বুধবার, ৯ মে, ২০১২

২৩বছর পর....




ফ্ল্যাশ ব্যাক করে পিছনে যাই। শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। তখন কেবল কেজিতে পড়ি,কিন্ডারগার্টেন একটি স্কুলে। ফাইনাল পরীক্ষার রেসাল্ট দিল। ফার্স্ট হলাম। তখন একটা ব্যাপার ছিল, আনন্দের কোন কিছু হলেই বড় চাচুর বাসায় চলে যেতাম। জীবনের প্রথম কোন ভাল রেসাল্টের গিফট বড় চাচুর কাছ থেকেই সেবার প্রথম পেয়েছিলাম। একটি লাইব্রেরিতে নিয়ে গিয়েছিল বড় চাচু। সেখান থেকে মোল্লা নাসিরউদ্দিন,গোপাল ভাড় ও টুনটুনির গল্প নামক তিনটি বই কিনে দিয়েছিলেন। বই যে মানুষকে এত আনন্দ দিতে পারে সেই ছোট বয়সে এটা ভেবে আমি সত্যি অনেক বিস্মিত হয়েছিলাম। ছোট থাকতে আমার খেলনার সেরকম আগ্রহ ছিলনা, যতটা ছিল বইয়ের প্রতি। কারণ, বড় চাচু আমাকে বই এর পোকা বানিয়ে দিয়েছিলেন।

এরপর কোন ছুটি হলেই সাথে সাথে বড় চাচুর বাসায়। বড় চাচু আমাকে কবিতা শুনাতেন। কবিতার মোরাল লেসন গুলো বুঝাতেন। কাজী নজরুল ইসলামের “লিচু চোর” কবিতা আমাকে তিনি এতবার শুনিয়েছেন যে শুনে শুনেই আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। আসলে বড় চাচুর মেয়ে ও ছেলে দুজনই তখন ইন্টার পাশ করে ভার্সিটিতে পড়ে। সুতরাং বড় ভাইয়া ও বড় আপুর সাথে বয়সের গ্যাপ থাকা সত্ত্বেও বড় চাচুর বাসা খুব ভাল লাগত। তার কারণ একটাই, বড় চাচু। আমার প্রতি জন্মদিনে বড় চাচু আমাকে বই গিফট করতেন। বইএর প্রতি আমার নেশা তৈরির পিছনে বড় চাচু ছিলেন একমাত্র কারণ।

এখনও মনে আছে, সেবার তখন সম্ভবত ক্লাস টুতে পড়ি। প্রিন্সেস ডায়ানা মারা গেল। টিভিতে লাইভ সম্প্রচার হচ্ছে তাকে নিয়ে। তার কফিন নিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব তাকে দেখছে। বড় চাচুর বাসায় তখন আমিও সবার সাথে দেখছি। হঠাৎ আমার মনে প্রশ্ন জাগল আচ্ছা ডায়ানা কি নামাজ পড়ে? সাথে সাথে বড় চাচুকে জিজ্ঞেস করলাম এটা। এটা শুনে তো বড় চাচু হাসতে হাসতে শেষ। আমি বললাম যদি ডায়ানা নামাজ না পড়ে তাহলে তার মৃত্যু নিয়ে সারাবিশ্ব এরকম কেন করছে। সে তো ভাল মানুষ না। পরে বড় চাচু আমাকে বুঝিয়েছিলেন, ডায়ানা তো মুসলিম না, সে খ্রিস্টান ধর্মের। সে তার ধর্মে খুব ভাল মানুষ ছিল, সে একজন প্রিন্সেস,রানী। তাই সারা বিশ্ব তাকে এভাবে দেখছে। আহ! কি ছেলেমানুষই না ছিলাম।

মেডিকেলে চান্স পাবার পর সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন বড় চাচু। আমার এই ভাল রেসাল্টের খবর শুনেই সাথে সাথে দাদাবাড়িতে সবাইকে খাওয়াইছিলেন। প্রতি ঈদ দাদাবাড়িতে বড় চাচুর সাথে একসাথেই করতাম। কিন্তু যে ঈদে বড় চাচুকে কাছে পাইনি,বুঝতে পারিনি সেটাই ছিল বড় চাচুর জন্য শেষ ঈদ। চলে গেলেন বড় চাচু আমাদের ছেড়ে একেবারে....

এরপর মনে আছে কিন্ডারগার্টেন থেকে ক্যন্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। প্রথম যেদিন ক্লাস করতে গেলাম সেদিন ক্লাসের ফার্স্ট গার্লের উপর খুব রাগ হয়েছিল। কি ভাবই না মারে সে! দীনা কে আমার সত্যি খুব বিরক্ত লেগেছিল, যতই সে ফার্স্ট হোক না কেন। গেইম পিরিয়ডের সময়ও সবার উপর সে একটা ইনভিসিবল ডোমিনেট করে। কিন্তু আমি ক্লাস করার ৩দিন পরই জেনেছিলাম ও স্কুল থেকে টিসি নিয়ে চলে যাচ্ছে, কারণ তার বাবার পোস্টিং হয়ে গেছে। কি যে খুশি হয়েছিলাম। কে জানত এই দীনার সাথেই আমার দেখা হবে দীর্ঘ আট বছর পর ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ! খুব সিম্পল একটি ঘটনা। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে দুজন ঘটনাক্রমে একসাথে বসেছিলাম। এরপর কথায় কথায় কে কোন স্কুল থেকে আসলাম এটা নিয়ে পোস্টমর্টেম করতে গিয়েই টের পেলাম আরে এতো সেই দীনা যাকে বোর্ড স্কুলে প্রথম তিনদিনে আমার সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লেগেছিল। প্রথমে বুঝতে পারিনি, দীনার নাম ঠিকই মনে ছিল আমার। যখনি সে বলল বোর্ড স্কুলে সে ফার্স্ট হত এবং ক্লাস টু থেকে সে টিসি নিয়ে চলে যায় তখনই ওকে ডিটেক্ট করে ফেলি। এরপর আর কি! কলেজে থাকতে দীনাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল।

ক্লাস টু থেকে থ্রি তে ভর্তি হবার জন্য পাবলিক স্কুলে এডমিশান দিলাম। পাবলিক স্কুল তখন খুব এরিস্টোক্রেটিক ফ্যামিলির ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করে। প্রথম দিনই সবার খুব বিরূপ আচরন। মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে মেনে নিতে পারছেনা। তারউপর ক্লাসে আমি পড়াশুনা কিছুই সেরকম বুঝতে পারছিনা। কেউ আমাকে হেল্প করছেনা। ইংলিশ ক্লাসে ম্যাডাম পুরাটাই ইংলিশে পড়াত আমি কিছু বুঝতামনা। কিন্তু আমার আশে পাশে সবাই সবকিছু বুঝে। ফার্স্ট টার্ম খুব খারাপ হল রেসাল্ট। এরপর আব্বু আমাকে ইংলিশ পড়ালো, বুঝালো। এর পরের টার্মেই রেসাল্ট একেবারে প্রথম সারিতে চলে এল। দেখলাম সবাই আমার সাথে এবার কিছুটা মেশার চেষ্টা করছে। তাসকিনা ও ফারহা তখন ক্লাসে জুটি ছিল। দুই বান্ধবির জুটি সবার কাছেই পপুলার। তাদের রোলও পরপর। কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল তাদের ভিতর। ফারহা আমার সাথে খুব সখ্যতা গড়ে তুলল। এরপর আমি আর ফারহা হয়ে গেলাম দুজন দুজনের খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড। ক্লাস ফোরে উঠলাম।আমার আর ফারহার রোল এবার পাশাপাশি। জাকিয়া তখন ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল। খুব ভাব আর অহংকারী ছিল। স্বাভাবিকভাবেই ওকে আমার তাই খুব অপছন্দ ছিল। ছোটবেলা থেকেই খুব স্বাধীনচেতা ছিলাম। কেউ আমার সামনে খুব ভাব দেখাবে, ডোমিনেট করার চেষ্টা করবে সেটা আমি কখনই মেনে নিতামনা। জাকিয়াকে তাই মেনে নিতে পারিনি। ক্লাসে কেউ জাকিয়ার মুখের উপর কোন কথা বলার সাহস পেতনা। ও যদি হোমওয়ার্ক করে না আনত তাহলে ওর আগে কেউ হোমওয়ার্ক জমা দেয়ার সাহস পেতনা। সবখানেই তাকে খুব সমীহ করে চলত সবাই। কিন্তু আমি করতামনা মোটেই। একদিন ক্লাসে হোমওয়ার্ক ছিল, কিন্তু জাকিয়া করে আনেনি বলে কেউ জমা দিচ্ছেনা। আমি আর ফারহা দুজন জমা দিলাম। স্যার তো আমাদের গুড দিলেন, খুব প্রশংসা করলেন। জাকিয়ার সাথে সেই সূত্রেই সম্পর্ক আরো বেশি শীতল হয়ে গেছিল। এরপর যখন ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে উঠলাম,ফারহা সকাল বেলা আমাকে একটি নিউজ দিল। বলল, জাকিয়া স্কুল থেকে টিসি নিয়ে বোর্ড স্কুলে চলে গেছে। আমি তো অবাক! এত ভাল স্কুলে কেউ চান্স পায়না, আর সে এটা ছেড়ে চলে গেল!! পরে জেনেছিলাম, জাকিয়ার ফ্যামিলি খুব একটা স্বচ্ছল ছিলনা। পাবলিক স্কুলে সিভিলদের খরচ অনেক বেশি। তাই স্কুলের যাবতীয় খরচ চালাতে পারছিলনা বলে টিসি নিয়ে বোর্ড স্কুলে গেল। তখনই আমার জাকিয়ার প্রতি একটা সিমপ্যাথি অনুভব হল। খুব বেশি মিস করছিলাম জাকিয়াকে........আর যখন চট্টগ্রাম ছেড়ে যশোর চলে গেলাম তখনই হারিয়ে ফেললাম স্কুল জীবনের সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড ফারহা কে। মোবাইল ছিলনা তখন। আর কন্ট্যাক্ট হয়নি কোনদিনও.....

চট্টগ্রামের তিন্নি আপুর কথা এখনও মনে পড়ে। বাসা থেকে পাবলিক স্কুল অনেক দূরেই ছিল। স্কুলের বাস মিস হয়ে গেলে হেটে হেটেই যাওয়া লাগত। কারণ বাসায় এসে আম্মুকে ভয়ে বলতামনা যে বাস মিস করে ফেলেছি। তিন্নি আপুও তখন পাবলিক কলেজে পড়ত। একসাথেই যেতাম হেটে হেটে। আমাকে যে কত ধাধা আর কৌতুক শুনাত আপু। খুব খুব মিস করি আপুকে এখনও।
আমার ভাই তখন ছোট, ক্লাস টুতে পড়ে আর আমি ফোরে। কিন্তু দু’ভাইবোন দুই স্কুলে। ওর জন্য আমার খুব খারাপ লাগত। কারণ ও খুব ভীতু ছিল। যেকোন কারণেই সাথে সাথে কান্নাকাটি করত। একদিন আমি আমার স্কুল বাসে করে বাসায় ফিরছি, বাসের জানালা থেকে দেখি ও হেটে হেটে আসছে আর চোখে পানি। তখনই বুঝলাম নিশ্চয় ও স্কুলবাস মিস করেছে। সাথে সাথে আমি বাস থেকে নেমে গেলাম। ওকে বললাম, কাদছিস কেন? বলে বাস মিস করেছে, এতটা পথ সে কিভাবে একা একা হেটে হেটে যাবে? আসলেই অনেক দূর ছিল বাসা। আমিও কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু ওকে বললাম, এতে কান্নাকাটির কি আছে। আমরা দুজন মিলে হেটে বাসায় চলে যাব, কিচ্ছু হবেনা। সেবার আমি প্রথম অনুভব করলাম, আমি ওর বড় বোন।

আমি যে কতটা জেদী ছিলাম সেটা টের পেয়েছিলাম ক্লাস ফোরেই। সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষায় ৫০এ ৫০ পাবার কথা আমার। কিন্তু পেয়েছিলাম ৪৮। আমার নিজের উপর খুব রাগ হয়েছিল। স্কুল বাসে করে ফেরার পথে বাসায় আর ফিরিনি। অন্য জায়গায় নেমে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মনে হয়েছিল যেদিকে দুচোখ যায় আজকে সেদিক চলে যাব। হাটতে আছি তো আছি...হঠা খেয়াল হল আমার এখন বাসায় ফেরা উচিত। এরপর বহু বহু পথ ঘুরে তিন-চার ঘন্টা পর বাসায় ফিরলাম। কিন্তু বাসায় এসে কিছুই জানালামনা। ভাব এমন যে স্কুল বাস দেরি করেছে তাই আমার দেরি হয়ে গেছে। নিজের রাগ নিজের ভিতর কিভাবে এবসর্ব করতে হয় সেটা তখনই শিখে গেছিলাম।
এরপর অনেকটা সাদামাটা। যশোরে দাউদ পাবলিক স্কুলের লাইফ ছিল জাস্ট স্কুলে যাওয়া আর আসা। আর নিজের মত পড়াশুনা করা। ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল কিন্তু সবাই আমার থেকেও অনেক বেশি ম্যাচিউরড ছিল। ক্লাস টেনে পড়ার সময়ও আমি বুঝিনা এফেয়ার জিনিস আসলে কি। সেই আমি কিভাবে বুঝব ক্লাস সেভেনে পড়া কেউ এফেয়ার করতে পারে, সেটা নিয়ে যে গল্প,আড্ডা তার সাথে আমি কখনই যেতে পারিনি। এ কারণে সেরকম ফ্রেন্ডশীপ হয়নি গাঢ়ভাবে কারো সাথেই।
ফ্রেন্ডশীপ ছিল তখন আমার কাজিন মিতু আপুর সাথে। স্কুল দীর্ঘ ছুটি হলেই চলে যেতাম খালামনির বাসায়। মিতু আপুর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতাম। আসলে আমি কিছুই বলতামনা। শুধু শুনতাম। আবার মিতু আপুর ছুটি হলে আমাদের বাসায় চলে আসত। সারা রাত আমি বিভিন্ন গল্প, ঘটনা শুনে রাত পার করতাম। অনেক সুন্দর গান গাইতে পারত মিতু আপু। সারা রাত আমি উনার গান শুনেও রাত কাটাইছি। এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব ছিল তার সাথে। ফ্যামিলির কোন অনুষ্ঠানে যদি মিতু আপু না থাকে তাহলে আমি কখনই সেই অনুষ্ঠানে যেতাম না। বড় ভাইয়ার বিয়েতে আমি যাইনি, কারণ সেখানে মিতু আপু ছিলনা। কিন্তু ঠিকই আরেক কাজিনের বিয়েতে গিয়েছি। কারণ সেখানে মিতু আপু ছিল। ঠিক মৃত্যুর আগেরদিনও মিতু আপুর সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে আমার। হোস্টেলে ছিলাম তখন। মিতুর আপুর সাথে কিছুটা অভিমান চলছিল। কারণ সেবার ঈদে মিতু আপু শ্বশুর বাড়ি থেকে আসতে পারেনি, তাই দেখা না করেই আমি ঢাকায় চলে আসি। কে জানত মিতু আপুর সাথে আমার আর কোনদিন দেখাই হবেনা......
আমাদের বিল্ডিং এই থাকত নিতুরা। আমার এক ক্লাস জুনিয়র ছিল। কিন্তু খুব খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল ওর সাথে। মনে আছে ওর সাথে একবার খুব রাগ হয়েছিল। তাই ওর সাথে বিকালে খেলতে যেতাম না। তখন ওকে নিয়ে আমি ডায়েরি লিখতাম। অনেকদিন রাগারাগির পর যখন একদিন ও আমার সামনে এল তখন ওকে একটি চিঠি দিলাম। সেই চিঠিতে আমার যত রাগ,আবেগ,ভালবাসা ছিল ওর প্রতি সব লিখেছিলাম। ওটাই ছিল কাউকে দেয়া আমার প্রথম চিঠি। এরপর সব মিটমাট। বন্ধুত্বের অন্যরকম এক আবহে ছিলাম আমি। খুব বেশি ভালবাসতাম নিতুকে। প্রতি ঈদে, ঈদ কার্ড বানাতাম ওর জন্য। ওর সাথে ছাদে পিকনিক করতাম। হঠাৎ শুনি নিতুরা চলে যাবে ঢাকায়। ওর আব্বুর পোস্টিং। শেষ দেখা ওর সাথে হয়নি আমার। চলে গেল ও, আমিও হারিয়ে ফেললাম ওকে....

ক্লাস নাইনে উঠার পর খুব চিন্তায় ছিলাম সায়েন্স,আর্টস নাকি কমার্স নিব। ক্লাসে রোল যদিও প্রথম দিকেই ছিল কিন্তু আমি আসলে চাচ্ছিলাম অন্য কিছু। এই চিন্তার মধ্যেই বড় ভাইয়া আমাকে বলল, সায়েন্স নিলে নাকি খুব কম পড়াশুনা করলেই হয়ে যায়। খুব ইজি। একমাত্র বড়ভাইয়ার সাজেশান মনে ধরল। কম পড়াশুনা করলেই যদি হয়ে যায় তাহলে কেন আমি সায়েন্স নিবনা?
“আমার জীবনের লক্ষ্য” নিয়ে যখন বাংলা ২য়পত্রে রচনা লিখতাম তখন আমার অস্বস্তি লাগত । কারণ আমি চিকিৎসক হতে চাইনা, তারপরও আমাকে ওটা লিখতে হয়। আর্কিটেকচারের প্রতি আমার প্রবল ঝোক ছিল। কিন্তু আব্বু-আম্মু কখনই চাইতনা যে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। তাই আব্বু-আম্মুর সামনে, কেউ কি হতে চাই জিজ্ঞেস করলে বলতাম চিকিৎসক হব। কিন্তু ঠিকই মনে মনে হিসাব করতাম, কবে ইন্টার পরীক্ষা শেষ হবে। এরপর নিজের মত সব চয়েস করব। কিন্তু ইন্টার পরীক্ষার পর যখন মেডিকেল ও বুয়েট দুইটা কোচিংএ ভর্তি হলাম তখনি মেডিকেল নিজ থেকে চয়েস করে নিলাম। জীবনে আসলে অনেক কিছুই আমরা যেভাবে ভেবে রাখি সেভাবে হয়না। সবকিছু ক্যালকুলেইট করেও করা যায়না। সময়ের আবর্তে কখন কি চেইঞ্জ হয় কিছুই বলা যায়না।

গতকাল থেকেই খুব মন খারাপ ছিল বিভিন্ন কারণে। গতকালই ২৩বছর পূর্ণ হল আমার। অনেক না পাওয়ার বেদনায় যতটা না মন ভারাক্রান্ত ছিল তারচেয়ে বেশি ভারাক্রান্ত ছিল অনেক কিছু হারানোর বেদনায়। ফারহাকে এখনও খুব মিস অরি। ইস! জাকিয়ার সাথে যদি কোনদিন হঠাৎ করে দেখা হয়ে যেত! খুব নাটকীয়ভাবে নিতুর সাথে যদি পরিচয় হত হঠাৎ। বড় চাচুকে ভুলতে পারিনি, মিতু আপুকেও না। এখনও বড় চাচুর সেই কবিতা শোনানোর দিন মিস করি। এখনও কিছু কিছু গান শুনলে মিতু আপুর কথা মনে পড়ে। অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব এখনও অনেক বাকি। যাদের না চেয়েও পেয়েছিলাম তাদের অনেককেই হারিয়েছি। ২৩বছর পর তাই খুব নিঃসংগ লাগে। জীবনের পথে সামনে কি আছে, জানিনা। তবুও পথ থেমে থাকেনা, অবিরাম সেই পথেই পুরানো স্মৃতিকে মাড়িয়ে কেবল চলে যেতে হয়....

ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : জীবন,স্মৃতি,প্রিয়জন
বিষয়শ্রেণী: ব্লগর ব্লগর

কোন মন্তব্য নেই: