শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

আক্ষেপ ! :-(

কয়েকদিন ধরে মনের ভিতর কিছু আক্ষেপ জমা হয়েছে। কেমন আছি কেউ জিজ্ঞেস করলে হয়ত বলব ভাল আছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আসলেই কি আমি ভাল আছি? তুলনামূলক ভাবে হয়ত ভাল আছি তাদের তুলনায় যারা আমার থেকেও খারাপ অবস্থায় আছে। প্রতিনিয়ত যত বেশি কাজের চাপ বাড়ছে, পড়াশুনার ব্যস্ততা বাড়ছে তত নিজেকে অসুখী মনে হচ্ছে।

সেদিন পড়তে গিয়েই হঠাৎ মনে হল এমন কোন সিস্টেম যদি থাকত যে যা পড়তে চাই তা সব ব্রেইনের মধ্যে আপলোড হয়ে যাবে। তাহলে কষ্ট করে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট করে বই এর সামনে বসে থাকা লাগবেনা।প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যেতে কার ভাল লাগে? খুব টায়ার্ড ফিল করছিলাম সেদিন, কিন্তু কি আর করা! যেতেই হবে। মনে হচ্ছিল এমন কোন ব্যবস্থা যদি থাকত যে মনে চাইল আর সাথে সাথে সেখানে চলে গেলাম। এরপর পরীক্ষার আগ মুহূর্তে যখন খাওয়ার সময়ও থাকেনা তখন মনে হয় যে ইশ! খেতে চাই মনে হলেই যদি খাবার সব সামনে হাজির হয়ে যেত! এরপর অটোমেটিক্যালি সব খাওয়া হয়ে যেত...এসব হাবিজাবি আক্ষেপে আজকাল মন ভারাক্রান্ত থাকে।
বিকেলে লাইব্রেরি থেকে বাসায় ফেরার পথে যখন মাথার উপর নির্মল আকাশ দেখি, একঝাঁক পাখিদের আনন্দে উড়াউড়ি দেখি তখন নিজের মনের আক্ষেপ আরো বেশি বেড়ে যায়। একদম যদি ফ্রি হয়ে যেতে পারতাম যাবতীয় সব টেনশান থেকে, ওই দূর আকাশের পাখিদের মত যদি আনন্দে ডানা মেলে উড়তে পারতাম!

খুব শখ, গভীর রাতে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে নভোবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আকাশের তারা দেখার। সারারাত আকাশের ওই তারাগুলোর সাথে নিরিবিলি সময় কাটাবার। নিজের সাথে নিজেকে বোঝাপড়ার জন্য এর থেকে ভাল মুহূর্ত আর কি হতে পারে! কিংবা ঝুম বৃষ্টিতে টানা ভিজে যাওয়া আর প্রকৃতির সাথে চুপি চুপি খেলা করা। কিন্তু কি এক জীবন...যেখানে এসব শখ বিলাসিতা ব্যতিত কিছুইনা।
মন খারাপ থাকলে কেন জানিনা যা কিছুই করতে যায় সেসব কাজে গভীর মনোযোগ দিতে পারি। সময়ের তাড়াহুড়া থাকেনা তখন। ঠিক এরকম একটি মুহূর্তে যখন কুরআন পড়ছিলাম তখন মনের ভিতরের আক্ষেপ আরো বেশি জোরাল হয়ে উঠল। আরবী ভাষা যদি বাংলার মত ফ্লুয়েন্টলি বুঝতে পারতাম! বারবার আরবি পড়ে বাংলা অনুবাদ পড়তে ভাল লাগেনা। ছোটবেলা থেকেই এটলিস্ট একজন মুসলিম হিসেবে আরবি ভাষা সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ হিসেবে শেখা কি উচিত ছিলনা? ইংরেজি নিয়ে কত মাতামাতি আমাদের। কেন সাথে আরবি ভাষা থাকলে কি খুব অসুবিধা হয়ে যেত ক্যারিয়ারের পথে? হঠাৎ এই আক্ষেপ মনে হতেই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার পরবর্তি জেনারেশানের জন্য ইংলিশের পাশাপাশি আরবি ভাষা কম্পালসারি হিসাবে রাখব। ঠিক এই সিদ্ধান্তে আসার পর একটু ভাল অনুভূত হচ্ছে...মনের আক্ষেপ ধীরে ধীরে নিউট্রাল হচ্ছে।

কোথায় যেন পড়েছিলাম প্রভু থাকেন দূর্বল মানুষের অন্তরে। ঠিক জানিনা কথাটা কোন এঙ্গেল থেকে বলা হয়েছে, তবে কথাটার মধ্যে কিছু নাস্তিক্যবাদী ঘ্রাণ আছে। আগে একটা সময় নাস্তিক-আস্তিক আমার কাছে খুব স্পর্শকাতর একটা ইস্যু ছিল। কিন্তু সময়ের গতিবেগের সাথে যেসব খুব স্পর্শকাতর ব্যাপার ছিল আমার কাছে তা ধীরে ধীরে খুব সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়। আসলে বিশ্বাস ব্যাপারটা একদম অন্তরের অন্তস্থলের ব্যাপার। এই ব্যাপারটা নিয়ে যে চিন্তা করেনা তার সাথে নাস্তিক-আস্তিক নিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা আলোচনা চালিয়ে যাওয়া নিছক বোকামী ছাড়া কিছু মনে হয়না।

মানুষ দূর্বল কিনা জানিনা তবে চারপাশে যখন অন্যায়-অবিচার দেখি, যখন একজন নিরপরাধ মানুষকে শুধু শুধু শাস্তি পেতে দেখি, যখন কঠিন অপরাধীদেরও দিব্যি নিরপরাধ হিসেবে ক্রুর হাসি হাসতে দেখি তখন পৃথিবীর সকল মানুষকে আমার বড় দুর্বল মনে হয়। শুধু এটুকু মনে হয়, প্রভু যদি সত্যি না থাকত তবে পার্থিব আক্ষেপের কোন সীমা পরিসীমা থাকতনা। জীবনকে তখন মনে হত এক অভিশাপের প্রতিচ্ছবি। আক্ষেপ ধীরে ধীরে ডাইলিউট হতে থাকে যখন চিন্তা করি সেই বিচার দিবসে এমন একজন বিচারপতি হবেন যার দ্বারা ইনজাষ্টিস হবার কোন চান্স নাই। যিনি হবেন সকল বিচারকের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠতম বিচারক। যিনি প্রত্যেকের চুল পরিমান ন্যয় ও অন্যায়কেও বিচারের আওতাধীন রাখবেন। ইশ! যত কুরআন পড়ি ততই বুঝতে পারি, মানুষ আসলেই কত দুর্বল। যে কিনা নিজের সবচেয়ে কাছের একজনকে সন্ধান করতে পারেনা। যে কিনা তার সর্বমুহূর্তের সঙ্গি কে আবিষ্কার করতে পারেনা। সত্যিই মানুষ আসলেই দূর্বল যদি সে তার প্রভুকে চিনতে না পারে।

জীবন নিয়ে আসলে আমরা যে যেরকম ভাবিনা কেন আসলে তা পুরাই আক্ষেপে ভরপুর। এবং আক্ষেপ যদি সারা জীবনও করে যাই তাও পূর্ণ হবার নয়। মানব হৃদয়কে পৃথিবীতে আসলে এরকম করেই পাঠানো হয়েছে। আমার যত আক্ষেপ তা সবই স্বর্গীয় আক্ষেপ। মন যা চাইবে তাই সাথে সাথে হয়ে যাবে। এটা তো সেই চির আকাংখিত জান্নাত ব্যতিত কোথাও পূর্ণ হবার না। স্বর্গীয় আক্ষেপ আছে বলেই হয়ত জীবন টা মাঝে মাঝে বোরিং হলেও কোন কিছুর পাবার আকাঙ্ক্ষা সব কষ্টকে , সব দুঃখকে সহ্য করা যায়। এভাবেই জীবন কেটে যাবে স্বর্গীয় আক্ষেপের মধ্য দিয়ে। তাই হয়ত কোরআনে যে বার বার সেই মোহময় জান্নাতের বর্ণনা দেয়া হয় সৎকর্মশিল মুমিনদের জন্য যা কোন মানব হৃদয় কল্পনা করতে পারবেনা তা সত্যিই অসাধারণ। একদম মানব মনের ভিতরের আক্ষেপের পূর্ণতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি জীবনকে খুব জীবন্ত করে তোলে। নতুন করে আবার রিভাইভ করতে ইচ্ছা করে। আক্ষেপের তীব্রতা যতই বাড়ছে ততই জীবন আরো জীবন্ত হয়ে উঠছে.........

কোন মন্তব্য নেই: