শনিবার, ১১ জুলাই, ২০০৯

একটি আইডেন্টিটি ক্রাইসিস সিন্ড্রোম......

আজকাল যখন রাস্তায় চলাফেরা করি তখন মাঝে মাঝে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা আমি কোথায় আছি?কোথায় যাচ্ছি? ইনফ্যাক্ট আমার চারপাশের পরিবেশ আমার কাছে প্রতিদিনই নতুন লাগে...পহেলা বৈশাখে কিছু কাজের জন্য বাইরে বের হলাম দেখি আমারই পাশের এক মডার্ন(প্রচলিত অর্থে) মেয়ে সুন্দর শাড়ি পরে,সেজে গুজে রিক্সা করে যাচ্ছে।অথচ তাকে আমি খুব কম দিনই দেখেছি ফতুয়া-জিন্স ছাড়া সে বাইরে বের হয়েছে।সেদিন খুব অবাক হলাম তাকে দেখার পর...বাসায় এসে একদিন বিকালে তার সাথে যখন কথা হচ্ছিল তখন আমি তাকে বললাম সেদিন তোমাকে শাড়িতে খুব দারুন মানিয়েছিল।সে বলল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সে ওই শাড়িটা রঙ থেকে কিনে এনেছে।আমিও যখন কিনার আগ্রহ প্রকাশ করলাম তখন সে আমাকে বলল তুমি কিনে কি করবা? তুমি তো হিজাব ছাড়া বাইরে বের হউনা।তারপর আমাকে একটা পরমর্শ দিল যে একদিন বাঙ্গালী হিসাবে শাড়ি পরে বের হলে কিছু হবেনা।হাজার হোক এটা আমাদের বাঙ্গালী কালচার।বুঝতে পারছিলাম সে আমাকে একটু আন্ডারএস্টিমেট করার চেষ্টা করছে হিজাব নিয়ে।
বললাম আমি একজন বাঙ্গালী মুসলিম মেয়ে।তাই আমার নিজস্ব একটা কালচার আছে যেটা আমি সর্বদা মানার চেষ্টা করি।আইডেন্টিটি ক্রাইসিস বলতে কি বুঝ তুমি? আইডেন্টিটি ক্রাইসিস?? খুব তাচ্ছিল্যভাবে জবাব তার।এই যে বছরের একদিন শাড়ি পরে বাংগালি হউয়া আর বাকি দিন পরগাছার মত অন্যের কালচারকে ধারন করা,আর সর্বদা নিজেকে বাংগালি বলে এক কৃত্তিম গর্ব অনুভব করাকে কি বলবা তুমি?নাহ! আমি আমার কথা আর এক্সটেন্ড করিনাই সেদিন...খুব বেশি তিক্ত শুনাচ্ছিল তার কাছে তাই দ্রুত সালাম জানিয়ে বিদায় নিলাম।
যেটা বলছিলাম আইডেন্টিটি ক্রাইসিস।রাস্তা-ঘাটে চলা ফেরা করলে বুঝতে পারি আমরা যে আইডেন্টিটি হারায়ছি ১৭৫৭ সালে তা আর ১৯৭১ এর মাধ্যমে ফেরত আনতে পারিনি।বাংগালি জাতির আইডেন্টিটি আজ কেবল অনুষ্ঠান স্বর্বস্ব ব্যাপারে পরিনত হয়েছে।আর মুসলিম?? হাঃহাঃ সে তো তথাকথিত বাংগালি জাতি একদিন পুরা ইসলাম কে বিক্রি করে দিয়েছে রাজাকারদের নিকট।তাই ইসলাম এর কথা বললেই যুদ্ধাপরাধী,হিজাবের কথা বললেই রাজাকার।এই তো বাংগালি জাতির আইডেন্টিটি।!অথচ ইসলাম নিছক ধর্ম নয়,বরং জীবনবিধান।আর কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তিও নয়।নিজেদের তৈরী আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে আজ নিজেরাই সাফার করতেছি।

এবার আসি আরেকটু ভিন্নভাবে।নারী সমাজের উন্নতিকল্পে আমাদের পুরুষ সমাজের চিন্তার কোন শেষ নাই।সাধুবাদ জানাই তাদের।আমাদের কথা তারা চিন্তা না করলে কে করবে? তাই নারী সমাজ কে তারা ঘরের আবদ্ধ গন্ডি থেকে বের করে নিয়ে আসল।উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবার সুজোগ দিল।পর্দা প্রথাকে সেকেলে বলে ছুড়ে ফেলে দিল।আর সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর আবাধ বিচরনও নিশ্চিত করল।কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট কি? এখনও সিমির মত মেধাবী মেয়েকে জীবন দিতে হচ্ছে,তৃষার মত নিষ্পাপ মেয়েকে অকালে ঝরে যেতে হচ্ছে...এরকম হাজার ঘটনা অহরহ ঘটছে।আর কত???

সেই আবহমান কাল থেকে নারী সমাজ উপেক্ষিত,নির্যাতিত,বঞ্চিত।আগে নারী উপেক্ষিত হত নিজের ঘরে।আজ হয় সমাজে...নারীমুক্তির আন্দোলন কি আসলেই কোন সুফল বয়ে আনছে? নাহ! আমি একজন নারী,তাই নারী মুক্তিই আমার কাম্য।কিন্তু মুক্তি পাবার জন্য আমি আমার আইডেন্টিটি হারাতে চায়না।খারাপ লাগে যখন দেখি আমারি মত মেয়ে সংসার করা,ছেলে-মেয়ে লালন-পালন করা কে ঘৃনার চোখে দেখে।নারী অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমরা আমাদের মর্যাদা হতে বঞ্চিত হচ্ছিনা তো? হ্যা আমরা না পারছি প্রকৃতির অমোঘ বিধানকে ইগনোর করতে আর না পারছি প্রকৃ্তির দেয়া বিধানকে মেনে নিতে...তারপরও অনন্তর চেষ্টা একটু মুক্তির আশা।আজ এখানে সেমিনার,কাল সেখানে আলোচনা।কিসের জন্য? নারী স্বাধীনতার জন্য।

অথচ পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কোন সেমিনার হয়না,আলোচনা হয়না।যে পুরুষ ঘরে নারীর সম্মান দিতে জানেনা,সে কিভাবে কর্মক্ষেত্রে অন্য নারীকে সম্মান দিবে?অথচ এই সব পুরুষের লোকদেখানো নারী মুক্তির আন্দোলনে আজ মেয়েরাই এদের সাথে হাত মেলাচ্ছে।ফলে সমাজে আবির্ভুত হচ্ছে নিত্য নতুন নীল ভ্রমরার যারা নারীকে এক নতুন মুক্তির স্বপ্ন দেখাচ্ছে।নারী হচ্ছে আরো বেশি উপেক্ষিত,লাঞ্চিত,বঞ্চিত।

নারী হিসাবে আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করি।তাই একটু খানি মুক্তির আশায় রনাংগনে ঝাপিয়ে পড়ি।ইসলাম নারীকে যে মুক্তি সেই শত শত বছর পূর্বে দিয়ে গেছে তা ভুলে আমরা আজ খুজতেছি নতুন মুক্তির ঠিকানা।হিজাব ছেড়েছি,প্রগতিশিল হয়েছি,উচ্চশিক্ষিত হয়েছি,পুরুষের সহকর্মী হয়েছি...পাইনি স্বাধীনতা।আমি শিক্ষার বিপক্ষে নই,বাইরে চাকরী করে পুরুষের সহকর্মী হবার বিপক্ষেও নই।আমি নিজেকে একজন মুসলিম বাংগালি মেয়ে হিসাবে মনে করতে ভালবাসি।তাই আজীবন বাঙ্গালী।কেবল আচার স্বর্বস্ব বাঙ্গালি নই।আমি মুসলিম তাই হিজাব আমার স্বাধীনতার প্রতীক।আমি নারী তাই একটা সংসার এর প্রধান দায়িত্ব আমার।যে ঘরে থেকে বিশ্ব পরিচালনায় অংশ গ্রহন করবে,জন্ম দিবে হাজার হাজার সেই বলিষ্ঠ সন্তানদের যারা বুকের তাজা খুন বিলিয়ে দিবে মানবতার তরে,দেশের তরে,পৃথিবীর তরে।আর আমাদের শিক্ষা? সেটা তো আমাদের মৌলিক অধিকার।তাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হব,নিজেদের মর্যাদা আদায় করে নিব।

তাই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর নয়।আমরা নারীরা প্রকৃত বাঙ্গালি হতে চাই।হতে চাই একজন আদর্শ নারী।আর ধারন করতে চাই ইসলামীক জীবনবিধান।আইডেন্টিটি ক্রাইসিস সিন্ড্রোম এর সমাধান চাই এভাবেই...


লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ;

কোন মন্তব্য নেই: