শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ফিরে দেখা ২০১০ : জুতা

জুতা নিয়ে সমস্যা আমার অনেক আগে থেকে। তবে এবছর সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করল। আমার এক কাজিন, যে সবসময় তার জুতা নেই বলে রীতিমত আক্ষেপ করতে থাকে। অথচ এমন কোন অকেশান নাই যে অকেশানে সে নতুন জুতা নেয়নি। এমনিতেই আমি সবসময় জুতা নিয়ে সমস্যায় থাকি। সেদিন তো বিরক্ত হয়ে গেলাম ওর জুতা আক্ষেপ নিয়ে। কতগুলো জুতা আছে দেখতে চাইলাম ওর কাছে। প্রথম তো সে বলে তার কোন জুতা নেই, কি দেখাবে। আমি বললাম যা আছে তাই দেখাও। একটা একটা করে জুতা দেখাতে দেখাতে মোট ১১জোড়া জুতা দেখাল। তাকে বললাম, বাহ! ভালই তো তোমার জুতা না থাকাই ভাল। না থেকেই ১১জোড়া, থাকলে না জানি কত হত!

এই জুতা ব্যাপারটা কেন জানি আমার একদমই সয়না। প্রতি মাসেই নতুন জুতা কিনতে হয়। এমন না যে বিলাসিতা। সমস্যা আমার জুতা ছিড়ে যায়। সর্বোচ্চ দেড় থেকে তিন মাস জুতা লাস্টিং করে। ইনফ্যাক্ট বর্তমানে কেউ জুতা দেখতে চাইলে আমি মাত্র একজোড়া দেখাতে পারব। কারণ সত্যি আমার এই একজোড়া ছাড়া আর নাই। মেয়েদের নাকি কিছু স্বভাব থাকে। প্রচুর শপিং, কেনা-কাটা, সৌখিন, ফ্যাশন সচেতন ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। কেন জানিনা এই ব্যাপারগুলোতে আমি খুব মিতব্যয়ি। প্রয়োজন আর সৌখিনতার মধ্যে আমি সবসময় প্রয়োজনকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাই অতিরিক্ত কোন ব্যবহার্য জিনিস আমি রাখিনা। তারউপর যদি সৌখিন জিনিস হয় তাহলে তো একেবারেই না।
গত মাসে আমার কাজিন একটা সুন্দর কানের দুল গিফট করল। সেই কানের দুল নিয়ে আমি এখনও অস্বস্তিতে আছি। যেহেতু জিনিসটা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় তাই এই কানের দুল নিয়ে কি করব তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে ভাবলাম কারও যদি এটা পছন্দ হয়ে যায় তাহলে ওকে সেটা দিয়ে দিব।

যাইহোক জুতা প্রসঙ্গে আসি। জুতা ছেড়ার কাহিনী আর কি বলব। ক্যাম্পাস হলে তো মোটামুটি সবাই জানে যে আর কারো জুতা না ছিড়লেও আমার জুতা ছিড়বেই। এজন্য অতিরিক্ত জুতা সবসময় আমার ফ্রেন্ড রা আমাকে প্রোভাইড করে। আশ্চর্য ব্যাপার, বাটা কোম্পানির জুতা নাকি খুব স্থায়ী হয়। সেই জুতাও আমার কাছে তিন মাসের বেশি লাস্টিং করে নাই। আব্বু-আম্মু তো খুব বিরক্ত আমার উপর। আমি নাকি জুতা পরার উপযুক্ত না। আচ্ছা আমার কি দোষ?
জুতা নিয়ে কাহিনী ছেড়া পর্যন্ত শেষ হলেও কিছু বলতামনা। অবশেষে জুতা থেকে আমার পায়ের স্কিনে এলার্জির সমস্যা হল। স্যারের কাছে দেখাইলাম। স্যার বলল জুতা চেইঞ্জ করতে। স্যারের কথামত জুতা চেইঞ্জ করলাম। কিন্তু সমস্যা আর কমেনা। এখন শুধু এই জুতা সমস্যার জন্য স্যারের কাছে বার বার যেতেও ভাল লাগেনা। পরে ঠিক করলাম, জুতার জন্য পায়ে যাইহোক স্যারের কাছে যাবনা। পারলে ইন্টার্নি করছে এক কাজিনের কাছে ফোনে এডভাইস চেয়েছি, প্যাথলোজি বই পড়েছি, ফার্মাকোলোজি থেকে ড্রাগস এর নাম জেনে নিজের চিকিৎসা করেছি তবুও স্যারের কাছে যাইনি। একসময় পায়ের অবস্থা এমন দাড়াল যে আমি আর জুতাই পরতে পারিনা।
এরপর শুরু হল ব্যান্ডেজ চিকিৎসা। পায়ে সুন্দর করে ব্যান্ডেজ পরে জুতা পরতাম। সবাই প্রথমেই জিজ্ঞেস করে আমার কোন এক্সিডেন্ট হয়েছে কিনা। ফ্রেন্ডদের বুঝানো গেলেও বাইরের কাউকেই বুঝানো যায়নি যে এটা আমার নিছক জুতা সমস্যা। সবাই মনে করে না জানি কত সিরিয়াস! ব্যান্ডেজ চিকিৎসা দুইমাস চলল। মোটামুটি ব্যান্ডেজ চিকিৎসা আমার জন্য উপকারি হল। ব্যান্ডেজ খুলার পর যখন আবার খালি পায়ে জুতা পরলাম আমার মনে হল যে আমি এতদিন পা ছাড়াই চলেছিলাম। ব্যান্ডেজ এর পর জুতা পরে পায়ের অনুভূতি দুই মাস টের পাইনি।

ভাবলাম এবার থেকে নিশ্চয় জুতা নিয়ে আমার আর সমস্যা হবেনা। কিন্তু এবার জুতা নিয়ে নতুন সমস্যা তৈরি হল। এতদিন জুতা ছিড়ে যেত, এখন আর ছিড়ে যায়না ঠিকই। কিন্তু এমন পিচ্ছিল হয়ে যায় যে আমি জুতা পরে হাটার সময় বেশিরভাগ সময় পড়ে যায়। আরে! এটা কি ধরনের সমস্যা...? কিন্তু ব্যাপারটা আসলেই সিরিয়াস। যেকোন জুতাই এখন আমি পায়ে দেবার কিছুদিনের মধ্যে খুব মসৃন ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। ফলে সেটা পরে হাটতে সমস্যা হয়। যাইহোক এই সমস্যা দূর করতে খুব শক্ত সোলযুক্ত জুতা কেনা শুরু করলাম। কিন্তু সমস্যা একই থাকে।

অবশেষে বছরের শেষে এসে হিসাব করলাম এই বছরে আমার কতগুলো জুতা কেনা হয়েছে। দশ জোড়ার বেশি জুতা আমি কিনেছি, কিন্তু একটাও এখন পরার উপযুক্ত না।সর্বশেষ সাতদিন আগে দুইজোড়া জুতা কিনেছি। ইতিমধ্যে একজোড়া জুতায় কিছু সমস্যা অনুভব করছি। আল্লাহই জানে, কি অপেক্ষা করছে এই জুতা নিয়ে।
সামনে ২০১১। প্লিজ আমার জুতা ভাগ্য যেন এটলিস্ট সুপ্রসন্ন হয়ে যায় সেই দোয়া চেয়ে আমার এই জুতা কাহিনী শেষ করছি।

কোন মন্তব্য নেই: