বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রফেশনাল!

১.
পাশের বিল্ডিং এর বাড়ির কর্মসহযোগী মহিলা আমার কাছে প্রায়ই আসে অসুস্থতার জন্য চিকিতসা নিতে। একবার আসল হাইপারসেনসিটিভিটি টাইপ- ১ নিয়ে।
চিংড়ি, বেগুনের ঝোল খেয়ে একেবারে তুলকালাম অবস্থা। চুলকানি সাথে সারা মুখ ফুলে গেছে। সব দেখে আর হিস্ট্রি শুনে চিকিতসা দিয়ে দিলাম।
দুদিন পর সেই একই সমস্যা নিয়ে আবার তিনি হাজির। বললাম, ওষুধ খেয়ে কমেনি? উত্তর জানাল না। খুবই কনফিউসড হয়ে গেলাম। একটু উতসুক হয়ে তাকে তার ওষুধ গুলা আনতে বললাম।আমি তাকে তিনটি খাবার বড়ি লিখে দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন তিনি আমাকে তার ওষুধ গুলা দেখালেন সেখানে মাত্র একটি বড়ি।
খালাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার বাকি দুটা ওষুধ কই গেল? জানাল, ওষুধ কেনার জন্য গৃহকর্তীর কাছে যখন তিনি টাকা চাইতে গেলেন তখন সেই গৃহকর্তী প্রেস্ক্রিপশান দেখতে চাইলেন। উল্লেখ্য গৃহকর্তীর এজমার সমস্যা আছে, এজন্য তিনি স্টেরয়েড খান ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
যাইহোক আমার লেখা প্রেসক্রিপশান দেখে বললেন তিনটে বড়িই কেনা লাগবেনা।শুধু চুলকানির জন্য যে এন্টিহিস্টামিন দিয়েছিলাম সেটা কেনার টাকা দিলেন। সাথে খালাকে বুঝিয়ে দিলেন যে বাকি দুটার একটা হল গ্যাসের ওষুধ, আরেকটা হল শ্বাসকষ্টের ওষুধ যা উনার জন্য অপ্রযোজ্য।
বুঝলাম যে স্টেরয়েড আর এন্টিআলসারেন্ট প্রেসক্রিপশান থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। তাই বুঝলাম দুদিন পর একই সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আগমনের হেতু।
ভাবছি এখন থেকে চিকিতসা দেবার পর প্রতিটা ওষুধের ক্লিনিক্যাল ইন্ডিকেশান যুক্ত বইয়ের পাতাগুলা প্রেসক্রিপশানে এটাচ করে দিব।
বাংগালিরা যেহেতু সবাই ডাক্তার সেহেতু তারা পড়াশুনা করেই ডাক্তারি বিদ্যা ঝাড়ুক।

২.
বয়স্ক এক মহিলা, পাশের বাসার আন্টির শাশুড়ি। নানাবিধ সমস্যা। প্রেসার, ডায়াবেটিস আর হার্টের রোগ। মাঝে মাঝেই আমার কাছে আসে বিভিন্ন ব্যাপারে পরামর্শ নিতে।
হার্টের সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এসপিরিন খেতেন। সম্প্রতি তার কাশি আর শ্বাস কষ্টের জন্য একজন হার্ট স্পেশালিস্ট দেখান। নতুন প্রেসক্রিপশানে পুরানো ওষুধ চেঞ্জ করে নতুন ড্রাগ লিখে দেন।
আমার কাছে আসার হেতু এত এত বড় ডাক্তার দেখায় তবু তার রোগ সারেনা। আমি উনার চিকিতসার ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে বললাম স্যার অনেক ভাল ওষুধই তো প্রেস্ক্রাইব করেছেন। কাজ তো করার কথা।
যথারীতি আমি উনার ওষুদের বক্স ঘেটে দেখলাম এসপিরিন খাচ্ছেন আর চেঞ্জ করে দেয়া ক্লপিডগরেল বক্সে নাই। জিজ্ঞেস করলাম নতুন প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী যে ড্রাগ দিয়েছে সেটা কই?
জানাল, ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়েই পরিচিত এক ফার্মেসিতে গেছিল ওষুধ কিনতে। দোকানদার খুব আন্তরিকভাবে নাকি জানাল যে এসপিরিন দামে কম, হার্টের জন্য ভাল। ক্লপিড আর এসপিরিন তো একই ওষুধ কিন্তু অনেক দামি, শুধু শুধু দাম দিয়ে কেনার দরকার কি? এসব শুনে তিনিও সরল মনে এসপিরিন কিনেই চলে এসেছেন।
সব কথা শুনে মনে মনে বললাম ফার্মেসির দোকানদারের কথাই যখন শুনবেন তাইলে এম.ডি, এফ.সি.পি.এস করা স্পেশালিস্টের কাছে কেন দৌড়াইছিলেন?

৩.
মোবাইলে এক আত্মীয়ের সাথে কথা হচ্ছিল, তার প্রেগনেন্সি রিলেটেড শারীরিক অসুবিধার জন্য আমার কাছে পরামর্শ চাইল। সমুদয় সব বৃত্তান্ত শুনে এস.এম.এসে তাকে ওষুধ লিখে দিলাম।
পরদিনই আত্মীয়ার স্বামী আমাকে জানালেন নাপা যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর জন্য আমি কিভাবে এটা প্রেস্ক্রাইব করলাম? বুঝলাম ঘটনার আদ্যোপান্ত।
ভাবছি চারপাশে সফদার ডাক্তারে ঠাসা এই দেশে এত্ত আনপ্রফেশনাল আমি কবে প্রফেশনাল হব???

কোন মন্তব্য নেই: