সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

আনন্দ বিতর্কের একদিন...

বিতর্ক সবার কেমন লাগে জানিনা।তবে একসময় এর প্রতি আমার অপরিসীম আগ্রহ ছিল।স্কুল লাইফে অনেক ক্লসভিত্তিক বিতর্ক করা হয়েছে।আর টিভিতে প্রচারিত কোন বিতর্ক মনে হয় আমার মিস হত না তখন।আমি শিডিউল করে টিভিতে বিতর্ক দেখতাম তখন।এই বিতর্ক নিয়েই আমার কিছু অভিজ্ঞতা বলি...
আমাদের স্কুলে তখন নতুন নিয়ম চালু হল।প্রতি বৃহস্পতিবার এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিসের জন্য বিভিন্ন ক্লাব গঠন করা হবে।এবং সেদিন কোন ক্লাস হবেনা।অনলি ক্লাবের আন্ডারে স্টুডেন্টদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য ক্লাস হবে।এই নিউজটা যখন পেলাম তখন যে কি খুশি এই ভেবে যে সেদিন কোন ক্লাস হবেনা প্লাস আমার প্রিয় বিতর্ক ক্লাবে আমি এটেন্ড করতে পারব।যথারীতি আমার যত ফ্রেন্ড আছে সবাই যার যার পছন্দের ক্লাবে মেমবার হয়ে গেল।যেহেতু আমার নাচ,গান,ছবি আকা,খেলাধূলার প্রতি কোন আকর্ষন নাই তাই আমি অনলি উপস্থিত বক্তৃতা,রচনা লেখা,বিতর্ক এসব ক্লাবের মেমবার হলাম।

তো রেগুলার আমি বিতর্কে পার্টিসিপেট করতে লাগলাম।আমাদের টিচাররা টপিকস সিলেক্ট করে দিতেন এবং বিতর্কের বিভিন্ন কৌশল বলে দিতেন।এখনও মনে পড়ে লাস্ট যে বিতর্কে আমি ছিলাম,সেই বিতর্ক থেকে আমি অনেক বড় একটা জিনিস শিখে গেছিলাম।সেটা হল বিতর্ক আমরা কেবল বিতর্ক করার জন্য করতেছি।ইনফ্যক্ট কোন কিছু শিখার মানসিকতায় আমরা কেউ বিতর্ক করতামনা।আমার যে প্রতিপক্ষ থাকত তার কোন যুক্তিবান কথাও আমরা কেউ মেনে নিতামনা।প্রতিপক্ষের অবস্থাও ছিল সেইম।সো যারা জিতে যেত তাদের প্রতি খুব মেজাজ খারাপ হত কেন তারা জিতল?হাঃ হাঃ যদিও সেটা খুব অমূলক ছিল,কিন্তু সেটাই ছিল আমাদের কাছে যৌক্তিক।আমার জীবনে তাই ক্লাস এইট এর পর থেকে সেটাই ছিল শেষ বিতর্ক।বলা যায় সাডেন চেঞ্জ আমার মধ্যে আসল।নিছক বিতর্কের জন্য কোন বিতর্কের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট পুরাপুরি শেষ হয়ে গেছিল।যে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য ক্লাব গঠিত হয়েছিল সেই ক্লাব থেকেই আমার প্রিয় বিতর্কের ইচ্ছার অবসান ঘটেছিল।আর কখনও টিভিতেও কোন বিতর্ক দেখা হয়নি।

৬ বছর পর ২০০৮ সালে মেডিকেল কলেজের কালচারাল ফাংশানে আমি এবার দর্শক।এত বছর পর খুব আগ্রহ ফিল করলাম।কারন বিতর্কটা ছিল ডক্টরদের মধ্যে।চারদিকে পোস্টারে ভরে গেছে ক্যাম্পাস।উহু! কতদিন বিতর্ক দেখিনা।তাই ভিতরের ইচ্ছা এবার জেগে উঠল।

বিতর্কের বিষয় ছিল “ক্লিনিক্যাল ডক্টরদের থেকে প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টররা পারিবারিক জীবনে সুখি।
উল্লেখ্য প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টর বলতে তাদের বোঝায় যারা মেডিক্যাল কলেজের টিচার।আর যারা হসপিটাল এ প্রাক্টিস করে তাদের ক্লিনিক্যাল ডক্টর বলা হয়।যথারীতি বিতর্ক শুরু হল।স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু আমি মেডিকেলের স্টুডেন্ট সো আমি প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টদের পক্ষে।আর আমাদের স্যার ম্যডামদের অংশগ্রহনে ক্যম্পাসের সকল স্টুডেন্টদের ভিতর চঞ্চলতা শুরু হয়ে গেল।পুরা গ্যালারি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।মেডিক্যাল স্টুডেন্ট বনাম ক্লিনিক্যাল ডক্টর।আমার পাশে বসে ছিলেন একজন ইন্টার্নি ডক্টর।উনি ছিলেন খুব আশাবাদী যে ক্লিনিক্যাল ডক্টররাই জিতে যাবে।আমরা সবাই আমাদের টিচারদের হাত তালি দিয়ে উজ্জীবিত করতেছি।খুব টান টান উত্তেজনা।ঠিক যেমন ভারত-পাকিস্তান খেলায় হয়ে থাকে।কে জিতবে ,কে হারবে কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা।অবশেষে আমাদের ফিজিওলোজি ম্যাডামের শেষ একটা কথার জন্য প্রিক্লিনিক্যাল ডক্টররা জিতে গেল।সেই কথাটা খুবই স্ট্রং ছিল প্রতিপক্ষের জন্য।ম্যাডাম বলেছিলেন, ‘আমি এতদিন পেডিয়াট্রিকস(শিশু বিভাগ) এ ছিলাম।পারিবারিক জীবনে অনেক প্রবলেম হচ্ছিল,ছেলে-মেয়েদের টাইম দিতে পারছিলামনা।কিন্তু যখন পেডিয়াট্রিকস ছেড়ে প্রিক্লিনিক্যালে ট্রান্সফার হলাম তখন থেকেই পারিবারিকভাবে সুখে দিন কাটাচ্ছি। হাঃহাঃ কথাটা শুনে আমরা সবাই হেসে দিছিলাম...

এই বিতর্কের পর ২য় আরেকটা বিতর্ক শুরূ হল।এটাও ছিল খুব মজার।এটার বিষয় ছিল, সার্জারি নয়,মেডিসিনই চিকিতসা বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি।
এই বিতর্কও খুব জমে গেছিল,কারন সমগ্র হসপিটালের মেডিসিন ও সার্জারি ডক্টরদের মধ্যে গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।আর স্টুডেন্ট? যে যার মত বিভক্ত হয়ে গেছিল।সার্জারি আমার ভাল লাগেনা,এই কারনে ডিসেকসান ক্লাস আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগে।সো আমি ছিলাম মেডিসিনের পক্ষে।আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল সার্জারির পক্ষে।যথারীতি এখানেও খুব টান টান উত্তেজনা।সার্জারিতে মেইন প্লাস পয়েন্ট ছিল গাইনি বিভাগ।কারন মানুষ সৃষ্টির ইনিশিয়াল স্টেপ সার্জারি দিয়ে শুরু হয়।খুব স্ট্রং পয়েন্ট।শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মনে হচ্ছিল সার্জারি জিতে যাবে।্কিন্তু এবারও ধারনা ভুল হল।মেডিসিনের স্যার খুব মজার একটা কথা বললেন সবার শেষে।বললেন, সার্জারি যদি চিকিতসা বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হত তাহলে মেডিক্যাল কলেজের নাম সার্জিক্যাল কলেজ হত,মেডিক্যাল কলেজ হতনা।
খুব জোরে হাততালি পড়ল দর্শক সারি থেকে,এবং এট লাস্ট মেডিসিন জিতে গেল।
এই দুইটা বিতর্কে আমি খুব মজা পেয়েছি কারন এখানে সমগ্র ডক্টর,স্টুডেন্ট,টিচারদের মধ্যে তফাত ছিলনা।মনে হচ্ছিল সবাই সমবয়সী এবং যে যার মত গ্রুপে ডিভাইড হয়ে ছিল।৬ বছর পর এই বিতর্ক আমার জন্য ছিল এককথায় আসাধারন।মেডিকেল কলেজে এডমিসনের পর একঘেয়েমি পড়া থেকে এই বিতর্ক আমাদের জন্য ছিল উচ্চমানের বিনোদন,যা ব্রেইনকে রিফ্রেস করে দিয়েছিল একেবারে।ইনফ্যাক্ট মেডিকেল কলেজে আমরা এর থেকে আর বেশি বিনোদন আর কিইবা পেতে পারি???

২টি মন্তব্য:

mahmud বলেছেন...

আসলেই মজার বিষয় আর তার উপস্থাপনা ছিলো বলে মনে হলো।
ভালো লাগলো।

রেইন স্পট বলেছেন...

ধন্যবাদ।সেদিন আমি সত্যি অনেক মজা পেয়েছিলাম।