শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

হোস্টেল লাইফ-২

এমএমসি তে যখন প্রথম ভর্তি হলাম তখনই জীবনের প্রথম বাসার বাইরে হলে থাকার সুযোগ পেলাম। আমার যে কি আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। সারাজীবন আমি কোনদিন মা কে ছাড়া কোথাও থাকিনি। মেডিকেলে পড়তে গিয়ে প্রথম কোথাও একা থাকব, এই স্বাধীনতা আমাকে অন্যরকম আনন্দ দিয়েছিল। কিন্তু একদিন যেতে না যেতেই স্বাধীনতার স্বরূপ বুঝতে পারলাম। প্রথম যেদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যখন গেলাম দুই মিনিট লেইট। দুই মিনিট কোন ব্যাপার না, কিন্তু সেই দুই মিনিটের জন্য স্যার লেকচার গ্যালারিতে ঢুকতে দিলেননা। শুধু আমাকে নয়, এরকম আরো ১০-১২ জনকে। মনটা প্রথমদিনই মেডিকেলের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেল। এরপরের ক্লাসে ঢুকলাম। সেখানে স্যার যে কি পড়ায়লো আমি তার আগা-মাথা কিছুই বুঝলামনা। সারাটাদিন এভাবেই গেল। রুমে ফিরে এলাম খুব বিষণ্ণ মন নিয়ে।
এরপর রুমে গিয়ে একটা অসহ্য যন্ত্রনার মধ্যে দিন কাটালাম। আসলে বুঝতে পেরেছিলাম স্বাধীনতা তখনই দরকার হয় যখন স্বাধীনভাবে কোন কাজ করতে হয়। কিন্তু এমএমসি হলে আমার স্বাধীনভাবে করার মত কিছু ছিলনা। শুধু পড়াশুনা, খাওয়া-দাওয়া আর ক্লাসে যাবার জন্য স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা একেবারেই নেই। সুতরাং কখন ঢাকায় যাব, এই চিন্তায় আমি আচ্ছন্ন থাকতাম বেশিরভাগ সময়। কিন্তু খুব অবাক হয়েছিলাম, আমাদের দোতলা হলে যারা ছিল তারা সবাই খুব উৎফুল্ল এবং হাসি-খুশি মেজাজে ছিল। কেউ আমার মত বিষণ্ণ ছিলনা। আমার যে রুমমেট সে আমাকে অনেক মোটিভেট করার চেষ্টা করত। কিন্তু একদম অপরিচিত পরিবেশে, কোন বান্ধবি ছাড়া আমার একদম ভাল লাগছিলনা। আমার রুমমেট সে সারাদিনই তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে মোবাইলে গল্প করে কাটাত। কখন ক্লাসে, কখন গোসল, কখন খাওয়া-দাওয়া, এসব আজাইরা নিউজ আপডেট দিতে দিতেই তার সময় কেটে যেত। তাই সে খুব ভালভাবেই হল লাইফ কাটাচ্ছিল।
পাশের রুমের শিমু নামের এক মেয়ে ছিল। কেন জানিনা ওকে আমার খুব ভাল লেগে যায়। অদ্ভুত সুন্দর করে কথা বলত। ওর সাথে গল্প করে এক সন্ধ্যা কাটিয়ে দিলাম। ভাবলাম ওর সাথে ভাল একটা ফ্রেন্ডশীপ হলে হয়ত আমিও অন্য সবার মতই হলে লাইফ এনজয় করতে পারব। কিন্তু পরদিনই সেই শিমুকে আর পেলামনা। সে তখন তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইরে ঘুরতে গিয়েছে। আমি তখন একটা শক খেলাম। কারণ একজনকেও আমি পেলামনা যার বয়ফ্রেন্ড নাই। সবাই কি কারনে এত মজার মধ্যে আছে, ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগলনা। কারণ সবাই এখন স্বাধীনভাবে তাদের বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে পারে, বাসা থেকে জানাজানির ঝামেলা নাই।
যাইহোক এভাবেই একসপ্তাহ কেটে গেল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলামনা, বুধবার ঢাকায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে মন মেজাজ খুব খারাপ। আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলতেও ভাল লাগছিলনা। এমন একটা ভাব যে মেডিকেলের হলে তারা আমাকে জোর করে পাঠায়ছে। অথচ আমিই কিন্তু হলে থাকার জন্য প্রথম থেকে চরম উত্তেজনায় ছিলাম।
শনিবার ভোরে চলে গেলাম এমএমসি। সেদিনই জানতে পারলাম এমএমসি থেকে মাইগ্রেশান হয়ে গেছে, আমি এখন ঢাকায় এসএইচএসএমসি তে পড়তে পারব। আমি জানিনা, জীবনের যদি কোন ভাল নিউজ পেয়ে থাকি তাহলে সেটাই ছিল আমার জন্য সবচেয়ে ভাল নিউজ। শনিবার দিন হলে গিয়েই আমি সব গুছিয়ে ফেললাম। রবিবার আম্মু-ভাইয়ারা গিয়ে আমাকে নিয়ে আসল।
এই ছিল আমার লাইফের প্রথম হলে থাকা।

(চালানোর ইচ্ছা আছে...)

কোন মন্তব্য নেই: