বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১০

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-৩

কিছু কিছু মানুষের পড়াশুনার স্টাইল এত বিরক্তিকর যে বলার বাইরে। কেন জানিনা এই বিরক্তিকর পরিস্থিতি সবসময় আমার সামনেই ঘটে থাকে। দশম শ্রেণীতে যখন পড়ি তখন মিলি আপুর বাসা অনেক দূরে হওয়াতে আম্মা মিলি আপুকে বললেন আমাদের বাসা থেকে ক্লাস করতে। আপু তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। খুব ভাল কথা। উনি সন্ধ্যায় পড়তে বসেন। সেটাও ভাল কথা। এরপর শুরু হল উনার পড়া। সেটা কে একচুয়ালি পড়া বলা হয় কিনা জানিনা তবে আমার যে কানের বারোটা বেজে তা উনি কখনই খেয়াল করেননা। গলা ফাটায়, চিৎকার করে উনি পড়ে। বাট আমি কিছু বলতামনা। কারণ উনাকে কিছুটা ভয় পেতাম আর আম্মার কাছেও নালিশ করতামনা। মিলি আপুকে আম্মা আবার চরম আকারে পছন্দ করে। পছন্দের কারণ আর কিছুই না। আপু অসাধারণ ব্রিলিয়্যান্ট। আর জোরে জোরে চিৎকার করে পড়া আম্মার খুব পছন্দ। তার ধারণা এতে করে পড়াশুনা খুব ভাল হয়। অথচ সারাজীবন আমি কোনদিন জোরে জোরে পড়িনি। একদম লো সাউন্ডে পড়ি যেন আমিই কেবল শুনতে পাই। মিলি আপুর এই যন্ত্রণা মোটামুটি আমাকে ছয় মাস সহ্য করতে হয়েছে।
মনে পড়ে প্রথম যখন যশোরে বাসা নেই তখন আমাদের পাশের বাসার এক ছেলে যে ভোর বেলা থেকে তার ঐতিহাসিক পড়া শুরু করে সেটা থামতে থামতে সাত/আট ঘণ্টা লেগে যায়। সেই ছেলের যন্ত্রণাও প্রায় আমাকে এক বছর সহ্য করতে হয়েছে। সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিল আম্মা সবসময় আমাকে সেই ছেলের মত ভোর বেলা উঠে জোরে জোরে পড়তে বলতেন, তখন আমি পড়ি ক্লাস ফাইভে।সেই ছেলে পড়ে ক্লাস সেভেনে। আমার তখন মনে হত ভোর থেকে উঠে সাত/আট ঘণ্টা পড়ার মত পড়া আসলে আমার নাই। সো এত কষ্ট করার কোন মানে হয়না। তারপরও প্রায় প্রতিদিনই ওই ছেলের জন্য আমাকে বকা শুনতে হত।
ইন্টার পরীক্ষার সময় আমার এক ফ্রেন্ড তার বাসা রিলেইটেড কিছু সমস্যার জন্য আমাদের বাসায় কিছুদিনের জন্য থেকেছিল। তার পড়াশুনার স্টাইল হচ্ছে সারারাত জেগে জেগে পড়বে। অথচ আমি রাত ১২টার পরে জেগে থাকলেও আর পড়তে পারিনা। যেহেতু আমার ফ্রেন্ড সারারাত ধরে পড়ে তাই আম্মার ধারণা যে আমি কিছুই পড়িনা তার তুলনায়। সেটার জন্যও অনেক বকা শুনতে হয়েছে।
ঢাকায় যখন আসি কোচিং করতে তখন আমার সাথে আরো দুজন ফ্রেন্ড এসেছিল। তারাও আমাদের বাসায় থেকেই কোচিং করত। এরমধ্যে একজন ছিল সে যখন পড়ত, মোটামুটি আশে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ সবাই জেনে যেত যে আমাদের বাসায় পড়াশুনার তুফান বয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমি কোন উচ্চবাচ্য করিনি, যদিও আমি চরমভাবে ডিস্টার্ব ফিল করতাম।মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয়ে গেলে ওর পাশে বসে থাকতাম। ও জোরে জোরে পড়ত সেটা শুনে শুনে আমি পড়ার চেষ্টা করতাম। এরপর একসময় যখন দেখলাম যে আসলেই ওর পাশে বসে আর যাই হোক পড়াশুনা করা সম্ভব না। তখন ওকে এক রুম ছেড়ে দিলাম। এদিকে মামুনের জন্য এক রুম ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আল্টিমেইটলি অন্য রুমে বাকি দুজন মিলে চুপচাপ পড়তাম। একদিন পাশের ফ্ল্যাটেই বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। রাত হতেই জোরে জোরে গান-বাজনা শুরু হয়ে গেল। আমরা সব দরজা-জানালা আটকিয়ে দিয়েও সেই লাউড সাউন্ড কমাতে পারিনি। সেই রাতে পড়াও হয়নি। অথচ সেই রাতেও আমার সেই ফ্রেন্ড গলা ফাটিয়ে জোরে জোরে বোটানি পড়েছে।
এরপর যাইহোক মেডিকেলের এডমিশানের পর একজন খুলনা মেডিকেল এবং অন্যজন আর্মড ফোর্সে চলে গেল। আমি সেদিন খুলনা মেডিকেলের ওই ফ্রেন্ড কে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিলাম যে সে এখন কিভাবে পড়ে? আমার একথা শুনে সে কিছুক্ষন হেসে বলল, “আসলে আমি তোমাদের অনেক জ্বালিয়েছি, না? তুমি বিশ্বাস করবানা আমি এখন চুপচাপ পড়ি। কারণ আমার জন্য হলের বাকি কেউ পড়তে পারেনা। এজন্য বাধ্য হয়েই পড়াশুনার স্টাইল চেইঞ্জ করেছি।“ ওর কথা শুনে সেদিন সস্তি পেয়েছিলাম।
এরপর যুথী আর সাথী ওরা দুবোন যখন আমাদের বাসায় কোচিং করতে আসল, তখনও দেখি সেইম কেইস। যুথীও গলা ফাটায় ফাটায় পড়ে। কিছু বলিনি সেই বছর। এরপর যুথী যখন আমার কানের পাশে বসে বসে এনাটমি গলা ফাটায় পড়ে তখন ওকে বলি “ আচ্ছা  হলে সিট কবে পাচ্ছ তুমি?” ও বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে  বলে আপু আমাকে তো সবাই হল থেকে বের করে দিবে!! একটা বিরক্তিকর ফেসিয়াল এক্সপ্রেসান দেখিয়ে  আর কিছু বলিনা....

চলবে......

কোন মন্তব্য নেই: