বুধবার, ৯ মে, ২০১২

ভালবাসার বন্ধন




মুহাম্মাদ। ২৫বছরের এক সুদর্শন,হ্যান্ডসাম,সৎ যুবক। যাঁর সাথে ৪০ বছরের এক বিধবা নারীর বিয়ে হয়েছিল। কেমন ছিল তাঁদের সেই ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবন?

অত্যন্ত ধনাঢ্য মহিলা ছিলেন খাদিজা। কিন্তু মুহাম্মাদের সাথে বিয়ে হবার পর তার সব সম্পত্তি নির্দ্বিধায় ইসলামের জন্য ব্যয় করতে কার্পন্য করেননি। একসময় এমন অবস্থায় এসেছে যে এই সম্পদশালী খাদিজাকে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন-যাপন করতে হয়েছে। কখনও খুব মানবেতর, দিন আনে দিন খায় পর্যায়েও চলে আসতে হয়েছে। অথচ মুহাম্মাদের সাথে খাদিজার এটা নিয়ে কখনও কোন অভিযোগ ছিলনা।

মুহাম্মাদের কাছে জীবরাঈল যখন প্রথম অহী নিয়ে আসলেন তখন মুহাম্মাদ অত্যত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে খাদিজাকে ডেকে বললেন তাকে চাদর দিয়ে আবৃত করে দিতে। সারা বিশ্বজাহানের পথপ্রদর্শক যিনি হবেন, যার প্রতি আবর্তিত হবে কুরআনের সুস্পষ্ট সত্য বানী তাকে যখন জীবরাঈল প্রথম অহী শুনানোর সূচনা করলেন তখন তো মুহাম্মাদ টেনসড হবেনই। মানসিক সেই চাপের মুহূর্তে খাদিজা তাকে সাপোর্ট দিলেন, বললেন- "ভয় পাবেননা। আপনি সত্য কথা বলেন, আমানত রক্ষা করেন, প্রতিবেশির হক আদায় করেন, এতিম ও গরীব কে সাহায্য করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন। সুতরাং আপনার ভয় পাবার কোন কারণ নেই"। কত দারুন! একেই না বলে ভালবাসা। এখনকার মেয়েরা অনেক শিক্ষিত এবং মডার্ণ। স্বামীর মেন্টাল ক্রাইসিসে তারাও কি এরকম সাপোর্ট দেয়? অবশ্য এখন যেভাবে পরকীয়া বেড়ে গেছে সেখানে সাপোর্টের চিন্তা অনেক পরে। স্বামীকে নিয়ে সন্দেহ করতেই অভ্যস্ত তারা। ক্রিটিক্যাল কোন মুহূর্তে কি এই শিক্ষিত, মডার্ণ মেয়েরা সেই অনেক আদি যুগের খাদিজার মত সাপোর্ট দিতে পারে? তারা তো জানেইনা তাদের স্বামীর আসলে কি কি পজিটিভ সাইড আছে। খাদিজা যখন মুহাম্মাদকে যেসব কথা বলে সাপোর্ট দিচ্ছিলেন তা ছিল মুহাম্মাদের জীবনে ধ্রুব সত্য। অযথা মিথ্যা, মন ভুলানো, আবেগের কথা দিয়ে সাপোর্ট দিতে হয়নি। মুহাম্মাদকে খুব ভালভাবেই জানতেন খাদিজা। তাই তাদের দাম্পত্য জীবনের ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে খাদিজা এভাবেই মুহাম্মাদকে মেন্টাল সাপোর্ট ও ভালবাসা দিয়ে গেছেন।

তৎকালীন আরবে সবাই মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে। প্রকাশে সবাই তার শত্রু। তার নামে বহু কুৎসা, নিন্দা তখন একটা বিনোদনে পরিণত হয়েছে। ঠিক সেই প্রতিকূল মুহূর্তে খাদিজা ঈমান আনলেন সর্বপ্রথম। মুহাম্মাদের প্রচারিত ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করলেন। কি অসাধারণ ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। স্বামীর প্রতি, তার আইডিওলোজির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ মিশ্রিত অগাধ ভালবাসার রিফ্লেকশান কি দারুন ছিল।

আচ্ছা, প্রশ্ন থেকে যায়। তরুণ, সুদর্শন যুবক মুহাম্মাদ কে নিয়ে কি খাদিজার কোন টেনশান ছিল? ছিল কি হারিয়ে যাবার ভয়? না, একেবারেই না। খাদিজার বিজনেসে যখন মুহাম্মাদ অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন তখনই খাদিজা চিনে নিয়েছিলেন খাটি রত্নকে। তাই নিজের জীবনে প্রিয়তম সঙ্গী করতে কুন্ঠাবোধ করেননি। স্মার্টলি মুহাম্মাদকে ঠিকই বাছাই করে নিয়েছিলেন, আর মুহাম্মাদকে দিয়েছিলেন ভালবাসাপূর্ণ এক সত্যিকার দাম্পত্য জীবন।

আর মুহাম্মাদ? খাদিজার মৃত্যুর অনেক বছর পরে যখন কুমারী, যুবতী আয়েশাকে বিয়ে করেছিলেন তখনও বৃদ্ধা, বিধবা খাদিজার স্মৃতি স্মরনে আবেগে আপ্লুত হয়ে যেতেন। কেবল আউটলুক যদি হত স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার মেইন পিলার তাহলে হয়ত মুহাম্মাদ-খাদিজার সম্পর্ক এরকম কালজয়ী হয়ে থাকতনা। ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবনের যে প্ল্যাটফর্ম তারা দিয়ে গেছেন সেখানে ছিল একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। আরো ছিল জীবনের আল্টিমেইট মিশনকে ফুলফিল করার এক যৌথ প্রয়াস যেখানে কেবল সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টিই তাদের ভালবাসায় ইন্ধন যুগিয়েছে।

প্রতিদিন পত্রিকায় অনেক নিউজ পড়ে খুব আপসেট হয়ে যাই। কিছুদিন আগে বহুল আলোচিত রুমানা-সাইদের আঠার বছরের দাম্পত্য জীবনের করুণ পরিণতির ঘটনা আলোড়ন ঘটাল। এরকম হাজারো রুমানা-সাইদের ঘটনা প্রতিদিন পত্রিকায় আসছে। হাজারো ভালবাসার বন্ধন শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ আত্বহত্যা করছে, কেউ মার্ডার করছে, কেউ প্রতারণা করছে, পরকীয়া করছে। ভালবাসার সম্পর্কের পিলার কোথায় যেন সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। খুব আপসেট ফিল করছি তাই। অত্যন্ত বিষন্ন হৃদয়ে যাঁর জীবনকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে তাঁর ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবনের কেমন ছিল সেটা থেকে ইন্সপায়ারড হবার প্রয়াস থেকে এটা লেখা।

আর লেখাটি উৎসর্গ করা হল প্রিয় বুবু এবং হাসান ভাইয়াকে। অন্তর থেকে দোয়া রইল, যেন তারাও এরকম ভালবাসাময় দাম্পত্য জীবনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে যেখানে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি তাদের ভালবাসার নদীকে আজীবন গতিময় রাখতে পারে, ভালনাসার বন্ধনকে চিরস্থায়ী করতে পারে।
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : ভালবাসা,বিয়ে,বন্ধন
বিষয়শ্রেণী: বিবিধ

কোন মন্তব্য নেই: