রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০০৯

এক স্বাধীনতার গল্প...৩৮ বছর পর...

"স্বাধীনতা" শব্দটা মনে হলে এক ধরনের অনুভূতি কাজ করে ..একেবারে অন্যরকম । জানিনা কেন ?? এই অনুভূতিটা আরো বেশি গভীর হয় যখন মনে পড়ে ইরাক-কাশ্মীর যুদ্ধের কথা । যখন দেখি গাঁজায় নীরিহ মানুষের বিনা অপরাধে মৃত্যুর অমানবিক চিত্র ।
শুনি, তাদের স্বাধীনতার জন্য আকুল আর্তচিৎকার...তখন নিজেকে খুব বেশি লাকি মনে হয় একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হবার জন্য । প্রতিবার নামাজে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই

১৯৭১... এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা অর্জন করি আমাদের বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা..দোয়া করিসেই সব শহীদদের জন্য যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দেবার জন্য ।

স্কুলে থাকতেএকটা ভাব-সম্প্রসারন পরতাম , "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন"..তখন এটা ঠিকভাবে বুঝতাম না অথবা সেই ধরনের ম্যাচিউরিটিও সম্ভবত ছিলোনা এটাকে বুঝার মত..আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্কুল অধ্যায় পার করে কিছুটা বুঝতে পারছি ..


আমাদের physiology এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ম্যাডাম একদিন বলতেছিলেন, "আমাদের সময় অনেক মালেশিয়ান স্টুডেন্ট বাংলাদেশে মেডিকেল পড়তে আসতো..কিন্তু আজ স্বাধীনতার তিরিশ বছর পর আমাদের দেশ থেকে অনেক স্টুডেন্ট মালেশিয়াতে মেডিকেল পড়তে যায়".. সাথে সাথে মনে পড়ে যায়, হায়দার হোসেনের সেই গানটার কথা , "কী দেখার কথা কী দেখছি, কী শোনার কথা কী শুনছি, কী বলার কথা কী বলছি, কী ভাবার কথা কী ভাবছি..৩০ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি"...খুব হার্ট টাচিং গান !

এখন ২০০৯.... স্বাধীনতার এত বছর পর-ও তাহলে কেন এই গান?? শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান কেমন স্বাধীনতা চেয়েছিলেন যা এখনো আমরা খুঁজতেছি ???

আমি স্বাধীনতা-যুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু টিভিতে দেখেছি শেখ মুজিবের সেই কালজয়ী ভাষণ যা আমাকে ইমোশনাল করে তোলে..কিছুটা বুঝতে পারি স্বাধীনতার জন্য কেন এই গান?? আজ দেশের মানুষ পরাশক্তির হাত থেকে মুক্ত..কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে স্বাধীনতার আড়ালে আমরা আজো পরাধীন.. এই দেশের সরকার পরিবর্তন হয়..পরিবর্তন হয় স্বাধীনতার ছবি..পাঁচ বছর থাকে সরকারী দল ..তারা সবকিছুতে স্বাধীনতা উপভোগ করে..সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, হত্যা, চুরি, দুর্নীতি সবকিছু...
তারপর, পরের পাঁচ বছর সরকার পরিবর্তন হয়..পরাধীন হয় আগের পার্টি..পাঁচ বছর পরপর পরিবর্তিত হয় স্বাধীনতার ঘোষকের নাম খুব স্বাধীনভাবে..হায়রে আমার স্বাধীনতা !!!!


বিডিআর মিউটিনি, টক অব দ্যা টাইম.. স্বাধীন দেশের এতবড় সংকটময় মুহূর্তে পার্লামেন্টে দেখি সরকার বিরোধী দলকে দোষারোপ করতেছে...স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা মনে হলে তখন আমার হাসি পায়...দেশের বুদ্ধিজীবিরা বিডিআর-আর্মি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করে..কেউ বলে , "আরর্মি, নোও নীড, দে আর করাপ্টেড"... আমরা জানি পিলখানার এই ঘটনায় নিহত হয় অনেক আর্মি অফিসার যা কোন যুদ্ধেও হয়নি..জাতির এই দুর্যোগের মুহূর্তে কেউ আবার নিজেদেরকে স্বাধীনতার একমাত্র ধারক ও বাহক মনে করে একপেশে পলিটিক্স করে ...আমরা সামগ্রীক জীবনের থেকে ব্যক্তিগত মরনকে প্রাধান্য দেই..১৯৭১ এ দেশের সূর্যসন্তানরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো কি এইজন্য ???

২৬-শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস..দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার, আলোচনা, বিতর্ক, কবিতা-নাচ-গান হয়..২৬ মার্চ কে নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ হয়, কেবল আলোচিত হয়না স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যটা...ব্যক্তিপূঁজা হয়, কিন্তু ব্যক্তি-জীবনি থেকে আমাদের শিক্ষা দেয়া হয়না..আমাদেরকে শেখানো হয়না যে
"স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন"..বুঝানো হয়না, কিভাবে আমরা এই স্বাধীনতা রক্ষা করবো..শুধু হয় দলীয় সঙ্কীর্ণ আলোচনা..স্বাধীনতার সময়ে কার কন্ট্রিবিউশন বেশি ছিলো, মুজিব না জিয়া??? স্বাধীনতা দিবস কি আজ কেবল লৌকিকতায় পরিনত হয়েছে ??


আমি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে কোন আলোচনাসভাবর বিরুদ্ধে কথা বলতেছিনা, ..শুধু এটুকুই বলতে চাই যে১৯৭১ এর পর কত আলোচনা হলো , কত কবিতা রচনা হলো এই নিয়ে কিন্তু আমাদের অবস্থার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে ? ? ? আমাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্লেষণ থাকতে পারে স্বাধীনতা বিষয়ে কিন্তু আমি মনে করি চুড়ান্ত লক্ষ্য/গোল/মটো অভিন্ন.. কি সেটা? ..to uphold our liberation... কিন্তু আমরা কিভাবে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করবো সেটা আলোচনা করিনা.. আজকের তরুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যেমনটা উৎসাহিত, দেশের অনবরত অরাজক অবস্থা তৈরী করা সন্ত্রাসের বিচারের জন্য তারা ততটা উৎসাহ পাচ্ছেনা !
শামসুর রহমানের একটা কবিতা পড়েছিলাম, "স্বাধীনতা তুমি"... স্বাধীনতা বিষয়ে যে উপমাগুলো কবি সেখানে লিখেছেন তা কেবলি মনে হয় কবির কল্পনা ছাড়া আর কিছুনা । আজ "স্বাধীন" শব্দটার-ই অনেক রকম ব্যাখ্যা করে নিজেরাই এটাকে পরাধীন করে তুলতেছি...

আমাদের আসল ভুলটা হয়তো, স্বাধীনতার পরেই আমরা এমন কোন লিডার তৈরী করতে পারিনি যে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করবে..ফররুখ আহমদ তার "পাঞ্জেরী" কবিতায় মনে হয় এমনি একজন নাবিক কে আশা করেছিলেন ..

আমরা কোন মাহাথীর মুহাম্মাদকে পাইনি ..আমাদের রাজনীতিতে কেউ মুহাম্মাদ সা: এর আদর্শ নিয়ে আসেনি...যিনি ছিলেন সর্বযুগের সেরা পরিপূর্ণ একজন রাজনীতিবিদ... ..খুব খারাপ লাগে, তার উম্মত হয়েও - একটা মুসলিম দেশ হিসেবে আমরা তার আদর্শ এপ্লাই করতে পারিনি.. আজকে দেখি "ধর্মনিরপেক্ষতা" নাম দিয়ে কেউ স্বাধীনতার এক এবসার্ড পিকচার স্ট্যাবলিশ করতে চায়..আমরা কি কেউ ইতিহাস জানিনা ???...মুহাম্মাদ সা: যখন পুরো আরব বিজয় করলেন , তখন একমাত্র জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম কে প্রতিষ্ঠা করে একটা সফল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন...ক্ষমা করে দিলেন সেইসব মানুষদেরকে যারা তার সাথে বিরোধীতা করেছিলো , ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার "অধিকার" প্রতিষ্ঠা করলেন উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন , "তোমাদের প্রতি আজ আর কোন অভিযোগ নেই, তোমরা যেতে পারো, তোমরা আজ মুক্ত ও স্বাধীন...কি অপুর্ব উদাহরন আমাদের সামনে...হায় !! আমরা যদি সেটা বুঝতে পারতাম !!

মুহাম্মাদ সা: এর জীবনি কোন পীর-দরবেশের জীবনি নয়- নয় কোন আরব্য উপন্যাসের এডভেঞ্চারের কাহিনী যে আমরা শুধু রিক্রিয়েশনের জন্য সেটা পড়বো ... আমরা যতদিন পর্যন্ত এই কালজয়ী আদর্শকে বাস্তব জীবনে অনুসরন করতে না পারবো ততদিন পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নাই..আমাদের স্বাধীনতা তদিন পর্যন্ত কেবল লৌকিক আচার হিসেবে থেকে যাবে ...স্বাধীনতা কেবল থাকবে কবিতায়, আলোচনায় আর গানে...

স্বাধীনতার গল্পের শেষ এখানেই নয়..কারন এই গল্পের শেষ আমরা যেভাবে চাই তা এখনো হয়নি.. আমরা স্বাধীনতার আড়ালে পরাধীন থাকতে চাইনা...স্বাধীনতার নামে অরাজকতা চাইনা..সত্যিকার স্বাধীনতা চাই... সত্যিকার একজন নেতা চাই যার আদর্শ হবে মুহাম্মাদ সা: .. পূরণ করতে চাই সেই সব শহীদের রক্তের দাবী যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন একফোঁটা স্বাধীনতার জন্য...

আল্লাহ, আমাদেরকে এই স্বাধীনতার গল্প সফলভাবে শেষ করার তাওফিক দান করো । আমাদের মধ্যেই আবির্ভাব হোক একজন মাহাথীর মুহাম্মাদ , একজন ইউসুফ বিন তাশফিন , একজন তারিক বিন জিয়াদ যারা প্রতিষ্ঠা করবে আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা..আমিন..