সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০১০

সমালোচনার জারন-বিজারন...

"যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক সমাজ "- এক সেমিনারে বসে ছিলাম। খুব অস্বস্তিকর পরিবেশ। মাত্র কমিউনিটি মেডিসিন তিনটা আইটেম দিয়ে আসার পর এই সেমিনারে বাধ্যতামূলক এটেন্ড করা যেন পুরাই শাস্তি মনে হচ্ছে। তারপরও স্পিচ শুনছি। মাঝে মাঝে বোরড হয়ে গেলে পুরা লেকচার গ্যালারির কয়টা লাইট, ফ্যান, এসি আছে সেটা গুনছি। একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর তার মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা বলছিলেন, ডায়াসের মাঝখানে বসা প্রিন্সিপাল স্যার কে দেখে কিছু ঘটনা মনে পড়ল। মেডিকেল লাইফে তিনটা ঘটনা আমার জন্য খুব উল্লেখযোগ্য...

প্রথম ঘটনাঃ ময়মনসিং মেডিকেল কলেজে প্রথম দিন ফিজিওলোজি লেকচার ক্লাসে দুই মিনিট দেরি হবার জন্য ঢুকতে না দেওয়া। আরে বাবা! প্রথম দিন, দুই মিনিট দেরি হতেই পারে! তারপরও দেরি হবার কারণ ছিল লেকচার হল চিনতে না পারা...

২য় ঘটনাঃ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে এম্ব্রায়োলোজি ক্লাসের ২য় দিন। অদ্ভুত সুন্দরভাবে স্যার লেকচার দিচ্ছে। ইনফ্যাক্ট স্যারের প্রেসেন্টেশান, বোঝানোর ক্যাপাসিটি আমাকে এত মুগ্ধ করেছিল যে এম্ব্রায়োলোজির ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম আমি তখন। ৩য়দিন কলেজে গিয়ে শুনলাম স্যার ঢাকা মেডিকেলে পোস্টিং হয়ে চলে গেছেন। খুব শকড হলাম...

৩য় ঘটনাঃ সরকারী মেডিকেলে প্রিন্সিপাল বারবার চেইঞ্জ হবে এটাই স্বাভাবিক। এই পর্যন্ত আমাদের মেডিকেলে ৩য়বারের মত প্রিন্সিপাল চেইঞ্জ হল। কিন্তু মর্মাহত হলাম এই কারণে যে পূর্বের প্রিন্সিপাল ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। খুব অমায়িক ব্যবহার উনার। সার্জারীর হেড ছিলেন। স্যারের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল কিন্তু কোন ভয় ছিলনা। সেই স্যারের রিপ্লেসমেন্টে বর্তমান তুখোড় রাজনীতিবিদ অল্পবয়স্ক স্যারকে দেখে আবারো শকড...

সেমিনার অবশেষে শেষ হল। খুব বেশি খারাপ লাগেনাই স্পিচ। একটু ব্যত্ক্রমধর্মী বক্তব্য শুনলাম এবার.." বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে বিজয় লাভের পর সামনে এগোতে পারেনি শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীর কারণে। তাই তাদের বিচার না করে একজন সাধারণ চোরের বিচার করা নৈতিকতা বিরোধী...”
বুঝলাম সরকার কেন বর্তমান ছাত্রলীগের দ্বারা তৈরি সন্ত্রাসী কাজের বিচার কেন করছেনা। ভাল লাগল যে সরকারী এটলিস্ট নৈতিকতা বিরোধী কোন কাজ করছেনা।

ক্লাস সেভেন/ এইট পর্যন্ত মারাত্বকভাবে হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালের ভক্ত ছিলাম। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে যখন সুনীল, সমরেশ, শীর্ষেন্দুর বই পড়া শুরু করলাম তখন নেশা কেটে যেতে লাগল। সম্ভবত বয়সের কারণে এই চেইঞ্জ এসেছিল। ্কিছুদিন আগে আনিসুল হকের বই পড়ার সুযোগ আসল ফ্রেন্ডদের মাধ্যমে। ‘ ফিরে এসো সুন্দরীতমা’ , ‘পাই বা নাহি পাই’, ‘মায়া’...৩টা বই পড়ে আমার অবস্থা খুব খারাপ। খাবারের শেষে যখন বিস্বাদ কোন কিছু খেলে পুনরায় টেস্টি কিছু খেয়ে রুচি ফেরত আনতে আমার অবস্থা সেরকম হল। হলে তখন হুমায়ুন আহমেদের ‘ কহেন কবি কালিদাস’ ও জাফর ইকবালের ‘ রবো নিশি’ বইটি ছিল। সেই বই ২টা পড়ে মানসিক অবস্থা সুস্থ করলাম। আর মনে মনে দুই ভাইকে হাজার স্যালুট জানালাম। তারা যাই লিখুক এটলিস্ট তাদের বই পড়ে মানসিক অবস্থা এত খারাপ হয়নি।

'মনপুরা' সিনেমা নিয়ে মাঝখানে খুব তোল্পাড়। এদিকে পেপার, ব্লগ থেকে আমি এত কিছু পড়লাম 'মনপুরা' নিয়ে যে আমার তখন সিনেমা দেখার আগ্রহ পুরাই শেষ। কোন উপন্যাস পড়ার আগে কেউ যদি আমাকে কাহিনী বলে দেয় তাহলে সেই উপন্যাস পড়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকেনা আমার। সিনেমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না। থ্রি ইডিয়টস যখন দেখলাম ঠিক তার এক সপ্তাহ পর দেখি পুরা ব্লগে, পেপারে এটা নিয়ে তোল্পাড় শুরু হয়েছে। এমনকি মেডিসিন ওয়ার্ডে একদিন স্যার আমাদের এই সিনেমাটা দেখার কথা বললেন। কি অবস্থা!! আমার কাজিনকে ধন্যবাদ জানালাম থ্রি ইডিয়টস তার ল্যাপটপে দেখানোর জন্য। এক সপ্তাহ দেরি হলেই সিনেমাটা আর আমার দেখা হতনা।
সর্বশেষ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার... এটা নিয়ে চরম সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল পুরা ইন্টারনেট। এজ ইউজুয়াল সিনেমার কাহিনী ও সমালোচনা পড়তে পড়তে আমি টায়ার্ড। সেদিন এটা নিয়ে ফ্রেন্ড সার্কেলে এক বিতর্ক হয়ে গেল। হুম...সিনেমার এন্ডিং আমার একদম পছন্দ হয়নি। কিন্তু ওভারল সিনেমাটা খারাপ লাগে নাই। বর্তমান সমাজে মেয়েদের এরকম চিত্র যে খুব আনকমন তা কিন্তু না। ফারুকী তার চিন্তা থেকে এটা বানালো। সমালোচনাকারীদের সমালোচনা দেখে আমার মনে হল যে ফারুকীর এই সিনেমাটা আমাদের ভাল সমাজকে একদম নষ্ট করে দিল। নেগেটিভ বাস্তবতা আমরা দেখতে অভ্যস্ত নই। বা দেখলেও সেটা ইগ্নোর করাকেই শ্রেয় মনে করি। সিনেমাতে কোথাও দেখানো হয়নি যে তিশা খুব ভাল আছে। সে কারো কাছে মর্যাদা পায়নি, পায়নি নিরাপত্তার স্থান। এটা দেখেও কেন যুব সমাজ ইন্সপায়ার হবে খারাপ হবার জন্য আমি বুঝলামনা। এখন ফারুকী যদি বর্তমান ইভ টিসিইং নিয়ে কোন সিনেমা বানায় আমি শিউর সমালোচনাকারীরা তাদের সমালোচনার ঝড় তুলতে ভুলবেননা। সিনেমা যদি সমাজে দর্পন হয় তাহলে সেখানে নেগেটিভ বাস্তবতা তুলে আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বারবার আমরা সেই নেগেটিভ বাস্তবতাকে কিভাবে রিমুভ করা যায় সেটা না ভেবে বারবার কেন এই নেগেটিভ চিত্র চোখে তুলে দেখাইল সেটা নিয়ে ঝড় তুলি। তারপরও যারা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের বিরোধী তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই বিনীতভাবে......
আগেই বলে রাখি ফারুকীর ভক্ত আমি নই... যদি তার সিনেমা সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ হয় তাহলে সমাজে ভালোর জন্য আপনারা কয়টা সিনেমা তৈরি করেছেন? যদি ওয়েস্টার্ন কালচারকে ফারুকী এদেশে এস্টাবলিশ করার জন্য তার মেধা,মননের বিকাশ ঘটিয়ে সিনেমা বানায় তাহলে আপনারা নৈতিকতাকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের টাকা, সময়, মেধা ব্যয় করে কয়টা ভাল সিনেমা সমাজকে উপহার দিয়েছেন? যদি মনে করেন সিনেমা বানানো শুধুই সময় ও টাকার অপচয় তাহলে ফারুকীর সিনেমা নিয়ে এত তোল্পাড়ের কি আছে, আমাদের সমাজ যদি ভাল হয় তাহলে এই সিনেমা কাউকে কোন এফেক্ট করবেনা। আর যদিও করে এই শঙ্কা নিয়ে সমালোচনা করে কি লাভ? পারলে ফারুকীর সিনেমার জবাব নতুন কোন ভাল সিনেমা দিয়ে চ্যালেঞ্জ দেন...সমাজের কোন সেক্টর আজ ফাঁকা নেই। সব জায়গায় খারাপের সুদৃঢ় অবস্থান। তাদের বিরুদ্ধে শুধু সমালোচনা কেবল অরন্যে রোদন। সবাই এক্টিভিটি দেখতে চায়, সমালচনা শুনতে চায়না। ফারুকী যদি তার সিনেমা দিয়ে সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয় তাহলে শিউর থাকেন সেই অবক্ষয়কে আপনারা সমালোচনা দিয়ে শেষ রক্ষা করতে পারবেননা। তাই সমালোচনার আসন ছেড়ে ফিল্ডে আসুন, যদি আসলেই সমাজের প্রতি কোন দায়বোধ থাকে তাহলে সমালোচনা বাদ দিয়ে প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করুন সুন্দর রুচিশীল কোন সিনেমা দিয়ে....

কোন মন্তব্য নেই: