শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০

একটু খানি জীবন চাই...!!

হাতের মুঠো ফোনের দিকে যখন তাকায় তখন খুউব অবাক হয়ে যাই। কি এক আজব জিনিস যা আমাকে প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে নিয়ে যায় নিমেষেই। প্রতি মুহূর্তে প্রিয়জনের সাথে ইচ্ছা হলেই যোগাযোগ করতে পারি। অপেক্ষা করতে হয়না একটুও। অন্তর্জালের মোহনীয় শক্তিতে ইচ্ছা হলেই মনের কথা অন্যের কাছে পৌছে দিতে পারি। তাই ডাকপিয়নের অপেক্ষায় আজ কারো প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে হয়না। কিন্তু আজ খুব অপেক্ষা করতে ইচ্ছা হচ্ছে কারো হাতে লেখা চিঠি পেতে। যে চিঠির পরতে পরতে হাতের লেখার সাথে আবেগের উঠা-নামা অনুভব করতে পারব। মনের যত আকুলতা সেটাকে নিজের মনের আকুলতার সাথে একাকার করে ফেলতে পারব। ছোটবেলায় খালামনিকে একবার চিঠি লিখেছিলাম। চিঠির শেষে নিজের হাতের একটা ছাপ দিয়ে ছবিও একে দিয়েছিলাম। আম্মু জিজ্ঞেস করেছিল কেন এই ছবি আকা? শিশুসুলভ মন নিয়ে বলেছিলাম যে হাত দিয়ে খালামনিকে চিঠি লিখছি সেই হাতের ছবিও নিশ্চয় খালামনির দেখতে মন চাইবে, তাই এই ছবি আকা। এখন সেই স্মৃতি রোমন্থন করলে খুব হাসি পায়, কি হাস্যকর রকম মানসিকতা ছিল তখন। কিন্তু আজ আমি শিশুসুলভ সেই মানসিকতাকে খুব বেশি অনুভব করছি, খুব মিস করছি। আমাকে কেউ হয়তবা কখনও হাতে লিখে চিঠি পাঠাবেনা। তাই কারো আবেগ,ভালবাসা ও স্নেহের উষ্ণতা আমাকে আর শিহরিত করবেনা। যান্ত্রিকতার এই যুগে সবকিছু হাতের মুঠোয় থাকা সত্ত্বেও আমি আজও খুজে ফিরি বারবার আদিম সেই প্রাচীন সম্পর্ক যা বার বার আবেগে আমাকে প্রকম্পিত করবে।

নস্টালজিক আমি কখনই সেরকম ছিলামনা। হতেও চাইনি। দৃষ্টিতে শুধু ভবিষ্যত দেখি। অতীত আমাকে প্রেরণা যোগায় কিন্তু কখনও অতীতে ফিরে যেতে চাইনি। অতীতের দুঃখ বর্তমানে আমাকে ব্যথিত করেনা, বরং ভবিষ্যতের জন্য পাথেয় যোগায়। কিন্তু তাহলে আজ কেন বার বার ব্যতিক্রম হচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে যাবার পথে হাইওয়ের পাশে সবুজের মাঝে ছোট ছোট ঘর,পাশে বয়ে যাওয়া নদী,মাথার উপর অন্তিম আকাশ আর রাতের বেলায় ঘরের উঠোনে বসে জ্যোৎস্না স্নান করতে আজ খুব মন চাইছে। হোক না সাদা-মাটা জীবন তাতে কি! সেখানে আর কিছু না থাকুক অন্তত পরস্পরের প্রতি ভালবাসার কোন অভাব থাকতনা। ঠিক কবির মত আজ আমারও বলতে ইচ্ছা করছে ভালবাসাহীন হাজার বছর আমি চাইনা। চাই একটুখানি জীবন কিন্তু ভালবাসা, মায়া-মমতা,স্নেহের আবেগে পরিপূর্ণ এক সুন্দর পৃথিবী।

পৃথিবী আজ আমার ভাল লাগেনা। ভাল লাগেনা অপরের সাথে শুধুই যান্ত্রিক কোন সম্পর্ক। না, কোন অভিমানে নয় চরম বাস্তবতায় আজ আর আমার সত্যি পৃথিবী ভাল লাগেনা। এখানে কি আছে? হয়তবা হাতের মুঠোয় আমার পুরা পৃথিবী আছে কিন্তু কি লাভ সেই পৃথিবী দিয়ে? যেখানে মায়ের পরকীয়ার বলি হয় ভালবাসার সন্তানের। নিজ অস্তিত্ব কি আজ হুমকির সম্মুখিন? দশ মাস দশ দিন সুগভীর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে শিশুটি যখন নিরাপত্তাহীন পৃথিবীতে পদার্পন করে তখন তার একমাত্র নিরাপত্তা তার মা। সেই নিরাপত্তার স্থানও আজ নিরাপত্তাবিহীন। এরকম পরকীয়ার বলি কেবল একজন নয়, হয়ত আরো বেশি। ভবিষ্যতে কি হবে ভাবতে ভয় পাচ্ছি...

প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসার গভীরতাও আজ আর নেই। থাকবে কি করে? এখন বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ড থাকা একটা স্ট্যাটাস। তাই ভালবেসে বিয়ে করে অতি দ্রুত বিচ্ছেদ হওয়া যেন অতি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ঠিক কোথায় যেন আমরা সবাই ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছি। যেখানে আমাদের ভালবাসা, বিশ্বাস, আস্থা সব হারিয়ে যাচ্ছে। জীবনে দুঃখ আসবে, দুর্দশা আসবে, বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে কিন্তু তাতে কি? কারো ভালবাসার টানে, কারো আস্থার প্রতি আস্থা রেখে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাব। নাহ! আজ সেই প্রেরণাও নাই। কারো প্রতি আজ আর আস্থা রাখতে পারিনা।

সন্তানের হাতে বাবা খুন কিংবা বাবার হাতে সন্তান খুন, এটা তো নিছক একটা দুঃসংবাদ এখন। পত্রিকার হাজারো দুঃসংবাদের মধ্যে এই দুঃসংবাদ এখন নিয়মিত প্রকাশিত হয়। শুধু এই নয়, আরো আছে। দুঃসংবাদের প্রকারভেদ শুনতে চান? প্রতিনিয়ত কোন না কোন মেয়েকে আত্বহত্যা করতে হচ্ছে ইভটিজিং এর কারণে। আজকাল কোন ছেলে আর মেয়েদের বোন হিসেবে সম্মান জানায়না। হয়ত বোনরাও আজকাল ভাইদের ভাই হিসেবে বিশ্বাস করতে পারেনা। সবই সম্ভাবনা...কিছুই জানিনা। শুধু এইটুকু অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পাচ্ছি চারপাশ থেকে ভালবাসা, বিশ্বাস আর আস্থা রা হারিয়ে যাচ্ছে।

পত্রিকার পাতা উল্টায়না আজকাল। বাতাসেই খবর যেভাবে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তাতে আর পত্রিকার পাতা পড়া লাগেনা। তবুও মাঝে মাঝে একটু খুজে ফিরি, কোন ভাল কিছু পাওয়া যায় কিনা! একটু ভালবাসার ছিটেফোটা দেখা যায় কিনা! বার বার হতাশ হই। বার বার চোখের মাঝে ভাসে আবু বকরের মত নিরীহ কোন ছেলে কিংবা দেশের হাজার হাজার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষারত সেইসব ভাইদের কথা যাদের মনে কতইনা স্বপ্ন ছিল দেশকে কিছু দেবার, দশের জন্য কিছু করার। ভালবাসাহীন এই নিষ্ঠুর পৃথিবী তাদের থাকতে দেয়নি। আমি কোন রাজনীতি করিনা, চাইনা কোন ক্ষমতা, করিনা কোন দল, করিনা কারো পক্ষপাতিত্ব। শুধু একটুখানি ভালবাসা চাই, ভালবাসায় পরিপূর্ণ একটা ছোট পৃথিবী চাই। দরকার নেই মুঠো ফোন কিংবা অন্তর্জালের মত কোন যাদুকরি জিনিস। সেই পুরোনো পৃথিবীতে ফিরে যেতে চায়, যেখানে আর কিছু না থাকুক মায়ের ভালবাসার মত অটুট আস্থা মাথার উপর সর্বক্ষন থাকবে অন্তত।

উন্নয়নের দিক থেকে আজো আমরা পিছিয়ে আছি। তাই উন্নয়নের জোয়ারে ভাসার জন্য পরিবর্তন হয় সরকার, আমরা স্বপ্ন দেখি। হয়ত এবার আমরা কিছু একটা পাব, আর কিছু না হোক অন্তত বিশ্বাস আর ভালবাসা। কিন্তু হতাশ ও পিপাসার্ত মন বার বার হতাশ হয়, পিপাসায় গলা শুকিয়ে যায়। মনের পিপাসা মেটানোর জন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে পাশে পাইনা। প্রধাণমন্ত্রী নাকি একটা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অভিভাবক, সেটাই জানতাম সব সময়। কিন্তু কই? প্রতিবারই কোন নৃশংস ঘটনার জন্য একটা নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠন কিংবা বিরোধী দল বারবার আমাদের অভিভাবকের চক্ষুশূল হয়! মা স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী আজ তার জনগনরূপ সন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে। হায়রে মা! হায়রে সন্তান! সব ভালবাসার স্থান আজ বিষে ভরা, দূষিত হয়ে গিয়েছে। কেউ কাউকে আমরা ক্ষমা করিনা, কেউ কাউকে ভালবাসিনা। তাই ট্রেন দুর্ঘটনায় খুব সহজেই অবলিলায় আমাদের দেশের অভিভাবক বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে সস্তি খুজে পান। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য নির্বিশেষে বিরোধী দলকে ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে উল্লেখ করে। কি যে এই সস্তি তিনি পান আমরা জানিনা তবে আমরা বার বার আস্থা হারিয়ে ভবঘুরে হয়ে যাই।

শিক্ষা ব্যবস্থার চরম উন্নতি দরকার। এজন্য প্রয়োজন পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিশীলন। সেই লক্ষ্যেই যে শিক্ষা নীতির রূপ দেখলাম সেখানেও আবার আস্থা হারালাম। যান্ত্রিকতার এই যুগে প্রযুক্তির সাথে শিক্ষাকে সংযোগ ঘটানোর জন্য আমাদের অভিভাবকের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এখানেও মন ও মানসিকতা গঠনের উপকরনকে অবলিলায় ছুড়ে ফেলা হল। ধর্ম নিছক কোন ধর্মীয় ব্যাপার না যে এটা প্রযুক্তিগত শিক্ষার জন্য বাধাস্বরূপ। যা দিয়ে আমরা এই পৃথিবী গড়ে তুলব তা কিন্তু ওই প্রযুক্তির মধ্যে নেই কিংবা ওই প্রযুক্তি আমাদের শেখাবেনা কিন্তু ধর্ম শেখাবে। আবার যে শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন করে আমরা উন্নত পৃথিবী গড়ে তুলতা চাইছি সেই পৃথিবীতে কিন্তু আমরা নিজেরাই আর বসবাস করতে চাইবনা। বিশ্বাস, আস্থা,ভালবাসা,মূল্যবোধ বিহীন প্রযুক্তিগত শিক্ষা দিয়ে যে পৃথিবী গড়তে চাইছি সেখানে হয়ত কেবল রোবটই বাস করতে পারবে, কোন মানুষ নয়। অথবা এরকম হতে পারে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় আমাদের মন-মগজের বিবর্তন হয়ে যাবে ফলে মানুষ আর ভালবাসা চাইবেনা, কারো প্রতি বিশ্বাস রাখবেনা, কোন স্বপ্ন দেখবেনা, কোন আস্থার সম্পর্ক চাইবেনা, কোন আবেগ থাকবেনা, অনুভুতিগুলো দুমড়ে মুচড়ে ভোতা করে ফেলবে...কেউ আর তখন কারো জন্য পরম ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষা করবেনা, কোন মা তার সন্তানের জন্য ভালবাসার ছিটে-ফোটাও মনের গহীনে পোষণ করবেনা, স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা হবে কেবল জৈবিক...

জানিনা এই দুঃস্বপ্নের প্রহর কখন শেষ হবে। নাকি এই দুঃস্বপ্নই সত্যিকারভাবে বাস্তবায়িত হয়ে যাবে কোন একদিন। তাহলে আমি আবার বলতে চাই ভালবাসাহীন এই পৃথিবীতে চাইনা আমি হাজার বছর, একটুখানি জীবন চাই যেখানে আস্থা, আবেগ,ভালবাসা আর বিশ্বাস আমাকে নতুন করে প্রাণে জোয়ার জোগাবে...একটুখানি জীবনের এই স্বপ্ন কি আমি দেখতে পারিনা?? নাকি এই স্বপ্নও অন্য কোন দুঃস্বপ্নের ভিন্ন রূপ!! 

1 টি মন্তব্য:

এখনই জাগার সময় বলেছেন...

salam alaykum. I love your writing so much that i frequently visit your site almost everyday to see if u posted anything. MashaAllah keep up the good work.

what do you think of these hadith?

The Messenger of Allah (saw) also said, "The believers, in their love, mutual kindness, and close ties, are like one body; when any part complains, the whole body responds to it with wakefulness and fever." [Muslim], "The faithful are like one man: if his eyes suffers, his whole body suffers." [Muslim]



The Messenger of Allah (saw) said, "The Faithful are to one another like [parts of] a building - each part strengthening the others" and "Every Muslim is a brother to a Muslim, neither wronging him nor allowing him to be wronged. And if anyone helps his brother in need, Allah will help him in his own need; and if anyone removes a calamity from [another] Muslim, Allah will remove from him some of the calamities of the Day of Resurrection; and if anyone shields [another] Muslim from disgrace, Allah will shield him from the disgrace on the Day of Resurrection." [Al-Bukhari and Muslim, on the authority of `Abd Allah ibn `Umar].