শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

মনোরসায়নঃ এলোমেলো আলাপ-৫

জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় অপেক্ষায়। ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলেই হয়ত অপেক্ষা করতে খুব একটা খারাপ লাগেনা। এইতো! সামান্য একটা গল্পের বই যখন পড়তে যাই, তখন পূর্বে থেকে গল্প জেনে গেলে সেই বই পড়তে আর ভাল লাগেনা। কি অদ্ভুত, অজানা জিনিস জানার জন্য যে প্রতীক্ষা তা খুব একটা খারাপ না।

মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। রবিন্স এর সিক্সথ আর লেটেস্ট এইটথ এডিশান পড়তে গিয়ে মেজাজ চরম খারাপ হল। পুরাপুরি কন্ট্রোভার্সিয়াল সময় পার করতেছি। টিচাররা কেউ কোনদিন এইটথ এডিশান পড়ে নাই। আমরা নিউমার্কেটে সেভেন্থ এডিশান পাচ্ছিনা। অবশেষে আমি ২টা এডিশান নিয়ে পড়া শুরু করলাম। নতুন এডিশানের যে এরকম অভাবনীয় পরিবর্তন হতে পারে তা এবার রবিন্স প্রমাণ করে দিল। একদিক দিয়ে ভাল যে কোন হাইপোথিসিস, প্রস্তাবিত থিওরি, আননোন এটিওলোজি সব বাদ দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র যেগুলো প্রমাণিত সেগুলোই রাখা হয়েছে।

ভাবছি বর্তমান লাইফেরও একটা নতুন এডিশান লাগবে। চলছে, চলুক- এভাবে আর কতদিন চলতে দেয়া যায়? কিন্তু সে ভাবনাতেও গুড়ে বালি। ব্যস্ততার মাঝে নিজের কাজের ফিল্টারিং করা ছাড়া নতুন করে এডিট করার মত কিছুই নাই। সুতরাং, ফিল্টারিং শুরু করলাম। প্রায়োরিটি ব্যাসিসে ফিল্টারিং হচ্ছে বর্তমান লাইফ। যা কিছু করছি, যা কিছু ভাবছি সবই ফিল্টারিং এর আওতাভুক্ত।
সুমাইয়ার সাথে লাইব্রেরিতে পড়ার ফাকে, এসব নিয়েই যখন আলোচনা করি তখন অবাক হয়ে ভাবি আসলে আমরা কতটা প্রফেশনাল হয়ে যাচ্ছি দিনের পর দিন। ঠিক প্রফেশনাল বললে ভুল হবে, ম্যাচিউরড হচ্ছি আমরা। এই ম্যাচিউরিটি গ্রো করার জন্য যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটা হল ডিপ্রেশান। হু! ডিপ্রেশান...
যখন খুব খারাপ সময় অতিবাহিত করি , যখন চরম হতাশার মধ্যে থাকি তখনি কেবল অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করার জন্য নিউরন হাইপার একটিভ থাকে। কি করলাম, কি হল, কি হবে- এই চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকে মন।
দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তার মানে এই না যে নেগেটিভ জিনিস ওভার লুক করতে হবে। বরং নেগেটিভ জিনিস থেকে পজিটিভিটি বের করে আনতে হবে। এই যে ডিপ্রেশান, মারাত্বক একটা মেন্টাল ডিজঅর্ডার কিন্তু এই সিচুয়েশান থেকে পজিটিভিটি বের করে আনতে পারলে মারাত্বক পজিটিভ আউটপুট পাওয়া সম্ভব যা ম্যাচিউরড হবার জন্য খুবই উপকারি। সুতরাং, বার বার নিজেকে বলি, বি পজিটিভ এবং থিঙ্ক পজিটিভ...

পৃথিবীতে কোন সিদ্ধান্ত ১০০% বেনিফিটের উপর নির্ভর করে হয়না। সেখানে অবশ্যই একটা অনুপাত থাকে। হতে পারে ৫০: ৫০ অথবা ৫১: ৪৯। কিন্তু এই অনুপাত থেকেই সিদ্ধান্তে পৌছতে হয়। যদি কোন কাজের বেনিফিট ৫১% হয় তবে বাকি ৪৯% ক্ষতির জন্য সেই কাজ বাদ দেয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না। ধরে নিতে হবে সেই ৪৯% কোল্যাটারাল ড্যামেজ। এটা যেকোন কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সুতরাং কনফিডেন্ট হতে হবে সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে। আবেগকে অস্বীকারের কোন উপায় নেই। কিন্তু সেটাকে নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় থাকাও কোন সিদ্ধান্ত হতে পারেনা। তাই আবগকে সাথে নিয়েই কনফিডেন্ট হতে হবে।

প্রতিটা কাজ স্ক্যানিং করতে হবে। ভুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ভুল না করলে পরে যে আমি সঠিকটাও করতে পারবনা! তাই ভুলের স্বীকার কাউকে কখনও ছোট করেনা, বরং বড় হবার প্রথম ধাপই হল ভুল করে নতুন কিছু শেখা। তাই আরো বেশি প্র্যক্টিক্যাল হতে হবে।

স্বাধীনতা প্রতিটা মানুষের জন্মগত অধিকার। স্বাধীনভাবে চিন্তা করা ও জীবন পরিচালনার জন্যই মায়ের অন্ধকার নিরাপদ প্রকোষ্ঠ হতে এককেটা জীবনের আবির্ভাব ঘটে এই পৃথিবীতে। একজন মানুষকে চেইঞ্জ করার সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হল তার চিন্তা ভাবনার জগতে আলোড়ন তৈরি করা। কিন্তু সেজন্য তো আগে নিজের চিন্তা ভাবনার জগতে নিজেকে আলোড়িত করতে হবে। খুব ভালভাবেই খেয়াল করছি, কোন কিছু যখনি আমার চিন্তা ভাবনার জগতকে রুদ্ধ করে দিতে চায় সেটা যত ভালই হোকনা কেন সেখানে আমি একেবারেই বেমানান হয়ে যাই। আমরা অন্যদের বদলে দিতে চাই কিন্তু নিজেদেরকে চিন্তা ভাবনায় প্রতিবন্ধী করে রাখতে চাই। এই এটিচিউড পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিটি মানুষের স্বাধীন ব্যক্তিসত্তার প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে।

আর চরিত্র! সেটা তো সবকিছুর মূলে। মোরালিটি হল সেই জিনিস যা বিশ্বাস ও কাজে একই রকম। একজন ওয়েস্টার্নও অনেক মোরাল হতে পারে আবার একজন ইষ্টার্নও অনেক ডিমোরাল হতে পারে। কিভাবে? ধরেন কেউ বিশ্বাস করে খোদা বলে কেউ নেই, সুতরাং যা করতে হবে তা নিজের যোগ্যতা দিয়েই করতে হবে এবং সেটা সে তাই করে। সে সাকসেসফুল হবে। সে মোরাল, কারণ সে তার বিশ্বাস ও কাজের মধ্যে কোন কনফ্লিকশান রাখেনাই।
আবার একজন আস্তিক তার বিশ্বাস আছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কিন্তু সে সুযোগ পেলেই অন্যায় করে, ক্ষতিকর কাজ করে, আর সফলতার জন্য ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। সে ডিমোরাল, কারণ তার বিশ্বাস ও কাজের মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে।
সম্ভবত আমরা বাহ্যিকভাবে সবাই মোরাল কিন্তু বেসিক্যালি ডিমোরাল। তা না হলে চরিত্র যেখানে আমাদের মূলসম্পদ সেখানে চরিত্রের আলো সবক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। তা না করে আমরা সেই চরিত্র বিনাশের ভয়ে নিজেরাই ভীত সন্ত্রস্ত। তাহলে কিভাবে অন্যদের আমরা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি?
হুম, তাই আমি যাই হইনা কেন, আমাকে সত্যিকার ভাবে মোরাল হতে হবে। আমার বিশ্বাস ও কাজের মিলন ঘটাতে হবে।
উমম!! লাইফের নতুন এডিটিং এর কাজ চলছে এভাবেই......এখন কেবল প্রতীক্ষা। তবে সেই প্রতীক্ষা খুব একটা খারাপ না!!

কোন মন্তব্য নেই: