শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

হোস্টেল লাইফ-৩

বাসার বাইরে হলের জীবনে প্রথম যে অভিজ্ঞতা অর্জন করি তা হল নিজের কাজ নিজেই করা। যদিও আমি খুব প্র্যাক্টিক্যাল মেয়ে তবুও বাসায় থাকাকালীন আমার সাধারণত কোন কাজে হাত দেয়া লাগেনি। কিন্তু হলে গিয়ে ঘুম থেকে উঠে বিছানা গোছানো, কাপড়-চোপড় ধোয়া, সময়মত খাওয়া-দাওয়া এসব খুব সুন্দর নিয়মিত হয়ে গেল আমার জন্য। ইনফ্যাক্ট আমি যে এরকম সুন্দর গোছানো লাইফ কন্টিনিউ করতে পারি তা আমার কাছে প্রথম প্রকাশিত হল সেখানে গিয়ে।
এই গোছানো লাইফ বাদেও আর যে ব্যাপার আমার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হল বিভিন্ন মানুষের সাথে একত্রে বসবাসের অভিজ্ঞতা। এমএমসি থেকে ঢাকায় আসা পর আমি তখন অনেক রিলাক্স। যদিও হলে থাকি তবুও শান্ত্বনা এই যে, যেকোন মুহূর্তে বাসায় যেতে পারি। আসলে আমার মধ্যে যে হোম সিকনেস আছে সেটা আমি হলে যাবার পূর্বে ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। ভাবতাম হলের জীবন না জানি কত মধুর!
যাইহোক সুমাইয়ার সাথে আমার ফ্রেন্ডশীপ প্রথম থেকে ছিলনা,যদিও পরবর্তিতে মেডিকেলে লাইফে ওই আমার সবচেয়ে কাছের একজন হয়ে উঠে।
সুমাইয়া আমার ব্যাচেও ছিলনা, ওর রোল প্রথমদিকে আর আমার শেষের দিকে। এমনকি ও আমার রুমমেটও না। পাশের রুমে থাকত সে। তবে মেডিকেলে প্রথম যাকে নিয়ে আমার খুব কৌতুহল হয় সে হল সুমাইয়া। কারণ ক্যাম্পাসে তখন সে টক অব দ্যা টাইম। অসাধারন সুন্দরী, স্মার্ট। যেকোন ছেলেই একবার দেখলে ২য়বার তাকাতে ভুল করবেনা। সুতরাং ক্যম্পাসের সব ছেলেরাই মোটামুটি তাকে একবার করে হলেও ট্রাই করেছে। ওর নামে অনেক অনেক গুজব তখন ক্যাম্পাসে চলছিল। যেহেতু ও আমার ব্যাচে ছিলনা তাই ওর খুব কাছাকাছি মেশার সুযোগ আমার হয়নি তখন। তবে মাঝে মাঝে ওর সাথে বাসে দেখা হত। হাই,হ্যালো টাইপ কথা দিয়েই শেষ হত আমাদের পরিচয়।
সুমাইয়া সম্পর্কে প্রথম কাছাকাছি মেশার সুযোগ হয় হলে উঠে। ও আমার পাশের রুমেই থাকত। সুমাইয়ার সবচেয়ে যে জিনিস আমার ভাল লাগত সেটা হল ওর ডিসেন্ট চলাফেরা। খুব স্মার্ট ছিল কিন্তু সেই স্মার্টনেসের মধ্যে কখনও উগ্রতা ছিলনা। আমি সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম হলে যখন দেখলাম সুমাইয়া নামাজ পড়ে, বিশেষ করে ফজরের নামাজ। এতদিন ধারণা ছিল নামাজ পড়া তো দূরের কথা নামাজ পড়তে পারে কিনা সেটাই সন্দেহ। মানুষ সম্পর্কে প্রথম অনুমান ভিত্তিক ধাক্কা খেলাম আমি সেদিন। ধাক্কাটা আরো অনেক কারণেই জোরাল ছিল।
ক্লাস শেষে রিডিং রুম বা লাইব্রেরিতে আমার সেরকম করে কখনও পড়া হয়নি। দুইটা কারণ ছিল। প্রথমত; রিডিং রুম/লাইব্রেরির কড়া এসি থেকে বাইরে বের হলে আমার খুব অসুবিধা হত। ২য়ত; সেখানে বেশিরভাগ সময় বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড রা একসাথে পড়াশুনা করত। সুতরাং হলে বসেই আমি পড়াশুনা করতে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করতাম। হলেই আমি লক্ষ্য করলাম একমাত্র সুমাইয়াও আমার মত হলেই পড়াশুনা করে। সেই সুবাদেই ওর সাথে একটু একটু করে কাছে আসা। আমাদের ফ্রেন্ডশীপ এভাবে ধীরে ধীরে গভীর হতে লাগল।
অত্যধিক সুন্দরী মেয়েরা নাকি পড়াশুনায় ভাল হয়না, সুমাইয়াকে দেখে সেই ধারণাও ভুল প্রমাণিত হল। ওর নামে এতদিন ক্যাম্পাসে যত গুজব শুনে এসেছি তখন সুযোগ হল সেই গুজবগুলো একটু একটু করে যাচাই করার। ততদিনে আমি আমার রুম চেইঞ্জ করে ফেলি। সুমাইয়া আর আমি একই রুম ও বেড পার্টনার। পড়াশুনা, খাওয়া-দাওয়া, গল্প সবকিছুই ওর সাথে। ক্রমেই ও আমার রিডিং পার্টনার হয়ে উঠল। এবং বুঝতে পারলাম একজন মানুষ সম্পর্কে বাইরে থেকে অনুমানভিত্তিক যেসব ধারণা আমি করে থাকি তার ৮০% ভুল। সুমাইয়া সাধারণ অন্য মেয়েগুলোর চেয়ে একটু বেশি সাধারণ। বাইরের চাকচিক্যময়তার প্রতি আমার যেমন কোন আকর্ষন নেই, ওরও নেই। দেখতাম হলে মেয়েরা বিকেল হলেই খুব সেজে গুজে বয়ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে বের হয়। অথচ সুমাইয়াকে আমি কখনও আয়না দেখে চুল পর্যন্ত আচড়াতে দেখিনি। ওকেই আমি প্রথম মন্তব্য করি যে তুই আমার থেকেও অনেক বেশি সিম্পল। খুব বন্ধুবৎসল, সামাজিক, অমায়িক সুমাইয়াকে আমার বেশি ভাল লাগতে শুরু করল, কারণ একমাত্র কলেজেই আমি প্রথম যার ব্যাপারে নেগেটিভ মন্তব্য শুনি সে ছিল সুমাইয়া।
এটা ছিল আমার নেগেটিভ ধারণার পজিটিভ দিক। ঠিক উলটা অভিজ্ঞতাও আমাকে দারুনভাবে প্রভাবিত করল। সুমাইয়ার মতই...

(চালানোর ইচ্ছা আছে...)

কোন মন্তব্য নেই: