শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ফিরে দেখা ২০১০ : প্রেম

ব্যাপারটা দুঃখজনক কিনা জানিনা, তবে আমার বেশিরভাগ ফ্রেন্ডের বয় ফ্রেন্ড আছে। সো তাদের কাছে আমি ভয়াবহ এক আজব জিনিস। একদিন তারা এই প্রেম বিষয়ক ব্যাপার নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালাল। মেইন টার্গেট ছিলাম আসলে আমি। কেন আমি প্রেম করিনা। আমি কোন কিছুই কারণ ছাড়া ব্যাখ্যা করিনা। যদি কেবল ইসলামিক ভিউ থেকেও বলতে হয় তাহলেও আমাকে লজিক্যাল কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। ইনফ্যাক্ট তারা কেউই অত ধর্মের ধার ধারেনা। সুতরাং খুব ক্রিটিক্যাল মুহূর্ত ছিল সেটা আমার জন্য, কারণ আমি ওদের কাছে ধর্মের দোহাই দিয়ে পার পাবনা। আমাকে কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
যাইহোক সেই মুহুর্তে আমি পার পেয়ে গেলাম। কারণ আমার যুক্তি তাদের ভয়াবহ পছন্দ হয়েছে। যদিও খুব সাধারণ একটি কথা বলেছিলাম। খুব স্মার্টলি বলেছিলাম---“দেখ, আমি তোদের মত অতটা ডিটারমাইন্ড না। যার সাথে আজ আমি কমিটমেন্টে গেলাম, (ইনফ্যাক্ট রিলেশান বলতে আমি কমিটমেন্টকেই বুঝি) পরবর্তিতে আমি সেই কমিটমেন্ট রাখতে পারব কিনা আমি জানিনা। কারণ আমার পরিবার, তার পরিবার, পরিবেশ, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যত সবকিছুই অনিশ্চিত। এত অনিশ্চয়তার মধ্যে আমি কি করে এত বড় একটা মেজর কমিটমেন্টে যাই!! আমি তোদের মত এতটা ডিটারমাইন্ড আসলে না”।
তারা আমার এই জবাবে খুব খুশি। কিন্তু এই খুশিও যে বেশিদিন টিকবেনা কে জানত!!

আরো কয়েকমাস পর আবার সেই প্রেম বিষয়ক আলোচনা। বরাবরের মত এবারও টার্গেট আমি। কারণ ইতোমধ্যেই আমার পূর্বের জবাবের বিরুদ্ধে শক্ত এক লজিক টেনে এনেছে তারা। হুম, আমি বলেছিলাম ভবিষ্যত অনিশ্চিত, তাই রিলেশানের কমিটমেন্ট হয়ত রাখা সম্ভব না। কিন্তু সেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতকেও তারা এবার নিশ্চিত করেছে। কিভাবে? ওকে, শুনেন তাদের লজিক... “ শোন তুই যাকে পছন্দ করবি অর্থাৎ যার সাথে তোর রিলেশান থাকবে তার সাথে তুই পালিয়ে বিয়ে করবি। তাহলে তোর কমিটমেন্ট তুই সহজেই রাখতি পারলি। আর পরিবারের ব্যাপারেও সমাধান আছে। যখন তোর বাবা-মা দেখবে যে মেয়েটা তাদের বিয়ে করেই ফেলেছে তখন তারাও অগত্যা মেনে নিতে রাজি হবে। সুতরাং দুইদিক থেকেই তুই সেইফ থাকলি। কোন কিছুই আর অনিশ্চিত থাকলনা”।
বুঝেন এবার তাদের যুক্তি, কোথায় এপ্লাই করেছে!! আমি তো কিছুক্ষন তাদের লজিক শুনে মিউট হয়ে গেছিলাম। কিন্তু তারপরও খুব সাধারণভাবে এবারও যা বললাম সেটাও তারা মেনে নিল। কি বললাম, জানেন? ---“ দেখ, বছরের পর বছর যার সাথে প্রেম করব তাকে আমার সত্যি খুব বোরিং লাগবে পরে। এমনিতেও প্রেম না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র গল্প করা ক্লাসের ছেলেদেরও আমার খুব বোরিং লাগে। যে আমার লাইফ পার্টনার হবে তার সবকিছুই যদি আমি বিয়ের আগেই জেনে যাই, শেয়ারিং,কেয়ারিং,ভালবাসা এসবের মেইন স্পিরিট শেষ হয়ে যাবে তাহলে। আর বিয়ের পর যাকে আমি প্রথম চিনব তাকে চিনতেই চিনতেই তো রিলেশান অনেক স্ট্যাবল হয়ে যাবে। তাই না? সো অসব প্রেম আমাকে দিয়ে হবেনা।”
উফ!! এই জবাবটাও তাদের পছন্দ হল। কারণ ইতোমধ্যে তাদের প্রেম জমে বরফ হতে শুরু করেছে। একজন তো বলেই ফেলল, তার নাকি এখন বয়ফ্রেন্ড কে খুব বোরিং লাগে। অনেকবার ট্রাই করেই ব্রেক আপ করতে পারছেনা। কিভাবে যেন প্রতিবারই ব্রেক আপ মিস হয়ে যাচ্ছে। একেই বলে মনে হয় আজকালকার প্রেম! যদিও জানিনা ভবিষ্যতে তারা আবার কি লজিক নিয়ে আমার কাছে আবার আসবে?

বছরের শুরু থেকেই একজনের প্রেম শুরু হল, যেখানে আমিই নাকি ছিলাম ভিলেন। একসময় এই প্রেমের সূত্র ধরে তার সাথে বন্ধুত্বও শীতল হয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও সেই শীতল সম্পর্ক উষ্ণ করতে পারিনি। পরে ওটা গন কেইস হিসেবে রেখে দিলাম। আরেকজনের সাথে রিডিং পার্টনার হিসেবে পড়তে পড়তেই দুজনে চরম ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেলাম। ধরে নিলাম তার নাম নীলা। উল্লেখ্য আমরা কেউই কিন্তু লাইব্রেরিতে পড়িনা, হলের রুমে বসেই পড়তে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করি। কারণ আমরা কলেজের রিডিং রুম ও লাইব্রেরি রুমগুলো বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। তারা নিশ্চিন্তে ওখানে প্রেম-স্টাডি দুটাই চালাতে পারে। যেহেতু আমরা সেরকম কিছু না, তাই নিজেদের রুমেই স্টাডি করি।

ঘটনাক্রমে নীলার যে বয়ফ্রেন্ড তার সাথে সম্পর্কের অবনতি হওয়া শুরু করল। কারণ হচ্ছে আমি। নীলার বয়ফ্রেন্ডের অভিযোগ নীলা নাকি আমাকে বেশি টাইম দেয়, আমার সাথে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। আর যেহেতু নীলা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে লাইব্রেরিতে স্টাডি করেনা, সুতরাং তাদের রিলেশান খুব খারাপের দিকে যেতে লাগল। আমি তো কিছুটা টেনসানে ছিলাম, কারণ এখানে আমি কিছুই করছিনা, তারপরেও ভিলেন হয়ে যাচ্ছি আমি। নীলার যদি আমার সাথে গল্প করতেই বেশি ভাল লাগে সেটা কি আমার দোষ নাকি! আজব!! পরে নীলার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমার কথা হল। তাকে খুব সহজেই বললাম যে-- দোস্ত, তুমি আসলে প্রেম করতে জাননা। তা না হলে, তোমাদের প্রেমের মধ্যে আমি কেমনে থার্ড পারসন হই? আমি তো আর ছেলে না যে তোমার প্রেমিকার সাথে প্রেম করব।
এই কথাগুলো সে খুব সিরিয়াসলি নিল। পরে আমাকে বলল যে, আসলেই সে বুঝতেছেনা কিভাবে নীলার সাথে সম্পর্ক ভাল করা যায়। আমার কাছে টিপস চাইল। আমি তো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম, ওসব প্রেমের ব্যাপার আমি বুঝিনা বাপু! তোমাকে কেমনে টিপস দেই বল...!!
জানিনা শেষ পর্যন্ত এই প্রেমে কোথায় গিয়ে গড়ায়। কারণ এটা এখনও কন্টিনিউয়াস প্রসেস। তবে আর যাইহোক শেষ পর্যন্ত আমি যেন কোন ঝামেলায় নাই পড়ি সেই চেষ্টা করে যাব।

আর নিজের প্রেম? আসলে আমি জানিনা প্রেমের ডেফিনিশান টা আসলে কি। এইতো দুইদিন আগে দুলাভাই বাসায় বেড়াতে আসলেন। ভাইয়ার সাথে আমরা সব ভাই-বোন, কাজিনরা অনেক মজা করছিলাম। কথায় কথায় দুলাভাই তার এক বান্ধবির কথা বলছিলেন ঠিক এভাবে--- “ ......সেই বান্ধবির নাম ছিল পাতা। তার সাথে আমার সম্পর্ক আসলে ভালই ছিল। আমি জানতামনা প্রেম বলতে আসলে কি বুঝায়। তবে আজকে এত বছর তার কথা মনে করতে গিয়ে মনে হল আসলে তার সাথে আমার মনে হয় প্রেম ছিল...”। সবাই একযোগে হেসে ফেললাম।

এখন আমিও ঠিক বলতে পারছিনা, কারো সাথে সত্যি আমার প্রেম আছে কিনা। তবে হয়তবা দুলাভাইয়ের মত অনেক বছর পর ব্যাপারটা আমি ঠিকই ধরতে পারব। আমি আশাবাদি।

কোন মন্তব্য নেই: