মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১০

স্বপ্ন দেখব বলে দুচোখ পেতেছি...



সারকেডিয়ান রিদম আমার অনেক আগেই চেইঞ্জ হয়ে গিয়েছে। তাই রাত জাগা পাখির মত নিয়ত জেগে থাকা নিয়ত অভ্যাসে দাড়িয়েছে। আর রাত জেগে পড়ার সুবাদে এই অভ্যাস আরো বেশি পাকাপোক্ত হয়েছে।
রাতের দৃশ্য দেখছিলাম। কি যেন মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যাচ্ছিলাম ক্রমাগত। জানালার ওপাশে ফ্লাইওভারে সোডিয়াম বাতির আলোতে সবকিছুকে আরো বেশি মায়াবী করে তুলছিল। মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি যাচ্ছে,সাথে সাথে প্যা প্যা ধ্বনি...ফ্লাইওভারের অপর পাশেই পাঁচতলা একটি সাদা বাড়ি। সোডিয়াম বাতির আলোর প্রতিফলনে সাদা বাড়িকে ঠিক যেন আলিফ লায়লার কোন ভুতড়ে বাড়ি বলে মনে হচ্ছিল। জানালার ওপাশের দৃশ্যের একটি ফ্লোচার্ট করে ফেললাম। ফ্লোচার্ট হচ্ছেঃ আমার জানালা, বস্তি, ফ্লাইওভার,সাদা পাঁচতলা বাড়ি। অসীম আকাশে তখন নিকষ নীল অন্ধকারের প্রতিচ্ছায়া।
নতুন করে চিন্তা করতে হয়না, নিউরণে এক্সট্রা প্রেসার দিয়ে কিছু ভাবা লাগেনা...বস্তি থেকে ভেসে আসা অকথ্য ভাষায় গালাগালির আওয়াজ, কখনওবা চাপা কান্নার মৃদু করুণ সুর, কখনো পুরুষ কতৃক নারীকে প্রহারের প্রতিধ্বনি প্রকৃতিকে আনমোনা করে তোলে। আমিও প্রকৃতির সাথে বিষন্ন হয়ে যায়। নিউরনে ভাইব্রেশান হয় কিঞ্চিৎ......
সেদিন ক্যম্পাস থেকে ফেরার সময় টিকিট কেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এক বৃদ্ধ মহিলা কাছে এসে বলল, “ মা সকাল থেকে কিছু খাইনি কিছু টাকা দে আমারে”। পাশে এক ফ্রেন্ড ছিল। দুজন মিলে কিছু টাকা দিলাম। বৃদ্ধ মহিলা টাকা পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলল। জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনার বাড়ি কোথায়?” রাস্তা-ঘাটই আমার বাড়ি, আমার যে কোন যাওয়ার জায়গা নেই! এই জবাবে খুব ধাক্কা খাইলাম। ততক্ষনে বাস চলে এসেছে। কিছুই করার নেই ,কঠিন এক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে নিজের ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বস্তি থেকে এখন চরম আকারে গালিগালাজের শব্দ ভেসে আসছে। অকথ্য শব্দের প্রতধ্বনিতে প্রকৃতির নিরবতা খান খান করে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আমি এই গভীর রাতে দুঃখ বিলাস করছি ,হয়তবা এই গভীর রাতেই ময়না নামের মেয়েটি রাত জেগে সেলাই করছে। খুব স্বপ্ন তার পড়ালেখা করার। কিন্তু দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতা তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। হয়ত এই গভীর মায়াবী রাতে ময়না তার স্বপ্নের সমাধি দিয়ে আপন মনে সেলাই করছে। এভাবে হাজার রাত কেটে যায় হাজার স্বপ্নের সমাধির ফুল দিয়ে...নিউরনে আবারো ভাইব্রেশান হয়...খুব অসহায় লাগে নিজেকে।
রাস্তা দিয়ে সেদিন এক রিক্সার চাকার সাথে প্রাইভেট কারের ধাক্কা লাগে। রিক্সার চাকা সম্পূর্ন বেঁকে যায়। ঘটনার পর পরই দেখলাম গাড়ি থেকে নেমে আসলেন এক ভদ্র লোক। ভাবলাম নিশ্চয় সমবেদনা বা ক্ষতিপুরন দেবার জন্য ভদ্রলোক এগিয়ে আসছেন। পরের ঘটনায় খুব মর্মাহত হলাম। তথাকথিত ভদ্রলোকের দ্বিগুন বয়সী রিক্সাওয়ালাকে প্রচন্ড গালিগালাজ ও সাথে ক্রমাগত চড়-থাপ্পড় মারতে লাগলেন। “ এই বেটা তুই ঠিকমত রিক্সা চালাস না কেন, কত টাইম নষ্ট করছস আমার তুই জানস??” এসব বলেই রিক্সাওয়ালাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। চারপাশের লোকজন সব এই দৃশ্য উপভোগ করছিল। উহ! সেইসময় আমার যে কিরকম ফিলিংস হচ্ছিল ভাষায় বলার মত না। খুব বলতে চাইলাম সেই তথাকথিত ভদ্রলোককে “ জনাব আপনার টাইমের মূল্য আছে, তার কি নেই? তার বাড়িতে ছেলে-মেয়ে না খেয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছে ,সেসবের কি কোনই মূল্য নেই? তার যে ক্ষতি হয়ে গেল এর জন্য তার পরিবারের কতটা সাফার করবে সেসব কি একবারও চিন্তা করেছেন? তার ছেলে-মেয়েরা হয়ত স্বপ্ন দেখচে আজ তার বাবা অনেক টাকা আয় করে তাদের জন্য কিছু কিনে আনবে। এই স্বপ্নের কি কোন দাম নেই?” কিন্তু আমি পারিনি বলতে, আমার এবিলিটি ছিলনা ওই জঘন্য পরিবেশে এসব কথা সেই তথাকথিত ভদ্রলোককে বলার। শুধু একরাশ দুঃখবোধ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
রাত যতই গভীর হচ্ছে মন ততই খারাপ হচ্ছে...যেখানে হাজার স্বপ্নের সমাধি হয় নির্দ্বিধায়, সেই সমাধির উপর দাঁড়িয়ে স্বপ্ন বিলাসীরা আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে গর্বের সাথে...মৌসুমি ভোমিকের মত আমারও গাইতে ইচ্ছা করে

“কেন শুধু শুধু ছুটে চলা ,একে একে কথা বলা, নিজের জন্য বাঁচা নিজেকে নিয়ে,
যদি ভালবাসা নাই থাকে শুধু একা একা লাগে ,কোথায় শান্তি পাব,
বল কোথায় গিয়ে......!!
........................................................
.........................................................
আস্থা হারানো এই মন নিয়ে আমি আজ তোমাদের কাছে এসে দুহাত পেতেছি
আমি দুচোখের গও ভরে শূণ্যতা দেখি শুধু রাত ঘুমে আমি আর স্বপ্ন দেখিনা,
তাই স্বপ্ন দেখব বলে আমি দুচোখ পেতেছি...
তাই তোমাদের কাছে এসে আমি দুহাত পেতেছি...”

রাত গভীর হচ্ছে। গভীর ও জটিল হচ্ছে আমার চিন্তা ভাবনা গুলোও... স্বপ্ন দেখতে আকুল এই দুচোখে আর ঘুম আসছেনা। দুচোখে শুধুই কৃতজ্ঞতার অশ্রু সেই মহান সত্তার নিকট বারবার বলছে পারবতো এই জীবনের শুকরিয়া আদায় করতে? যে জীবনে আশ্রয়হীনতার ঝুঁকি নেই, ঝুঁকি নেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে স্বপ্নকে সমাধি দেবার,...

1 টি মন্তব্য:

HJKL বলেছেন...

মানুষের খুব সখ সে সার্টিফিকেট অর্জন করবে, দীর্ঘদিন কষ্ট করে পড়ালেখা করে তারা শূধুমাত্র একটি সার্টিফিকেট এর জন্যই!...... সত্যিকারের মানুষ হবার জন্য নয়