শূন্যতায় ভরে আছে মন।গত দুই মাস ধরে মন ভীষন খারাপ।সাথে ছিল পরীক্ষা আর শারীরিক অসুস্থতা।এই দুই মিলে মানসিক শূন্যতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।অনেকদিন কোন পত্রিকা পড়া হয়না।ব্লগে আসা হয়না।পত্রিকা কেন পড়ব? ভাল খবর কিছু থাকলে তো পড়ব! ভাল লাগেনা অনবরত খারাপ খবর পড়তে।সময় কাটাতে তাই আজ আনেকদিন পর কিছু লিখতেছি...
বেদনায় ভারাক্রান্ত মনকে শান্ত্বনা দিতে খুজতে থাকি কিছু।কিন্তু আশ্চর্য! কিছুই পাচ্ছিনা।টিভি দেখতে ভাল লাগেনা।সেই ইন্টারমিডিয়েট থাকতে টিভি দেখা বাদ দিয়েছি।নতুন করে যখন দেখব বলে চিন্তা করলাম তখন বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন,উদ্দেশ্যহীন অনুষ্ঠান আবার টিভি থেকে আমাকে সরিয়ে আনল। কিন্তু সময় কাটেনা।কাজিন এর কাছ থেকে এবার বইমেলা থেকে কিনে আনা জাফর ইকবাল,হুমায়ুন আহমেদ,সুমন্ত আসলাম এর কিছু বই আনলাম।প্রথমেই যে বইটা হাতে নিলাম তা সায়েন্স ফিকশন।ক্লাস সেভেন-এইট এ থাকতে সায়েন্স ফিকশন সমগ্র পড়ে ফেলতাম নিমিষেই।খুব নেশা ছিল।তাই সেই নেশায় ফিরে যেতে মন চাইল।জাফর ইকবাল এর ইকারাস বইটা শুরু করলাম।বাট অনেকদিন সায়েন্স ফিকশন পড়িনা বলে আমি ঠিক বুঝতে পারলামনা এটা কি কোন সায়েন্স ফিকশন নাকি রুপকথার গল্প? অল্প কয়েক পাতা পড়েই মেজাজ খারাপ করে রেখে দিলাম।এত বড় লেখকের সায়েন্স ফিকশন আমার বুঝার সাধ্যের বাইরে।মনে হয় আমিই ভুলে গেছি সায়েন্স ফিকশন কি।আর বাকি বইসব ফেরত দিলাম কাজিনকে।ঠিক বুঝতে পারছিলামনা আমার মন খারাপ বলেই কি কোন কিছু ভাল লাগছেনা? নাকি সেগুলো আসলেই ভাল কিছু না!
মোবাইলে রেডিও নামক একটি অপশন আছে।কখনও সেই অপশনে যাওয়া হয়নি।আসলে ইচ্ছা বা সময় কিছু ছিলনা বলেই হয়ত যাওয়া হয়নি।টিভি,বই ছেড়ে এবার এফএম রেডিও তে মন দিলাম।আমি বুঝলামনা সব চ্যানেলেই কেন একই টপিকস নিয়ে কথা।সব কিছুতেই প্রেম-ভালবাসা।এফএম রেডিও যারা শুনে তারা সবাই মনে হয় তরুন-তরুনি।কারন যে টানা চার দিন এফএম রেডিও শুনলাম তাতে তরুন-তরুনি ছাড়া কাউকে পার্টিসিপেট করতে দেখিনি।উফ! কি যে বিরক্তিকর সব প্রোগ্রাম।আপনার সবচেয়ে প্রিয় মুহুর্ত কি? আপনার নিকট সবচেয়ে সাহসি কাজ কি? আপনি এই গানটা কাকে ডেডিকেট করতে চান? খুব সুন্দর,নির্জন কোন পরিবেশ এ আপনার কি ইচ্ছা হবে? এই সব টপিকস হচ্ছে আলোচনার বিষয়।আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সবকিছুতেই এই আলোচনার বিষয় প্রেম-ভালবাসা বিষয়ক।সবকিছুর এন্সার ছেলে হলে বলবে তার প্রেমিকার কথা।আর মেয়ে হলে বলবে তার প্রেমিকের কথা।টানা চারদিন এফএম রেডিও শুনলাম এই জন্য নয় যে ভাল লাগছে।আসলে ভাল লাগানোর জন্য টানা চারদিন শুনলাম।বাট এটলাস্ট পূর্ন হতাশা নিয়ে এফএম রেডিও থেকে ব্যাক করলাম।
এবার দূষিত মনকে বিশুদ্ধ করতে প্রিয় উপন্যাসের বইতে মনোযোগ দিলাম।ততদিনে পরীক্ষা শেষ।শারীরিক অসুস্থতা যদিও যায়নি।তারপরও জীবনকে নতুন করে ভাবার জন্য সেসব উপন্যাসে রাত কাটাচ্ছি।কিন্তু কি যেন আরেক হতাশায় মন কেদে উঠল।উপন্যাসের সাথে নিজেকে একাত্ব করে ফেলি।নিজেকেই কোন এক চরিত্রের সাথে একাকার করে ফেলি।ভাবতে থাকি সেসব মহান নায়কের কথা যারা তাদের জীবনে যারা দেশপ্রেম কে,মানবতাকে বিজয়ের জন্য বুকের তাজা খুন বিলিয়ে দিয়েছে।যাদের জীবনের শুরু হয়েছে মানবতাকে রক্ষার জন্য।যারা তরুন বয়স থেকে ভাবতে শিখেছে দেশের সংকটময় মুহুর্তের কথা,চিন্তা করেছে তা থেকে উত্তরনের উপায়।গভীরভাবে ভাবতে শিখাচ্ছে আমাকে।কিন্তু সে ভাবনায় ছেদ পড়ল।আচমকা মেসেজ পেলাম।মেসেজটা ছিল একজনের জীবন-মরন সমস্যা,তাকে সাহায্য করতে হবে।হায়! আমি যদি সত্যি তাকে সাহায্য করতে পারতাম।কিন্তু পরক্ষনেই যখন ঘটনা জানতে পারলাম তখন আর তাকে সাহায্য না করতে পারার জন্য খারাপ লাগল না ।বরং তার জীবন-মরন সমস্যার জন্য তাকে মনে মনে ধিক্কার জানাতে লাগলাম।
আমার খুব প্রিয় একটা উক্তি আছে,'' মওকা বুঝে সওদা অন্তত দিলের বাজারে সব লোকেরা করেনা।আর তা তারা করেনা বলেই এ বাজারে যুগে যুগে ফতুর হয় তারাই।''
যে আমার কাছে জীবন-মরন সমস্যার জন্য সাহায্য চায় তাকে কিভাবে বুঝাব যে মন্দিরের দেবি হবার জন্য তুমি সারা জীবন আকাংখা কর সেই মন্দিরের মঞ্জিলে যখন পৌছে যাবা সেদিন প্রানপনে চাইবা যেন তোমারে কেউ সেই অন্ধ মিঞ্জিল থেকে কেউ রক্ষা করতে আসে।কিন্তু তোমাকে সেই মঞ্জিল থেকে কেউ উদ্ধার করতে আসবেনা।কিভাবে আসবে বল? তারা তো নিজেরাই আজ দিলের বাজারে সওদা করতে এসে পুজি হারিয়ে ফতুর হয়ে গেছে।উপন্যাসে আর মন ধরেনা।উপন্যাসের চরিত্র সব কাল্পনিক মনে হয়।কল্পনার জগতে বেশি থাকতে ইচ্ছা করেনা।কল্পনার জগতে যে তরুন-তরুনি জীবনের মহান উদ্দেশ্যে আত্মত্যাগ করে তাদের সাথে আমার চারপাশের সমাজের কোন মিল পাইনা।সমাজ উচ্ছনে যাক,দেশ রসাতলে যাক, তাতে আমার কি? এফএম রেডিওর এই যুগে সবাই এখন মটো নিয়ে দিলের বাজারে সওদা করার ট্রেনিং নেয়।কিন্তু আমার কাছে কেন জীবন-মরন সমস্যার সমাধান চায়? আমি তো এ সওদা করতে অভ্যস্ত নই।যেসব মিডিয়া এই সওদা করার প্রেরনা যুগায়,পদ্ধতি শেখায় তারা কেন জীবন-মরন সমস্যার সমাধানটুকু দিয়ে দেয়না?বা তাদের কাছেই কেন সাহায্য চায়না?
উদীয়মান সূর্যের সামনে বেশিক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকা যায়না।পত্রিকা খুললাম।সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সেই মহিলা চিকিৎসকের যোতুকের অভিযোগে নৃশংসভাবে হত্যার কাহিনি পড়লাম।উচ্চতর ডিগ্রির সার্টিফিকেট এর পাশাপাশি যদি মূল্যবোধের সার্টিফিকেটও দেয়া হত!! তাহলে হয়তবা এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কোন শিক্ষিত মেয়েকে এভাবে জীবন দিতে হত না।এটা কি সত্যিই কোন সভ্য সমাজের প্রতিচ্ছবি? মনে আজ তাই বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে চরমভাবে।স্ট্রেস হরমোন আর কাজ করছেনা.........
৫টি মন্তব্য:
হুমমমমমমমমম........ :-((
এফএমরেডিও শুনে মনে হয় এটা যেন প্রেমের রাজ্য!!! প্রেমের মত জিনিসকেও ওরা এত্তো নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যা এই রেডিও না শুনলে বোঝা মুশকিল!!!!
পড়লাম... ভালো লাগলো।
সুন্দর চিন্তার সুন্দর প্রতিফলন। আল্লাহ এই সুন্দর মনের মানুষগুলোকে তা ধরে রাখার তৌফিক দান করুন।
ব্লগে দু'একটা উইজেড এ্যাড করলে কলেবর সুন্দর হত, সময় পেলে করবেন কী?
সুন্দর লেখা চালিয়ে যান, পাঠকদের জন্য হলেও :D
মাঝে মাঝে কিছু কথা খুব শেয়ার করতে ইচ্ছা করে।জানতে ইচ্ছা করে আমার চিন্তা কি অসুস্থ নাকি আমার চারপাশ সুস্থ? খুব কষ্ট লাগে,খারাপ লাগে...
সেতু আপা,
আপনার সবগুলো পোস্ট পড়েছি। মনে হচ্ছে আপনি ফ্রাস্টেশনে ভুগছেন। মানুষগুলো তাদের অদৃশ্য শক্তির উপর মারাক্তকভাবে নির্ভরশীল আবার এইসব মানু্ষ নিজেদের আধুনিকত্ব প্রকাশের জন্য প্রকাশ্যেই বলছে "আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করিনা"। আমার বিশ্বাস আপনি করেননা। তবে ভাবনার জায়গাটা একমুখি রাখা উচিত নয়। একদিন রাতের আকাশের তারাগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে ১৫ মি. তাকিয়ে দেখেন কিংবা নদীর ধারের মানুষগুলোর জীবনযাত্রা দেখতে যান, দেখবেন আপনার চিন্তাগুলো থেকে আরও নতুন কিছু চলে আসছে। তখন হয়তো আমরা আরো সমৃদ্ধ কিছু পাবো।
আপনার মন্তব্য জানাবেন। razibrang@gmail.com
অন্যরা যাই বলুক 'মূল্যবোধের সার্টিফিকেট' দেয়ার ব্যাপারটা যে আপনি ভেবেছেন এটাই আমার কাছে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
aR
www.banglahacks.com
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন