রবিবার, ৩ মে, ২০০৯

নারী ও ইসলাম


দুদিন পরেই এক্সাম।তাই মাথা গরম।সেলফ স্টাডি তো আছেই সাথে গ্রুপ স্টাডিও চলছে।মেডিকেল লাইফ এ পড়াশুনার বাইরে কোন কিছু চিন্তাই করা যায়না।মহাফাকিবাজ দের জন্য তাই মেডিকেল এ পড়া শাস্তি ছাড়া কিছুইনা।এক্সাম এর আগে আমার শুধুই এই কথাই মনে হচ্ছিল ।কি জানি জীবনে কোন এক পাপের শাস্তি হইত এর মাধ্যমে কাফফারা হয়ে যাচ্ছে।
লাইব্রেরি তে বসে যখন আমরা পাচ ফ্রেন্ড মিলে এইসব আলোচনা করছিলাম তখন আমাদের এক বন্ধু তখন বলতেছে,''তোরা মেয়েরা তোদের তো কোন চিন্তা নাই।বিয়ের আগে বাবার ঘরে আর বিয়ের পরে স্বামীর ঘরে থাকবি।চাকরি বাকরি নিয়ে তোদের কোন চিন্তা নাই।কিন্তু আমাদের অবস্থা দেখ।আমাদের এখন থেকেই চিন্তা করতে হচ্ছে কবে এম.বি.বি.এস পাস করব।কবে টাকা পয়সা ইনকাম করব ফেমিলি র জন্য + নিজের বেপার তো আছেই।'' এই সব বলে যখন সে আফসোস করতেছিল তখন আমার অন্য বান্ধবি রা খুব খেপে গেল।তারা মেয়েদের পক্ষে বলার জন্য আনেক কিছুই বলতেছিল।
আমি ওদের থামিয়ে দিয়ে বললাম '' দোস্ত আমি কিন্তু একজন মেয়ে হিসাবে অনেক হ্যাপি।আল্লাহ আমাকে অনেক ফ্যাছিলিটি দিয়েছে মেয়ে হয়ার জন্য।আমাকে আমার ফামিলির জন্য কোন চিন্তা করতে হয়না।বরং আমাদেরকে সংরক্ষন এর জন্য ছেলেদের অনেক চিন্তা করতে হয়।যা নিয়ে তুই এতক্ষন আফসোস করতেছিলি।বুঝিনা কেন যে মেয়েরা নারী আন্দোলন করে!!(আমার এই বন্ধু টা আবার নারী আন্দোলন এর সক্রিয় কর্মী)।ইসলাম ই যেখানে নারীর পূর্ণ অধিকার দিয়েছে সেখানে নারী আন্দোলন এর মানে আমি বুঝিনা।
এটা বলার পর পরই আমার ওই বন্ধু একটু নড়ে চড়ে বসল।সে এবার নারী আন্দোলনের গুরুত্ব নিয়ে বলতে থাকল।আমি তাকে বললাম যে তুই যতই নারী আন্দোলন করিস কিছুই করতে পারবিনা যতক্ষন পর্যন্ত তুই ইসলাম প্রতিষ্ঠা না করবি।ইসলাম এর কথা আসাতেই সে আমারে বলল আচ্ছা ইসলাম এ হিল্লা বিয়ে নামে যে ব্যবস্থা আছে তাতে কি তোর মনে হয়না যে এর মাধ্যমে নারী কে ছোট করা হয়েছে??এর জবাব তুই কি দিবি??
আমি বললাম হিল্লা বিয়ে নিয়ে ইসলাম এ যে নির্দেশ আছে তা কি তুই পুরাপুরি জানিস?? এর জন্য তুই কি একবার ও কুরআন পড়ে দেখেছিস?আসলে ইসলাম কি বলতেছে হিল্লা বিয়ে নিয়ে...এই কথা গুলা বলাতে আমার ফ্রেন্ড একটু ইতস্তত ফিল করতেছে।বললাম আমি তোকে ছোট করার জন্য এইগুলা বলতেছিনা।তখন সে হিল্লা বিয়ে নিয়ে যা জানে তাই বল্ল।সে যেটা জানে তা হল...''স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে সেই স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করার জন্য সেই স্ত্রীকে আরেকজন এর সাথে বিয়ে হয়া লাগবে এই শর্তে যে ২য় স্বামী বিয়ের পর তাকে তালাক দিবে।তাহলে ইসলাম এর মতে সেই ২য়বার তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে ১ম স্বামী আবার বিয়ে করে ঘরে তুলতে পারবে।''
আমি বললাম তুই জানিস বাট অর্ধেক জানিস।কারন ইসলাম এ কখনও কোন শর্তে এই বিয়ে করা যায়েজ না যে তাকে বিয়ের পরই তালাক দিতে হবে।বাট এটা ঠিক যে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর মনে করে যে তার ভুল হয়ে গেছে তাই সে তার স্ত্রীকে আবার বিয়ে করতে চায়,তখন সেই স্ত্রীকে অন্য কোথাও বিয়ে করতে হবে,যদি তার ২য় স্বামী তাকে তালাক দেয় তাহলে ১ম স্বামী তাকে আবার বিয়ে করতে পারবে।কিন্তু এখানে ২য়বার বিয়ের সময় তালাক দেয়ার কোন শর্ত দেয়া যাবেনা। আমার এই কথা শুনার পর সে বলল তাহলে সেই স্বামী বেচারার প্রতি অন্যায় হয়ে যাবে।আমি বললাম কেন?? তালাক হচ্ছে আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় হালাল কাজ।তালাক দেয়ার পুর্বে তাই অনেক সতর্কতার কথা ইসলাম এ বলা আছে।ইসলাম কখনো পারমিট করেনা যে স্বামী যখন তখন স্ত্রীকে তালাক দিবে আর মনে হলেই তাকে আবার বিয়ে করবে।নারী কোন অবহেলার বস্তু নয়।তাই স্বামীদের জন্য এই জটিল প্রছেস।তোর কি মনে হয় এতে নারীদের অবহেলা করা হয়েছে?আমার এই কথাগুলা শুনার পর আমার ওই বন্ধু টা বলল ''এখন তো আমার মনে হচ্ছে নারীদের নয় বরং ছেলেদের জন্য অনেক অন্যায় হয়েছে।''
আমি ওর কথা শুনে হাসলাম।সবাই একযোগে হেসে উঠল...।
সবার শেষে আমার ওই বন্ধুটা বলল যে হিযাব এর মাধ্যমে নারী কে অনেক পিছনে রাখা হয়েছে,তাদের কে স্বাধীনভাবে চলতে বাধা দেয়া হয়েছে।তখন আমি শুধু এইটুকুই বললাম ''তোর কি মনে হয় যে আমি হিযাব পরি বলে আমি অনেক পিছিয়ে আছি,স্বাধিনভাবে চলতে পারছিনা??''সে বলল তোর মত তো আর সবাই না।তোকে আর সব মেয়েদের কথাও ভাবতে হবে।আমি বললাম হিজাব যদি আমার ক্ষেত্রে কোন অধিকার নষ্ট না করে তাহলে ওন্য কারো জন্য তা করছেনা।প্রব্লেম টা হল পুরুষরা সমাজে ইসলাম এর ভুল অর্থ করে নারীদের অধিকার নষ্ট করতেছে।নারীদের অধিকার এর জন্য তোরা যদি সত্যি কিছু চিন্তা করিস তাহলে আমার মনে হয় তোদের ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করা উচিত।তাহলেই নারীর অধিকার আদায় হবে।কিন্তু দু:খের বেপার হল তোরাই ইসলাম থেকে দূরে সরে গিয়ে গাছের আগায় পানি ঢালতেছিস।
শেষে আমার ওই বন্ধু বলল দোস্ত তুই রাজনীতিতে নেমে পড়।আমি বললাম ইসলাম এর কথা মানে যদি তুই রাজনীতি বুঝিস তাহলে আমি তো রাজনীতি করতেছি।!! এই কথা তে সবাই আরেকবার হেসে উঠল।