রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

একটি মিনতি প্রথম আলোর কাছে...রাখবে?

শপথের কথা মনে হলেই মনে পড়ে স্কুল জীবনের এসেম্বলীতে দাঁড়িয়ে সেই বিরক্তিকর শপথের কথা।প্রতিদিন একই কথা…’আমি শপথ করিতেছি যে সদা সত্য কথা বলিব,দেশের তরে কাজ করিব।দেশ ও মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিব.........’ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া প্রতিদিনই আমার জন্য খুব কষ্টকর ছিল।আর যখনি মনে পড়ে স্কুলে যেয়ে পিটি করতে হবে তখন আরও বিরক্ত লাগত।মনে হত কে যে এই পড়ালেখা নামক জিনিসটা আবিষ্কার করেছিল!!! কিন্তু আম্মু জোর করে প্রতিদিন স্কুলে পাঠাত।উফ! স্কুল জীবন ছিল সত্যিই অনেক কষ্টের।আনন্দ যে ছিলনা তা বলবনা।কিন্তু নষ্টালজিক হতে আমার আপত্তি আছে।যে আনন্দ আমি স্কুলে থাকতে বুঝতে পারলামনা তা এখন বুঝে অতীত বিলাসের কোন মানে নাই।স্কুল জীবন যখন প্রায় শেষের পথে তখন একটা জিনিস ভেবেই খুব আনন্দ লাগছিল যে আমাকে আর পিটি,সেই একঘেয়ে শপথ করা লাগবেনা।কিন্তু হায়! যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়।আমার ক্ষেত্রেও অবস্থা তাই হল।সেই একই চক্রের পুনরাবৃত্তি।আবার পিটি,আবার শপথ...
কিন্তু কলেজে উঠার পর আমি অনেক ফাকিবাজ হয়ে গিয়েছিলাম।প্রায় সময় এসেম্বলীর পর কলেজে যেতাম।তবে অবশ্য এই ফাকিবাজি বেশিদিন কাজে লাগেনি।কলেজের নতুন প্রিন্সিপাল খুব কড়া ছিলেন।তাই আবার ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন।সেই এসেম্বলি,সেই পিটি।
ওহ! প্রথম আলোর দিন বদলের শপথের কথা দেখে একটু অতীতে ফিরে গেছিলাম।স্কুল কিংবা কলেজ লাইফে শপথের মূল্য না বুঝলেওএখন কিছুটা বুঝতে পারি।শপথ কেবল মৌখিক বাক্য নয় বরং এর সাথে মিশে আছে বাস্তব শপথের প্রতিশ্রুতি।ঠিক যেমন শিকড়ের সাথে বৃক্ষের সম্পর্ক।
ম্যাচুরিটির যে লেভেলে আমাদের মৌখিক শপথ করানো হয়,সেই লেভেলে বাস্তব শপথের কোন প্রাক্টিস শেখানো হয়না।ফলে যা হবার তাই হয়।এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিই।
প্রথম আলোর দিন বদলের শপথকে আমি সাধুবাধ জানাই।অনেক আগে থেকেই আমি প্রথম আলো পড়ি।নারী মঞ্চ আমার বিশেষ আকর্ষন।নারীদের অধিকার আদায়ের কথা,অনেক না বলা অব্যক্ত কথা এখানে ফুটে উঠে।মনে করতাম নারীদের জন্য সত্যিকারের একটা প্লাটফর্ম নারী মঞ্চ।দিন বদলের শপথের এই গান শুনে তাই মনে করেছিলাম প্রথম আলো পারবে সমাজের মৌখিক শপথকে বাস্তবে কনভার্ট করতে।
গতকাল নারীমঞ্চ পড়ছিলাম।একটা খবর বিশেষভাবে খুজতেছিলাম।পিরোজপুরের সেই তিন বোনের কথা।তাদের এই অহেতুক হয়রানিতে নারী মঞ্চ নিশ্চয় নির্বাক থাকবেনা।প্রকাশ করবে বিশেষ প্রতিবেদন।কিন্তু নাহ! অনেক খুজেও সেখানে বিশেষ প্রতিবেদন তো দূরের কথা সাধারন কোন খবরও আমি নারী মঞ্চে পাইনি।খুব খারাপ লাগল।পিরোজপুরের সেই ঘৃ্ন্য ঘটনায় প্রথম আলো র নারী মঞ্চ কিভাবে নির্বাক থাকল?বখাটেদের বাচাতে ডিজিটাল সরকারের উদ্যোগের কথা নাহয় নাই বললাম।কিন্তু যে প্রথম আলো নারীদের নিয়ে এত সোচ্চার তারা কেন আজ এত শীতল,উত্তাপহীন?? তবে কি হিজাব পরিহিতা বলেই তাদের ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব? কিন্তু তারাও তো নারী।মুসলিম নারী।৮০% মুসলমানের এই দেশে যদি হিজাব পরিহিতাদের জঙ্গি সন্দেহে রিমান্ডে নেওয়া হয়,অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হয় তাহলে তো বলতেই হয় দেশ আসলে ডিজিটালি যাচ্ছে কোথায়??
তাই নারী মঞ্চের এই নির্বাক উপস্থিতি আমাকে বাধ্য করল ভার্চুয়ালী কিছু লিখতে।প্রথম আলোকে বলি প্লিজ তুমি তোমার এই কেবল স্পন্সর নির্ভর মৌখিক দিন বদলের গান বন্ধ কর।যেদিন তুমি নিজে বদল হতে পারবা,দেশের অন্যায় দেখলেই নিরপেক্ষভাবে সবাক হয়ে উঠবা,বাস্তব দিন বদলের রঙ্গে নিজেদের রাঙ্গায়িত করতে পারবা সেই দিন তোমার সাথে আমিও গাইব।আমরা সবাই গাইব।প্লিজ আমার এই মিনতি টুকু রাখ।প্লিজ...



কোন মন্তব্য নেই: