজা। তাই তাদের দাম্পত্য জীবনের ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে খাদিজা এভাবেই মুহাম্মাদকে মেন্টাল সাপোর্ট ও ভালবাসা দিয়ে গেছেন।

তৎকালীন আরবে সবাই মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে। প্রকাশে সবাই তার শত্রু। তার নামে বহু কুৎসা, নিন্দা তখন একটা বিনোদনে পরিণত হয়েছে। ঠিক সেই প্রতিকূল মুহূর্তে খাদিজা ঈমান আনলেন সর্বপ্রথম। মুহাম্মাদের প্রচারিত ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করলেন। কি অসাধারণ ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। স্বামীর প্রতি, তার আইডিওলোজির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ মিশ্রিত অগাধ ভালবাসার রিফ্লেকশান কি দারুন ছিল।

আচ্ছা, প্রশ্ন থেকে যায়। তরুণ, সুদর্শন যুবক মুহাম্মাদ কে নিয়ে কি খাদিজার কোন টেনশান ছিল? ছিল কি হারিয়ে যাবার ভয়? না, একেবারেই না। খাদিজার বিজনেসে যখন মুহাম্মাদ অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন তখনই খাদিজা চিনে নিয়েছিলেন খাটি রত্নকে। তাই নিজের জীবনে প্রিয়তম সঙ্গী করতে কুন্ঠাবোধ করেননি। স্মার্টলি মুহাম্মাদকে ঠিকই বাছাই করে নিয়েছিলেন, আর মুহাম্মাদকে দিয়েছিলেন ভালবাসাপূর্ণ এক সত্যিকার দাম্পত্য জীবন।

আর মুহাম্মাদ? খাদিজার মৃত্যুর অনেক বছর পরে যখন কুমারী, যুবতী আয়েশাকে বিয়ে করেছিলেন তখনও বৃদ্ধা, বিধবা খাদিজার স্মৃতি স্মরনে আবেগে আপ্লুত হয়ে যেতেন। কেবল আউটলুক যদি হত স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার মেইন পিলার তাহলে হয়ত মুহাম্মাদ-খাদিজার সম্পর্ক এরকম কালজয়ী হয়ে থাকতনা। ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবনের যে প্ল্যাটফর্ম তারা দিয়ে গেছেন সেখানে ছিল একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। আরো ছিল জীবনের আল্টিমেইট মিশনকে ফুলফিল করার এক যৌথ প্রয়াস যেখানে কেবল সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টিই তাদের ভালবাসায় ইন্ধন যুগিয়েছে।

প্রতিদিন পত্রিকায় অনেক নিউজ পড়ে খুব আপসেট হয়ে যাই। কিছুদিন আগে বহুল আলোচিত রুমানা-সাইদের আঠার বছরের দাম্পত্য জীবনের করুণ পরিণতির ঘটনা আলোড়ন ঘটাল। এরকম হাজারো রুমানা-সাইদের ঘটনা প্রতিদিন পত্রিকায় আসছে। হাজারো ভালবাসার বন্ধন শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ আত্বহত্যা করছে, কেউ মার্ডার করছে, কেউ প্রতারণা করছে, পরকীয়া করছে। ভালবাসার সম্পর্কের পিলার কোথায় যেন সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। খুব আপসেট ফিল করছি তাই। অত্যন্ত বিষন্ন হৃদয়ে যাঁর জীবনকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে তাঁর ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবনের কেমন ছিল সেটা থেকে ইন্সপায়ারড হবার প্রয়াস থেকে এটা লেখা।

আর লেখাটি উৎসর্গ করা হল প্রিয় বুবু এবং হাসান ভাইয়াকে। অন্তর থেকে দোয়া রইল, যেন তারাও এরকম ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে যেখানে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি তাদের ভালবাসার নদীকে আজীবন গতিময় রাখতে পারে, ভালনাসার বন্ধনকে চিরস্থায়ী করতে পারে।
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : ভালবাসা,বিয়ে,বন্ধন
বিষয়শ্রেণী: বিবিধ

আজো আছি তোমার প্রতীক্ষায় ...




জানি তুমি আসবে, তুমি আসবে বলেই আমার এ প্রতীক্ষা
অনুরোধ একটাই, তুমি আসবার আগে আমাকে কিছু সময় দিও
দেবে তো??
কি যে বল! সময় না দিলে আমি নিজেকে সাজাব কিভাবে বল?
সারাটা জীবন প্রতীক্ষায় আছি তোমার
একবার মাত্র দেখা পাব, না সাজলে কি হয় বল?
তাইতো আমার এ অনুরোধ। প্লিজ রেখো...

কিভাবে সাজব? তুমি জানতে চাও?
আচ্ছা! তুমি বলো তো কিভাবে সাজব আমি?
আমার সারাজীবনের সঞ্চয় তোমার জন্য
দেখ, কত্ত কি জমিয়ে রেখেছি, গ্রহণ করবে তো?

কিছুদিন আগে দেখলাম তুমি এসেছিলে
তখন অনেক কেঁদেছিলাম তুমি আসার জন্য
আচ্ছা! তখন কি তুমি রাগ করেছিলে আমার উপর...?

তুমি অনেক স্বার্থপর ,আমি জানি
তুমি আমার অনুরোধ রাখবেনা, তাও জানি
কিন্তু তারপরও তোমাকে ভালবাসি
তুমি আছ বলেই তো জীবনকে অনুভব করতে পারি
তুমি আছ বলেই আমার চিন্তা জগতের প্রতিটি কণায়
তোমার অস্তিত্ব আমাকে ভাবতে শেখায় আরো গভীরভাবে
তাইতো তোমার জন্যই আমার এ প্রতীক্ষা....

তুমি বিশ্বাস করো। তোমাকে আমি ভুলিনি
কিভাবে ভুলবো বলো?
জীবনে চলার পথে অন্যের মাঝে বহুরূপ তোমার আমি দেখেছি
তবুও একবারও দেখা দাওনি আমায়
ও আচ্ছা! তুমি আমাকে তোমার অস্তিত্ব মনে করিয়ে দিতে এসেছিলে ?
কিন্তু কেন? আমি তো তোমাকে ভুলিনি...
হয়তোবা অনেক সময় তোমাকে মনে করতে পারিনি
তোমার জন্য বেশি কিছু মনের মত করে গুছিয়ে নিতে পারিনি
কিন্তু দেখ আমার অ-নেক ইচ্ছা ছিল তোমার জন্য কত্ত কি গোছাব!
জানি অনেক সময় তুমি আমাকে দিয়েছ
তারপরও আমি পারিনি, তাইতো বলছি
আরো কিছু সময় দিও তুমি আসার আগে

তুমি অনেক নিষ্ঠুর, আবেগহীন, নিথর
আমার এ অশ্রুসিক্ত আবেদন তোমাকে বিন্দুমাত্র নাড়া দেবেনা
তারপরও যদি পারো এই হৃদয়ের সিঁড়িতে একবার বিচরন কোরো

ভুল আমি করেছি, হয়তোবা এই ভুল
তোমার প্রতি আমার ভালবাসাকে আরো গভীর করেছে
তাই যে সময় তোমার জন্য দিতে পারিনি
যে সময়ে অনেক কিছু করার ছিল, করতে পারিনি
তা যেন পোষাতে পারি, অন্তত এইটুকু সময় তুমি আমাকে দিও

তোমাকে এত্ত ভালবাসি আমি, ভালবাসার দাবিতে বিচার করো আমাকে
জানি, তারপরও তুমি আমাকে না জানিয়েই চলে আসবে
আমাকে কিছুই গোছাতে দিবেনা, দুঃখ নেই তাতে
সান্ত্বনা শুধু একটাই তোমাকে আমি সত্যি অনেক ভালবাসি
ভালবাসি বলেই তোমাকে অনুরোধ করছি, তোমাকে ছাড়া আর কাকে করব?

নাহ! ভালবাসার কোন প্রমাণ আমি দিচ্ছিনা
সত্যিকার ভালবাসার কোন প্রমাণ হয় বল?
যখন তুমি এসে দেখবে তোমার জন্য অনেক জিনিস গুছিয়ে রেখেছি
তখন নিশ্চয় আমার উপর অভিমান করে থাকবেনা
আমাকে পূর্বের ভুলের জন্য কষ্ট দেবেনা।

যে নিঃসীম ভালবাসা তোমার জন্য, তুমি বুঝবে তো?
জানি আমার থেকেও তোমাকে অনেকে অনেক বেশি ভালবাসে
তাদের মত করে হয়ত পারিনা,কিন্তু...
তারপরও আমার ভালবাসা তো আর মিথ্যা না।
তাই আবার অনুরোধ করছি, আমার সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিও

আমার অনুরোধ গুলো রাখবে এই প্রতীক্ষায়
আমার অশ্রুর প্রতিটা কণা অপেক্ষমান,
হৃদয়ের প্রতিটি সংকোচন-প্রসারণ অধীর চিত্তে প্রহর গুনছে
কিন্তু........!!!

নিউরনের প্রতিটি অনুরননে তোমার অনুপস্থিতি আমায় বলছে
তুমি আসবে, না জানিয়েই আসবে...
তাইতো তুমি যেন এসে আমাকে দেখে খুশি হও
একারনেই প্রতীক্ষায় থাকলাম...


বি.দ্র.: মিতু আপুর মৃত্যুর স্মরণে লেখা প্রথম কবিতা।
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : মৃত্যু,প্রতীক্ষা
বিষয়শ্রেণী: সাহিত্য

২৩বছর পর....




ফ্ল্যাশ ব্যাক করে পিছনে যাই। শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। তখন কেবল কেজিতে পড়ি,কিন্ডারগার্টেন একটি স্কুলে। ফাইনাল পরীক্ষার রেসাল্ট দিল। ফার্স্ট হলাম। তখন একটা ব্যাপার ছিল, আনন্দের কোন কিছু হলেই বড় চাচুর বাসায় চলে যেতাম। জীবনের প্রথম কোন ভাল রেসাল্টের গিফট বড় চাচুর কাছ থেকেই সেবার প্রথম পেয়েছিলাম। একটি লাইব্রেরিতে নিয়ে গিয়েছিল বড় চাচু। সেখান থেকে মোল্লা নাসিরউদ্দিন,গোপাল ভাড় ও টুনটুনির গল্প নামক তিনটি বই কিনে দিয়েছিলেন। বই যে মানুষকে এত আনন্দ দিতে পারে সেই ছোট বয়সে এটা ভেবে আমি সত্যি অনেক বিস্মিত হয়েছিলাম। ছোট থাকতে আমার খেলনার সেরকম আগ্রহ ছিলনা, যতটা ছিল বইয়ের প্রতি। কারণ, বড় চাচু আমাকে বই এর পোকা বানিয়ে দিয়েছিলেন।

এরপর কোন ছুটি হলেই সাথে সাথে বড় চাচুর বাসায়। বড় চাচু আমাকে কবিতা শুনাতেন। কবিতার মোরাল লেসন গুলো বুঝাতেন। কাজী নজরুল ইসলামের “লিচু চোর” কবিতা আমাকে তিনি এতবার শুনিয়েছেন যে শুনে শুনেই আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। আসলে বড় চাচুর মেয়ে ও ছেলে দুজনই তখন ইন্টার পাশ করে ভার্সিটিতে পড়ে। সুতরাং বড় ভাইয়া ও বড় আপুর সাথে বয়সের গ্যাপ থাকা সত্ত্বেও বড় চাচুর বাসা খুব ভাল লাগত। তার কারণ একটাই, বড় চাচু। আমার প্রতি জন্মদিনে বড় চাচু আমাকে বই গিফট করতেন। বইএর প্রতি আমার নেশা তৈরির পিছনে বড় চাচু ছিলেন একমাত্র কারণ।

এখনও মনে আছে, সেবার তখন সম্ভবত ক্লাস টুতে পড়ি। প্রিন্সেস ডায়ানা মারা গেল। টিভিতে লাইভ সম্প্রচার হচ্ছে তাকে নিয়ে। তার কফিন নিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব তাকে দেখছে। বড় চাচুর বাসায় তখন আমিও সবার সাথে দেখছি। হঠাৎ আমার মনে প্রশ্ন জাগল আচ্ছা ডায়ানা কি নামাজ পড়ে? সাথে সাথে বড় চাচুকে জিজ্ঞেস করলাম এটা। এটা শুনে তো বড় চাচু হাসতে হাসতে শেষ। আমি বললাম যদি ডায়ানা নামাজ না পড়ে তাহলে তার মৃত্যু নিয়ে সারাবিশ্ব এরকম কেন করছে। সে তো ভাল মানুষ না। পরে বড় চাচু আমাকে বুঝিয়েছিলেন, ডায়ানা তো মুসলিম না, সে খ্রিস্টান ধর্মের। সে তার ধর্মে খুব ভাল মানুষ ছিল, সে একজন প্রিন্সেস,রানী। তাই সারা বিশ্ব তাকে এভাবে দেখছে। আহ! কি ছেলেমানুষই না ছিলাম।

মেডিকেলে চান্স পাবার পর সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন বড় চাচু। আমার এই ভাল রেসাল্টের খবর শুনেই সাথে সাথে দাদাবাড়িতে সবাইকে খাওয়াইছিলেন। প্রতি ঈদ দাদাবাড়িতে বড় চাচুর সাথে একসাথেই করতাম। কিন্তু যে ঈদে বড় চাচুকে কাছে পাইনি,বুঝতে পারিনি সেটাই ছিল বড় চাচুর জন্য শেষ ঈদ। চলে গেলেন বড় চাচু আমাদের ছেড়ে একেবারে....

এরপর মনে আছে কিন্ডারগার্টেন থেকে ক্যন্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। প্রথম যেদিন ক্লাস করতে গেলাম সেদিন ক্লাসের ফার্স্ট গার্লের উপর খুব রাগ হয়েছিল। কি ভাবই না মারে সে! দীনা কে আমার সত্যি খুব বিরক্ত লেগেছিল, যতই সে ফার্স্ট হোক না কেন। গেইম পিরিয়ডের সময়ও সবার উপর সে একটা ইনভিসিবল ডোমিনেট করে। কিন্তু আমি ক্লাস করার ৩দিন পরই জেনেছিলাম ও স্কুল থেকে টিসি নিয়ে চলে যাচ্ছে, কারণ তার বাবার পোস্টিং হয়ে গেছে। কি যে খুশি হয়েছিলাম। কে জানত এই দীনার সাথেই আমার দেখা হবে দীর্ঘ আট বছর পর ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ! খুব সিম্পল একটি ঘটনা। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে দুজন ঘটনাক্রমে একসাথে বসেছিলাম। এরপর কথায় কথায় কে কোন স্কুল থেকে আসলাম এটা নিয়ে পোস্টমর্টেম করতে গিয়েই টের পেলাম আরে এতো সেই দীনা যাকে বোর্ড স্কুলে প্রথম তিনদিনে আমার সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লেগেছিল। প্রথমে বুঝতে পারিনি, দীনার নাম ঠিকই মনে ছিল আমার। যখনি সে বলল বোর্ড স্কুলে সে ফার্স্ট হত এবং ক্লাস টু থেকে সে টিসি নিয়ে চলে যায় তখনই ওকে ডিটেক্ট করে ফেলি। এরপর আর কি! কলেজে থাকতে দীনাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল।

ক্লাস টু থেকে থ্রি তে ভর্তি হবার জন্য পাবলিক স্কুলে এডমিশান দিলাম। পাবলিক স্কুল তখন খুব এরিস্টোক্রেটিক ফ্যামিলির ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করে। প্রথম দিনই সবার খুব বিরূপ আচরন। মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে মেনে নিতে পারছেনা। তারউপর ক্লাসে আমি পড়াশুনা কিছুই সেরকম বুঝতে পারছিনা। কেউ আমাকে হেল্প করছেনা। ইংলিশ ক্লাসে ম্যাডাম পুরাটাই ইংলিশে পড়াত আমি কিছু বুঝতামনা। কিন্তু আমার আশে পাশে সবাই সবকিছু বুঝে। ফার্স্ট টার্ম খুব খারাপ হল রেসাল্ট। এরপর আব্বু আমাকে ইংলিশ পড়ালো, বুঝালো। এর পরের টার্মেই রেসাল্ট একেবারে প্রথম সারিতে চলে এল। দেখলাম সবাই আমার সাথে এবার কিছুটা মেশার চেষ্টা করছে। তাসকিনা ও ফারহা তখন ক্লাসে জুটি ছিল। দুই বান্ধবির জুটি সবার কাছেই পপুলার। তাদের রোলও পরপর। কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল তাদের ভিতর। ফারহা আমার সাথে খুব সখ্যতা গড়ে তুলল। এরপর আমি আর ফারহা হয়ে গেলাম দুজন দুজনের খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড। ক্লাস ফোরে উঠলাম।আমার আর ফারহার রোল এবার পাশাপাশি। জাকিয়া তখন ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল। খুব ভাব আর অহংকারী ছিল। স্বাভাবিকভাবেই ওকে আমার তাই খুব অপছন্দ ছিল। ছোটবেলা থেকেই খুব স্বাধীনচেতা ছিলাম। কেউ আমার সামনে খুব ভাব দেখাবে, ডোমিনেট করার চেষ্টা করবে সেটা আমি কখনই মেনে নিতামনা। জাকিয়াকে তাই মেনে নিতে পারিনি। ক্লাসে কেউ জাকিয়ার মুখের উপর কোন কথা বলার সাহস পেতনা। ও যদি হোমওয়ার্ক করে না আনত তাহলে ওর আগে কেউ হোমওয়ার্ক জমা দেয়ার সাহস পেতনা। সবখানেই তাকে খুব সমীহ করে চলত সবাই। কিন্তু আমি করতামনা মোটেই। একদিন ক্লাসে হোমওয়ার্ক ছিল, কিন্তু জাকিয়া করে আনেনি বলে কেউ জমা দিচ্ছেনা। আমি আর ফারহা দুজন জমা দিলাম। স্যার তো আমাদের গুড দিলেন, খুব প্রশংসা করলেন। জাকিয়ার সাথে সেই সূত্রেই সম্পর্ক আরো বেশি শীতল হয়ে গেছিল। এরপর যখন ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে উঠলাম,ফারহা সকাল বেলা আমাকে একটি নিউজ দিল। বলল, জাকিয়া স্কুল থেকে টিসি নিয়ে বোর্ড স্কুলে চলে গেছে। আমি তো অবাক! এত ভাল স্কুলে কেউ চান্স পায়না, আর সে এটা ছেড়ে চলে গেল!! পরে জেনেছিলাম, জাকিয়ার ফ্যামিলি খুব একটা স্বচ্ছল ছিলনা। পাবলিক স্কুলে সিভিলদের খরচ অনেক বেশি। তাই স্কুলের যাবতীয় খরচ চালাতে পারছিলনা বলে টিসি নিয়ে বোর্ড স্কুলে গেল। তখনই আমার জাকিয়ার প্রতি একটা সিমপ্যাথি অনুভব হল। খুব বেশি মিস করছিলাম জাকিয়াকে........আর যখন চট্টগ্রাম ছেড়ে যশোর চলে গেলাম তখনই হারিয়ে ফেললাম স্কুল জীবনের সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড ফারহা কে। মোবাইল ছিলনা তখন। আর কন্ট্যাক্ট হয়নি কোনদিনও.....

চট্টগ্রামের তিন্নি আপুর কথা এখনও মনে পড়ে। বাসা থেকে পাবলিক স্কুল অনেক দূরেই ছিল। স্কুলের বাস মিস হয়ে গেলে হেটে হেটেই যাওয়া লাগত। কারণ বাসায় এসে আম্মুকে ভয়ে বলতামনা যে বাস মিস করে ফেলেছি। তিন্নি আপুও তখন পাবলিক কলেজে পড়ত। একসাথেই যেতাম হেটে হেটে। আমাকে যে কত ধাধা আর কৌতুক শুনাত আপু। খুব খুব মিস করি আপুকে এখনও।
আমার ভাই তখন ছোট, ক্লাস টুতে পড়ে আর আমি ফোরে। কিন্তু দু’ভাইবোন দুই স্কুলে। ওর জন্য আমার খুব খারাপ লাগত। কারণ ও খুব ভীতু ছিল। যেকোন কারণেই সাথে সাথে কান্নাকাটি করত। একদিন আমি আমার স্কুল বাসে করে বাসায় ফিরছি, বাসের জানালা থেকে দেখি ও হেটে হেটে আসছে আর চোখে পানি। তখনই বুঝলাম নিশ্চয় ও স্কুলবাস মিস করেছে। সাথে সাথে আমি বাস থেকে নেমে গেলাম। ওকে বললাম, কাদছিস কেন? বলে বাস মিস করেছে, এতটা পথ সে কিভাবে একা একা হেটে হেটে যাবে? আসলেই অনেক দূর ছিল বাসা। আমিও কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু ওকে বললাম, এতে কান্নাকাটির কি আছে। আমরা দুজন মিলে হেটে বাসায় চলে যাব, কিচ্ছু হবেনা। সেবার আমি প্রথম অনুভব করলাম, আমি ওর বড় বোন।

আমি যে কতটা জেদী ছিলাম সেটা টের পেয়েছিলাম ক্লাস ফোরেই। সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষায় ৫০এ ৫০ পাবার কথা আমার। কিন্তু পেয়েছিলাম ৪৮। আমার নিজের উপর খুব রাগ হয়েছিল। স্কুল বাসে করে ফেরার পথে বাসায় আর ফিরিনি। অন্য জায়গায় নেমে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মনে হয়েছিল যেদিকে দুচোখ যায় আজকে সেদিক চলে যাব। হাটতে আছি তো আছি...হঠা খেয়াল হল আমার এখন বাসায় ফেরা উচিত। এরপর বহু বহু পথ ঘুরে তিন-চার ঘন্টা পর বাসায় ফিরলাম। কিন্তু বাসায় এসে কিছুই জানালামনা। ভাব এমন যে স্কুল বাস দেরি করেছে তাই আমার দেরি হয়ে গেছে। নিজের রাগ নিজের ভিতর কিভাবে এবসর্ব করতে হয় সেটা তখনই শিখে গেছিলাম।
এরপর অনেকটা সাদামাটা। যশোরে দাউদ পাবলিক স্কুলের লাইফ ছিল জাস্ট স্কুলে যাওয়া আর আসা। আর নিজের মত পড়াশুনা করা। ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল কিন্তু সবাই আমার থেকেও অনেক বেশি ম্যাচিউরড ছিল। ক্লাস টেনে পড়ার সময়ও আমি বুঝিনা এফেয়ার জিনিস আসলে কি। সেই আমি কিভাবে বুঝব ক্লাস সেভেনে পড়া কেউ এফেয়ার করতে পারে, সেটা নিয়ে যে গল্প,আড্ডা তার সাথে আমি কখনই যেতে পারিনি। এ কারণে সেরকম ফ্রেন্ডশীপ হয়নি গাঢ়ভাবে কারো সাথেই।
ফ্রেন্ডশীপ ছিল তখন আমার কাজিন মিতু আপুর সাথে। স্কুল দীর্ঘ ছুটি হলেই চলে যেতাম খালামনির বাসায়। মিতু আপুর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতাম। আসলে আমি কিছুই বলতামনা। শুধু শুনতাম। আবার মিতু আপুর ছুটি হলে আমাদের বাসায় চলে আসত। সারা রাত আমি বিভিন্ন গল্প, ঘটনা শুনে রাত পার করতাম। অনেক সুন্দর গান গাইতে পারত মিতু আপু। সারা রাত আমি উনার গান শুনেও রাত কাটাইছি। এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব ছিল তার সাথে। ফ্যামিলির কোন অনুষ্ঠানে যদি মিতু আপু না থাকে তাহলে আমি কখনই সেই অনুষ্ঠানে যেতাম না। বড় ভাইয়ার বিয়েতে আমি যাইনি, কারণ সেখানে মিতু আপু ছিলনা। কিন্তু ঠিকই আরেক কাজিনের বিয়েতে গিয়েছি। কারণ সেখানে মিতু আপু ছিল। ঠিক মৃত্যুর আগেরদিনও মিতু আপুর সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে আমার। হোস্টেলে ছিলাম তখন। মিতুর আপুর সাথে কিছুটা অভিমান চলছিল। কারণ সেবার ঈদে মিতু আপু শ্বশুর বাড়ি থেকে আসতে পারেনি, তাই দেখা না করেই আমি ঢাকায় চলে আসি। কে জানত মিতু আপুর সাথে আমার আর কোনদিন দেখাই হবেনা......
আমাদের বিল্ডিং এই থাকত নিতুরা। আমার এক ক্লাস জুনিয়র ছিল। কিন্তু খুব খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল ওর সাথে। মনে আছে ওর সাথে একবার খুব রাগ হয়েছিল। তাই ওর সাথে বিকালে খেলতে যেতাম না। তখন ওকে নিয়ে আমি ডায়েরি লিখতাম। অনেকদিন রাগারাগির পর যখন একদিন ও আমার সামনে এল তখন ওকে একটি চিঠি দিলাম। সেই চিঠিতে আমার যত রাগ,আবেগ,ভালবাসা ছিল ওর প্রতি সব লিখেছিলাম। ওটাই ছিল কাউকে দেয়া আমার প্রথম চিঠি। এরপর সব মিটমাট। বন্ধুত্বের অন্যরকম এক আবহে ছিলাম আমি। খুব বেশি ভালবাসতাম নিতুকে। প্রতি ঈদে, ঈদ কার্ড বানাতাম ওর জন্য। ওর সাথে ছাদে পিকনিক করতাম। হঠাৎ শুনি নিতুরা চলে যাবে ঢাকায়। ওর আব্বুর পোস্টিং। শেষ দেখা ওর সাথে হয়নি আমার। চলে গেল ও, আমিও হারিয়ে ফেললাম ওকে....

ক্লাস নাইনে উঠার পর খুব চিন্তায় ছিলাম সায়েন্স,আর্টস নাকি কমার্স নিব। ক্লাসে রোল যদিও প্রথম দিকেই ছিল কিন্তু আমি আসলে চাচ্ছিলাম অন্য কিছু। এই চিন্তার মধ্যেই বড় ভাইয়া আমাকে বলল, সায়েন্স নিলে নাকি খুব কম পড়াশুনা করলেই হয়ে যায়। খুব ইজি। একমাত্র বড়ভাইয়ার সাজেশান মনে ধরল। কম পড়াশুনা করলেই যদি হয়ে যায় তাহলে কেন আমি সায়েন্স নিবনা?
“আমার জীবনের লক্ষ্য” নিয়ে যখন বাংলা ২য়পত্রে রচনা লিখতাম তখন আমার অস্বস্তি লাগত । কারণ আমি চিকিৎসক হতে চাইনা, তারপরও আমাকে ওটা লিখতে হয়। আর্কিটেকচারের প্রতি আমার প্রবল ঝোক ছিল। কিন্তু আব্বু-আম্মু কখনই চাইতনা যে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। তাই আব্বু-আম্মুর সামনে, কেউ কি হতে চাই জিজ্ঞেস করলে বলতাম চিকিৎসক হব। কিন্তু ঠিকই মনে মনে হিসাব করতাম, কবে ইন্টার পরীক্ষা শেষ হবে। এরপর নিজের মত সব চয়েস করব। কিন্তু ইন্টার পরীক্ষার পর যখন মেডিকেল ও বুয়েট দুইটা কোচিংএ ভর্তি হলাম তখনি মেডিকেল নিজ থেকে চয়েস করে নিলাম। জীবনে আসলে অনেক কিছুই আমরা যেভাবে ভেবে রাখি সেভাবে হয়না। সবকিছু ক্যালকুলেইট করেও করা যায়না। সময়ের আবর্তে কখন কি চেইঞ্জ হয় কিছুই বলা যায়না।

গতকাল থেকেই খুব মন খারাপ ছিল বিভিন্ন কারণে। গতকালই ২৩বছর পূর্ণ হল আমার। অনেক না পাওয়ার বেদনায় যতটা না মন ভারাক্রান্ত ছিল তারচেয়ে বেশি ভারাক্রান্ত ছিল অনেক কিছু হারানোর বেদনায়। ফারহাকে এখনও খুব মিস অরি। ইস! জাকিয়ার সাথে যদি কোনদিন হঠাৎ করে দেখা হয়ে যেত! খুব নাটকীয়ভাবে নিতুর সাথে যদি পরিচয় হত হঠাৎ। বড় চাচুকে ভুলতে পারিনি, মিতু আপুকেও না। এখনও বড় চাচুর সেই কবিতা শোনানোর দিন মিস করি। এখনও কিছু কিছু গান শুনলে মিতু আপুর কথা মনে পড়ে। অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব এখনও অনেক বাকি। যাদের না চেয়েও পেয়েছিলাম তাদের অনেককেই হারিয়েছি। ২৩বছর পর তাই খুব নিঃসংগ লাগে। জীবনের পথে সামনে কি আছে, জানিনা। তবুও পথ থেমে থাকেনা, অবিরাম সেই পথেই পুরানো স্মৃতিকে মাড়িয়ে কেবল চলে যেতে হয়....

ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : জীবন,স্মৃতি,প্রিয়জন
বিষয়শ্রেণী: ব্লগর ব্লগর

নিশীথের ভ্রমন.....


আসলে শিরোনাম দেখে এটা ভাবার দরকার নেই যে এটি কেবল এক নৈশ রাতের ভ্রমন কাহিনী। বিস্তারিত ভিতরেই বলি??

ঢাকায় থেকে যখন আমি পুরাই বিদ্ধস্ত, যখন কোন কিছুতেই মন দিতে পারছিনা তখন থেকেই চিন্তা, কবে একটু সুযোগ পাব ঢাকার বাইরে ভ্রমনের। ২য় প্রফের পর থেকেই এরকম অস্থিরতা শুরু হয়েছে। কিন্তু সময় কোথায় কোথাও যাবার?? ঠিক এরকম একটি অস্থিরতার ভিতরেই পেয়ে গেলাম পূজোর ছুটি। বাসা থেকে অনুমতি দিবে কিনা সন্দেহ ছিল, কিন্তু অনুমতি আব্বুর কাছে চাইতেই সাথে সাথে দিয়ে দিল। তবে এই তড়িৎ অনুমতির সাথে একটি বিশেষ শর্ত ছিল যে আমাদের গার্জিয়ান হিসেবে মামুন থাকবে। এবারই বুঝলাম, আমার ভাই আমার ছোট হয়েও কিভাবে এখন আমার গার্জিয়ান হয়ে গেল ! মেয়েরা আসলে মেয়েই......

আসলে এবার ভ্রমনের নির্দিষ্ট কোন প্ল্যান ছিলনা। কোথায় যাব, কে কে যাবে কিছুই জানিনা। কিন্তু বাসায় তিনজনের একই সাথে অস্থির মন এবার একীভূত হয়ে গেল। যুথি,আমি এবং আমাদের গার্জিয়ান মামুন। তিনজনেই মেডিকেলে পড়ি, সুতরাং একিসাথে এই পুজোর বন্ধে কোথাও ঘুরতে যাবার এই সুযোগ আর মিস করা উচিত না। ঝটপট সিদ্ধান্ত, চট্টগ্রামে যাব। যুথি যাবে কিনা সন্দেহ ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ওকে কনভিন্স করালাম। হুম!কাউকে কনভিন্স করার পাওয়ার একেবারে খারাপ না আমার....

ঠিক যাবার একদিন আগে যখন ফেইসবুকে বন্ধুমহলে শেয়ার করলাম, আমাদের সাথে ভার্চুয়ালি যোগ দিল বুবু। এই মোট চারজন নিয়ে আমাদের ভ্রমন। ট্রেনের টিকিট পেলাম না, যদিও যুথি রাজি হয়েছিল এটা ভেবে যে সে এবার জীবনের প্রথম ট্রেন জার্নি করবে। আমি তাকে অবশ্য এটা বলেই কনভিন্স করিয়ে ছিলাম। ঠিক যাবার আগে যখন এই ঝামেলা, তখন যুথিকে বললাম, চিন্তা কইরোনা, আসার সময় আমরা ট্রেনে আসব...আসলে এটা ছিল কনভিন্স করার একটি পার্ট।

রাত ১১টার বাসের উদ্দেশ্যে আমি,যুথি,বুবু এবং মামুন রওনা হলাম। যদিও বাস ছেড়েছে প্রায় শোয়া বারটার দিকে। বাংলাদেশ তো, তাই এটাকে খুব স্বাভাবিক মনে হয়েছে। নৈশ রাতের ভ্রমন শুরু হল.....

বাসের মধ্যে অনেকক্ষন ধরে চলল আমাদের গল্প। পরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি। ঠিক যখন অলঙ্কার রোডে বাস থামল তখন প্রায় সাড়ে ছয়টা, আর তখনি দুলাভাইয়ের ফোন। ভাইয়ার দেয়া ডিরেকশান অনুযায়ী সি.এন.জি ঠিক করেই চলে গেলাম তার বাসায়। ফ্রেশ হয়ে,খেয়ে দেয়ে,রেস্ট নিয়ে ১১টার দিকে বের হয়ে পড়লাম আরিফার সাথে। আরিফা আমার কাজিন এবং বান্ধবি। ওকে গাইড ট্যুর হিসেবে নিলাম। ইনফ্যাক্ট গাইড ট্যুর হিসেবে ও একটি চমৎকার মেয়ে....থ্যাঙ্কস টু আরিফা।

মিনি বাংলাদেশে যেয়ে তো আমাদের অবস্থা পুরাই বর্ণনার অযোগ্য। পুরা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান ঘুরার সুযোগ কি আর আছে আমাদের? একই সাথে লালবাগের কেল্লা, কান্তজির মন্দির,শহীদ মিনার,ষাট গম্বুজ মসজিদ, আহসান মঞ্জিল,কার্জন হল দেখতে পেলাম তখন আমাদের অবস্থা ঠিক মরুভূমির সেই বেদুইনের মত অবস্থা হল যে বহু ক্রোশ মরুভূমির পথ পাড়ি দিয়ে হঠাৎ পানিপূর্ণ পুকুরের সন্ধান পেল। যে সংসদ আমি প্রতিদিন প্রায় ক্যাম্পাসে যাবার পথে দেখি সেটার মিনি ফর্ম দেখে এত্ত ভাল লাগল, নিজেকে তখন নাফির সমবয়সী মনে হল। নাফি, আমার ভাগ্নে, ক্লাস থ্রিতে পড়ে যে কিনা আমাদের সেদিনের পুরা ট্যুরে সঙ্গি ছিল। ভাগ্যিস সে সাথে ছিল কারণ সেদিন নেভাল থেকে রাতে বাসায় ফেরার পথে যখন সি.এন.জি ওয়ালা বাসা চিনতেছিলনা, তখন নাফিই আমাদের পথ চিনিয়ে দিল।থ্যাঙ্কস টু নাফি।

যাইহোক প্রচুর ফটোশেসান হল। মিনি বাংলাদেশ ঘুরার মধ্যেই আমাদের সাথে যোগ দিলেন বিশিষ্ট ব্লগার হেলাল এম রহমান। ইনফ্যাক্ট চট্টগ্রামবাসীরা ন্যাচারালি বন্ধুবৎসল একটু হলেও বেশি।

(সোনা মসজিদ)


(কান্তজির মন্দির)


(আহসান মঞ্জিল)


(সোনা মসজিদ)


(লাল বাগ কেল্লা)

মিনিবাংলাদেশের পর যখন ক্ষুধাতে অবস্থা খুবই খারাপ তখন আমাদের হেলাল ভাইয়া নিয়ে গেলেন জি.ই.সির নিরিবিলি হোটেলে। আমি অন্যকিছুনা, রূপচাদা মাছ আর শুটকি ভর্তা খাওয়ার সুযোগ মিস করিনি। সবাই দেখি মুরগি, ভুনা খিচুড়ি খাচ্ছে আর আমি মহা আনন্দে একাই রূপচাদা মাছ খেলাম। উফ! চট্টগ্রাম কে আমার ভাললাগার আরেকটি কারণ, আমি সামুদ্রিক্ মাছ মারাত্বক পছন্দ করি। হেলাল ভাইয়া ফেইসবুকে একবার খুব লোভ দেখিয়ে আমার ওয়ালে সামুদ্রিক মাছের ছবি পোস্ট করেছিলেন। এবার উনি সেটাই বাস্তবে রূপ দান দিলেন। থ্যাঙ্কস টু হেলাল ভাইয়া।

এরপর পতেঙ্গা ট্যুর। কিন্তু না, রাস্তার মাঝেই আমরা নেমে পড়লাম বাংলাদেশের একমাত্র বাটারফ্লাই পার্ক ঘুরে দেখার জন্য। উল্লেখ্য বাটারফ্লাই পার্ক সম্বন্ধে আমি প্রথম ছুটির দিনে একটি ফিচার পড়ি। আর সেই ফিচারের লেখক আর কেউ না, হেলাল ভাইয়া। তাই হেলাল ভাইয়া যেহেতু সাথে আছে তাই কি আর মিস হয় এটা দেখা??

প্রথমে সবাই বলল, ভিতরে প্রজাপতি আছে কিনা সেটা কেউ দেখুক, এরপর অন্যরা যাবে। আমি টিকিট কেটে ঢুকে গেলাম, কথা ছিল আমি মিসড কল দিলে অন্যরাও টিকিট কেটে ঢুকবে। অস্থির বাংগালি কি আর শুধু শুধু বলে? আমি ঢুকার সাথে সাথেই দেখি আমার আগেই অন্যরা ঢুকে চারপাশ ঘুরে দেখতে ব্যস্ত। সত্যিই অসাধারণ একটি পার্ক সেটা। না দেখলে মিস করতাম অবশ্যই। মামুন এবং নাফি ধুমসে ছবি তোলায় ব্যস্ত। আসলে ছেলেরা যে নিজেদের ছবি তুলতে এত পাগল হতে পারে তা মামুনকে না দেখে কেউ বিশ্বাস করবেনা। আমরা প্রজাপতি দেখলাম, প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টির সাথে নিজেদের একাকার করে দিলাম। কি অদ্ভুত সুন্দর করে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, ভাবতেই এত প্রশান্তি লাগছিল বলার বাইরে।

(প্রজাপতি পার্কে ঢুকার প্রবেশ পথ)


(মিউজিয়ামের ভিতর)


(আমার ভাইয়ের ফটোশেসান,শেষই হয়না !)


(বাটার ফ্লাই পার্কের প্রজাপতির মিউজিয়াম)


(ছবিঃ বাটারফ্লাই পার্কের কৃত্তিম ঝর্ণা)

প্রজাপতির পার্ক থেকে ছুটে গেলাম টমটম গাড়িতে করে পতেঙ্গার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমরা প্রজাপতি দেখতে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে সূর্যাস্ত মিস করলাম। তাতে কি? যেটা কখনই ভাবিনি এবার সাগরের মধ্যে স্পিড বোটে করে ঘুরা মিস করিনি। অবশ্য এখানে সব ক্রেডিট বুবুর। সে যদি খুব সাহস করে স্পিড বোটে উঠার জন্য স্টিমুলেট না করত তাহলে হতনা এই দুর্লভ অভিজ্ঞতা লাভ করার। থ্যাঙ্কস টু বুবু।
ওহ! বলা হয়নি, ইতোমধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন ব্লগার তায়েফ ভাইয়া, আরিফ ভাইয়া।

স্পিড বোটে উঠে সে এক ভয়ঙ্কর,মজার অভিজ্ঞতা। সাতার জানি আমি, কিন্তু বহু বহু বছর কখনও পানিতে নেমে প্র্যাক্টিস করিনি বলে ভুলে গিয়েছি কিনা জানিনা। লাইফ জ্যাকেটেও ছিল বোটে। একটু ভয় ভয় লাগছিল, কিন্তু আনন্দে শিহরিত হচ্ছিলাম আরো বেশি। একবারে অন্যরকম.........

শিহরিত আনন্দ শেষেই গেলাম পতেঙ্গা মার্কেট ঘুরে দেখতে। সাথে ছিলেন আরিফ ভাইয়া। সে আমাদের যাবতীয় যেকোন কিছু কিনতে যেভাবে ডিসকারেজ করতেছিল তাতে আমার মনে হচ্ছিল এই পতেঙ্গার ব্যবসায়িরা যদি জানত তাহলে আরিফ ভাইয়াকে দলবেধে মারতে আসত। একটি জুতা পছন্দ হল, কিনতে যাব ঠিক এই মুহুর্তেই আরিফ ভাইয়া বললেম, ' জুতাটা সুন্দর, সন্দেহ নাই, তবে সেটা পরার জন্য না, শোকেজে সাজায় রাখার জন্য।" এরপর কি আর ওই জুতা কিনার মুড থাকে? নো থ্যাঙ্কস টু আরিফ ভাইয়া।

এরপর নেভাল। ভেবেছিলাম, কিইবা দেখব সেখানে, কিন্তু আরিফার জোরাজুরিতে গেলাম। সেখানে গিয়ে মনে হল, ভাগ্যিস আরিফা জোর করেছিল। তা না হলে নেভালে বসে রাতের অন্ধকারে পানির বুকে জাহাজ দেখা হতনা। অন্ধকার আকাশ সাথে সাগর আর জাহাজ একইসাথে পাওয়া হতনা। একরকম অদ্ভুত চিন্তার জগতে ঘুরাফেরা করা হতনা। অবশ্য এর মধ্যেই সবাই আর্লি ম্যারেজ এবং নিজেদের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে বলে আলোচনা শুরু করে দিল। তাদের সেই আলোচনা মনে হচ্ছিল দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে তারা কথা বলছে। আমি ফাকে ফাকে কিছু পার্টিসিপেইট করছি। আর ডুবে যাচ্ছি নিসংগ কিছু ভাবনার জগতে। এত সুন্দর পরিবেশে ভাবনাগুলো কে আর্টিকুলেইট করার সুযোগ কি মিস করা যায়??

এরপর সেদিনের মত ভ্রমন বিরতি দিয়ে রাত ৯টার দিকে সবাই আপুর বাসায় ফিরলাম। জাস্ট একটা ঘুম দিয়েই সকাল ৭টায় চলে গেলাম বাসস্ট্যান্ড। উদ্দেশ্য রাঙ্গামাটি ভ্রমন। প্ল্যান বুবুর..

সকাল ৮টার বাসে উঠে পড়লাম। এই রাঙ্গামাটি ভ্রমনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্ট ছিল উচুনিচু পাহাড়ের বুক চিরে আকাবাকা পথ বেয়ে, সবুজ পাহাড়ের সমারোহে পুরা রাস্তার দৃশ্য অবলোকন করা। সকালের নাস্তা রাংগামাটিতে সেরেই চলে গেলাম কাপ্তাই লেক ভ্রমনে। দুঃখজনক হলেও সত্য ঝুলন্ত ব্রিজ আর ঝুলে নাই, সেটা পানিতে ডুবে আছে। তাই ঝুলন্ত ব্রিজে আর ঝুলতে পারলমনা। কিন্তু সেজন্য আমাদের রাঙ্গামাটি ভ্রমন একেবারে পানিতে ডুবে যায়নি। সাম্পানে করে সবাই মিলে পানির বুকে বিচরন করলাম ঘণ্টাখানেকেরও বেশি। উফ!! সেটা ছিল এক দারুন অভিজ্ঞতা। মামুন তো সেখানের স্বচ্ছ পানি বোতলে ভরে ঢকঢক করে পান করল। আর তখনি ওর সাথে আমার শুরু হল সিভিক সেন্স নিয়ে তর্ক বিতর্ক। থাক সেটা আর না বলি।


(বাসের জানালা থেকে পাহাড়ি আকাবাকা পথ)


(ঝুলন্ত ব্রিজ এখন ডুবন্ত)


(সাম্পানের উপর থেকে কাপ্তাই লেক)

এরপর সোজা রেস্টুরেন্ট। সেখানে ছুরি শুটকি ভর্তা,সব্জি,ডাল দিয়ে আমি আর বুবু খেলাম। আর মামুন ও যুথি খেল রুই মাছের তরকারি। খুব হাই প্রাইস ছিল খাবারের, এক বাটি শুটকি ভর্তা ৮০ টাকা।

এরপর চট্টগ্রাম ফিরে যাবার টিকিট কাটলাম বিকাল ৪টায়। হাতে দুইঘন্টা সময় ছিল, বেরিয়ে গেলাম রাঙ্গামাটি মার্কেট ঘুরে দেখতে। একটি সুন্দর, বড়, মার্কেটে ঢুকে পড়লাম। ভিতরে এ.সি। চরম গরমে তখন ওই মার্কেটকে জান্নাতের কাছাকাছি মনে হচ্ছিল। অনেক কিছু কিনব বলে সিলেক্ট করলাম। যা কিনতে ইচ্ছা করে কিন্তু কিনতে পারবনা বলে সাসপেক্ট করলাম সেগুলো নিয়ে বহু ছবি তুললাম। শেষমেষ দুইটি ওড়না কিনেই পাশে একটি সবুজ মাঠে বসে গেলাম আরো কিছু সময় পার করার জন্য। তখনই হিসাব নিকাশ করে দেখি আমার কাছে কোন টাকা আর নাই। মামুনের সাথে তখন ছোট খাট একটি ঝগড়া হয়ে গেল। কারণ সে কোন টাকা দিতে পারবেনা এই ভ্রমনে, সবকিছু বিয়ার করতে হবে আমাকে।

যাইহোক খুব বিরক্ত মন নিয়ে যখন বাসে উঠলাম তখন মামুন আমাকে ৫০০টাকা দিয়ে বলল, "আর কত লাগবে বল? কোথায় কোথায় ঘুরবি, সব টাকা আমি দিব..." মন ভাল হয়ে গেল।থ্যাঙ্কস টু মামুন।

আপুর বাসায় রাত৯টায় পৌছলাম। সেখান থেকে রাত ১০টায় আরিফার নিজ হাতে রান্নার বিশেষ নিমন্ত্রনে চলে গেলাম আরিফার বাসায়। এত মজা লেগেছিল ওর হাতের রান্না, যে আমি প্রতিটা মেন্যু খেয়ে মুগ্ধ। ওর জামাই অনেক লাকি হবে নিঃসন্দেহে।

প্ল্যান ছিল ভোরে কক্সবাজার যাব, কিন্তু হেলাল ভাইয়ায় পা মচকানোর সংবাদের কক্সবাজার প্ল্যানে ভাটা পড়ল। তাই আর ভোরবেলা উঠিনি। সকাল ১০টায় যখন নাশতার টেবিলে সবাই নাশতা করছি তখন মামুন নাছোড়বান্দা আমাদের কক্সবাজারে নিয়েই ছাড়বে। এজন্য নাকি সে গত রাতে দুলাভাইয়ার কাছ থেকে টাকা ধার করে নিয়ে এসেছে। ভাঙ্গা পা নিয়ে হেলাল ভাইয়া আমাদের সাথে গেলেন। আরিফা,যুথি,আমি,মামুন এবং হেলাল ভাইয়া সহ দুপুর ১টার বাসে রওনা হলাম সাগর পানে।

এরমধ্যে যুথির এক্সাইটেশান ছিল সবচাইতে বেশি। সে কখনও সাগর দেখেনি, এবার দেখবে...৪ঘন্টা জার্নি শেষে যখন কক্সবাজার পৌছলাম তখন সন্ধ্যা। হোটেল রিগ্যাল প্যালেসে ২টি রুম ঠিক করে আমাদের যাবতীয় ব্যাগ রেখেই ছুটে গেলাম রাতের সাগর দেখতে।

সাগরের গর্জন ছিল মাইন্ডব্লোয়িং। সাথে সাথে ফোন দিলাম মা কে। সেই ক্লাস ফাইভে থাকতে বাবা-মা সহ কক্সবাজার এসেছিলাম। তখনের অনুভূতি আর এখনের অনুভূতি পুরাই ভিন্ন। মা বলল," এই বয়সে নাকি সামান্য সবুজ ঘাস দেখলেই খুব রোমাঞ্চ লাগবে, আর সাগর, সাগরের ঢেউ তো কথাই নেই"...আসলেই তাই। থ্যাঙ্কস টু মামনি।

জুতা খুলে পা ভিজালাম। সামনে অসীম সাগর, উপরে বিশাল আকাশ, সাথে চাদের আলো, ঢেউয়ের রিদমিক গর্জন..........এক অন্যরকম পরিবেশ। এটাকে বর্ননা করা যাবেনা, ছবি দিয়ে প্রকাশ করা যাবেনা, কাউকে শুনিয়েও তৃপ্তি পাওয়া যাবেনা। এত সুন্দর মোহময় পরিবেশের মধ্যেও হেলাল ভাইয়া এবং মামুন দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের জুতা পাহারা দিচ্ছিল, পানিতে নামার বিন্দুমাত্র তাদের ইচ্ছা হয়নি। নাহ! এতটা ধৈর্যশিল না আমি। সাগর দেখতে এসে যদি সাগরের পানি দিয়ে নিজেকে না ভিজালাম তাহলে আর কি দেখার মানে রইল?



(কক্সবাজারে হোটেলের বারান্দা থেকে সাগরের দৃশ্য)


(সমুদ্র বিলাসে মত্ত তিনটি মেয়ে)

সমুদ্র বিলাস শেষে ঘুরতে বের হলাম বিভিন্ন মার্কেট দেখতে। সেই মার্কেটেই পরিচয় হল বুয়েটের এক স্যারের সাথে। বেচারা এই মধ্য বয়সেও তার ওয়াইফের বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘুরে নানা জিনিস কেনার পেইন সহ্য করতে হচ্ছে। মেয়েরা কেবল মেয়েই থেকে গেল। এরপর আমরা ঢুকে গেলাম রেস্টুরেন্টে রাতের ডিনারের জন্য। অর্ডার দিলাম লইট্যা মাছের ফ্রাই,শুটকি ভর্তা,গরু, চিংড়ি শুটকি,ডাল,সব্জি ও সাদা ভাত। লইট্যা মাছের ফ্রাই অদ্ভুত টেস্টি একটি খাবার। না খেলে এটাও মিস করতাম।

এরপর রুমে ফিরে গেলাম, গোসল, নামাজ সেরেই ঘুম। সকালে উঠে নাশতা করে আবার সাগর পানে ছুটে গেলাম। টানা দু'ঘন্টা সাগরের পানিতে ভিজলাম। তখনও মামুন এবং হেলাল ভাইয়া আমাদের জুতা ও ব্যাগ পাহারার দায়িত্বে ছিলেন, পানির ধারে কাছেও তারা আসেনি। সাগরে যখন মনের সুখে ভিজতেছি তখন পরিচয় হল ঢাকা মেডিকেলের ফরেন্সিক মেডিসিনের স্যারের সাথে। স্যার তার ছোট মেয়ে নিয়ে সাগরে নেমেছে। আমাদের সাথে খুব ফ্রেন্ডলি আচরন করলেন, ফেইসবুকে তাকে এড দিতে বললেন। ফেইসবুক একটা জিনিস বটে! ফ্রেন্ড হবার জন্য বয়স সেখানে কোন বাধা দেয়না। আমরা যখন স্যারের ছোট মেয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম স্যার তখন জানিয়ে দিলেন তার একটি বড় মেয়ে আছে যে কিনা আমাদের চেয়েও বড়। ফ্যামিলি প্ল্যানিং টা দারুন লেগেছিল। যাইহোক সাগরে দৌড়াদৌড়ি,ঝাপাঝাপি, ভেজাভেজি আমরা তিনটি মেয়ে একসাথেই করলাম। আর দূর থেকে আমাদের কেবল পাহারা দিচ্ছিল দু'টি নিরস ছেলে।

এরপর ফেরার পালা। চট্টগ্রামের বাসে ঊঠে পড়লাম ১টার দিকে।মন খুব বিষন্ন ও খারাপ। মনে হচ্ছিল খুব কাছের কাউকে ছেড়ে চলে আসছি। সমুদ্র পাড়ে যদি সারাজীবন থাকতে পারতাম !! সমুদ্র পাড়ের কোন ছেলেকে বিয়ে ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকলে একবার ট্রাই করতাম। !!! সত্যি !!

চট্টগ্রাম পৌছেই ঢাকা ফিরার টিকিট কেটে আপুর বাসায় চলে গেলাম। সেখানে গোসল,খাওয়া,ও রেস্ট নিয়েই রাত ১১টার বাসের উদ্দেশ্যে বিদায় নিলাম সবার কাছ থেকে। যথারীতি ১১টার বাস আসল ১২টায়। মন খারাপ আর ঘুমের মধ্যে শেষ হয়ে গেল আমাদের ভ্রমন। এক নিশীথের চরম উদ্দীপনা নিয়ে যে ভ্রমন শুরু করেছিলাম, চরম মন খারাপ নিয়েই সেই নিশীথেই ভ্রমন সমাপ্তি হল।

শেষ কথাঃ আমরা প্রতি ওয়াক্তের নামাজ বিভিন্ন জায়গায়,বিভিন্ন পরিবেশে পড়েছি। কোথাও জায়গা না থকলে অপরিচিত কাউকে বলতেই সে আমাদের বিশেষ ভি.আই.পি জায়গায় নামাজের প্লেস করে দিয়েছে। রাঙ্গামাটি তে,বাটারফ্লাই পার্কে,মিনি বাংলাদেশ,পতেঙ্গা,কক্সবাজার সবজায়গায় নামাজ আদায় করার অভিজ্ঞতাও উল্লেখ করার মত। সাগরের বিশালতা যেমন মনে প্রশান্তি এনেছিল, কিংবা সবুজ পাহাড় মনে রোমাঞ্চ যুগিয়েছিল তখন বুঝেছিলাম কৃত্তিম সৌন্দর্যের কাছে সৃষ্টিকর্তার আর্কিটেকচারের কোন তুলনায় হয়না। কারন ঢাকায় ফেরার পর প্রজাপতি পার্ক কিংবা মিনি বাংলাদেশের অনুভূতি আমাকে টানেনি যতটা এখনও টানে অদম্য সাগরের ভিজে যাওয়া, ঢেউয়ের গর্জন, রাতের সমুদ্রে চন্দ্রাসক্ত হবার স্মৃতি, সবুজ পাহাড়ের সাথে না বলা বহু বাক্য......
আর চট্টগ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে যারা আমাদের সংগ দিয়েছে তাদের বন্ধুবাৎসল্যের কাছে চির কৃতজ্ঞ।

ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-কক্সবাজার-ঢাকা
বিষয়শ্রেণী: ভ্রমন কাহিনী