বুধবার, ৯ মে, ২০১২

প্রশান্ত হৃদয় !



মেঘলা দিনে কি কারো মন খারাপ থাকতে পারে? মনের যত দুঃখ, ক্ষোভ, আক্ষেপ, না পাওয়ার হতাশা সব বৃষ্টির অঝোর ধারায় ধুয়ে মুছে একেবারে বিলীন হয়ে যায় না?

তীব্র গরমের পর বিকেলে যখন আকাশ কালো করে চারিদিক অন্ধকার হয়ে উঠে তখন মনের কোনায় এক চিলতে আনন্দ ঝিলিক দেয়। এখনি নামবে বৃষ্টি। হিমেল হাওয়া বইবে। চারদিক ঠান্ডা হয়ে যাবে। এক শীতল পরশ চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে। এই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।অ-নে-ক.. শুধুমাত্র এই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা উপভোগ করার জন্য হয়ত পৃথিবীকে আমি সবসময় ভালবাসব। কিংবা খুব ভোরের ঝুম বৃষ্টির শব্দে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই ঘুম ভাঙ্গা মুহূর্তে নিশ্চুপ চারদিকের বৃষ্টিভেজা ভোরের জন্য পৃথিবীকে অ-নে-ক বেশি ভালবাসব।



নাহ! শুধু বৃষ্টি না। অথই, উন্মত্ত সাগরের উথাল পাতাল ঢেউ এর গর্জনের মধ্যেও যে অদ্ভুত এক ধরনের হৃদয় ছুয়ে যাওয়া অনুভূতি আছে সেটার কি কোন তুলনা হয়? সামনে বিশাল জলরাশির সামনে যখন একাকি আনমনে কিছুক্ষন বসে থাকি তখন সৃষ্টির সব সৌন্দর্য মনে হয় কেবল এই সাগরের মধ্যেই ঢেলে দেয়া হয়েছে। মনটা কেমন যেন আনচান করে উঠে। এত্ত ভাললাগা অনুভূতির ভিতরেও কেমন যেন শূণ্যতা তৈরি হয়।



এই সাগরের ঢেউ আর সাথে যদি রাতের আকাশে হাজার তারার মেলার মাঝে চাঁদের আলোয় চারপাশের অন্ধকার এক ধরনের আলো-ছায়াময় মায়াবি পরিবেশ সৃষ্টি করে তখন কেমন লাগে? মনে হয়না, ইশ! এই পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য যে দেখেনি সে ভালবাসার অর্থও বুঝেনি।
চাঁদের আকর্ষনে জোয়ার-ভাটা হয়। জোয়ার ভাটা কি কেবল সাগরেই হয়? মনের ভিতর যে উত্থাল পাতাল ঢেউ জীবনের সব আকাঙ্ক্ষা,প্রত্যাশা আর না পাওয়ার হিসাবকে একেবেরা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় সেটার জন্যও কি হৃদয়ে জোয়ার-ভাটা হয়না? শরীরের ৭০ভাগই পানি। তাই হয়ত চাঁদনী রাতে আমাদের হৃদয়মনেও একধরনের জোয়ার-ভাটা হয়। সেই জোয়ারে জীবনের ফেলে আসা সব কিছু ভাসিয়ে কেবল সামনের দিকে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়না আমাদের?

শরতের আকাশের স্নিগ্ধতা আর ঘন কাশফুলের স্নিগ্ধতার সাথে মিশে যাবার অনুভূতি কেমন? মনে হয় সাদা মেঘের সাথে আমিও ভেসে বেড়াই সারা আকাশ জুড়ে।



কিংবা শীতের সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঘেরা পৃথিবীকে কেমন লাগে? সবকিছুকে খুব রহস্যে ঘেরা মনে হয়না ! কুয়াশা ঢাকা সকাল যখন সূর্যের হাসিতে আলোকিত হয় তখন এক মুঠো রোদ্দুরের যে প্রতীক্ষায় অপেক্ষারত মন তা অজান্তেই নেচে উঠে না !

সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্তে কার কথা বেশি মনে পড়ে? বৃষ্টিমুখর দিনে কাকে বেশি কাছে পেতে চায় মন। সেই প্রিয়জনের সাথে কাটানো পু্রোনো স্মৃতিই সেই বৃষ্টিমুখর দিনকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেনা ! ইচ্ছা করেনা, প্রিয়জনের সাথে কোন এক সুন্দর বিকেলে দূর-বহুদূর হেটে যেতে। পাশে থাকবে সারি সারি গাছের ঘন ছায়া আর মন জুড়ানো হিমেল হাওয়া। কিংবা কোন এক চাঁদনী রাতে নৌকার উপর দুজনে বসে চাঁদ দেখা আর সারারাত গল্প করা। ইচ্ছা করেনা?



এত সৌন্দর্য চারপাশে। এত মাধুর্য চারদিকে। আর কিছু লাগে মন ভাল করার জন্য? সব দুঃখ-কষ্টকে খুব তুচ্ছ মনে হয় তখন। সীমাহীন ভাললাগার অনুভূতিতে হৃদয় ছেয়ে যায়। কিন্তু এতকিছুর পরেও ঠিক কোথায় যেন এক শূন্যতা থাকে। ঠিক বুঝানো যায়না, কিন্তু অনুভব করা যায়। এত ভাল লাগার মধ্যেও হৃদয়ের প্রশান্তি আসেনা সেই শূণ্যতার জন্য।

হৃদয়ের প্রশান্তি খুজে বেড়াই পাগলের মত। এই অসীম মায়াময় সৌন্দর্যে ঘেরা জগত খুব স্পষ্টভাবেই কি যেন আমাদের হৃদয়ে অনুভব করাতে চাই। সেই অনুভূতির ক্লাইমেক্সে যেতে পারিনা বলেই হয়ত একধরনের শূণ্যতা অনুভব হয়। প্রশান্তি আসেনা।

বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ হৃদয়ে যে ছন্দ তৈরি করে, চাঁদনী রাত মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা যে বেদনাকে ভুলিয়ে দেয়, বিশাল সীমাহীন সমুদ্রের গর্জন হৃদয়ে যে জোয়ার আনে এসব কিছু কি এমনি এমনিই হচ্ছে? এসব মায়াময় সৌন্দর্য কি কেবল আমাদের জীবন, ফেলে আসা অতীত আর আগত ভবিষ্যতের হাতছানির দিকেই ইশারা দেয়? জীবন তো একদিন শেষ হয়ে যাবে। জীবনের ক্যনাভাসের এসব অসাধারণ চিত্র কি শুধুই ক্যামেরায় বন্দি করে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আনন্দ পাবার জন্য? ফটো তুলে ক্যাপশানে লিখলাম, Life is really beautiful. ব্যস এটুকুই? অন্তরের পিপাসা এতে মিটেনা। তৃষ্ণার্ত হৃদয় খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তাই বলে উঠে উদ্দেশ্যবিহীন এরকম নশ্বর ভাললাগার অনুভূতি নিয়ে এত মাতামাতি কিসের?



কুরআনে এই নশ্বর মায়াবী সৌন্দর্যের অনুভূতির ক্লাইমেক্স কিভাবে অর্জিত হয় সেটা এত নিখুতভাবে বর্ণিত হয়েছে,

“যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। (তারা আপনা আপনি বলে ওঠেঃ) “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।” সূরা-আল ইমরান

অচিরেই হৃদয়ের শূণ্যতা কেটে যায়। এক গভীর প্রশান্তিতে মন ভরে যায়। আমাদের চারপাশ, প্রকৃতি, আকাশ, পৃথিবী, বৃষ্টি, সাগর, চাঁদ, জ্যোৎস্না সবকিছুই অনুভূতির এই ক্লাইমেক্সে না আসা পর্যন্ত শূণ্যতা রয়ে যায়। এত্ত মায়াবী সৌন্দর্যে ঘেরা পৃথিবীর এই না বলা অমোঘ, চির শাশ্বত সত্য উপলব্ধি না করা পর্যন্ত এই শূন্যতা কাটেনা। অনন্ত অসীম এই সুন্দরের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার নিকট সবিনয়ে আত্মসমর্পন না করা পর্যন্ত হৃদয়ে প্রশান্তি আসেনা।

তাই বার বার বলতে ইচ্ছা করে “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।”
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : প্রশান্ত হৃদয়, সুন্দর প্রকৃতি,পৃথিবী
বিষয়শ্রেণী: বিবিধ

কোন মন্তব্য নেই: