শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ফিরে দেখা ২০১০: মোবাইল

মোবাইল নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ ছিলনা এবছরে। প্রচলিত অর্থে বিড়ম্বনা না এটা। কারণ মোবাইল ক্রাইম যেভাবে বেড়েছে সেখানে মোবাইল নিয়ে বিড়ম্বনারও মানুষের শেষ নাই। কিন্তু আমার টা ভিন্ন। আসলে কেউ কখনও আমাকে মোবাইলে বিরক্ত করতে পারেনি এপর্যন্ত। কারণ বিরক্ত করবে কি করে? আমি বিরক্ত হলেই না আমি বিরক্ত হব! আচ্ছা ঘটনা খুলে বলি তাহলে।

পারসোনাল মোবাইল আমি প্রথম ব্যবহার করি ২০০৬ সাল থেকে। সো তখন থেকেই অপরিচিত নাম্বার থেকে প্রচুর কল, মিসডকল আসতে থাকে। এই বছরের মাঝামাঝি তে একবার প্রচুর অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসতে থাকে। যেহেতু আমি অনেক ব্যস্ত থাকি। তাই খেয়াল থাকেনা কে কখন ফোন দেয়। তাই কে কখন কি মেসেজ দিল, কে মিসডকল দিল এসব নিয়ে কখনই মাথা ব্যথার সময় থাকেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার, এক শুক্রবারে একজন অপরিচিত লোক আমাকে ফোন দিয়ে বলে- “ আচ্ছা আপু আপনি কি একটুও ডিস্টার্বড হন না? গত এক সপ্তাহ ধরে আমি আপনাকে কন্টিনিউয়াস মিসডকল দিয়ে যাচ্ছি। দিনে কমপক্ষে ২০ বার করে। আপনার কি একটুও জানতে ইচ্ছা করে না যে এক আমাকে এরকম মিসডকল দিচ্ছে?”
আমি তো পুরাই অবাক। কি বলে এই লোক। আমি বললাম “ স্যরি, ভাইয়া আসলে মোবাইল চেক করা হয়না আমার সেরকম। তাই দেখিনি আপনি আমাকে কতদিন ধরে কতবার মিসডকল দিচ্ছেন।“
এই হচ্ছে ব্যাপার। কিন্তু এই সমস্যার আরেকটি ভয়াবহ দিক আছে। পরিবারের অনেকেই আমাকে ফোন করে ঠিক যখন আমি ক্লাসে থাকি। পরে ক্লাস শেষে বাসায় যেতে যেতে বিকাল হয়ে যায় তখন আর খেয়াল থাকেনা যে কে আমাকে ফোন করেছিল। সুতরাং আমার নামে প্রচুর কমপ্লেইন আসে আমার আম্মার কাছে। কিন্তু কি আর করা! তাদের কে তো ব্যাপারটা বুঝানো যাবেনা।
মোবাইলের আরেকটা ব্যাপার আছে সেটা হল, আমি সবসময় মোবাইল ভাইব্রেইট করে রাখি। যেকোন সময় যদি ক্লাসে ফোনে রিং হয় তাহলে তো সমস্যা হতে পারে। আর তাছাড়া যেকোন পাবলিক প্লেইসেও আমি মোবাইল ভাইব্রেইট করে রাখতেই পছন্দ করি। অযথা মোবাইলের রিংটোন অন্যের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। কিন্তু এই ভাইব্রেইট করা নিয়েও বাসায় একদিন প্রচুর বকা দেওয়া হল আমাকে। আমি নাকি ভাইব্রেইট করে রাখি যেন কারো ফোন রিসিভ করতে না হয় এজন্য। যাইহোক বকাবকি শুনে আমি মোবাইলে রিংটোন মোড দিলাম।

পরেরদিন সকাল বেলা ছিল আমার পরীক্ষা। রিংটোন অফ করতে মনে নাই। পরীক্ষার হলেই আমার মোবাইল বেজে উঠল। এপ্রনের পকেটেই ছিল মোবাইল। কিন্তু পরীক্ষার টেনসান এত বেশি ছিল যে আমি নিজেই টের পাইনি যে আসলে মোবাইলে রিং হচ্ছে। আমার পাশে বসা ফ্রেন্ড যদি না বলে দিত যে আমার এপ্রনের পকেটেই মোবাইল বাজছে তাহলে হয়তবা সেই পরীক্ষা আর আমার দেওয়া হতনা। অনেক কৃতজ্ঞ সেই ফ্রেন্ডের প্রতি আজও।
এরপর আরেকদিন প্যাথোলজি ভাইভা দিচ্ছি। ঠিক ভাইভার টেবিলেই আমার ফোন বেজে উঠল। খুব অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। ম্যাডাম অনেক ভাল ছিলেন বলে আমার দিকে কিছুক্ষন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন, হয়ত ভাবছিলেন আমার এত বড় সাহস কি করে হল যে ভাইভার টেবিলে মোবাইল অফ না করে চলে আসি। ম্যাডামের ওই দৃষ্টি আর ভাবতে ভাবতেই আমি মোবাইল অফ করে ফেলে খুব সুন্দর করে করুণ চোখে স্যরি বললাম। কাজ হল। বেচে গেলাম সেবার ও।
এরপর আরেকদিন মাইক্রোবায়োলোজি লেকচার ক্লাস, স্যার সেদিন মোবাইল নিয়ে নসিহত দিচ্ছিলেন। স্যার বলছিলেন, যে উনি একজন টিচার হয়েও ক্লাসে মোবাইল অফ করে আসে, ক্লাস চলাকালীন সময় কোন ফোন কল রিসিভ করেননা। আর আমরা কিনা স্টুডেন্ট হয়ে মোবাইল অফ করিনা, বরং জোরে জোরে রিংটোন বেজে উঠে ক্লাসের ফাকেই। হাউ ডেয়ার ইউ!! ঠিক তখনি আমার ফোন বেজে উঠল। একেবারেই অন দ্যা স্পট। স্যার তখন আমাকে কি করবেন একচুয়ালি সেটা বুঝতেছিলেননা। কারণ এই মোবাইল নসিহতের মধ্যেও কারো ফোন বেজে উঠতে পারে সেটা উনার কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। সম্ভবত স্যার মেয়ে বলেই আমাকে সেদিন আর কিছু বলেননি, জাস্ট আমাকে টাইম দিলেন মোবাইল অফ করার জন্য। কিন্তু ছেলে হলে সেদিন যে আমার বারোটা বেজে যেত কোন সন্দেহ ছিলনা। সেদিনই কেন যেন মেয়ে হিসেবে নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব অনুভব করছিলাম। থ্যাঙ্কস আল্লাহ ফর ক্রিয়েটিং মি এজ এ গার্ল!!!!

কোন মন্তব্য নেই: