শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ফিরে দেখা ২০১০ : টাকা

টাকার ব্যপারে আমি খুবই অসচেতন। এটা যে ইচ্ছা করে তা নয়, বরং আমি বহুবার চেষ্টা করেছি সচেতন হবার। কিন্তু পারিনি। কত টাকা যে আমার হারিয়ে গেছে, আমি টেরই পাইনি। কিংবা আমার ব্যাগ থেকে কত টাকা যে আমার ভাই সরিয়েছে তাও কোনদিন টের পাইনি। কারণ কত টাকা আমার কাছে আছে তা আমি নিজেও জানিনা। এবছর টাকা নিয়েও কিছু মজার ঘটনা ঘটে গেল।
একবার রিকশা করে যাচ্ছিলাম আমার ফ্রেন্ডের বাসায়। যাবার পথে একটা ওভার ব্রিজ পার হয়ে আবার রিকশা নিতে হয়। তো ওভার ব্রিজের সামনে নেমে আমি ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলাম, আমার ব্যাগে কোন টাকা নাই। অথচ আমি দিব্যি ভেবে নিয়েছি যে আমার ব্যাগে টাকা আছে। এরপর আর কি করা! নিকটস্থ এক পরিচিতার বাসা ছিল কাছেই। কিন্তু হেটে যেতে হয় অনেকদূর। রিকশাওয়ালাকে ব্যাপারটা খুলে বললাম। বেচারা তো আমার উপর খুবই বিরক্ত। যাইহোক আমার বিনয় দেখে কিছু আর বলেনি। পরে অনেকদূর হেটে যেতে এবং আসতে প্রায় আধা ঘণ্টা পর ভাড়া মিটালাম।
বছরের শুরুতেই প্ল্যান করেছিলাম যে মোবাইলে আমার এক্সাক্টলি কত খরচ হয় এখন থেকে সেভাবে খেয়াল করব। কিন্তু সেই হিসাব একসপ্তাহ থাকে। পরে ভুলে যাই। ইনফ্যাক্ট এখনও আমি জানিনা যে মোবাইলে আসলেই আমার খরচ কত হয়। তো একবার এক সিনিয়র ভাইয়ার কাছে একটা বিষয়ে পরামর্শের জন্য ফোন করেছি। ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমার মোবাইলে টাকা আছে কিনা। আমি বলে দিলাম যে আছে। কারণ আমার মনে হচ্ছিল, কিছুদিন আগেই আমি রিচার্জ করেছি। সুতরাং মোবাইলে এখন যথেষ্ট ব্যালান্স আছে। কিন্তু মাত্র দুই মিনিট কথা বলার পর দেখি লাইন কেটে গেছে। ব্যালান্স শেষ!
নীলক্ষেত গিয়েছি বই কিনতে। আমার এই একটা ব্যাপারে দারুন ফ্যাসিনেশান আছে। বলা যায় আমার বই কেনার বিলাসিতা আছে চরম। কিছু বই আমার পড়া আছে, তারপরও দেখা গেছে সেই বই আমি কিনে নিয়ে চলে এসেছি। কারণ বই চোখের সামনে দেখাও আমার জন্য ভাল লাগার ব্যাপার, সেটা যতই পড়া হোক না কেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে অনেক বই সিলেক্ট করলাম কেনার জন্য। এরপর ক্যাশ মেমো করতে গিয়ে ১৫০০ টাকা হয়েছে বিল। আমি তখনও জানিনা, আমার কাছে কত টাকা আছে। পরে বিল পে করতে গিয়ে দেখলাম যে ১২০০ টাকা আছে। খুব লজ্জাজনক ব্যাপার। এরপর দুইটা বই কমিয়ে ১২০০ এর কাছাকাছি বিল দিয়ে বাসায় আসলাম। শেষ পর্যন্ত এরকম হল যে বাসায় এসে দেখি ০ পয়সাও নাই।
এটাতো একটা ঘটনা। অন্য আরেকদিন বই কিনতে গিয়েছিলাম। মেডিকেলের বই অনেক দামী। একটা বই কিনলাম, যার দাম ৫০০ টাকা। আমি দোকানদারকে ১০০০ টাকার নোট দিয়ে দিব্যি চলে আসছি। কিছুদূর আসার পর মনে হল কেউ আমাকে পিছন থেকে ডাকছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি আমাকে বাকি ৫০০ টাকা নিয়ে যাবার জন্য ডাকছে। খুবই হাস্যকর ঘটনা। দোকানদার তো আমার দিকে তাকিয়ে দিব্যি হাসতেছিল। যদি সেই দোকানদার আমাকে না ডাকত আমার টাকার কথা মনেই থাকতনা।

কোথাও গেলে আমি ভিড় সবসময় খুব এড়িয়ে চলি। ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বইমেলাতে গিয়েছিলাম বই কিনতে। সেখানে গিয়ে তো মাথা খারাপ হবার মত অবস্থা। সবাই কত্ত বই পাগল না হলে এরকম মারাত্বক ভিড় হয়। তারপরও চেষ্টা করলাম ঢুকার। ঢুকার পর দেখি বের হবার মত পথ নাই। যাইহোক বহুক্ষন দাঁড়িয়ে আছি, সবার বই কেনা দেখছি। জাফর ইকবালের ইকারাস বইটা যেভাবে বিক্রি হচ্ছে আমার তো মনে হচ্ছিল না জানি এটা কি! দেখলাম সবাই আর কিছু কিনুক আর না কিনুক ইকারাস একটা করে কিনছে। আমিও একটু আগ্রহী হলাম। অল্প কয়েক পেইজে চোখ বুলালাম। আহামরি কিছু না যে এরকম মহামারি আকারে বিক্রি হচ্ছে। সাথে আমার কাজিন ছিল সেতো রীতিমত তখন ইকারাস কেনার জন্য প্রায় কান্নাকাটি শুরু করেছে। কিনে দিলাম। কত দাম ছিল মনে পড়ছেনা। তবে ঘটনা যা ঘটল তা হল আমি টাকা না দিয়েই চলে আসতে যাচ্ছিলাম। সেবার ই মনে হয় এরকম উল্টা ঘটনা ঘটল। যাইহোক সেই লজ্জাকর অভিজ্ঞতা মনে পড়লে এখনও লজ্জা লাগে।
টাকা ধারের ব্যাপারেও একই ঘটনা। কাকে কত টাকা দিয়েছি তা আমার কখনই মনে থাকবেনা। কয়েকমাস আগে একজন ফ্রেন্ড আমাকে ২৫০ টাকা দিচ্ছে। আমি বললাম, কি জন্য। বলল, ধারের টাকা ফেরত দিচ্ছে। আমি তো অবাক! কবে ধার দিয়েছি আমি? সে বলল ৫/৬ মাস আগে নাকি ওকে ধার দিয়েছিলাম। সেটা ফেরত দিচ্ছে। যাক বাবা! ফেরত তো দিয়েছে।
আর কারো কাছে টাকা ধার নিলে তো আমি বলেই দেই যে প্লিজ আমাকে মনে করিয়ে দিও। আমার মত খুব কমই আছে, তাই যথাসময়ে আমি অন্যের টাকা ফেরত দেই, কারণ তারা আমাকে মনে করিয়ে দেই......

কোন মন্তব্য নেই: