শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০

প্রকৃত সুখের সন্ধান...

মানব মনের প্রকৃতি বড়ই বিচিত্র। কিসে সে কষ্ট পায় কিসে সে সুখী হয় তা সে নিজেই জানেইনা। হয়ত বিচিত্র মনের বৈচিত্রতায় আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। রাতের আকাশের যে মোহনীয় চাঁদ দেখে মন আনন্দে উদ্বেলিত হয় সেই একই চাঁদ দেখে চোখের কোণে জমে দুঃখের অশ্রুবিন্দু। সমুদ্রের বিশালতা কখনও এনে দেয় অসীম শূণ্যতা কখনওবা পূর্ণতা। বহুরূপী মনের এই সত্তা তাই বিশ্লেষণ করা খুব সহজ না।
কতটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলে একজন নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবতে পারে? হঠাৎ এই প্রশ্নে চিন্তার জগতে ছেদ ধরল। আসলেই কি মানুষ কখনও পরিপূর্ণ হতে পারে? খুব চিরন্তন ও আদি প্রশ্ন। অভিজ্ঞতা অর্জনের মাপকাঠি নাকি বয়স! কিন্তু বয়সই কি সবসময় সেই মাপকাঠি হতে পারে?
আট/দশ বছরের কোন ছেলের অভিজ্ঞতার পরিসীমা কতটুকু? সাথে সাথে একটি চিত্র মনের পর্দায় ভেসে আসল । সকালে ঘুম থেকে উঠেই কিভাবে স্কুল ফাঁকি দেওয়া যায়, কিভাবে আজ বিকালে ক্রিকেট খেলায় জেতা যায় কিংবা বাবাকে যে নতুন গাড়ি,ক্যাটবেরি কিনতে বলা হয়েছে তা আনতে ভুলে যাবেনাতো! মাকে কিভাবে কনভিন্স করে কম্পিউটারে “মোস্ট ওয়ান্টেড’’ গেইমস খেলা যায়...এইরকম হাজারো চিন্তায় ছেলেটির মন বিভোর থাকে। একই বয়সের যে ছেলে গাড়িতে হেল্পার এর কাজ করে তার চিন্তা জুড়ে থাকে কিভাবে যাত্রী বেশি উঠানো যায়, কিভাবে বেশি টাকা আয় করে পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়া যায়। সারাদিন কাজের ফাঁকে হয়ত সে চিন্তা করে তার মা চুলার পাশে বসে আছে এই অপেক্ষায় যে তার ছেলে কখন বাজার নিয়ে আসবে! আরো যে ছোট ভাই-বোন আছে তারাও সারাদিন বড় ভাইয়ের অপেক্ষায় থাকে। স্কুল ফাঁকি দেওয়া দূরে থাক পড়াশুনার চিন্তায় সেখানে বিলাসিতা মাত্র। চিন্তার এই অভিজ্ঞতা তার বয়সকেও হার মানিয়েছে। হয়ত অস্বাভাবিক কিন্তু বাস্তব...
এই অভিজ্ঞতা যেহেতু আমাদের নাই তাই এগুলো দেখতে দেখতেই আমরা অভিজ্ঞ। চারপাশে এত্ত অস্বাভাবিকতার ছড়াছড়ি মাঝে মাঝেই স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিকের মধ্যে পার্থক্য করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
সুখের সন্ধানে আজ মানুষ দিশেহারা। সুখের আসল সংজ্ঞা কেঊ দিতে পারেনি।কিন্তু আইন্সটাইন সেই অসাধ্য সাধন করে গেছে। পৃথিবীতে সব কিছুই আপেক্ষিক, কোন কিছুই পরম নয়। আমার কাছে যা সুখ অন্যের কাছে তা অসুখ। কিন্তু তারপরও সুখের সংজ্ঞা মিললেও সুখ খুজে পাচ্ছেনা মানুষ। সমাজের একটা পার্ট বাদ দিয়ে সুখের অন্বেষণ যেন ট্রেডিশানে পরিণত হয়েছে। শরীরের একটা অংশ প্যারালাইসিস হলে হয়ত তার ব্যথা অনুভব করা যায়না কিন্তু সেই অঙ্গের অনুপস্থিতি ঠিকই অনুভুত হয়।
অপূর্ণ শরীর হাজার চেষ্টা করলেও পূর্ণ হতে পারবেনা যতক্ষন না ওই অংশ ঠিক হয়। এসব কথা ভাবতেই পরিচিত একজনের কথা মনে পড়ল। সে বছরে আনুষ্ঠানিক একবার এতিমখানায়, মসজিদে টাকা দান করে আত্বতৃপ্তি অনুভব করে। মনে করে ইসলামের বড় একজন খাদেম...সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু যদি সে ব্যাপারটা ট্রেডিশনালি না নিত , যদি মনে করত তার উপার্জনের টাকায় গরীবেরও হক আছে তাহলে হয়তবা সে এরকম অকেশনাল ইসলামের সেবা করে আত্বতৃপ্তি পেতনা। পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস/বিজয় দিবস উদযাপন সবই আজ নিছক ট্রেডিশান। একারনেই যারা পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ি পরে পুরো বাঙ্গালিয়ানা সাজে তারাই আবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে ওয়েস্টার্ন কালচার খুব গর্বের সাথে পালন করে। নারী দিবসে নারী অধিকারের দাবি যাদের মুখে সোচ্চার হয় তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকার পাতায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে নিউজ আসে। খুব বিচিত্রভাবেই ট্রেডিশানের এই সিলসিলা প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ বিদ্যমান।
মানব মনের প্রকৃতি অনুসন্ধান করে চলছিলাম। অভিজ্ঞতা অর্জন নাকি এই রিসার্চে ওনেক হেল্পফুল হবে। সব কিছু প্র্যাকটিক্যালি অভিজ্ঞতা অর্জন যেহেতু সম্ভব না তাই দেখে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। প্রকৃতি কখনও মনকে শূন্য থাকতে দেয়না। সুখের জন্য আকুল মন যে অংশ ডিলিট করে সেই অংশটি মন আরেকটি অংশ দিয়ে রিফিল করে। অটোমেটিক প্রোসেস। যে সত্তা মনকে একটিভলি লিড দিবে সে আজ প্যাসিভ। এই জন্যই হয়তবা যা কিছু করছি সব ট্রেডিশান, সব শুণ্য মনকে রিফিল করার চেষ্টা মাত্র। প্রকৃত সুখ পাবার প্রোসেসকে ইগ্নোর করে, সমাজের একটা পার্টকে বঞ্চিত করে সব কিছু ট্রেডিশনালি করে সবাই আমরা কৃত্তিম সুখের নিদ্রায় বিভোর । জানিনা এই নিদ্রার প্রহর কখন শেষ হবে...জানিনা দেখে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের দিন কবে শেষ হবে...জানিনা ট্রেডিশনাল সুখের কালচার কবে সমাপ্তি হবে...

কোন মন্তব্য নেই: