বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সিনেম্যাটিক ডাক্তারি!


প্লাষ্টিক সার্জারিতে যখন ডিউটি ছিল
তখন মনের গহীনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে চরম
উতসাহে ডিউটির প্রথম দিন
হাসপাতালে গিয়ে দেখি সেদিন ওটি ডে।
তখন ছিল রোজার ঈদের ছুটি শেষ হবার প্রথম
কার্যদিবস। স্বাভাবিক ভাবে অনেকেই
আসেনি। আমাকেই ফার্স্ট এসিস্ট
করতে হবে ওটিতে। তাই দাড়িয়ে গেলাম।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য একজন প্লাস্টিক
সার্জনের সাথে ওটি করার মধ্যেই ভাবলাম
এটাই সুযোগ নিজের সব কৌতুহল মেটানোর।
স্যারকে বললাম, প্লাস্টিক
সার্জারি করে কি নিজের
চেহারা বদলে ফেলা সম্ভব? স্যার
তো আমার প্রশ্ন শুনে খুব
একটা হাসি দিয়ে বলল সিনেম্যাটিক
মেডিকেলে সম্ভব কিন্তু বাস্তবে না।
হা হা হা। মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় কত
নাটক সিনেমা দেখতাম
সেখানে নায়িকা চেহারা বদলে একেবারে ভিন্ন
মানুষ হিসেবে আবির্ভাব হত। সবই
নাকি প্লাস্টিক সার্জারির কেরামতি!
আচ্ছা এরকম বহু মিসকনসেপশান
আমরা সিনেমা, নাটকে পেয়ে থাকি। চলুন
দেখি কি কি.....
১.প্লাস্টিক
সার্জারি করে সিনেমাতে যে অহরহ
চেহারা বদলানো।যায় এটা বাস্তবে কখনই
সম্ভব না। চেহারার কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন
সম্ভব যেটা সিনেমার তুলনায় খুবই নগন্য।
২. আচ্ছা,যমজ ভাই কিংবা বোন আঘাত
পেলে নাকি অন্যজনও ব্যথা টের পায়।
জানিনা এই থিওরি সিনেমার ডিরেক্টর
কেমনে কোথায় পেল? একজন আঘাত
পেলে অন্যজন কেমনে টের পাবে?
মেকানিজম কি অনারেবল ডিরেক্টর স্যার?
৩.খুব খুব কমন একটি বাংলা সিনেমার দৃশ্য
হল ডাক্তার সাহেব এসে মহিলার হাত ধরেই
বলে দেয় যে সে প্রেগন্যন্ট। পালস দেখেই
যদি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কনফার্ম করা যায়
তাইলে আর আমরা গাইনিতে এতদিন এত এত
পরীক্ষা কেন শিখলাম!
৪.ওহ!
প্রেগন্যান্সি ব্যাপারটিকে মুভিতে আরো গুরুত্ব
বুঝানোর জন্য প্রায়ই বলা হয় দশ মাস দশ
দিন পেটে ধারণ করা মায়ের চোখের জল
ছেলে বুঝলনা। আহা! দশ মাস দশ দিন
হলে তো পোস্ট ডেটেড প্রেগন্যান্সি। প্রকৃত
হিসাব হল নয় মাস সাতদিন।
তাহলে চিন্তা করে দেখেন পুরা একমাসের
হিসাবের গন্ডগোল দিয়ে সিনেমা এখনও
বহাল তবিয়তে জনপ্রিয়তা পেয়ে যাচ্ছে।
৫. কোন এক তুমুল জনপ্রিয় গানে দেখেছিলাম
অন্ধ নায়িকাকে ভালবাসার মোহে নায়ক
তার দুই চোখ দান করে নিজে অন্ধ হয়ে যায়।
আরে ভাই থামেন। বাস্তবে দুই চোখ কেউ
দেয়না আর একচোখ দিলে কেউ অন্ধ
হয়ে যায়না। হয়ত ভাবছেন নায়ক
নায়িকাকে বেশি ভালবাসে তাই দুই চোখ
তো দিতেই পারে। না ভাই,
মেডিকোলিগ্যাল ব্যাপার গুলা অত্যন্ত
জটিল।কেউ চাইলেই দুই চোখ দান
করতে পারবেনা।
৬. কিডনি দান করে বন্ধু মারা যায় এমন
অহরহ ব্যাপার সিনেমাতে কত দেখায়! আর
বন্ধুর কিডনি নিয়ে নায়ক
কিংবা নায়িকা দিব্যি সুখে দিন কাটায়।
আহ! বাস্তব যদি এমন হত! যে কিডনি দান
করে তার কিন্তু বাস্তবে কোন সমস্যা তেমন
হয়না। একটা কিডনি নিয়ে সে দিব্যি জীবন
পার করে দিতে পারে।
সমস্যা হয় যে কিডনি নেয়। কারন
ইমিউনিটি দমিয়ে রেখে কিডনি শরীরে প্রতিস্থাপন
অনেক প্যারার ব্যাপার। আর
সেটা সাকসেসফুল হলেও যে রোগীর
সমস্যা হবেনা এমন বলা টাফ।
অথচ সিনেমাতে পুরাই উল্টা দেখাচ্ছে।
রোগী বেচে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে আর
বেচারা কিডনিদাতা মরে যাচ্ছে।
৭. সিনেমাতে কেন যেন সবার ব্লাড গ্রুপ
নেগেটিভ হয়। আচ্ছা তাও নাহয় হল।
দেখা যায় নায়ক-
নায়িকা হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে শুয়ে একজন
আরেকজন কে রক্ত দান করছে। নায়কের শরীর
থেকে রক্ত
এন্টি গ্রাভিতে উপরে গিয়ে ব্যাগে জমা হয়
আর সেই ব্যাগ থেকে রক্ত সাই সাই
করে নিচে নেমে নায়িকার শরীরে প্রবেশ
করে। আহা! পুরাই এক ঢেউ এর মত ভালবাসার
কার্ভ তৈরি হয়।
বাস্তবে কি হয় জানেন? একজনের রক্ত
নিয়ে সব পরীক্ষার পর ওকে হলে ডোনারের
রক্ত টানা হয়। এরপর সেই রক্ত রিসিভার
কে আলাদাভাবে দেয়া হয়।
এখানে পাশাপাশি বেডে শুয়ে রক্ত দেবার
রোমান্টিসজম পুরাই ডিরেক্টরের
কল্পনাপ্রসূত ভুয়া কাহিনী।
৮.সবচেয়ে লেটেস্ট মিসকনসেপসান
হচ্ছে ক্লোনিং নিয়ে।
বাংলা মুভিতে এটা এখনও আসেনি মনে হয়।
ব্যাপার না। অনন্ত জলিল নিয়ে আসবে হয়ত
খুব শিঘ্রি।
মুভিতে যেটা দেখায় তা হল বিরাট এক
বিজ্ঞানি যে নিজের ক্লোনিং করতে চায়।
সে বিশাল এক ল্যাবের মধ্যে কফিন টাইপ
কিছু একটার মধ্যে ঢুকে যায়। এরপর ল্যাবের
অপর সাইডের বাক্স থেকে সেইম আরেকজন
এডাল্ট ক্লোনিং হয়ে বের হয়।
অনেকটা কপি-পেষ্টের মত।
এদের যদি বিন্দুমাত্র মেডিকেলের
এ,বি,সি জ্ঞানও থাকত তাইলে এরকম
গাজাখুরি কনসেপ্ট বানানো সম্ভব
হইতো না।
ক্লোনিং করতে গেলেও যে মায়ের
গর্ভে তাকে লালিত পালিত হতেই হবে!
এরকম কোন বাক্স আজ পর্যন্ত আবিষ্কার
হয়নি যার মধ্যে কৃত্তিম
উপায়ে বাচ্চা উতপাদন করা যাবে।

(আর আপাতত মনে পড়ছেনা।
পরে মনে হলে এড করে দিব।)

কোন মন্তব্য নেই: